নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ৩৯১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:১৯


মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবর-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র।বংশপরম্পরায় আকবরের মৃত্যুর পরে সিংহাসনে বসেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র শাহজাদা সেলিম। পুরো নাম মির্জা নূরউদ্দিন বেগ মোহাম্মদ খান সেলিম জাহাঙ্গীর। মহামতি আকবর গ্রহণ-বর্জনের দূরদর্শিতার নানা নীতি সাম্রাজ্যকে শুধু সুদৃঢ়ই করেনি, ভবিষ্যৎ বংশধরদের সাম্রাজ্য পরিচালনার পথকেও অনেক ক্ষেত্রে নিষ্কন্টক করে দিয়েছিল। ১৬০০ সালে সম্রাট আকবর যখন এক অভিযানে গিয়েছিলেন, সেই সুযোগে জাহাঙ্গীর নিজেকে সম্রাট ঘোষণা দিয়ে ফেলেন, পরব্তীতে আকবর রাজ্যে ফিরে এসে সেই আদেশ রহিত করেন। সে সময় আকবর সেলিম (জাহাঙ্গীর)'এর পরিবর্তে তার বড় দহিত্র খসরু মির্জা (Khusrau Mirza)'কে সম্রাট করার চিন্তা ভাবনা করেন। কিন্তু পিতার (আকবর) মৃত্যুর ৮ দিন পর ১৬০৫ সালের ৩ নভেম্বর সেলিম সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় তিনি ‘নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর পাদশাহ গাজী’ উপাধি গ্রহণ করেন। এ কারণে ক্ষমতায় আসার পর যুবরাজ সেলিম জাহাঙ্গীর নামেই অধিক পরিচিত হন। বিশাল ব্যক্তিত্ব ও কিংবদন্তীতুল্য মেধার অধিকারী আকবরের পর সম্রাট হিসেবে মূল্যায়ন করলে যে কাউকেই নিষ্প্রভ মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবু জাহাঙ্গীর পিতার যোগ্য উত্তরসূরীই ছিলেন বলতে হয়। শুরুতেই তিনি পিতা আকবর এর মতাদর্শী ছিলেন । সেই সময় আকবর দক্ষিণ ভারত-এ ব্যস্ত ছিলেন। তিনি হেরে গেলেও পরবর্তী কালে তার সৎমা রুকাইয়া সুলতান বেগম ও সেলিমা সুলতান বেগম এর সমর্থনে ১৬০৫ সালে রাজা হতে সমর্থ হন। প্রথম বছরেই তাকে তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে হয় ও তিনি তাতে সফল হন। তিনি খসরু সমর্থিত ২০০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেন ও খসরুকে অন্ধ করে দেন। আজ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ৩৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৬২৭ খ্রষ্টাব্দের আজকের দিনে তিনি ভারতের কাশ্মীরে মৃত্যুবরণ করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ৩৯১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শাহজাদা সেলিম ১৫৬৯ সালের ৩১ আগস্ট (মতান্তরে ২০ সেপ্টেম্বর ) ভারতের ফাতেহপুর সিক্রিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জয়পুরের রাজপুত রাজকন্যা ও সম্রাট আকবর এর প্রথম পুত্র। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন যে, সবাই জাহাঙ্গীরকে যোধা বাঈর সন্তান ভাবলেও আসলে তিনি তার সন্তান নন। জন্মের পর সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখা হয়। যার পুরো নাম Abu'l-Fath Nur-ud-din Muhammad Jahangir। কিন্তু সম্রাট আকবর আদর করে তাঁকে শেখু বাবা বলেই ডাকতেন। 'শেখু বাবা' সম্রাট আকবরে অনেক সাধনার ধন। সম্রাট আকবরের যমজ দুই ছেলে হাসান ও হোসেন শৈশবে মারা গেলে পুত্র সন্তানের জন্য উদ্গ্রিব হয়ে পড়েন। তিনি একটি পুত্র সন্তানের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন এবং অনেক পীর-দরবেশের দরবারে মানতও করেছিলেন। এই উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কয়েকবার তিনি আজমীরে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর দরবারে যান। ফতেহপুর সিক্রিতে এ সময় খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতী। সম্রাট আকবর প্রতি সপ্তাহে তার দরবারেও যেতেন। অবশেষে পীর সাহেব আশ্বাস দেন সম্রাটের ঘরে তিনটি পুত্র সন্তান জন্ম নেবে। ১৫৬৯ সালের ৩০ আগস্ট আকবরের রাজপুত বেগমের ঘরে জন্ম নেন শাহজাদা সেলিম। পীর সাহেবের নামানুসারে আকবর সন্তানের নাম রাখেন সেলিম।শিশুকালে সম্রাট জাহাঙ্গীরকে শেখ সেলিম চিশতী (রঃ)'এর মেয়ে লালন-পালন করেছেন। তখন আকবর ইমোশনাললি শেখ সেলিম চিশতী (রঃ)'র গ্রাম 'সিক্রি' যাতায়াত শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি তার দরবার (imperial court and residence) আগ্রা থেকে সিক্রি'তে স্থানান্তর করেন এবং নূতন নাম করণ করা হয় ফতেহপুর সিক্রি। জাহাঙ্গীরের পালক ভাই (পালক মায়ের সন্তান, শেখ সেলিম চিশতী'র নাতি) নবাব কুতুবুদ্দিন খান সম্রাট আকবরের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন, পরব্তীতে তাঁকে বাংলার দায়িত্ব দেয়া হয়। সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হিসেবে শাহাজাদা সেলিমকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার পিতা। সে যুগের সুযোগ্য শিক্ষকদের তিনি নিয়ে এসেছিলেন শাহজাদার লেখাপড়ার জন্য। একাধারে ফারসি, তুর্কি ও হিন্দি ভাষা এবং গণিত, ইতিহাস, ভূগোলসহ নানা বিষয়ে পাঠদান চলতে থাকে। যোগ্য শিক্ষকদের পরিচর্যায় শাহজাদা সেলিম বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে থাকেন। ধীরে ধীরে তার মধ্যে কাব্যপ্রতিভারও বিকাশ ঘটে। বিদ্যাশিক্ষার পাশাপাশি সেলিম যুদ্ধবিদ্যার দীক্ষা গ্রহণ করেন। এদিক থেকে তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিতে সমর্থ হন। ১৫৮১ সালে কাবুল অভিযানে তার সফল নেতৃত্ব এর বড় একটি প্রমাণ। সেলিমকে বিচার বিভাগ ও রাজকীয় উৎসবের কিছু কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৫৭৭ সালে তাকে দশ হাজার মনসবদারী দেয়া হয়। ১৫৮৫ সালে তা বারো হাজারীতে উন্নীত করা হয়।

জাহাঙ্গীর শিল্প, বিজ্ঞান এবং, স্থাপত্য সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে তরুণ বয়স থেকেই চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক দেখিয়েছেন এবং তার নিজের একটি কর্মশালায় ছিল। মুঘল চিত্রকলা শিল্প, জাহাঙ্গীর এর রাজত্বের অধীনে মহান উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তার সময় উস্তাদ মনসুর জন্তু ও পাখির ছবি একে বিখ্যাত হন। জাহাঙ্গীর এর ছিল একটি বিশাল পক্ষিশালা ও পশুশালা ছিল। জাহাঙ্গীর ইউরোপীয় এবং ফার্সি শিল্পকলাকেও ভালবাসতেন। তিনি ফার্সি রানী নুর জাহান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার সাম্রাজ্য জুড়ে ফার্সি সংস্কৃতি প্রচার করেন। তার সময়েই শালিমার গার্ডেন তৈরি হয়। তিনি কাশ্মীর্ ভ্রমণে গিয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন 'পৃথিবীতে ভূস্বর্গ বলে যদি কিছু থাকে' তো এই সেই ভূস্বর্গ!' সম্রাট জাহাঙ্গীর খুব প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন (!), তিনি সপ্তাহে ৫ দিনই শিকারে বের হতেন। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর সপ্তাহে দুই দিন শিকারে যেতেন না। তার সাম্রাজ্যে রবি ও বৃহস্পতিবার দুই দিন পশুহত্যাও ছিল নিষিদ্ধ। রবিবার ছিল পিতা আকবরের জন্মদিন এবং বৃহস্পতিবার তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। জাহাঙ্গীর ১২ বছর বয়সে প্রথম শিকারে যান। পিতা আকবরই তাকে শিকার অভিযানে উৎসাহিত করেছিলেন। আসলে মোগলদের শিকার অভিযান মানে পশু হত্যাই ছিল না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ কাজ করত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়ে যাওয়া হতো শিকার অভিযানে। সৈন্য-সামন্তও থাকত প্রচুর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে সুবেদার মনে মনে বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করছে কিংবা শত্রুভাবাপন্ন কোনো রাজার সীমান্তেই এসব শিকার অভিযান পরিচালনা করা হতো। বিপুলসংখ্যক সৈন্য এবং জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হতো, মোগল সম্রাটের দাপট কেমন। ফলে অনেকেই বিদ্রোহের পরিকল্পনা ত্যাগ করত। তাছাড়া এসব অভিযানের মাধ্যমে সম্রাটরা আশপাশের এলাকা সম্পর্কে অনেক তথ্য সরাসরি জানতে পারতেন।

জাহাঙ্গীর তার বাবার মত একজন কঠোর সুন্নি মুসলমান ছিলেন না। তিনি সার্বজনীন বিতর্কে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের অংশগ্রহণ করতে দিতেন। জাহাঙ্গীর তার লোকদের কাউকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বারণ করতেন। তিনি সকল প্রকার ধর্মের লোকেদের থেকে সমান খাজনা নিতেন। থমাস রো, এডওয়ার্ড টেরি-সহ অনেকেই তার এইপ্রকার আচরণের প্রশংসা করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর সুশাসনের জন্য সবার কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষভাবে প্রজাদের সুবিধা অসুবিধার খোঁজ নিতেন, প্রজারা স্বয়ং দরবারে উপস্থিত হয়ে তাদের আর্জি জানাত আর সম্রাট জাহাঙ্গীর সে মতে সমস্যা সমাধানে নির্দেশ দিতেন। বাবার মতন সম্রাট জাহাঙ্গীরও পীর আওলিয়ার ভক্ত ছিলেন। তিনি হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) কে তাঁর দরবারেআমন্ত্রণ জানান। হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর শাহী দরবারে অবস্থানের পর দ্বীনের প্রতি সম্রাটের আস্থা, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ও ভয়ভীতির বিষয়টি সম্রাটের ভেতর পুরোপুরি সৃষ্টি করতে পেরে সুযোগ বুঝে তিনি একদিন সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। ১. সম্রাটকে সিজদা করার প্রথা রহিত করতে হবে। ২. গরু জবাইয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. সম্রাট ও তার সভাসদদের তকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। ৪. শরিয়াহ বিভাগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে কাজির পদ পুনর্বহাল করতে হবে। ৫. সমাজে প্রচলিত সব ধরনের বিদআত, কুসংস্কার ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। ৬. ভগ্ন ও বিধ্বস্ত মসজিদগুলো সংস্কার করে সেগুলো আবাদ করতে হবে। ৭. আকবরের যাবতীয় ইসলামবিরোধী আইন পুরোপুরি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। সম্রাট তার এসব দাবি মেনে নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে এ মর্মে শাহী ফরমান জারি করেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) এভাবেই তার সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এই উপমহাদেশে ইসলামের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর অপসারণ করে ফের ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসের সোনালি অধ্যায় রচনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। আর এভাবেই উপমহাদেশ থেকে আকবরের দ্বীনে ইলাহীর পরিসমাপ্তি ঘটে।

(সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নী নূরজাহান বেগম)
জীবদ্দশায় জাহাঙ্গীর অনেক রমণীর পাণি গ্রহণ করেন। তাদের মাঝে ২ জনকে জানা যায়। এরা হলেন- রাজকন্যা মানবতী, বেগম নুর জাহান। এদের মধ্যে নূরজাহান সবচেয়ে বেশি আলোচিত। জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহারের প্রভাবও অনেক বেশি ছিল। বেগম নূর জাহান ছিলেন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরও ছিলেন নূর জাহানের দ্বিতীয় স্বামী। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের খুবই পছন্দের। এই যুগলের একে অন্যের প্রতি মোহ এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক কিংবদন্তির জন্ম দিয়েছে। জাহাঙ্গীর ও নূরজাহানের প্রেমকাহিনী ইতিহাসে সুবিখ্যাত। নুরজাহান ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের একজন সেনাপতির কন্যা। নূর জাহানের প্রকৃত নাম মেহের-উন-নেছা। পারস্যদেশীয় অভিজাতের কন্যা নূরজাহানের পূর্ব নাম মেহেরুন্নিসা। বর্ধমান-এর জায়গির শের আফগান বাংলার গভর্নর কুতুবউদ্দীন খান কোকার হাতে নিহত হলে (১৬০৭) তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নিসা দরবারে ফিরে যান এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁকে নূরজাহান উপাধি দেওয়া হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার রূপগুনে মুগ্ধ হয়ে নাম রাখেন নুর জাহান, যার অথ দুনিয়ার আলো। নূরজাহানের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জাহাঙ্গীর এক সময় তার স্ত্রী নুর জাহান কে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেন এবং নুর জাহান বিভিন্ন বিতর্কিত চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন। একজন বিদুষী রমণী নূরজাহান তাঁর স্বামীর উপর এমন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে, তিনি সাম্রাজ্যের যৌথ শাসকে পরিণত হন। নূরজাহানের নাম বাদশাহর সঙ্গে যৌথভাবে মুদ্রায় খোদাই করা হয় এবং তাঁর আত্মীয়গণ সাম্রাজ্যের উঁচুপদগুলি দখল করেন। অনেক ভাল গুন থাকা সত্ত্বেও, মদ্যপান ও নারী এই দুই আসক্তির জন্য জাহাঙ্গীর সমালোচিত হন।

(শাহদারা বাগে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধি)
১৬২৭ সালে স্বাস্থ্য রক্ষার উদ্দেশ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রথমে কাবুল ও পরে কাশ্মীর যান। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডায় কাহিল হয়ে জাহাঙ্গীর কাবুলে চলে আসেন। সেখান থেকে পুনরায় কাশ্মীর যাবার পথে ১৬২৭ সালের ২৮ অক্টোবর ফতেপুর সিক্রিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তার দেহ থেকে অন্ত্র বের করে তাকে কাশ্মীরের বাঘসর দুর্গে দাফন করা হয়। পরে সেখান থেকে তার দেহাবশেষ সরিয়ে লাহোরের শাহদারা বাগে সমাধিস্থ করা হয়। বর্তমানে তার দৃষ্টিনন্দন সমাধিক্ষেত্র দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় একটি স্থান। আজ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ৩৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ৩৯১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব গোছানো পোষ্ট।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.