নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নসটাল-জিয়া

ভাল লাগে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে ভাল লাগে ঐ আকাশের তারা গুনতে ভাল লাগে মেঘলা দিনে নিস্পলক.......... বন্ধু......

নসটাল-জিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দশ টাকার জীবন"

১৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

১ম পর্ব: রিক্সা জীবন

অনেক দিন পর আজ দুপুরে এক চিলতে ঘুম দিলাম। মনটা বেশ ধরঝরে কিন্তু মাথার ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল। বাসা থেকে বের হয়ে পদ্মা পাড়ে হাটা দিলাম। পথিমধ্যে একটা ঔষুধের দোকান থেকে পাঁচটা প্যারাসিটামল নিয়ে দোকানদার কে ২০ টাকার একটা নোট দিলে, দোকানদার একটা ১০ টাকার নোট ধরিয়ে দিল। নোট টি তার যৌবন হারিয়ে এখন বার্ধক্যে বিচরণ করছে। টাকাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছি। এদেশের সরকার বাহাদুর গতকাল থেকে সীমিত আকারে লক ডাউন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই চারপাশে মানুষের সীমিত আকারে চলাফেরা চোখে পড়ছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন ছিল প্রতিদিন দশের কোঠায় তখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল আর এখন প্রতিদিন যখন প্রায় হাজারের কোঠায় তখন লকডাউন সীমিত আকারে প্রত্যাহার করা হলো। তাই এখন জীবন যার যার, লকডাউন তার তার। বুঝলে বুঝপাতা, আর না বুঝলে তেজপাতা।

আলুপট্টি মোড়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য‌কে‌ দেখলাম উদ্দেশ্যহীনভাবে মাঝ রাস্তা‌য় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে। বুঝতে বাকি রইল না, একটা অতি সাধারণ কিন্তু অসাধারণ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এদের মাথার মধ্যে; মানুষের কোন কোন প্রয়োজন "সীমিত আকারের" প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে???" এই প্রশ্নের উত্তরটি একটি কমন ফরমেটে না নিয়ে আসতে পারলে, এই আমার মত সীমিত আকারে হাঁটতে বের হওয়া মানুষদের পথ আটকানো তাদের জন্য মুশকিলই বটে। বিশেষ প্রয়োজন কিংবা জরুরী প্রয়োজন‌ এর সংজ্ঞা আমরা জানি কিন্তু 'সীমিত আকারের প্রয়োজন'?

যাইহোক, মনটা ফুরফুরে কিন্তু শরীরটা সীমিত আকারে ডিস্টার্ব। আনমনে সামনের দিকে এগুচ্ছি। আমার হাতে থাকা সেই ১০ টাকার নোটটি হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠলো যেন। একবার নয়, একাধিকবার এপাশ-ওপাশ মোচড়া-মোচড়ি করল।

-- অনেকটা আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলাম! শরীরটাকে এভাবে এপাশ-ওপাশ মোচড়ানোর হেতু কি?
- আর কইয়েন না মোটা ভাই, হেই যে লকডাউন শুরু হইছে, আজ এক মাসের উপরে, বিছানার তোশকের নিচে চাপা পইড়া থাকতে থাকতে শরীরডাত যেন জং ধইরা গেছে।
- কেন মানুষ কি টাকা খরচ করা বন্ধ করে দিয়েছে?
-- না ব্যবাক মানষে তো আর বন্ধ করে নাই। কিন্তু আমার সবশেষ বাহক যে বেডাই ছিল, হ্যাঁ হইল একজন অটোরিকশা চালক, মাইনে ব্যাটারি রিক্সা আর কি! আজ দেড় মাস যাবত হ্যা কামে বাহির হইতে পারে নাই। আর সাথে আমারেও আটকায় রাখছে।
-- আটকে রাখছে কেন? এই দেড় মাসে কি তার কেনাকাটার প্রয়োজন হয়নি?
- মোডা ভাই, এই হইল মানুষের একটা দোষ! হয়তো কইবেন ১০ টাহার একটা নোট কিন্তু ফাল পাড়ো ১০০০ টাহার লাহান! আজ দেড় মাস থাইকা হুনতাছি ত্রাণের নামে আপনারা বেবাক মানষেরে খাবার বিতরণ করতাছেন, চাল, ডাল, আটা, আলু, লবণ, তেল আরো কত কি! কিন্তু খাবারের থাইকাও যে একটা বড় দরকার আছে, যেইডা না হইলে মানুষের চলবই না সেদিকে আপনাগো কারো খেয়ালই নাই!
-- কেন? পেটে যদি ভাত না থাকে অন্য দিকে খেয়াল দেয়ার সুযোগ আছে? ভাত থাকলে তবেই না বাঁচবে, আর বেঁচে থাকলে বাকিগুলোও ম্যানেজ হয়ে যাবে, তাই না!
-- হ ভাই, আমিও সেইটাই কইতাছি! বাঁচাটায় সবার আগে! সেই রিকশাওয়ালা ব্যাডার একটা পোলা আর একটা মাইয়া! আল্লাহর কি কাম, দুইডা বাচ্চাই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। দুই মাস অন্তর অন্তর রক্ত বদলান লাগে। দুই বেলা ভাত না খাইলেও চলে, কিন্তু ওষুধ না খাইলে হ্যাঁগো চলে না। তাই শেষদিনের ভাড়ার টাকা সহ আরও কিছু ১০০, ৫০, ২০, ১০ টাকার নোট মিলাইয়া আমার সাথে আরও ১,২৫০/= টাকাকে আলাদা কইরা তোষকের নিচে রাখছিল। জরুরী ঔষধ ও রক্ত কেনার শেষ সম্বল। ভাত নাকি ঔষধ কোনটা বেশি জরুরি, এই পরিবারের কাছে, এখন আপনিই কন?

বেঁচে থাকার জন্য মানুষরে যে কত টেনশন নিতে হয় হেই দেড় মাস এই বাসায় না থাকলে হয়তো জানতেই পারতাম না। মিয়াবিবি মিল্লা ত্রাণ সংগ্রহ করছে, গোপনে মানুষের বাড়ি কামলা দিছে তাতেও যখন কুলায় নাই তখন বউডার একটা স্বর্ণের চেইন আছিল, সেইডাও বেইচ্চা দিছে। তার পরেও আমি সহ এই ১২৬০ টাকায় হাত দেয় নাই। স্বর্ণের চেইন খান বিক্রি করে আসার পর, ঘুমাইতে যাওনের সময় বউডার সে কি বুকফাটা কান্না! মায়ের কান্না দেখে সাথে যোগ দিছিলো বাচ্চা দুইটাও! তিনজন মিলে একে অন্যকে ধরে সে কি হাউমাউ কান্না! বিয়ার সময় বউডার মায়ে স্বর্ণের চেইন খানা দিছিল! জানেন মোডা ভাই, তাদের কান্নায় সেদিনের বাতাস ভারি হইয়া উঠছিল, সেই রাইতে যেন গভীর ঘণ অন্ধকারের বুক ভাইটাও কান্না ঝরছিল। পোলা মাইয়া দুইটা তো কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমাই গেছিল কিন্তু বউটা সারারাত ঘুমায় নাই, তোষকের নিচে থাইকা আমাদের কানে থাইমা থাইমা আসতেছিল তার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ। সেই রাতে জামাইডাও ঘুমায় নাই, ওপাশ ফিরা বেক্কলের লাহান শুইয়া আছিল, আর থাইমা থাইমা বুকের গভীর থেকে বাইর হওয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাসে ঘরের বাতাস যেন ডানা ঝাপটাচ্ছিল।

গতকাল লকডাউন কিছুটা শিথিল হওনের পর, আজকে আবার রিক্সা নিয়া বাইর হইছে। আজ সকালে বৌডা তার জামাইয়ের হাতে একটা সস্তা মাস্ক ধরাই দিয়া কইলো " খবরদার এটা মুখ থ্যাকা খুলবা না বলে দিছি। গাড়িটা লিয়ে বাহির হও, ঘরে খাবার দাবার কিছু নাই। নাইলে যে ভাইরাসের আগে না খেয়েই মরে যেতে হবে। ছেলে মেয়ে দুইটার ওষুধ শেষ, ওইখান থেকে ৫০০ টাকা দিলাম, মনে করে ওষুধ গুলান লিয়ে লিও" এই দেড় মাসে অনেক কিছু জানতে পারছি। রাজশাহীর মানুষ বড় বোকা! কেমনে মানুষ ঠকায় টাকা নিতে হয়, সেই কামডা অহনো ভালো করে শিখতে পারে নাই। হের লাইগাই তো সকলে তাগরে মামুর বুঠা কয়। আওনের সময় বাচ্চা দুইটার লাইগা আর বউডার লাইগা খুব মন কান্তাছিল। কিন্তু টাকার তো ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন দাম নাই। শেষ পর্যন্ত, আজ দেড় মাস পর তোষকের তলায় থাইকা আইছি ওষুধের দোকানদারের হাতে, আপনি আসার ঠিক আগেই। পরক্ষনেই ঔষধের দোকানদারের কাছ থেকে আবার আপনার হাতে আইছি। শরীরডা যেন কাঠ হয়া গেছিল, তাই একটু ছাড়ায় নিলাম।

-- তোমার গায়ে তো সবকিছুই শুদ্ধ বাংলায় লিখা তাহলে তোমার ভাষায় কেন আঞ্চলিকতার ছাপ?
- ওহ, হেই কথা! আসলে আমরা টাকা বাংলাদেশের সব অঞ্চলের ভাষাতেই কথা বলতে পারি। আমাদের বিচরণ তো সারা দেশ জুড়েই। কিন্তু হেই ভাষাডা হইলো গিয়া আমার মাতৃভাষা। আমার জন্মস্থান ঢাকায়.........

(চলবে.....) দ্বিতীয় পর্ব: আহ্, আমার জন্ম..

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাড়ি কি টেপাখোলা? ফরিদপুর?

২| ১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৯:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: স্মৃতিবহ জীবন। মাছের নৌকায় পদ্মাপার হয় লোক

৩| ১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১০

নসটাল-জিয়া বলেছেন: না ভাই, রাজশাহীতে....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.