নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মবার্ষিকেতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩


বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শেখ রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঘাতকদের নির্মম বুলেট মাত্র দশ বছর বয়সী এই শিশুটির প্রাণও কেড়ে নেয়। কোনো কাকুতি-মিনতি কিংবা নিষ্পাপ মুখশ্রী নিষ্ঠুর দুর্বৃত্তদের মন টলাতে পারেনি। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাসেলের ছোট্ট বুক বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ঘাতকের বুলেটে শহীদ হওয়ার সময় রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ইতিহাসের ঘৃণিত ঘাতকদের নিষ্ঠুরতার শিকার শহীদ শেখ রাসেল। তাঁকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তাদের অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধিবোধ সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাত্পদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্ত্বায় পরিণত হয়েছে। মানবিক চেতনা সম্পন্ন মানুষরা শেখ রাসেলের বিয়োগ দুঃখ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফুটাতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ।আজ শহীদ শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৬৪ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকেতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা অঞ্চলের ধানমণ্ডিতে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করে। শেখ রাসেলের বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর মা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বই পড়তে ভালবাসতেন এবং বৃটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে বেগম মুজিব বার্ট্রান্ড রাসেলের অনেক বিবরণ শুনেছেন। বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে শেখ রাসেলের নামকরণ করা হয়। রাসেলের ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল এবং শেখ রেহানা। রাসেলের ছোটকাল কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। কারণ তার বাবা রাজনৈতিক বন্দী হয়ে কারাগারে ছিলেন দীর্ঘদিন। বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে আব্বা বলে সম্বোধন করতেন রাসেল। ‘কারাগারে রোজনামচা’ বইয়ে শেখ মুজিব অসংখ্যবার রাসেলের কথা তুলে ধরেছেন এবং তার নিকট যে ছোট্ট সন্তান খুব প্রিয় ছিল সেটিও ফুটিয়ে তুলেছেন। রাসেল, ছোট মানুষটা এসেছিলো এক গভীর রাতে, চলে গেলো আরো একটি গভীর রাতে। একটি দীর্ঘতম কুৎসিত নিকশ কালো বিবশ অন্ধকারময় অবশ সে রাত। যে রাতে একটি ছেলে চলে যাওয়ার আগে জানতেও পারলো না কি ছিল তার অপরাধ! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নরপিশাচরা নিষ্ঠুরভাবে তাঁকেও হত্যা করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনের আলো ফোটার মুহূর্তে একদল তরুণ বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা ট্যাংক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য শিশু রাসেল মৃত্যুর আগে প্রত্যক্ষ করতে বাধ্য হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও বিশ্বস্ত কর্মচারীরা রাসেলকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেও অভ্যুত্থানকারীদের চোখে ধরা পড়ে যায়। আতঙ্কিত শিশু রাসেল ভয়ে কর্মচারী রমার পেছনে পালিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। চারদিকের ভয়াবহ পরিবেশে ভীত রাসেল জানতে চেয়েছিল ওরা কি আমাকেও মেরে ফেলবে? রমা আশ্বস্ত করেছিলেন-না, ওরা তোমাকে কিছু করবে না। হয়তো রমা নিজেও বিশ্বাস করেছিলেন যে, এরকম একটি নিষ্পাপ শিশুর শরীরে কোনো জঘণ্যতম পাপীও আঘাত করতে পারে না। কিন্তু রমার সেই বিশ্বাস ভাঙতে সময় লাগেনি। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চাইলে ঘাতকদেরই একজন তাকে সেখানে নিয়ে যায়। রাসেল সেখানে তার মায়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিল, আমি হাসু আপার (আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে যাব। কিন্তু ইতিহাসের ঘৃণিত ঘাতকদের মন এতে গলেনি। ঘাতকদের একজন এই সময় শিশু রাসেলকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে জাতি যখন এই নির্মম কাহিনী জানতে পারে তখন কারো পক্ষে চোখের পানি রাখা সম্ভব হয়নি। কোনো মানুষের পক্ষে এ ধরনের অপকাণ্ড করা সম্ভব তা যেন সবার কাছে বিশ্বাসেরও অতীত।

আজ থেকে তেপ্পান্ন বছর আগে শিশু রাসেলের মৃত্যু হলেও শেখ রাসেল আছে এদেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরে। রাসেল বেশ অনুভূতিপ্রবণ ছিলেন। গল্প শুনতে ভীষণ ভাল লাগত তার। বাড়ির লাইব্রেরি থেকে বই এনে রাসেলকে গল্প পড়ে শোনাত বোনেরা৷ মজার ব্যাপার হল, একই গল্প কদিন পর রিপিট করতে গিয়ে দুই এক লাইন বাদ পড়লেই রাসেল ধরে ফেলত, বলত – সেই লাইনটা পড়লে না কেন? রাসেলের নিজস্ব মানবিকবোধ ছিল। বাড়িতে কবুতর পালা হত। হাঁটতে শেখার পর থেকেই রাসেল কবুতরের পেছনে ছুটত, ওতেই সে আনন্দ পেত। কিন্তু দেখা গেল বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে কবুতরের মাংস রান্না হয়৷ সেই মাংস রাসেলকে দেয়া হলে সে মুখ ফিরিয়ে নিত। কারণ, পালিত কবুতরের মাংস সে খাবে না। টমি নামে রাসেলের এক পোষা কুকুর ছিল। যাকে সে নিজের খাবারের ভাগ থেকে খাবার দিত। একদিন কুকুরটাকে জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠায় রাসেল ভেবেছে কুকুরটা বুঝি তাকে বকা দিচ্ছে। আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিল, গাম্ভীর্যতাও লক্ষ্য করা গেছে। পরিস্থিতি এবং সময়ের দাবি মিটিয়ে রাসেল তাল মিলিয়ে চলেছেন। বাড়িতে দুষ্টুমি করত সবসময়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সফরে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন সর্বদাই। অনুষ্ঠান এবং পরিস্থিতির সাথে মিল রেখেই পোশাক পরিধান করতেন ছোট্ট শিশু রাসেল। সচরাচর প্রিন্স কোট, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী ও মুজিবকোট পরত রাসেল। বঙ্গবন্ধুর পোশাক পরিধানেও মাঝে মধ্যেও নজরদারি করতেন ছোট্ট শেখ রাসেল। শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য ১৯৮৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী শেখ হাসিনা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন যাতে করে এই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রিয়া সংগঠনের মাধ্যমে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বন্ধবন্ধুর আদর্শ ধারন করে এই দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করা হয় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি। শেখ রাসেল যদি আজ বেঁচে থাকতেন, হয়ত দেশটাকে আগলে রাখতেন, যেমনটা রেখেছিলেন তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হয়ত, এখন তিনি বুঝতেন দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলে ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকে না, হয়ত পিতার আদর সান্নিধ্য কম পেয়েছেন বলে যে চেপে রাখা অভিমানটুকু তার ছিল, সেসবের কিছুই থাকত না। বর্তমান সরকার রাসেলের খুনিদের ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েকজনের ফাঁসিও হয়েছে বাকি কয়েকজন বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় রয়েছে। আজ শহীদ শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকেতে দেশবাসীর আজ একটাই দাবি বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেল হত্যাকারীদের যেসব ঘাতক এখনো বিদেশের মাটিতে পালিয়ে আছে তাদের দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকেতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মাদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সনেট কবি বলেছেন: তাঁর জন্য শুভেচ্ছা।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ফরিদ ভাই।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আইয়ূব বাচ্চুকে নিয়ে অবশ্যই লিখবেন।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অবশ্যই লিখবো যদি তত দিন বেঁচে থাকি।
দোয়া করবেন আমার নেক হায়াতের জন্য।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:১২

محمد فسيح الاسلام বলেছেন: আজ সে বেঁচে থাকলে অনেক বড় হতো। তাঁর প্রাণ প্রদীপটা বড় অকালে নিভে গেলো।

বাড়ির ছোট সন্তানের জন্যে সবারই প্রাণটা কাঁদে। বিশেষ করে বোনদের। বাচ্চা ছেলেটাকে তারা ছেড়ে দিতে পারতো!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সীমার শোনেনি হোসেনের কোন আকুতি!
তাই আজো আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়
হায় হোসেন, হায় হোসেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.