নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের সংগীত জগতের মহান কিংবদন্তী মান্না\'দে এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৪


মান্না'দে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের একজন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাঁকেই হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতবোদ্ধারা। তিনি হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন। তাঁর গাওয়া প্রিয় কিছু গানের লাইনঃ ১। পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন ফিরে আর আসবে কি কখনো । ২। খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি কি সেই আগের মতই আছো? ৩। ক’ ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে ৪। কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ৫। সেই তো আবার কাছে এলে ৬। সবাইতো সুখি হতে চাই ৭।রঙ্গিনী কত মন মন দিতে চায় ৮। সে আমার ছোট বোন সহ আরও অসংখ্য গান তিনি গেয়েছেন। মান্না দে গায়ক হিসেবে ছিলেন আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সফল সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, হিন্দি এবং বাংলা সিনেমায় গায়ক হিসেবে অশেষ সুনাম অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সঙ্গীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন। সঙ্গীত ভুবনে তার এ অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৭ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান "বঙ্গবিভূষণ" প্রদান করে। আজ এই শিল্পী মান্না'দের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের আজকের দিনে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অন্য জগতের কোন কফি হাউজের আড্ডায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৪বছর। প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর মৃত্যুতে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হল হয়তো তা আর কেউ পূর্ণ করতে পারবেন না। চোখের দেখায় মান্না দে নেই। তবে মৃত্যুর পরেও গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি আজীবন। তাই তো তাঁর গানেরই একটা লাইন আজ মেনে নিতে বড় বেশি ইচ্ছে করছে। 'আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো'... সংগীত জগতের মহান কিংবদন্তী মান্না'দে এর মৃত্যুবা্র্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

মান্না দে’র জন্ম ১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায়। তার আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র। বাবা-মায়ের সংস্পর্শ ছাড়াও, পিতৃসম্বন্ধীয় সর্বকনিষ্ঠ কাকা সঙ্গীতাচার্য (সঙ্গীতে বিশেষভাবে দক্ষ শিক্ষক) কে.সি. দে (পূর্ণনাম: কৃষ্ণ চন্দ্র দে) তাকে খুব বেশী অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করেছেন। মান্না'দে তার শৈশব পাঠ গ্রহণ করেছেন ‘ইন্দু বাবুর পাঠশালা’ নামে একটি ছোট প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতক শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি তার সহপাঠীদেরকে গান শুনিয়ে আসর মাতিয়ে রাখতেন। তিনি তার কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে এবং উস্তাদ দাবির খানের কাছ থেকে গানের শিক্ষা লাভ করেন। ঐ সময়ে মান্না দে আন্তঃকলেজ গানের প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে তিন বছর তিনটি আলাদা শ্রেণীবিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। শিল্পী হয়ে উঠার তাগিদ নিয়ে ১৯৪২ সালে কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দের সঙ্গে মুম্বাই পাড়ি জমান। সেখানে শুরুতে কৃষ্ণ চন্দ্র দের অধীনে সহকারী হিসেবে এবং তারপর শচীন দেব বর্মণের (এসডি বর্মণ) অধীনে কাজ করেন। পরে তিনি অনেক স্বনামধন্য গীতিকারের সান্নিধ্যে আসেন এবং তারপর স্বাধীনভাবে নিজেই কাজ করতে শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি ওস্তাদ আমান আলী খান এবং ওস্তাদ আবদুল রহমান খানের কাছ থেকে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে তামিল নেন মান্না দে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন বাংলা ছবির ভুবনে। আর সেখানে তিনি অল্প দিনেই হয়ে উঠেন প্লে-ব্যাক সম্রাট। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রে দারুণ জনপ্রিয়তা পান তিনি। সংগীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করার গৌবর মান্না দে’র। দীর্ঘ প্রায় ষাট বছরের সংগীত জীবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ‘দাদা সাহেব ফালকে’ খেতাবসহ অসংখ্য খেতাব অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া ২০০৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডি লিট সম্মাননা লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে বিয়ে করেন মান্না দে। তাদের সংসারে শুরোমা (১৯৫৬) ও সুমিতা (১৯৫৮) নামে দুই কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলোচনা। গানের টানে মান্না দে তার জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন বিশ্বের নানা দেশে। এসেছিলেন বাংলাদেশেও, এখানকার মানুষের গানের খোরাক মিটাতে, ভালোবাসার সম্মান জানাতে। ২০১৩ সালের ৮ই জুন ফুসফুসের জটিলতা দেখা দেওয়ায় মান্না দে কে ব্যাঙ্গালোরে একটি হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি করা হয়। ৯ই জুন, ২০১৩ সালে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে ডাক্তাররা এই গুজবের অবসান ঘটান এবং নিশ্চিত করেন যে তিনি তখনও বেচে আছেন তবে তার অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে এবং আরও কিছু নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরবর্তিতে ডাক্তাররা তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান। পরবর্তীতে তার শারীরিক অব্স্থা আরও খারাপ হলে ২০১৪ সালের ২৪শে অক্টোবর ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরে মৃত্যুবরণ করেন মান্না'দে। নিখিলেশ-মইদুল ফিরে আসলেও 'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা' আর কোনওদিনই বসবে না। সুরের জলসাঘরের ঝাড়বাতিটা নিভে গিয়েছে যে। ৯৪ বছর বয়সে নীল ধ্রুবতারার খোঁজে আকাশপথে পাড়ি দিয়েছেন রোমা রায়-অমলেশেরর সঙ্গী। আর দেখা হবে না। তবে মৃত্যুর পরেও গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি আজীবন। সংগীত জগতের মহান কিংবদন্তী মান্না'দে এর মৃত্যুবা্র্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

নুর মোহাম্মদ নুরু
গনমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শিল্পীেকে স্মরণে রাখার জন্য
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভূইয়া ভাই।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই এই মহান শিল্পীকে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী
মান্না'দেকে স্মরণে রাখার জন্য।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৩২

সুমন কর বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা উনার প্রতি।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সুমন দাদা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.