নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি। ঘোরাঘুরি করি। লেখালেখি করি...এইতো

নকীব মাহমুদ

পৃথিবীটা গোল। যেখানেই যাই এই গোলের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে।আর আমি যেখানে সেখানেই গণ্ডগোল।

নকীব মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরিণের দেশ নিঝুম দ্বীপ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩

হরিণের দেশ নিঝুম দ্বীপ
নকীব মাহমুদ

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। দ্বীপটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এটাকে 'দ্বীপ' বলা হলেও মূলত এটি একটি 'চর'। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন লোক তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসতি গড়েন। তখন এই নামেই দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম নামটি পরিবর্তন করে নিঝুম দ্বীপ নামে নামকরণ করেন। বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়েই নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত দ্বীপটিতে মানুষের কোনো বসবাস ছিলো না, তাই বলতে গেলে দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। সম্ভবত সেই হিসেবেও দ্বীপটির নাম ‘নিঝুম দ্বীপ’ রাখা হয়েছিলো। বাংলাদেশের বনবিভাগ প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে নিঝুম দ্বীপে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন। পর্যটকদের কাছে নিঝুম দ্বীপের সবচে’ বড় আকর্ষণ হলো, একমাত্র নিঝুম দ্বীপেই একসাথে এতোগুলো হরিণের দেখা মেলে। নিঝুম দ্বীপ ছাড়া বাংলাদেশের অন্যকোথাও সহজে এতো হরিণের দেখা পাওয়া যায় না।

আয়তন
প্রায় ৯১ বর্গ কিমি আয়তনের নিঝুম দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

কি আছে নিঝুম দ্বীপে
নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য †কানো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায়ে ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের †মŠসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। †জায়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মেŠসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মেŠসুমে নিঝুম দ্বীপ †চঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। †জলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। এই শুঁটকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা †কজি দরে। আবার এই শুঁটকি হাঁস-মুরগীর খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও †রাপন করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।



রাতের নিঝুম দ্বীপ
সূর্যের আলো কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা ফিরতে থাকে ঘরে। ঘর মানে পাশের বনে। এমনই অল্প আলোয় বন †থকে দলে দলে †বরিয়ে আসে হরিণের দল। দল বেঁধে হরিণের ঘাস খাওয়া এবং নদীর পানিতে সামান্য পা ডুবিয়ে হরিণ-হরিণীর জল পানের দৃশ্য উপভোগ করতে হবে একটু চুপি চুপি। কারণ, মানুষের উপস্থিতি টের †পলেই হরিণগুলো দে’ছুট। সন্ধ্যায় শিয়ালেরা জেগে ওঠে। শুরু হয় দিগ্বিদিগ তাদের গলা ফাটানো চিৎকার। কেউ কেউ চলে যায় নদীর ধারে কাঁকড়া অথবা মাছের সন্ধানে। বন বিভাগের সূত্র মতে, নিঝুম দ্বীপে হিংস্র কোন প্রাণীর বসবাস নেই তারপরও সন্ধ্যার একটু পরেই ফিরতে হবে নিঝুম রিসোর্টে, পেছনে ফেলে অস্তপ্রায় সূর্যের আলোয় †শাভিত পাখিময় বিকাল এবং মায়া হরিণের সন্ধ্যা।


নিঝুম দ্বীপে কীভাবে যাবেন
নৌ-পথে ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়া তমরুদ্দি অথবা নলচিরা লঞ্চ ঘাট। এটা সারারাতের জার্নি। পরের দিন সকাল বেলা হাতিয়া থেকে নৌ পথে অথবা সড়ক পথে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যায়। তবে নৌপথ অনেকটা ঝক্কি ঝামেলামুক্ত। হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাট থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপে নামার বাজার পোঁছাতে মোটামুটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সড়ক/ট্রেন পথে নোয়াখালী-চেয়ারম্যানঘাট/ চরবাটা হয়ে সি ট্রাকে হাতিয়া তার পর একইভাবে নিঝুম দ্বীপ।


কোথায় থাকবেন
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অবকাশের নিঝুম রির্সোট। যেখানে রয়েছে সাপ্লাই পানি এবং জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। খাবারের জন্য রয়েছে স্থানীয় হোটেল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, মাছ, মুরগী, ডিম ইত্যাদিই খাবারের একমাত্র ভরসা। তবে বর্ষার মৌসুমে রয়েছে ইলিশের জয়জয়কার।
নিঝুম দ্বীপে পর্যটনের নিঝুম রিসোর্টই একমাত্র ভাল মানের থাকার ঠিকানা। এই রিসোর্টে ডাবল ও ট্রিপল বেডের রুমসহ ৩টি ডরমিটরি রয়েছে। সব মিলিয়ে নিঝুম রিসোর্টে ৬০ জনেরও অধিক সংখ্যক পর্যটক এক সঙ্গে অবস্থান করতে পারেন। জেনারেটরের মাধ্যমে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করে থাকে। তাছাড়া হারিকেনের মায়াবী আলোয় রাতের নিঝুম দ্বীপ নতুন এ্যডভেঞ্চার যোগ করবে নিঃসন্দেহে! এছাড়াও স্থানীয় বাজার মসজিদ কর্তৃপক্ষের নির্মিত মসজিদ বোর্ডিংয়েও থাকার ব্যবস্থা আছে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: শেয়াল হরিণ মেরে ফেলে নিঝুম দ্বীপে। নানান ঝুঁকিতে আছে নিঝুম দ্বীপের হরিণেরা।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

নকীব মাহমুদ বলেছেন: নিঝুম দ্বীপকে বাঁচাতে সরকারের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সবাই যদি আওয়াজ তুলি তাহলে সরকার উদ্যোগী হবে আশাকরি। ধন্যবাদ!

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: ভালো একটি পোষ্ট। ধন্যবাদ

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯

সুমন কর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৩

নকীব মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদেরকেও। সুমন কর ও প্রামানিক ভাই

৬| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
ভাল পোস্ট।
+
এটাকে ভালভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। পর্যটকদের নির্মল আনন্দের জন্যও তো এমন একটা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন রয়েছে।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২০

নকীব মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ! আমরা সচেতন হলে আশাকরি নিঝুম দ্বীপ আরও হাজার বছর তার ঐতিহ্য ধরে রাখবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.