![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে জলবায়ুর গতিপ্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর আগ্রাসী পরিবর্তন ধিরে ধিরে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কুমেরু ও হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ,জলকম্প, ভুমিকম্প সহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতক্ষ্য স্বীকার।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধারণাঃ কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের অর্থাৎ ১ থেকে ৭ দিনের বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির গড় অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অন্যদিকে সাধারণত ৩০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়ার গড়কে জলবায়ু বলে। জলবায়ু ধিরে ধিরে পরিবর্তিত হয়ে একসময় প্রকট রূপ ধারণ করে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবরতনঃ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট হারাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ সহ অনেক অনুন্নত দেশ। ১৯৮০’র দশক থেকে গ্রীন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীতে গড়ে ০.১ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে কুমেরু অঞ্চলের বরফ গলেছে আগের চেয়ে দিগুণ হারে। এর ভয়াবহ ফল হিসেবে অচিরেই সাগরের উচ্চতা কয়েক মিটার বেড়ে গিয়ে তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী অনেক শহর বন্দর। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দেখা দেবে খরা, তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টি। ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে , বনসম্পদ নষ্ট হবে এবং জীবজগতের ২৫ ভাগ বিলপ্ত হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ঘটতে শুরু করেছে। তাই সারা বিশ্বে জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত হুমকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ জলবায়ুর স্বাভাবিক সাম্যাবস্থা ভেঙে যাওয়ার ফলে ঋতুর স্বাভাবিক গতি প্রকৃতির পরিবর্তন সহ বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন বাংলাদেশ। ঝর,অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাক্ররতিক দুর্যোগে জর্জরিত বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ২০৫০সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের স্বীকার হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পানি, মাটি ও ফসলের ওপর। উপকূলীয় মানুষ হারাবে বাসস্থান, বাড়বে পানিয় জলের সংকট। জীবনযাত্রার স্বাভাবিক মান বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবঃ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফল বাংলাদেশের ওপর পড়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
বৃষ্টিপাত হ্রাসঃ যদিও সল্প সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত বেড়েছে কিন্তু মৌসুমী বৃষ্টিপাতের চক্র দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে ২০১০ সালে বিগত ১৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ভরা বর্ষাকালেও ফসল পুড়েছে।
লবণাক্ততা বৃদ্ধিঃ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর প্রভাব সুন্দরবন সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়া শুরু করেছে।
অস্বাভাবিক তাপমাত্রাঃ বাংলাদেশকে বলা হয় নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ভারসাম্যহীনতার কারণে সেই পরিচয় ম্লাণ হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্র বৃদ্ধির হার ০.৫% । ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং ২১০০ সাল নাগাদ ২.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রীষ্ণকালে তাপমাপমাত্রা প্রচন্ড বাড়বে এবং শীতকালে একি হারে কমবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস ও মরুকরণঃ সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে বৃষ্টিপাতের অনুপাত কমে যাওয়ায় ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে খরায় আক্রান্ত হবে দেশের উত্তরাঞ্চল। এর ফলে মরুকরনের সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ২০৫০ সাল নাগাদ উদ্বাস্তু হবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।
সুপেয় পানির অভাবঃ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ায় এবং লনণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। ২০২০ সাল নাগাদ এ সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াঃ জলবায়ুর আগ্রাসী পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
বন্যাঃ বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত তালিকায় বন্যার জন্য ঝুঁকিতে থাকা ১২ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। গত কয়েক দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ছিল ৬১ শতাংশ এলাকা। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ৪০ শতাংশের ও বেশি এলাকা প্লাবিত হয়ে ছিল। ২০১৩ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় ১০শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে ছিল।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসঃ বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস বিগত ২০০ বছরের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে , যেখানে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় ঘূর্ণিঝরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিএস বলেছে ১৭৯৫ থেকে ১৮৪৫ এবং ১৮৪৬ থেকে ১৮৯৩ সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে মাত্র তিনটি। ১৮৯৭ থেকে ১৯৪৭ সময়ের মধ্যে ঘূর্নিঝড় হয়েছে ১৩ টি। ১৮৪৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ঝুর্ণিঝড় হয়েছে ৫১ টি। ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ঝরের সংখ্যা বেড়েছে এবং সামনে আরো বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
খরাঃ ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কখনো একযোগে খরা দেখা দেয়নি। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২০ বার খরা কবলিত হয়েছে। ভবিষ্যৎ এ আবহাওয়াবিদ্রা বড় ধরণের খরার আশংকা প্রকাশ করছে।
ভূমিধ্বসঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিধ্বস একটি। প্রায় সময়ই ভূমিধ্বস কেড়ে নেয় মানুষের জীবন ও সম্পদ। প্রতিনিয়ত পাহাড়ি এলাকার গাছপালা কাটার ফলে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পঃ প্রাকৃতিক কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ১৯০০ সালের পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৯০ টির ও বেশি ভূমিকম্প নথিভূক্ত হয় যার মাত্রা ৫ এর ওপরে। গবেষক্রা মনে করেন এই ঘন ঘন অল্প মাত্রার ভূকম্পন ৮ মাত্রায় ও আঘাত হানতে পারে।
শিলাবৃষ্টিঃ দিনে দিনে শিলা বৃষ্টির পরিমান বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। প্রতি বৈশাখে স্বাভাবিক নিয়মে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকলেও বিগত কয়েক বছরে এর আকৃতি ও পরিমাণ দুটোই বেড়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ দিন দিন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। UNFCC’র দেওয়া তথ্যমতে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ১৭% ভূমি তলিয়ে যাবে।
এছাড়াও নদীভাঙ্গন প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস, মৎস্য সম্পদ হ্রাস, জীবপ্রজাতির বিলুপ্তি, উদ্ভিদ প্রজাতির ধ্বংস, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাস, জীবিকার উৎস হ্রাস, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও সামাজিক অবক্ষইয়,অপুষ্টি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি সহ নানাবিধ জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে আক্রান্ত বাংলাদেশ। আর এর ভুক্তভোগির সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।
প্রতিরোধঃ জলবায়ু পরিবর্তনের গতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। নিম্নে এগুলো উপস্থাপন করা হলঃ
১। জন সচেতনতা বৃদ্ধি;
২। উপকুল জুড়ে সবুজ বেষ্টনী গরে তোলা;
৩।কালো ধোয়া নির্গমণকারী জানবাহন অপসারণ;
৪। সমুদ্রে জেগে উঠা দ্বীপ গুলোর ভাঙন রোধে বাধ নির্মাণ;
৫।ব্যাপক হারে বনায়ণ;
৬।কৃষি জমি রক্ষার্থে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ;
৭।অনাবাদী জমি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা;
৮।জলবায়ুর যে তহবিল রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার;
৯।পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপন রোধ;
১০। প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকা ;
১১। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ।
জলবায়ুর পরিবর্তন একদিনে রোধ কর সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সর্বস্তরের মানুষের প্রচেষ্টা। পরিবেশ নীতি বজায় রাখা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, অতিরিক্ত কল্কারখানার ধোয়া মারাত্মকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। তাই এগুলো বন্ধ করার জন্য জলবায়ু কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০৪
রাকু হাসান বলেছেন:
।
ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে আমরা
view this link দেখতে পারেন এই পোস্টটিও ।