নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক অধ্যাপক ময়ুখ চৌধুরীর ৬৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২২


বাংলা কবিতার অসাধারণ প্রতিভা ময়ুখ চৌধুরী। আপাদমস্তক কবি, বিশুদ্ধ কবি। কবিতা-নির্মাণকে নিছক সখ, নেশা বা প্রচারের কোনো মাধ্যম মনে করেন না এই কবি। তিনি ১৯৮০-এর দশক থেকে সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কবি ময়ুখ চৌধুরীর কাব্য ভাষা যে খুব স্বতন্ত্র তা নয় । কিন্তু তার কবিতার প্রেম রোমান্টিকতা নান্দনিকতার সাথে জায়গা করে নেয় পাঠক হৃদয়ে । টের পাওয়া যায় দীর্ঘদিন আড়ালে আবডালে থাকা কবির শক্তি । তার বাকরীতি সংক্ষিপ্ত , নিগূঢ় অথচ অর্থবাহী । কাব্যভাষায় , শব্দনির্মাণে অভিনবত্ব , প্রতীক, উপমা তাকে চিনিয়ে দেয় জাত কবি হিসেবে । শব্দের খঞ্জনীতে তিনি যে ছন্দ লয় নিয়ে আবির্ভাব হন তার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে কালান্তরে। সংকোচহীন ভাবে কবি ময়ুখ চৌধুরীকে বলা যায় বাংলা সাহিত্যের মেধাবী কবি। কাব্যচর্চায় কবি ময়ুখ চৌধুরী কাউকে গুরু মানেননি । তার কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় কাব্যিক দ্যোতনা পৃথক মন্ত্রনা দান করে। কবিতার কাব্যরস আস্বাদনে পাঠকের মর্মমূল নাড়িয়ে দেয়। যেমন একমাত্র তুমিই দেখতে পেলে / তোমার শিক্ষিত চোখে /আমার বুকের পাড়ায় কি জবর লেগেছে আগুন “ এমন কবিতা পাঠে পাঠকও নিজের হৃদয়ে কম্পন অনুভব করে। কবির সাথে স্পর্শকাতর হন , মুগ্ধ হন । ভাষার বীর্যতা ,কবিতার ভেতরের সুরের নহর তার গভীর এবং দুর্বোধ্য কবিতাকেও সুখপাঠ্য করে । সময়ের হিসাবে সত্তর দশকে উত্থান হলেও কবি ময়ুখ চৌধুরীকে নির্দিষ্ট কোনো কালের বিচারে মাপা যাবে না। অন্যসব কাব্যসহ পলাতক পেণ্ডুলামে সীমাহীন কল্পনার করুকাজ, বিষয়ের প্রতীকী ব্যঞ্জনা, বোধের গভীরে মননের বিপুল বিস্তার, সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, কাছিমের আবরণে কাব্যশক্তির স্বচ্ছলতা, বাংলার প্রকৃতি ও জীবন থেকে মৌলিক চিত্রকল্পের নির্মাণ-বিনির্মাণ, উপমা-রূপকের নতুন ভঙ্গিমায় উপস্থাপন, ছন্দের দারুণ দক্ষতার ফলে ময়ুখ চৌধুরী বর্তমানে বাংলা কাব্যধারায় অপরিহার্য কবিরূপে গণ্য। আজ কবির ৬৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের আজকের দিনে তিনি চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মবার্ষিকীতে কবিকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা।

ময়ুখ ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়া জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল নাম আনোয়ারুল আজিম। ময়ুখ তার ছদ্ম নাম। ম/যয়ুখের ছেলেবেলা কাটে চট্টগ্রামের দক্ষিণে কর্ণফুলীর পাড়ে। সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন বা প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক বা এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর লেখালেখি করবেন বলে কলা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ময়ুখ চৌধুরীর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিন বছর পর ১৯৬৮ সালে সম্পাদনা করেন সাহিত্য কাগজ ‘প্রতীতি’; এই কাগজের প্রচ্ছদ শিল্পীও ছিলেন তিনি নিজে। এর মাঝে দেশজুড়ে শুরু হয় (১৯৬৯) ঊনসত্তরের গণআন্দোলন। চট্টগ্রাম শহরের কবি ও সংস্কৃতিসেবীরা তাকে ঘিরে বেড়ে উঠতে থাকে। তার আবাসস্থল দক্ষিণ নালাপাড়ায় তখন কবি ও সংস্কৃতিসেবিদের কেন্দ্র। তিনি ছিলেন কবিতাকর্মী ও নির্মাতা। সব বয়সের কবিরা তাকে ঘিরে কবিতা চর্চা অব্যাহত রাখেন। তিনি বয়সে নবীন ও প্রবীণদের কবিতা সংশোধন পরিমার্জন করে প্রয়োজনীয় সৎ পরামর্শ দিতে কুণ্ঠা করতেন না। প্রাবন্ধিক সুখময় চক্রবর্তীসহ অনেকেই এই ঋণের কথা অকপটে স্বীকার করে গেছেন। আবার ময়ুখ কখনও অন্য কবিদের কবিতা ছাড়া নিজের কবিতা একা ছাপতেন না। ছোট কাগজ সম্পাদকরা তার কাছে গেলেই পেয়ে যেতেন একগুচ্ছ কবিতা। ময়ুখ চৌধুরী কবিতার উৎকর্ষ সাধনে তৎপর ছিলেন। তাই অপেক্ষাকৃত নবীন ও তরুণদের নিয়ে তিনি এগিয়ে যান। ১৯৭০ সালে ‘কবিতা’ নামে একটি কবিতাপত্র প্রকাশ করেন। তার ধারাবাহিকতায় ‘অসভ্য শব্দ’ নামে যৌথ কাব্য সংকলন প্রকাশ করেন ১৯৭৩ সালে। অথচ গ্রন্থাকারে নিজের গ্রন্থ প্রকাশ না করে বরঞ্চ সতীর্থ কবিদের কবিতা নিয়ে ‘অসভ্য শব্দ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। তার সাহচর্য ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে চট্টগ্রামের অনেক কবিই কবি হয়ে উঠত না। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে শিশির দত্ত সম্পাদিত "স্বনির্বাচিত" কাগজে প্রথম লেখা ছাপা হয় এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম প্রবন্ধ। এছাড়াও তিনি ছদ্মনামে প্রত্রিকায় গল্প ছেপেছেন। সত্তরের দশকে প্রতীতি নামে একটি লিটলম্যগাজিনও প্রকাশ করেন তিনি। ১৯৭৮-৮৩ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাপালেখার তেইশ বছর পর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ কালো বরফের প্রতিবেশী প্রকাশিত হয়।১৯৮৯ সালে এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ পলাতক পেণ্ডুলাম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। নানা বিষয়ে কবিতা নির্মাণের দক্ষ কারিগর ময়ুখ চৌধুরী। সমকালীন জীবন যন্ত্রণার বিশ্বস্ত রূপকার তিনি, তিনি ঐতিহ্যমুখী। তবু বিশেষভাবে বলা যায়, রোমান্টিক প্রেমের কবিতায় তিনি সিদ্ধহস্ত। তার কবিতার অন্যতম প্রধান বিষয় প্রেম ও নারী। শব্দের সিঁড়ি বেয়ে ছন্দের দোলায় দুলে তার কবিতা পৌঁছে যায় পাঠকের অন্তরে। তার কবিতা যেমন চিত্ররূপময়, তেমনি যথেষ্ট শরীরী। তার ভাষা সুরেলা, কিন্তু বক্তব্য ঋজু। তিনি অকপটে সাজাতে পারেন মনের সব কথা, অবলীলায় বলতে পারেন ছন্দের কারুকার্যে। প্রেমের জয়গান গেয়ে এগিয়ে গেলেও ময়ুখ চৌধুরী সচেতন তার মননশীলতার বিষয়ে। প্রেমের আর্তি আকুলতার চিত্র আঁকতে গিয়ে তিনি কেবল সুন্দরের অনুসন্ধান করেছেন।

ময়ুখ চৌধুরীর এযাবৎ সাতটি কাব্যগ্রন্থ, একটি কাব্যসংকলন, একটি উপন্যাস, একটি গবেষণা সহ প্রায় দশের অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ময়ুখ চৌধুরী বাংলা সাহিত্য এবং কবিতা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রকাব্য এবং ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের তত্ত্বাবধানে কবি শামসুর রাহমান বিষয়ে গবেষণা করেন।কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯১৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার এবং আবদুল করিম খান স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ময়ুখ চৌধুরী সংসার করছেন আরেক অধ্যাপক কবি তাসলিমা শিরিনের সঙ্গে।আজ কবির ৬৮তম জন্মদিন। কবির জন্মদিন মানে তো কবিতারও জন্মদিন। নিজের জন্মদিন স্মরণ করে তিনি লিখেছেনঃ
‘আজ আমার জন্মদিন মনেই ছিল না,
সারাটা দুপুর এখানে-ওখানে ঘুরেছি।
আচমকা পকেটে একটা বলপেন গুঁজে কেউ বললো না Happy Birthday
জ্বরের ভেতর থেকে জিরাফের মতো মাথা উঁচিয়ে দেখে নিচ্ছিলাম ২২-এ অক্টোবর
ফ্যানের বাতাসে অস্থির ক্যালেন্ডারটাকে’।

চিন্তার ঐশ্বর্যে ও স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল ময়ুখ চৌধুরীর জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

সাগর শরীফ বলেছেন: জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে :ধন্যবাদ সাগর ভাই
সাথে থেকে উৎসাহ দেবার জন্য।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫

বিজন রয় বলেছেন: জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ বিজন'দা
কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: তাকে আজ'ই প্রথম চিনলাম আপনার পোষ্টের মাধ্যমে।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যা হোক চিনা যখন হয়েছে তখন
জানা হবেই হবে নিশ্চয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.