নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের ১২১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৪


বাংলা সাংবাদিকতার আকাশে এক উজ্জল নক্ষত্র আবুল কালাম শামসুদ্দীন। তিনি ছিলেন একধারে একজন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবনের সূচনাতেই তিনি একজন সাহিত্য রসবোদ্ধা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন সাহিত্য সমালোচক হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। মৌলিক রচনা ও অনুবাদে তিনি একজন সিদ্ধহস্ত। মুসলিম বাংলা সাহিত্যের নব-মূল্যায়নে বিশেষ করে নজরুল কাব্যের মূল্যায়নে তাঁর ভূমিকা ও অবদান সেকালেই স্বীকৃতি লাভ করে। কুসংস্কার ও গোঁড়ামীর বিরোধী এবং মানবতাবাদী এই সাংবাদিক ছিলেন পাকিস্তানের শাসকদের স্বৈরাচারি চরিত্র ও দুর্নীতির আকুণ্ঠ প্রতিবাদি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি দু’য়েকটি গল্প-উপন্যাস লিখলেও তিনি ছিলেন মূলত প্রাবন্ধিক এবং সূক্ষ্মদর্শী ও নির্ভীক সাহিত্য সমালোচক। তাঁর সুদীর্ঘ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবনে তিনি মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্য ও সাংবাদিকতা চর্চায় আত্মনিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে প্রাণিত হয়ে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। পরিনত বয়েসে প্রথমে তিনি প্রচণ্ড পরিমাণে আইয়ুব খানের বিরোধী ছিলেন এবং ভাষা অন্দোলনেও সক্রিয় ভুমিকা রেখেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার সম্পাদিত 'দৈনিক আজাদ' পত্রিকা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাংলা ভাষার দাবি সংক্রান্ত সম্পাদকীয় প্রকাশ করতেন নিয়মিত। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনরত মিছিলে গুলি চালনার প্রতিবাদে পরের দিন আইনসভার সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে প্রথমবার যে শহীদ মিনার নির্মিত হয়, আবুল কালাম শামসুদ্দীন তার উদ্বোধন করেন। তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা-ই-খিদমত (১৯৬১) এবং সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬৭) উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে উভয় খেতাব বর্জন করেন। স্বাধীনতা পূর্ব সময় কালে তিনি পাকিস্তান সরকারের শোষণ ও দুর্নীতির বিরোধিতা করলেও পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন। আজ সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের ১২১তম জন্মবার্ষিকী। সাংবাদিকতা জগতের উজ্জল নক্ষত্র আবুল কালাম শামসুদ্দীনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

আবুল কালাম শামসুদ্দীন ১৮৯৭ সালের ৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম সাহেদ উল্লাহ। আবুল কালাম শামসুদ্দিনরা চার ভাই। গ্রামের স্কুলেই তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯১৯ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে বি.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯২০ ও ১৯২১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন এবং বি.এ পরীক্ষা অংশ নিতে ব্যার্থ হন। পরে তিনি ১৯২১ কলকাতার গৌড়ীয় সুবর্ণ বিদ্যায়তন থেকে উপাধি পরীক্ষা পাস করেন। ছাত্রজীবনে আবুল কালাম শামসুদ্দীন বিদেশী সাহিত্যের-বিশেষত ইংরেজি ও রুশ সাহিত্যের অনুরাগী পাঠক ছিলেন। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হলেও, আবুল কালাম শাসমুদ্দীন পেশা ও জীবিকার উপায় হিসেবে সাংবাদিকতাকেই অবলম্বন করেন এবং তাঁর পৌনে এক শতাব্দীরও অধিককালের সাংবাদিক জীবনে বৃটিশ আমলে ও বিভাগ পূর্বকালে ১৯২২ সালে মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে তাঁর সাংবাদিক জীবন শুরূ হয়। এরপর তিনি একে একে সাপ্তাহিক মোসলেম জগৎ, দি মুসলমান, দৈনিক সোলতান, মাসিক মোহাম্মদী প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদে যোগদান করেন এবং পরবর্তিতে তিনি ১৯৪০ সালে এর সম্পাদক হিসেবে যোগদান করে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন সুনিপুন ভাবে। সর্বশেষ তিনি ১৯৬৪ সালে ‘প্রেস ট্রাস্ট অব পাকিস্তান’ পরিচালিত দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে তিনি ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীনের গোটা কর্মজীবন জুড়েই আগে বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা আর লেখা-লেখি। বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপশি সাহিত্য চর্চা এবং গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ইত্যাদি ছিল তার জীবিকার চালিকা শক্তি। এর পাশাপাশি কিছুকাল রাজনীতি ও পাকিস্তানের পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের সাহিত্য-চিন্তা ও দৃষ্টিকোণের পরিচয় তাঁর বিভিন্ন রচনায় স্বাক্ষরিত। অর্ধ-শতাব্দীরও অধিককালের সাংবাদিক ও সাহিত্যজীবনে তিনি সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে বহুসংখ্যক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর ‘কাব্য সাহিত্যে বাঙালি মুসলমান’, ‘মহাশ্মশান কাব্য’, ‘সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা’, ‘আমাদের সাহিত্য’, ‘বাংলা ভাষায় নয়া শব্দ’, ‘সাহিত্য গুরুর বাঙালি প্রীতি’ এবং ব্যঙ্গ্য রচনা ‘একটি জনসভার রিপোর্ট’ সময়কালিন সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়। আবুল কালাম শামসুদ্দীন রচিত ও অনূদিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলোঃ
১। ‘অনাবাদী জমি’, ২। ত্রিস্রোতা, ৩। খরতরঙ্গ, ৪। দৃষ্টিকোণ, ৫। নতুন চীন নতুন দেশ,৬। দিদ্বিজয়ী, ৭।ইলিয়ড, ৮। পলাশী থেকে পাকিস্তান, ৯। অতীত দিনের স্মৃতি ইত্যাদি। এছাড়া বাংলা আত্মজীবনী হিসেবে ‘অতীত জীবনের স্মৃতি’ তাঁর উৎকৃষ্ট রচনা। দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর এ গ্রন্থ প্রত্যক্ষদর্শীর দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমী কর্তৃক ৩ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে শামসুদ্দীনের ‘রচনাবলী’।

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হলেও, আবুল কালাম শামসুদ্দীন ছিলেন রাজনীতি সচেতন, স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেমিক, এবং মাতৃভাষা বাংলার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। প্রথম জীবনে এবং ছাত্রাবস্থায় কংগ্রেসের রাজনীতি এবং অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে অংশ নিলেও, পরবর্তীকালে ১৯২৭ সালে আবুল কালাম শামসুদ্দীন মুসলিম লীগ ও ও পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪২ সালে কলকাতায় পূর্বপাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি গঠিত হলে তিনি এর সভাপতি রুপে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি ময়মনসিংহ থেকে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা-আন্দোলনকালে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে তিনি এমএলএ থেকে পদত্যাগ করেন। তৎকালীন গভর্ণরের কাছে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেনঃ “বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করায় ছাত্রদের উপর পুলিশ যে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে তাহার প্রতিবাদে আমি পরিষদের আমার সদস্যপদ হইতে পদত্যাগ করিতেছি। যে নুরুল আমীন সরকারের আমিও একজন সমর্থক-এ ব্যাপারে তাহাদের ভূমিকা এতদূর লজ্জাজনক যে, ক্ষতমায় অধিষ্ঠিত থাকিতে এবং পরিষদের সদস্য হিসাবে বহাল থাকিতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি।”
ব্যক্তিগত জীবনে ৩বার বিয়ের পিড়িতে বসেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন। ১৯৫২ সালে তিনি সর্বপ্রথম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৩০ সালে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় ১৯৩৮ সালে তৃতীয় দার পরিগ্রহ করেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীন বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সম্মাননা ও প্রদক প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি তৎকালিন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৯৬১ সালে সিতারা-ই-খিদমত এবং ১৯৬৭ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুশুানের সময় ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমর্থনে সরকার তিনি সরকার প্রদত্ত এ দা’টি খেতাব বর্জন করেন। আবুল কালাম শামসুদ্দিন চীন, মিসর, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। তিনি সুভাষ বোস, বিধান রায়, জেএন সেনগুপ্ত, এমএন রায় ও প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ এর সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত ছিলেন।১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রাপ্ত হন। বাংলা সাংবাদিকতা জগতের এই দিকপালে ১৯৭৮ সালের ৪ মার্চ ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। আজ তাঁর ১২১তম জন্মবার্ষিকী। সাংবাদিকতা জগতের উজ্জল নক্ষত্র আবুল কালাম শামসুদ্দীনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: সংকোচেরও বিহ্বলতা নিজেরই অপমান। সংকটেরও কল্পনাতে হয়ও না ম্রিয়মাণ।
মুক্ত কর ভয়। আপন মাঝে শক্তি ধর, নিজেরে কর জয়।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই নিজেকে চিনবার জন্য।
সংকোচ আর বিহ্বলতা না কাটাতে পারলে
কিছুই করা সম্ভব নয়। সুতরাং আপন মাঝে
শক্তি ধারণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
তা হলেই সব কিছু জয় করা সম্ভব।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০২

নজসু বলেছেন: আবুল কালাম শামসুদ্দীনের ১২১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা রইল।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ নজসু ভাই
সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.