নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অন্যতম স্থপতি, সিপিবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য কমরেড ফরহাদ। ‘অপরূপ রাজনৈতিক নায়ক' কমরেড ফরহাদ পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে সুদূর পঞ্চগড়-বোদা থেকে স্বপ্ন বুকে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন জাতীয় নেতা হবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে, মোহাম্মদ ফরহাদ একজন জাতীয় নেতার পরিচিতি নিয়েই অকালে প্রয়াত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে, অকাল প্রয়াণের আগ পর্যন্ত যিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তৎকালীন পাকিস্তানে বে আইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসেছিলেন। এই অল্প জীবনে তিনি কারান্তরালে এবং আত্মগোপন অবস্থায় কাটিয়েছেন প্রায় ১৪ বছর। মেট্রিক পাশ করার পর তিনি গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে রাস্ট্র দ্রোহী মামলা হয়েছে। হ্যান্ডক্যাপ সমেত তার দ্রোহী ছবি সে সময়ের কর্মী বন্ধুদের প্রতিবাদী করে তুলে। ১৯৮৬ সনে তিনি এম, পি হন। পার্লামেন্ট এ তার বক্তৃতা দেশবাসী কে উৎসাহিত করে নবতর সংগ্রামে। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি পার্টির নির্দেশ মেনে সংগঠক এর দায়িত্বে ছিলেন। ৬২ ‘র শিক্ষা আন্দোলনের ‘মস্তিষ্ক ছিলেন। ষাটের দশক জুড়ে ছাত্র আন্দোলন-সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ গোপন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে। বাষট্টির ঐতিহাসিক সামরিক শাসনবিরোধী এবং শিক্ষা আন্দোলন পরিচালনার ‘মস্তিষ্ক’ হিসাবে মোহাম্মদ ফরহাদের পরিচিতি ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশের বামরাজনীতির আদর্শনায়ক, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি, জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য এবং বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আহমেদ সাদাকাতুল বারি এবং মাতার নাম মরহুমা তৈয়বুন্নেসা। তার পিতা ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় তার দখল ছিল। মোহাম্মদ ফরহাদের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। শিশুকাল শৈশব কৈশর কেটেছে দিনাজপুরে। বাল্যকালে দিনাজপুর প্রাইমারী স্কুলে পড়াশুনা করেন। তখন চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ সময় তিনি তার বাবার কাছ থেকে যুদ্ধের বিবরণ শুনে নানা প্রশ্ন করতেন। যুদ্ধ কারা করে, কেন করে, কেন মানুষ মারে আরও কত কি? এভাবেই ধীরে ধীরে রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে তিনি সপ্তম শেণীর ছাত্র। তিনি ছাত্র হিসেবে খুব তুখোড় ছিলেন। তখন তিনি মুকুল ফৌজ নামে একটি শিশু-কিশোর সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। এই সংগঠনটি ছিল মুসলিমলীগের দৈনিক মুখপত্র আজাদ পত্রিকার। পত্রিকার শিশু-কিশোর পাতায় তিনি অনেক লেখা লিখেছেন। ওই সংগঠনে কাজ করে এক পর্যায়ে তিনি সংগঠনের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৪৮-৪৯ সালে স্কুলের মিলিশিয়াতে যুক্ত হন। এই মিলিশিয়া বাহিনীতেও তিনি যোগ্যতা অর্জন করে লিডার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি খেলাধুলায় তেমন পারদর্শী ছিলেন না, তবে ভাল আবৃতি করতেন। নাটকও করেছেন বেশ কয়েকবার। মাছধরা, পাখি শিকার ও ঘুরে বেড়ানো তার ছিল স্বাভাবিক নেশা। মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৫৩ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গী ছাত্র আন্দোলনে ও শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে (সম্মেলন) কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি দিনাজপুর জেলা স্কুলের একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে সর্বদাই পরিচিতি ও প্রশংসিত ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রবেশিখা পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ণ হন এবং দিনাজপুরের তদানিন্তন একমাত্র কলেজ দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে আই.এ পাস করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি সুনামের সাথে বি.এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পাস করেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যকলাপে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করেন। ১৯৬২ সালে আইন অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ুব খান ফরহাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া বের করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন কমরেড ফরহাদ। সি,পি,বি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর (মুক্তি বাহিনী) প্রধান সংগঠক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি অন্যতম প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৫২’র বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
স্বাধীন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশ্য করার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ ফরহাদের উদ্যমী উদ্যোগ ছিল লক্ষণীয়। ১৯৭৩ এর তৃতীয় কংগ্রেসে সিপিবি স্বাধীন দেশে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পঁয়ত্রিশ বছরের মোহাম্মদ ফরহাদকে নির্বাচিত করে ফরহাদ-বৈশিষ্ট্যের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে। ক্ষিপ্র, গতিশীল, নিবেদিত, ধারাবাহিক যে নেতৃত্ব। কিসিঞ্জারের আগ্রাসী প্রতিশোধ পরিকল্পনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলেন। ১৯৭৯ সালে জিয়া সামরিক শাহী মোহাম্মদ ফরহাদকে দেশদ্রোহের দায়ে গ্রেফতার করে। তার আটকাদেশের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ রায় দেন যে, 'মোহাম্মদ ফরহাদকে বিনা বিচারে আটক রাখা অন্যায় এবং সরকার বেআইনীভাবে তাকে আটক রেখেছে। সরকারপক্ষ মামলায় হেরে যায়। ১৯৮০ সালের পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে মোহাম্মদ ফরহাদ পুনঃনির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক পদে। আশির দশকে বিশেষত ক্ষেতমজুর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সারা দেশে তৃণমূলে সমীহ অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৮০ সালে তাকে পুনরায় রাজদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। 'বিপ্লব' ও 'সরকারকে শক্তি বলে উৎখাতের' মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের সামরিক সরকার আবার তাকে গ্রেফতার করে এবং ক্যান্টনমেন্ট জেলে অন্ধকার কক্ষে ১৪ দিন আটক রাখে। এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণ আন্দোলনে মোহাম্মদ ফরহাদ কার্যত জননেত্রী শেখ হাসিনার পরেই দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করেন নেতৃত্বের বৈগুণ্যেই। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের নবীন সদস্য হিসাবে প্রবীণের অভিজ্ঞতাকেও যেন ছাড়িয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন। এবছর চতুর্থ কংগ্রেসেও তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। অকাল প্রয়াণের আগ পর্যন্ত যিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৮৭ সালের ১০ আগস্ট চিকিৎসার জন্য মস্কো যান। ৬ অক্টোবর তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করে হোটেলে অবস্থান করেন। বিপ্লব পিপাসু কমরেড ফরহাদ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালের ৯ই অক্টোবর রাশিয়ার মস্কো শহরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে আজও মোহাম্মদ ফরহাদ-নেতৃত্বের শূন্যতা কাটেনি। মৃত্যুর পর আজো পর্যন্ত তিনি প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের কিংবদন্তি কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের আজ ৮০তম জন্মবার্ষিকী। বাষট্টির আন্দোলনের ‘মস্তিষ্ক’প্রখ্যাত রাজনীতিবীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে শামচুল হক ভাই,
কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মদিনে
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: স্যলুট কমরেড।
০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই
সর্বদা সাথে থেকে উৎসাহ প্রদানের জন্য।
৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১২
চাঁদগাজী বলেছেন:
এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তিনি রাজনীতিতে অদক্ষ ছিলেন।
০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন সৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণ আন্দোলনে মোহাম্মদ ফরহাদ কার্যত জননেত্রী শেখ হাসিনার পরেই দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করেন নেতৃত্বের বৈগুণ্যেই। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের নবীন সদস্য হিসাবে প্রবীণের অভিজ্ঞতাকেও ছাড়িয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন কমরেড ফরহাদ।
৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনি এরশাদ আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছিলেন, পার্লামেন্টে উনার ভুমিকা উল্লেখযোগ্য নয়; উনি যেই মতবাদের পক্ষের লোক ছিলেন, সেই মতবাদের পক্ষে উনার ভুমিকা নগণ্য। উনার বড় ভুমিকা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।
০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একজন দেশপ্রেমিক খাটি মুক্তি যোদ্ধা দেশের গর্ব।
যা হোক তার মত নেতৃত্ব দেবার সাধ্য অনেকেরই নাই
তাই তিনি আমার কাছে আদর্শ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯
শামচুল হক বলেছেন: কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।