নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরুসিংহ ওমর আল-মুখতারের ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮


ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহানায়ক ওমর আল-মুখতার। লিবিয়ার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা একটি নাম ওমর মুখতার। যার দেশপ্রেমের স্মৃতি স্মরণ করে লিবিয় ছোট্ট শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধরাও এখনো চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দেয় । অকুতোভয় এই বীর দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইতালিয়ান শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ান মুজাহিদদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তার সমসাময়িক অন্যান্য নেতার মতো ইতালিয়ানদের প্রস্তাব করা সুযোগ সুবিধার কাছে নিজেকে বিকিয়ে না দিয়ে, ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত লড়াই করে অবশেষে তিনি ইতালিয়ানদের হাতে ধরা পড়েন। প্রহসনের এক বিচারের মাধ্যমে ইতালির ফ্যাসিস্ট সরকার ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ড দেয়। তিনি শুধু একজন প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবেই নয় বরং অসাধারণ গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে মানুষের মনে বেঁচে আছেন, যার ট্রেডমার্ক চশমার মধ্যে চিরপরিচিতের ছাপ পান লিবিয়ানরা। ওমর আল মুখতারের শহীদ হওয়ার পর ৮৬ বছর কেটে গেছে। কিন্তু, তিনি এখনও লিবিয়ানদের সামষ্টিক স্মৃতিতে অক্ষয় রয়েছেন। আজ তার ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মরুসিংহ ওমর আল-মুখতারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনে প্রাণপুরুষ ওমর আল মুখতার ১৮৬১ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব লিবিয়ার সিরনিকার আল-বুতনান জেলায় যাওইয়াত জানযুর গ্রামের সবচেয়ে আলোচিত আল মানফাহ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি পিতৃমাতৃহীন হন। হজ পালনে সৌদি আরবের মক্কার পথে দীর্ঘ পদযাত্রা করার সময় তার বাবা মারা যান। ওমর আল মুখতার স্থানীয় মসজিদে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। সেনুসি আন্দোলনের মূলকেন্দ্র জাগবুবের সেনুসি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ৮ বছর শিক্ষালাভ করেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী বিশিষ্ট আলেম শেখ হুসেইন গারিয়ানির অধীনে পড়াশুনা করেন ওমর আল মুখতার। গারিয়ানির শিষ্যতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো কুরআন মুখস্থ করে ফেলেন তরুণ ওমর। তারপর লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আল জাগবুব এলাকায় ভ্রমণ করেন তিনি। সেটা ছিল ইসলামি সংস্কার আন্দোলনের পুরোধা শেখ মোহাম্মদ ইবন আলি সেনিউসির এলাকা। তার অধীনে আট বছর ধর্মতত্ত্ব, ইসলামিক বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন আল মুখতার। ১৮৯৭ সালে আল মাহদি তাকে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর যাওইয়াত আল কুসুরের গভর্নর নিয়োগ করেন। সেখানে তার প্রজ্ঞা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিবাদ মীমাংসায় পারঙ্গমতার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৯৯ সালে চাদে ফরাসীদের প্রতিহত করার জন্য রাবিহ আযযুবায়েরের সাহায্যার্থে অন্য সেনুসিদের সাথে তাকে চাদে পাঠানো হয়। তারপর আল মুখতার সুদান ভ্রমণ করেন। সেখানেও কয়েক বছর সরকারি দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে এক পর্যায়ে ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর জন্য কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেন এই প্রতিরোধ যোদ্ধা।

প্রথমে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন ওমর আল মুখতার। তারপর ইতালির ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন আল মুখতার। ১৯১১ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ইতালি যুদ্ধ ঘোষণা করলে আল মুখতার ‘শেখ অব দ্য মুজাহিদিন’ উপাধি পান। কারণ তিনি এক হাজার সেনা নিয়ে পূর্ব বেনগাজিতে অটোম্যান সেনাদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯১২ সালে লিবিয়াকে ইতালির ঔপনিবেশ ঘোষণা দেয় রোম। এর পরবর্তী ২০ বছর আল মুখতার ইতালির ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। ওমর আল মুখতারের গেরিলা হামলার মুখে ইতালির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। লিবিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দার্নাতে দুই দিনব্যাপী যুদ্ধে ৭০ জন ইতালীয় সেনা নিহত ও শতাধিক সেনা আহত হয়েছিলেন। নিয়মিত ওমর আল মুখতারের হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইতালীয় সেনারা। ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইতালির অশ্বারোহী বাহিনীর সঙ্গে এক লড়াই হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে আল মুখতারের এক সহযোগী তাকে ‘সিদি উমর’ বলে ডাক দেন। এতে ইতালীয় সেনারা তাকে চিহ্নিত করে এবং আটক করার চেষ্টা চালায়। শেষে ইতালীয় সেনাদের হাতে আটক হন ‘মরুভূমির সিংহ’খ্যাত ওমর আল মুখতার। তিন দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর আল মুখতারের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার এই প্রতিরোধ যোদ্ধাকে জনসমক্ষে ফাঁসি দেয়া হয়। বিচারের সময় ইতালিয়ানরা তাকে সুযোগ দেন- তিনি দেশ থেকে পালাতে পারবেন যদি তার মুজাহেদিনদের অস্ত্র ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু, এটা না করে ওমর আল মুখতার ফাঁসির মঞ্চে চিৎকার করে বলেন, ‘আমার শাহাদাত আঙুল যেটা প্রতিদিন সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নাই এবং মোহাম্মদ (সা) তার রাসুল তেমনি সেই হাত দিয়ে মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করা সম্ভব নয়। আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা জয়ী হব, নচেৎ আমরা শহীদ হব।’

একজন দেশপ্রেমিক সৎ -সত্যবাদী ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের প্রাণ পুরুষের ফাঁসি কার্যকরের দিন যখন তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন সেটা দেখার জন্য ২০ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল। তিনি কালেমা শাহাদাত পড়ে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আল মুখতারের অসাধারণ জীবনের শেষপর্ব দেখানো হয়েছে, ১৯৮০ সালে নির্মিত সিনেমা ‘লায়ন অব দ্য ডেজার্ট’- এ। অ্যান্থনি কুইন আল মুখতারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি বিশ্বজুড়ে বেশ সাড়া ফেললেও ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত ইতালিতে নিষিদ্ধ ছিল।

'লায়ন অফ দ্য ডেজার্ট' নামের অসাধারণ এই ফিল্মটি সাড়া ফেলে দেয় গোটা দুনিয়াতে। ইতালিতে নিষিদ্ধ করা হয় যার প্রচার। এই ফিল্মে ওমর মুখতারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এন্থনি কুইন যিনি মুস্তাফা আক্কাদেরই বিখ্যাত আরেক ফিল্মে হযরত হামযা (রা.) এর ভূমিকায় ছিলেন। লিবিয়ানরা খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক এই ‘মরুভূমির সিংহ’কে। ওমর আল মুখতার প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে যাবে।আল্লাহ তায়ালা তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে স্থান করে দিন। ওমর মুখতার, দ্য লায়ন অব দ্য ডেজার্ট বা মরুর সিংহ- লিবিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রখ্যাত সেই ইমাম, সেই শিক্ষক- আলেম, সেই শহীদ, সেই বিখ্যাত নেতা, যিনি আজো আমাদের মুসলিম জাতির অনুপ্রেরণার অংশ, আল্লাহ আমাদেরকে তার মতো করে দিন। আজ মরুসিংহ ওমর আল-মুখতারের ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মরুসিংহ ওমর আল-মুখতারের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আজই তার সম্পর্কে প্রথম জানলাম।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
না জানা দোষের নয়,
তবে জানতে না চাওয়া অপরাধ !!

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: সাহস আছে লোকটার।


‘আমার শাহাদাত আঙুল যেটা প্রতিদিন সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নাই এবং মোহাম্মদ (সা) তার রাসুল তেমনি সেই হাত দিয়ে মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করা সম্ভব নয়। আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা জয়ী হব, নচেৎ আমরা শহীদ হব।’
দারুন কথা।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মহাজনেরা এমনই হয়!
এ জন্য্ই তারা প্রাতঃসরণীয়।

মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয় সেই পথ লক্ষ্য করে
স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে আমরাও হব বরণীয়।


আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।
আমিন

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭

মাহিরাহি বলেছেন: আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমীন ।-

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৭

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: ওমর আল মুকতারদের মত মানুষকে নিয়ে উচ্চ বাক্য হয় না। চে দের নিয়ে মাতামাতির অভাব নাই। আমি বলছিনা যে চে খারাপ তবে পরিপূর্ণ নয়।

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন:
না জানা দোষের নয়,
তবে জানতে না চাওয়া অপরাধ !!

ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.