![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটা গোল। যেখানেই যাই এই গোলের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে।আর আমি যেখানে সেখানেই গণ্ডগোল।
আলোকিত মানুষ
নকীব মাহমুদ
কবিরাজী ব্যবসা খুব একটা মন্দ চলছিলো না। সকাল বিকাল লোকে লোকারন্য তার আঙিনা। ইয়েমেনের প্রতিটি মুখে মুখেই তার নাম। কোথায় কাকে জীনে ধরলো। কাকে যাদুতে ধরলো-তিনি ছুটে যান আপনের মতোই। সেবা শুশ্রæতা করেন। পথ্য দেন। যতœনেন। সবাই কে আপন করে বুকে তুলে নেন। এক সময় রুগি সুস্থ হয়ে উঠে।
একজন, দুজন-রুগীদের দীর্ঘ লাইন এসে জড়ো হয় তার দুয়ারে।
আকাশের মতোই বিশাল তার মন। সাগরের মতোই গভীর তার হৃদয়। ফুলের মতো নরম আর কোমল তার ভেতরটা। তিনি ইয়েমেনী বংশদ্ভূত। ইয়েমেনের ‘আযদে শানুয়া’ গোত্রে জন্ম তার। বিখ্যাত গোত্র আযদের প্রতি নিসবত করে সবাই তাকে ‘যিমাদ আযাদী’ বলেই সম্বোধন করে।
যিমাদ আযদী।
ইয়েমেনের প্রখ্যাত কবিরাজ যিমাদ আযদী।
ইয়েমেন ছেড়ে একদিন তিনি মক্কায় আসেন। অনেক ইতিহাসের নগরী পূন্যভূমি মক্কায় আগমন করেন কবিরাজ যিমাদ আযদী। রাত-দিন মক্কার অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ান। মরুভূমির এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে বেড়ান । ক্লান্তিহীন তাকিয়ে থাকেন মক্কার উত্তপ্ত বালুকাময় পথের পানে। যেনো কারো অপেক্ষায় এমন দীর্ঘপথ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা।
মক্কার অলিতে-গলিতে রাতদিন হেটে বেড়ান তিনি। নতুন দেশ, নতুন জায়গা, নতুন নতুন মানুষ-সব কিছুই তাকে মুগ্ধ করে।
প্রতিদিনের মতো আজো তিনি হাটছিলেন। দু’একজনের সাথে কথাও বলছিলেন। কিন্তু কী আশ্চর্য! সবার মধ্যেই কেমন যেনো একটা চাপা উত্তেজনা। কিসের একটা ক্ষোভ যেনো বিরাজ করছে সবার মধ্যে। কি সব বলাবলি করছে সবাই।
অজানা শংকায় কেঁপে উঠলেন তিনি।
তবে কি আবারো সেই যুদ্ধ দামামা বেজে উঠলো? আহা! আরবের নির্মল আকাশ আবারো লাল হয়ে উঠবে! অযথাই রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠবে নির্বোধ আরবেরা!
দুঃশ্চিন্তার কালোমেঘ এসে জড়ো হয় কবিরাজ যিমাদ আযদীর চোখে-মুখে, বুকের ভেতর। যতো দ্রুত সম্ভব মক্কা ছাড়তে হবে-তিনি ভাবছিলেন।
অন্যমনস্কভাবেই তিনি হাটছিলেন। গলির প্রতিটি মোড়ে মোড়েই মানুষের ভীড়। সব দ্বিধা আর সন্দেহের ধুলো ঝেড়ে মুছে তিনি এগিয়ে গেলেন। গলির একপাশে উত্তেজিত মজমার ঠিক মাঝখানে গিয়ে দাড়িয়ে গেলেন কবিরাজ যিমাদ আযদী।
হঠাৎ এক অচেনা আগন্তুকের উপস্থিতিতে মজমায় ভাটা পড়ে।
এ আবার কোন উপদ্রব!
একেও কি জাদুতে ধরেছে? বলাতো যায় না-যেভাবে মুহাম্মদ সবাই কে তার যাদুতে বেঁধে ফেলছে!
অচেনা অপরিচিত কাউকে দেখলেই সন্দেহ এসে জাপটে ধরে মক্কার অবিশ্বাসীদের।
সবাই কে চমকে দিয়ে বলে উঠেন যিমাদ আযদী-
আমি ইয়েমেনের যিমাদ আযদী। আপনাদের এই পবিত্র নগরী দেখবো বলে সুদূর ইয়েমেন থেকে ছুটে এসেছি আমি।
মজমা আবরো প্রাণ ফিরে পায়। সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই। মুহূর্তেই অনেকগুলো মুখ ঘিরে ধরে কবিরাজ যিমাদ আযদী কে-
তুমি আমাদের অতিথি। আমাদের দেশে এসেছো তাই তোমাকে স্বাগতম। কিন্তু একটা ব্যাপার বাপু! মুহাম্মদ নামের পাগলটার ধারে কাছেও ঘেসবে না বলে দিচ্ছি!
কবিরাজ যিমাদ আযদীর বিস্ময়ের ঘোর তখনো কাটে না।
পাগল!
একটা পাগল কে নিয়ে এতো পেরেশনীর কি আছে! ভালো চিকিৎসা দিলেই তো হয়!
যিমাদ আযদী ভাবেন, তিনি দেখা করবেন মুহাম্মদ-এর সাথে। মুহাম্মাদ-এর চিকিৎসা করবেন তিনি। মুহাম্মদ কে সুস্থ করতে পারলে পুরো মক্কায় ছড়িয়ে পড়বে তার নাম। সবাই এক নামে ডাকবে-কবিরাজ যিমাদ আযদী!
তিনি পারবেন তো মুহাম্মদ কে সুস্থ করে তুলতে?
পারবেন না কেনো? পুরো ইয়েমেন যার চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলো সেখানে তিনি একজন মুহাম্মদ কে পাগল থেকে ভালো করে তুলতে পারবেন না!
আনন্দে ভেতরটা তার নেচে উঠে।
যিমাদ আযদী ভাবেন-যে কারেই হোক মুহাম্মদ সা. কে সুস্থ করে তোলবেন তিনি।
একজন পাগল মানুষকে নিয়ে সবার এ কেমন মাতামাতি! মক্কাবাসীর এ কেমন আচরন!
নানান কথা ভাবতে ভাবতে কবিরাজ যিমাদ আযদী রওনা হন রাসুল সা.-এর দরবারের পথে। যদি তাঁকে সুস্থ করে তোলা যায়। ভালো চিকিৎসা পেলে যদি সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি!
ভাবনাদের ডানা মেলে দিয়ে যিমাদ আযদী হাজির হন রাসূলের দরবারে।
এ এক অন্যরকম আয়োজন!
এ এক ভিন্ন অনুভূতি!
কোথায় পাগল? পাগলের চেহারাতো এমন থাকে না। পাগলতো অযথাই হাসবে। কোনো কারন ছাড়াই কাঁদবে। এ কেমন পাগলরে বাবা!Ñ হুজুর সা. কে দেখে অবাক হন কবিরাজ যিমাদ আযদী।
প্রিয় নবীর চেহারা মোবারকের দিকে এক পৃথিবী মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন কবিরাজ যিমাদ আযদী- ইশ! এমন মানুষও পাগল হয়! এ কি করে সম্ভব! যে করেই হোক লোকটাকে সুস্থ করে তোলতেই হবে।
কবিরাজ যিমাদ আযদী এক পা দু’পা করে রাসূলে আরাবীর সামনে গিয়ে দাড়ায়। কোনো ভূমিকা কিংবা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বলে উঠে। বিজ্ঞ ডাক্তারের মতোই বলতে শুরু করে-
জনাব, আমি আপনার চিকিৎসা করার জন্য এসেছি। আপনি কিছু ভাববেন না। অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন আপনি। আমার চিকিৎসা আজ পর্যন্ত বিফলে যায়নি।
রাসূলে আরাবী সুবোধ বালকের মতোই শুনে গেলেন কবিরাজ যিমাদ আযদীর কথাগুলো। কোনো ভাবান্তর কিংবা পরিবর্তন ছুঁয়ে যায়নি রাসূলে আরাবীকে। যেনো সব জানা কথাই। শোনা কথা অনেকদিনের। শুধু একটু নড়ে বসলেন হুজুর। ক্রোধহীন কন্ঠে বলে উঠলেন- প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। আমি তো তার কাছেই সাহায্য কামনা করি। তিনিই তো একমাত্র হেদায়েতের অধিকারী। যাকে তিনি হেদায়াত দেন কে আছে তাকে ভ্রষ্ট করে। আর যাকে ভ্রষ্ট করেন তার কি ক্ষমতা আছে সৎপথে চলবে? তিনি এক অদ্বিতীয়। একমাত্র ইলাহ তো তিনি-ই। আর মুহাম্মদ তো তাঁরই বান্দা, তাঁর মনোনীতো রাসূল।
প্রচণ্ড ঝড়ে গাছের পাতা যেমন নড়ে উঠে। পানিভর্তি পাত্র ধরে নাড়া দিলে পানি যেমন সব কেঁপে উঠে-কবিরাজ যিমাদ আযদীর ভেতরটাও ঠিক তেমনী নড়ে উঠেছে- এ আবার কেমন করে পাগল হয়? এমন সুন্দর যার চেহারা, অমায়িক যার আচরন, এতো সুন্দর করে যিনি কথা বলেন তিনি কীভাবে পাগল হন! না না! ওদের সব কথাই মিথ্যে। সব কিছুই সাজানো! এ লোক কখনো পাগল হতে পারে না! ইনি-ই তো সেই মহাসত্যের ধারকবাহক! কী অমীয় তার বানীগুলো। আহা হৃদয় মন জুড়িয়ে যায়!
কবিরাজ যিমাদ আযদী অস্থির হয়ে উঠেন। এ সত্যকে কখনোই হাতছাড়া করা যায় না। কখনোই না! এখনই তো সময়। এখনই তো সেই উত্তম সময়!
কবিরাজ যিমাদ আযদীর কন্ঠে ব্যকুলতা- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবারো বলুন না-যা বলছিলেন আপনি। এমন মধুময় আর মহাসত্যের বানী আর কখনো শুনিনি! নিশ্চই আপনি-ই সেই রাসুল! সত্যের নবী, যার আগমনী বার্তা শুনছি সেই কবে থেকে। হে দয়ার নবী! লা ইলাহার ঝণ্ডাতলে আমাকেও আশ্রয় দিন! আমিও যে মানুষ হবো।
আলোকিত মানুষ।
©somewhere in net ltd.