![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক এক সময় মনে হয় বেঁচে থেকে আর লাভ নেই এক এক সময় মনে হয় পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত এক এক সময় মানুষের ওপর রেগে উঠি অথচ ভালোবাসা তো কারুকে দিতে হবে এক এক সময় ইচ্ছে হয় সব কিছু ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড করে ফেলি আবার কোনো কোনো বিরল মুহূর্তে ইচ্ছে হয় কিছু একটা তৈরি করে গেলে মন্দ হয় না।
বলরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পরে বন্ধুর সাথে তীর ধনুক খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি পর্যায়ে দাঁড়ায় তবে মাথা থেকে সেদিন ব্লিডিং হয়েছিল। ভয়ে আর স্কুল যাইনি। মাথার উপর দিয়ে কান ধরতে না পারায় ( খাটো ছেলে বলে কথা) ব্রাক স্কুলে ভর্তি হতে পারলাম না। ছানাউল্লাহ হুজুর আমাকে বলরাম্পুর দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি নিলেন। তবে প্রথন বছরটা নিজের ইচ্ছাতে কখনো স্কুল যাইনি।
চোখ লাল করে ফিকরি দিয়ে কান্না করতে করতে স্কুল যেতাম কেননা পিছনে আম্মু বেত কঞ্চি লাঠি হাতে নিয়ে থাকত। বেত যতক্ষন উপরে থাকত ততক্ষন আমি হাটতাম। রান্না করার লারকি,খুচ্চুন,চামচ, বাসের কঞ্চি এমন কিছু ছিলনা যার মাইর আমি খাইনি। এজন্যে আম্মুর অনুরোধে ছানাউল্লাহ স্যার আমাকে ক্লাস শুরু হলে চক্লেট দিত। লেখা জমা দিলে চক্লেট দিতো।পরবর্তীতে চক্লেট খাওয়ার লোভে নিয়মিত ক্লাস শুরু করি।
পড়া না দেওয়ার জন্যে স্যারদের হাতে মাইর খেয়েছি কিনা তেমন মনে পড়েনা। বান্দ্রামি, স্কুল পালানো, পিট না করা ও আজেবাজে প্রশ্ন করার জন্যে স্যারদের হাতে অনেক মাইর খেয়েছি। বেয়াদবের লিস্টে আমার নামটা উপরেই ছিল।
কয়েকবার স্যারেরা রাগ করে ক্লাস থেকে বের ও করে দিয়েছিল। কারী হুজুর একবার মেরেছিল ধারির বেড়ার ক্লাসে ক্লাস করতাম। বেড়া ভেংগে নিচে দিয়ে পালাইছিলাম। বেড়া ভাংগার জন্যে সেই পেদানি দিয়েছিল। আবার ক্লাস সেশে বই খাতা রেখে সোজা বাড়ি আম্মুকে ডেকে এনেছিলাম।
আম্মু এসে কারি হুজুরকেই সেই ঝাড়ি (আম্মু জানতোনা যে উনিই আমাকে পেদাইছে) আমি অনেক মজা পাচ্ছিলাম। তবে স্যারের মাথায় অনেক পাকা চুল তা তুলে দিলে মজা কিনে দিত। মজার (ছোট বেলায় দোকানের খাবার কে মজা ও সদাই বলতাম) লোভে চুল তুলে দিতাম।
অষ্টম শ্রেনীর জেডিসি পরীক্ষার সময় এক স্যার কে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলাম কারণ ছিল কঠিম এক্সামের দিন কোন স্যার দেখতে আসেনা, সহজ এক্সামের দিন আসছে। স্যার অনেক মন খারাপ করেছিল। উনি শিক্ষক আমি ছাত্র। আমার ভুল হয়েচে অনেক। তারপরেও আমার বিপদে আমার বাবা মার পরে এখন পর্যন্ত সেই মানূষ্টা আছে। তিনি আমার শুধু শিক্ষক নয় তিনি আমার আদর্শ আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। প্রিয় আব্দুর রহমান স্যার। যিনি আমাকে নিঃশার্থ ভাবে ভালোবাসেন। আরো অনেক ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি যাদের ভালোবাসার মাঝে ছিল সার্থ এবং ক্রেডিট নেওয়া।
ছোট থেকেই কৃষি কাজ করে বড় হয়েছি। বাবার পেশা আমার ভালোবাসা কৃষি। দিনহাজিরা কাজ ও করেছি পান সিগারেটের দোকান করছি, ফার্মেসি তেও কাজ করছি। বিশেষ করে আলুর মৌসুমে আলু লাগানো
আলু তোলা, ১০ টাকা ট্যানকি করে আলুখেতে কিটনাশক স্প্রে করা। ৯০ টাকা দিনের হাজিরায় ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ তোলা। প্রতি হাজার ইট উল্টাতাম পাচ হাজার। ৫ টাকা বালতি করে কয়লা ভাংতাম। এগুলো অনেকগুলোই চুপচুপ করে করতাম। এই টাকা গুলোর সাথে মায়ের কাথা শিলাইয়ের টাকা যোগ দিয়ে পড়ালেখার বই খাতা কলম কিনতাম। ইদের সময় করে শপিং করতাম।
এভাবেই দাখিল পাশ করে কলেজে ভর্তি হলাম।
সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হব এক স্যারের সাথে পরামর্শ করলাম। সব শুনে বলল তুমি আর্টস ডিপার্টমেন্টে এ ভর্তি হও। সাইন্স তোমার জন্যে নয়।
সেই দিন ও সেই রাত সারারাত কেদেছিলাম।
সাইন্সেই ভর্তি হই। প্রাইভেটের বেতন ঠিকভাবে দিতে পারতাম না। সব জেনেও যারা টিউশনির বেতন চাইত। মুখের উপরেই বলে দিতাম। আপনি প্রাইভেট এ আসতে বাধা দিলেও আমি আসব। আর আমি যা দিতে পারবো নিবেন। আমার জায়গায় আপনি থাকলে আপনি হয়ত আমার চেয়েও ছ্যাচড়া হতেন। তবে বেশিরভাগ স্যার রা আমাকে খুব ভালোবাসত। সকালে নিজে প্রাইভেট পড়তাম। বিকালে নর্দান রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের কোচিং এ পড়াতাম। এটাও আব্দুর রহমান স্যারের করে দেওয়া একটা সুযোগ।
তিনি আমাকে একদিন একটা গল্প শোনালেন।
এক এলাকায় এক লোক এসেছে সে মাছ ধরা শিখায় এবং মাছ বিক্রি করে। যদি মাছ ধরা শেখো তাহোলে তোমার আর মাছ কিনতে হবেনা।
তারপর আমাকে বলল তুমি কি চাও।
আমি বললাম
স্যার আমি মাছ ধরা শিখতে চাই।
তখন তিনি বললেন তোমার পড়ালেখা করতে যে খরচ লাগবে। তা আমি দিতে পারবো। তবে আমি চাই তুমি নিজেই তা বের করে নাও। আর এভাবে চলতে পারলে নিজেকে কখনো কারো কাছে ছোট হতে হবেনা।
১৪/০৪/২০১৪ তারিখ থেকে থেকে নর্দান রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের কোচিং এ ক্লাস নিতাম।
তারপর ইন্টার ইমিডিয়েট পাশ করে দিনাজপুর আসলাম।
বাবা জমি বন্ধক লাগানোর টাকা হাতে নিয়ে দিনাজপুর থাকলাম।অবশেষে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ এ চান্স পেয়ে গেলাম ( মাইগ্রেশন করে আরপিএমসিতে আছি এখন) আলহামদুলিল্লাহ।
পুর্বের ভয়াবহ কষ্টের সময় গুলোতে কেউ আমার পাশে ছিলনা। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর অনেক কে পাশে পেলাম। এখানেও কিছু ভালো মানুষের ছোয়া পাইলাম আবার কিছু সার্থবাদি চরিত্রের ছোয়া পাই যা পরে বুঝতে পারছি।
বাবার জমি লাগাইছি কোচিং করতে গিয়ে
ভর্তির সময় আর জমি বন্ধক দিতে দেইনি।
কিছু কাছেত মানুষের সাহায্য নিয়েছি।
তারপরে আমার স্কলারশিপ হয়ে যাওয়ার পরে আর কারো কাছে হেল্প নিতে হয়নি। পাশাপাশি বাবার সারাদিন মাঠে কাজ করে প্রতি সপ্তাহে যা আমাকে দেয় তা দিয়েই চলি।
বড় কষ্ট হয়। যখন কেউ বলে
তোর পড়ালেখার দায়িত্ব অমুক নিয়েছে অমুক নিয়েছে। বড় বর পলিটিকাল প্রোগ্রামে আমার কথা মাইক দিয়ে বলা হয় আমার জন্যে নাকি তারা অনেক হেল্প করেছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমাকে কোনদিন ফোন আস্ক করেছিলেন কি আমি আজ সকালে খেয়েছি কিনা? যেহেতু করেন নাই সেহেতু বাইরে মিথ্যা ছড়ানো থেকে বিরত থাকবেন।যা বলার সাম্নেই বলার অনুরোধ করছি।
সময় যেদিন আসবে আমি নিজেই বলব কে কতটা পাসে আছে। কে আমাকে নোমানকে ভালোবাসে আর কে ডাক্তার নোমানকে।
নিজ থেকেই ফোন দিলে আস্ক করেন কয় সাব্জেক্ট এ পাস করছিস। খুব কষ্ট হয়। একবার একটা প্রফ দিয়ে দেখেন পাশ করা আপনার বাংলা ও সমাজ বিজ্ঞানের মত নয়।
জাস্ট রিমেম্বার।
আমি ফেইল করে করে একদিন অভিজ্ঞ হব ইনশাআল্লাহ।
Noman Islam Nirob
©somewhere in net ltd.