নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা প্রচলিত থাকে, শিক্ষক'রা কেবল 'ভালো ছাত্রছাত্রীদের' পছন্দ করে। এই ধারণা ছাত্রজীবনে আমারও ছিলো। অথচ আমি এখন দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি পছন্দ/স্নেহ/প্রশ্রয় এই বিষয়গুলো দারুন স্বেচ্ছাচারী! ইমামুল হক রেহান কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই আমার স্নেহধন্য ছিলো।
অনার্সের প্রথম দিকে রেহান নিজেকে আড়াল করতো, লুকিয়ে রাখতো, গুটিয়ে থাকতো। ওর মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, 'সে ভালো স্টুডেন্ট না'। যেদিন থেকে আমি বিষয়টা নোটিশ করলাম, ওদের ব্যাচের ক্লাসেটাইমে রেহানের সাথেই আমার আই কন্টাক্ট বেশি হতো। ক্লাসে রেহানের সাথে সিলেবাসের বাইরের কতশত বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি!
রেহান বিচিত্র সানগ্লাসেস পরতে পছন্দ করতো। আমি বলতাম, রানবীর সিংয়ের পর আপনাকেই দেখলাম সানগ্লাসেস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে। রেহানের একটা গ্লাস এখনো ডিপার্টমেন্টের অফিস রুমের লকারের উপর রাখা। মাঝেমধ্যে গ্লাসটার দিকে চোখ পড়লে এখনো আমার বুকের ভেতর ছ্যাত করে ওঠে। মনে হয় রেহান করিডোর ধরে হাসতে হাসতে এসে, অফিস রুমের ভিতর উঁকি দিয়ে এটেন্ডেন্ট হানিফকে জিজ্ঞেস করবে, হানিফ ভাই সানগ্লাসটা পাইতেছি না। ক্লাসরুমে ফালায় গেছি মনে হয়। পাইছেন নাকি ভাই? গত ৭মাস ধরে গ্লাসটা সবার চোখের সামনে নিজেকে আড়াল করে রয়ে গেছে... থাকুক, ঐই এখন আমাদের রেহান!
রেহানের সাথে শেষ ক্লাস ছিল মিডিয়া এডভোকেসি কোর্সের। ক্লাস লেকচারের মাঝে হটাৎ দাঁড়িয়ে বললো ম্যাডাম আমার ভাইজান ফোন করতেছে। ক্লাসরুমের সামনে আছে। আমি দুই মিনিটে একটু দেখা করে আসি। বললাম যান। ঠিক দুই মিনিটের মধ্যে রেহান ফিরে আসলো, প্যান্টসের পকেটে কিছু রাখতে রাখতে। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ভাইজান এই সময় ক্যাম্পাসে; কোনো জরুরি কিছু? রেহান হেসে দিলো, না ম্যাডাম। ভাইজান ঢাকা আসছিলো। যাওয়ার সময় আমাকে দেখে গেল আর দুইহাজার টাকা দিয়ে গেল। বললো কিছু খাইস। শুধু আপনাকে একা খাইতে বলছে, নাকি ক্লাসমেটদেরকে খাওয়াতে বলেছে। রেহান আবারও হেসে দিলো, আমাকে একাই দিয়ে গেছে, তবে আমার বন্ধুরা খেতে চাইলে খাওয়াবো। ফিরে গেলাম লেকচারে...
বিপরীতমুখি ট্রাকটা যখন ওর খুব কাছে চলে এসেছিল, হেড লাইটের তীব্র আলোয় কী ওর চোখ ধাদিয়ে গিয়েছিল? ওর শেষ ভাবনাটা কী ছিল? মৃত্যুর ঐ একটা-দুটো মূহুর্তে মানুষ আসলে কি ভাবতে পারে?.... এসব জানার সব রাস্তা বন্ধ!
রেহানের ছোট্ট পৃথিবীটা ছিলো জটিলতা মুক্ত; সহজ। আমার স্মৃতির বাক্সে, ইমামুলের এপিটাফ-এ লেখা থাকবে 'ছেলেটা আনন্দ করতে ভালোবাসতো'... (রেহানকে আমি ইমামুল বলে ডাকতাম)।
অসমাপ্ত সব কিছুরই একটা আলাদা আবেদন থাকে। কত শিক্ষার্থী আমার শিক্ষকতাকালীন সময়ে পাশ করে বেরিয়ে গেলো। দেশে-বিদেশে আছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মাঝেমধ্যে কথাও হয়। তবে রেহানের মতো করে অন্যদের কথা ভাবা হয় না, এমনকি আলাদা করে বলাও হয় না। রেহান ওর মায়ের চতুর্থ এবং ছোট সন্তান। আমি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি একবার রেহানের আম্মার সামনে বসে রেহানার কথা শুনবো বলে... ঈশ্বর নিশ্চয় মহান।
২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০৬
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এখন আর কাউকে দোষারোপ করি না।
কেবল ঈশ্বরকে বলি, আমাকে শক্তি দাও এমন সবকিছু সহ্য করার যা নিদারুণ বেদনার।
২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৮
শেরজা তপন বলেছেন:
এসব স্মৃতি নিশ্চিতভাবে ভীষণ কষ্টের। শেষ মুহুর্তের ভাবনার বিষয়টা আমাকেও ভীষণ নাড়া দেয়।
এই লাইনটায় হয়তো একটু টাইপো হয়েছে- বুঝতে কষ্ট হোল;
রেহান আবারও হেসে দিলো, আমারত বন্ধুরা আমাকে একাই দিয়ে গেছে, ..
২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শেরজা তপন।
৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:২০
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আমার জীবনের অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটা ঘটনা হচ্ছে আমার ছোট মামার মৃত্যু। মৃত্যুর এক ঘন্টা আগেও আমার সাথে দেখা হয়েছিল কিন্তু কথা হয় নি। মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মারা যান। আর আমার মা সেই ঘটনা কখনো ভুলতে পারেন নাই।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৩২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এগুলো আসলে ভোলার মতোও নয়।
আপনার পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইলো।
৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২৬
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
কাছের মানুষের মৃত্যু আমাদের কষ্ট দেয়। মনে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
সময় সেই ক্ষতে আবরণ পরিয়ে দেয়।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:০৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়লাম। মন্তব্য গুলোও পড়লাম।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আপনি পড়েছেন বলে ধন্য হলাম।
৬| ০১ লা মে, ২০২৩ রাত ২:১৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অত্যন্ত দুখজনক ঘটনা, এই দেশে রাস্তায় বের হলে কোন ভরসা নেই বাসায় জীবিত ফেরার। পরকালে রেহান শান্তিতে থাকুক।
০১ লা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:১৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ০১ লা মে, ২০২৩ ভোর ৫:২৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ঠিকই বলেছেন জীবন মৃত্যুর এক- দুইটি মহর্তে মানুষ আর কিই বা ভাবতে পারে ....।
রেহানের জন্য শোকার্ত হলাম। পোষ্টের কাহিনীতে থাকা মিডিয়া এডভোকেসি কোর্সের কথা মালায় ধরে
নেয়া যায় রেহান সম্ভবত সাংবাদিকতায় ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিল । এজ এ টিচার আপনি ভাল করেই
জানেন সাংবাদিকতায় দুটি বিষয় ত্যাগ করতে হয়- ভয় ও ভবিষ্যৎ চিন্তা। দুটি বিষয়ই ত্যাগ করে
পড়াশোনার পাশাপাশি এখনকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন শেষে এডভোকেসি বিষয়ে জীবনের ঝুকি নিয়েও
বহুবিধ বাধ্য বাধকতার বেড়াজালে নিপতিত হয়েও কাজ করে যাচ্ছে ।
মিডিয়া অ্যাডভোকেসি ব্যক্তি থেকে সামাজিক, ব্যক্তি থেকে রাজনৈতিক আচরণ বা অনুশীলন আর সেগুলি থেকে
জনসংযোগ ও জনবান্ধব পরিবেশ ফোকাসে স্থানান্তরিত করছে।যদিও প্রথাগত মিডিয়া এডভোকেসিগুলি জ্ঞানের
শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা করে,তার পরেও মিডিয়া অ্যাডভোকেসি পাওয়ার গ্যাপ টাও পূরণ করে। নীজ স্বাস্থ্য
আচরণ সম্পর্কে কিছুটা উদাসীন হলেও ( রেহানের সান গ্লাসেস কথা মালা স্মরনে রেখে বলা ) পরিবেশ , সমাজ
ও দেশ সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি জনসার্থ সংস্লিষ্ট বিষয়ে স্থান কাল পাত্র ও চারিদিকের পরিবেশের
উপর আরও বেশী সচেতনতামুলক ক্ষমতা অর্জনের দিকে ধাবিত করে।মিডিয়া এভোকেসি কোর্সের মাধ্যমে আহরিত
জ্ঞানের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীগন নিজেদের চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবে দেশের গণমাধ্যমের
প্রতিটি ক্ষেত্রে। তরুণদের এই মিডিয়া এডভোকেসি সম্পন্ন সাংবাদিকতা প্রীতি গণমাধ্যমগুলোর জন্য যেমনি বয়ে
আনবে সবুজ সংকেত, তেমনি তা দেশের জনগণের জন্য বয়ে আনবে সাফল্য। তারা সকলের মাঝে সচেতনতা
সৃজনের লক্ষ্যে আবেদনময়ী কন্ঠে আপনার মত করে বলবে তোমার কিসের এত তাড়া, এ রাস্তা পার হবে সাবধানে.
একটি সমসাময়িক সমস্যা ও তার সমাধানের বিষয়ে সকলের সচেতনতা সৃজনের লক্ষ্যে বেশ ভাল উপমা নির্ভর
কথামালা সমৃদ্ধ পোষ্ট । পাঠে ভাল লাগল ।
শুভেচ্ছা রইল
০১ লা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:২৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ ড. এম এ আলী, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভয় ও ভবিষ্যৎ চিন্তা ত্যাগ করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। সাংবাদিকতা কেবল একটা পেশা মাত্র!
মিডিয়া এডভোকেসির পরিসর এত বিস্তৃত যে, পৃথিবীতে কোনো বিষয়ই এডভোকেসির বাইরে নয়। মিডিয়া যেহেতু গণ এবং জন সম্পৃক্ত তাই বিভিন্ন ইস্যুতে মিডিয়ার আলাদা আবেদন থাকে, সেই সাথে অবদানও।
আজকাল সাফল্য নিজে এসে ধরা দেয়, তাকে আর বয়ে আনতে হয় না।
অনেক অনেক ভালো থাকুন।
৮| ০১ লা মে, ২০২৩ সকাল ১০:০২
অপু তানভীর বলেছেন: কাছের কিংবা পরিচিত মানুষ গুলোর মৃত্যু আমাকে বরাবর দুঃখ দেয় । এই দুঃখের পরিমানটা যে কত সেটা আসলে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না । আমার জীবনে এই ঘটনা দুইবার ঘটেছে । যার একটার শোক আমি আসলে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারি নি । আমার ক্লাস নাইনে পড়া একজন ছাত্র অকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখনও ওদের বাড়িতে যাওয়ার সাহস করতে পারি না।
০১ লা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: অনেক অল্প বয়সে চলে গেছে, এটা ভাবতেই খারাপ লাগে।
আল্লাহ তা'য়ালা ওদের আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। আমিন।
৯| ০১ লা মে, ২০২৩ রাত ৯:৪১
ঢাবিয়ান বলেছেন: পড়তে পড়তে ভাবতেই পারিনি শেষে এমন কিছু ঘটবে! কি প্রানবন্ত একটা প্রান এভাবে অকালে ঝড়ে পরল।
০১ লা মে, ২০২৩ রাত ১০:৩৬
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ইমামুলের জন্য দোয়া করবেন।
১০| ১৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:৫৪
কিরকুট বলেছেন: আসলে আমাদের বড্ড তাড়া। খুধার তাড়া, মেধার তাড়া, বাচার তাড়া। এত্ত সব তাড়ার ভেতরব জীবন বাচানোর তাড়াটাই কেবল ভুলে যাই।
২০ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:৪৪
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আমাদের জীবনের চিত্রনাট্য সম্ভবত এভাবেই লেখা...
ধন্যবাদ কিরকুট।
১১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৮
মিরোরডডল বলেছেন:
নন্দিনীকে অনেকদিন পর অনলাইনে দেখছি।
নতুন লেখা পড়বো কবে।
প্রায় সাত মাস হতে চললো পোষ্ট দেয়া হয় না।
আশা করি সব ঠিক আছে।
২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: প্রায় সাত মাস! অনেকদিন তো বটেই... একেবারে বেশি বেশি করে ফেলছি
১২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ঢাকা শহরে রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন একটি কাজ। এই কাজটি করার জন্য অনেক সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।
২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ
১৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯
মিরোরডডল বলেছেন:
নন্দিনীর কাছ থেকে নতুন পোষ্ট চাই।
নন্দিনীকে আমি চেষ্টা করি আপু বলে না ডাকতে।
নন্দিনী নিকটা এতো সুন্দর! তাই এই নামেই ডাকতে ভালো লাগে।
আশা করি নতুন পোষ্ট নিয়ে আবার নিয়মিত হবে।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩১
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: নন্দিনীও নতুন পোস্ট লিখতে চায়...
লেখালিখিতে নিয়মিত আমাকে হতেই হবে। না হলে তো আবার আফসোস করে বলতে হবে, 'এক পৃথিবী লিখবো ভেবে, একটি খাতাও শেষ করিনি'।
আপনার ভালোবাসা আমার জন্য চাঁদের আলোর মতোই স্নিগ্ধ!
ভালো থাকবেন।
১৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৪৪
মিরোরডডল বলেছেন:
কেমন আছে নন্দিনী।
আবার কোথায় হারিয়ে গেলো, নতুন লেখা চাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫০
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনা অত্যন্ত নির্মম। আমাদের দেশে গরু ছাগল চিনলেই লাইসেন্স দেয়া। সড়ক দুর্ঘটনাতে কোন স্কুল ছাত্র নিহত হলে মন্ত্রী দাঁত বের করে হাসে। সত্যি সেলুকাস...