নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পন্ডিত এবং শিক্ষাবিদ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৯


ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পন্ডিত এবং চৈনিক বিষয় সম্পর্কে গবেষণা ক্ষেত্রে ভারতের প্রবীণতম ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ প্রবোধচন্দ্র বাগচী। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য। গণিতে তার বিশেষ দক্ষতা থাকলেও তিনি সংস্কৃত ভাষায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস গবেষণার আগ্রহ থেকেই তিনি মূলত এই বিষয়টি বেছে নিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। তিনি প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের স্নেহভাজন ছিলেন। ১৯১৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। কৃষনগর সরকারি কলেজ থেকে ১৯১৮ সালে স্নাতক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং বিশষ সম্মানসূচক মেহিনী মোহন রায় পদক লাভ করেন। সংস্কৃত, চৈনিক ও তিববতীয় গ্রন্থগুলির তুলনামূলক গবেষণার উপর ভিত্তি করে বাগচী ভারতীয় কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জির ছোট বড় বহু হতবুদ্ধিকর সমস্যার সমাধান করেছিলেন। বিচারকের মনোভাব নিয়ে ঐতিহাসিক সাক্ষ্যগুলি তিনি পরীক্ষা করেন। একজন খাঁটি ঐতিহাসিক হিসেবে তিনি অন্ধ স্বদেশপ্রেম ও সংকীর্ণতার মতো সকল পূর্ব-সংস্কার থেকে মুক্ত ছিলেন এবং পূর্ব ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি কখনই কিছু রচনা করেন নি। বাগচীর পান্ডিত্যের সুস্পষ্ট ছাপ বহনকারী প্রথম গ্রন্থ হচ্ছে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত সুপরিচিত বিবরণ Le Canon Bouddhigue en Chine। দুখন্ডের এ গ্রন্থে সংস্কৃত ও পালি ভাষায় বৌদ্ধ মূল গ্রন্থাবলি যারা চৈনিক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন সেই সব ভারতীয়, চৈনিক ও অন্যান্য পন্ডিতের জীবনীমূলক ইতিহাস রয়েছে। ফরাসি ভাষায় লিখিত তার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দুটি প্রাচীন সংস্কৃত-চৈনিক অভিধানের সমালোচনামূলক গ্রন্থ। এর একটি সংকলিত হয় খ্রিস্টীয় আট শতকে মধ্য এশিয়ায় এবং অপরটি খ্রিস্টীয় সাত শতকে সংকলন করেন বিখ্যাত তীর্থযাত্রী পন্ডিত ই জিং (ই-ৎসিং)। বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে সংস্কৃত ভাষায় লেখা বহু গ্রন্থ সহস্র বছরের অধিককাল যাবৎ আমাদের নিকট থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সেগুলি চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বাগচীর মতো পন্ডিতদের প্রচেষ্টায় সেগুলির কিছু কিছু ইংরেজি অনুবাদ এখন পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে ফতিয়ানের (ধর্মদেব) বজ্রযান গ্রন্থ, বসুবন্ধুর (খ্রিস্টীয় পাঁচ শতকের প্রথমভাগ) টীকাকৃত প্রতীত্যসমুৎপাদসূত্র, শিশুদের রোগ মুক্তির উপর রাবণের সূত্র, বুদ্ধের বারো বছরের জীবন সম্পর্কিত সূত্র (খ্রিস্টীয় তিন থেকে পাঁচ শতক), বিভিন্ন বিনয় গ্রন্থে ধনিকার কাহিনী, The Geographical Catalogue of the Yaksas in the Mahamayuri সহ অন্যান্য বহু গ্রন্থ। বাগচী একাই এগুলির অনুবাদ ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করেছিলেন। আজ শিক্ষাবিদ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৮ সালের ১৮ নভেম্বর আজকের দিনে তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। সাহিত্যের গবেষক এবং শিক্ষাবিদ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

প্রবোধচন্দ্র বাগচী (ইংরেজি: Prabodh Chandra Bagchi) ১৮৯৮ সালের ১৮ নভেম্বর শ্রিকলে (বর্তমানে বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস খুলনা। তার পিতার নাম শ্রী হরিনাথ বাগচী এবং মায়ের নাম তরঙ্গিনী দেবী। খুব অল্প বয়সেই তার মা মারা যান এবং শ্রিকলেই (হাট শ্রীকল) তার লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯১৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১৮ সালে কৃষনগর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং বিশষ সম্মানসূচক মেহিনী মোহন রায় পদক লাভ করেন। ১৯২০ সালেকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে এম.এ ডিগ্রি লাভ করার পরপরই প্রবোধচন্দ্র একই বিভাগে প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে প্রথিতযশা ফরাসি পন্ডিত সিলভেইঁ লেভির অধীনে বৌদ্ধধর্ম ও চৈনিক ভাষা সম্পর্কে গবেষণার জন্য তাঁকে নব-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে পাঠানো হয়। অধ্যাপক লেভির সঙ্গে তিনি সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে কাজ করেন। পরবর্তীকালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Docteur-es-Letters করার সময় মধ্য এশিয়ায় ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে পেলিওটের সঙ্গে, চৈনিক ভাষায় বৌদ্ধ সাহিত্য সম্পর্কে ম্যাসপেরোর সঙ্গে, জুলস ব্লকের সঙ্গে প্রাচীন পালি সাহিত্য সম্পর্কে এবং আবেস্তা গাথা সম্পর্কে এন্টয়েন মিলেটের সঙ্গে কাজ করেন। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে বৌদ্ধ ধর্ম চীনে প্রবেশ করেছিল সনাতন এ ধারণার বিপরীতে বাগচী সকলকে অবহিত করেন যে, চীনের সঙ্গে ভারতের প্রথম যোগাযোগ ঘটে খ্রিস্টপূর্ব দুই শতকে যখন মধ্য এশিয়ার যাযাবরদের মাধ্যমে চীনে কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক ও সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কনফুসীয় ধর্মের চেয়ে বৌদ্ধধর্ম অনেক বেশি সমৃদ্ধ হওয়ায় এবং ‘তাও’ মতবাদের চেয়ে এর গভীরতর দর্শন থাকায় এটা চৈনিক শিক্ষিত সমাজকে আকৃষ্ট ও আগ্রহী করে তোলে এবং দরবারে এর পক্ষে আরজি পেশ করা হয়। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ
১। বৌদ্ধ ধর্ম ও সাহিত্য
২। ভারত ও চীন
৩। ভারত ও ইন্দোচীন
৪। ভারত ও মধ্য এশিয়া
৫। দোঁহাকোষের ব্যাখ্যা ও অনুবাদ
৬। চর্যাপদের মূল পাঠ ও ব্যাখ্যা
প্রবোধচন্দ্র বাগচীর জীবন ও কর্ম একজন দক্ষ চীন-ভারতবিদ্যা বিশারদের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। ভারতীয় পন্ডিতদের মধ্যে তাঁর পান্ডিত্য চীন-বিদ্যা এবং ভারত-বিদ্যার মধ্যে এক ধরনের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছিল।

১৯৪৪ সালে তিনি India and China: A Thousand Years of Sino-Indian Contact নামে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যা ভারত-চীন সম্পর্কের ছাত্রদের জন্য অপরিহার্য। পরবর্তীকালে চীন জিন কেমু কর্তৃক একটি (ইংরেজি ও হিন্দি উভয় ভাষাতে অনূদিত) এবং সুবিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ জি জিয়ানলিন কর্তৃক আরেকটি, এ দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও বাগচীর গ্রন্থটি এক অসাধারণ কর্মরূপে বিবেচিত। পাশ্চাত্য গবেষণা পদ্ধতির সঙ্গে নিবিড় পরিচয় থাকার ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে কিভাবে সাহিত্যিক উপাত্তকে সমন্বিত করতে হয় তা বাগচীর জানা ছিল। দূর অতীতের পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যবহারে তাঁর পদ্ধতি ছিল দ্বিবিধ: (১) প্রাচীন চৈনিক বৌদ্ধ গ্রন্থাবলি উদ্ধার ও প্রকাশ করা, সেগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তৈরি করা এবং সংগৃহীত বিভিন্ন পান্ডুলিপির অনুবাদ করা এবং (২) বৌদ্ধ সাহিত্য ও দর্শন এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অন্য বহু দিক সম্পর্কে বিস্তৃত বিষয়াবলি নিয়ে গবেষণা করার জন্য প্রত্ন সামগ্রী যথা মুদ্রা, লিপি ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে গভীরভাবে জানা। বাগচী এমন এক সময়ের সাংস্কৃতিক দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছিলেন যখন অধিকাংশ শিক্ষিত ভারতীয়ই ছিলেন বহুবিচিত্র চৈনিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বা ভারতীয় ইতিহাসে তার গুরুত্ব সম্পর্কে অনবহিত বা উদাসীন। তিনি বিপুলায়তন বিনয় এবং চৈনিক ভাষায় লেখা অন্যান্য গ্রন্থ সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন। তিনি সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন গ্রন্থের তুলনামূলক পরীক্ষা, বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করা এবং এমনকি সমাধানের জন্য ভবিষ্যতের পন্ডিতদের জন্য প্রশ্নও রেখে যান। ১৯৫৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের শান্তি নিকেতনে তার মৃত্যু হয়। অপরিণত বয়সেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৭ বছর। গবেষক আজ সাহিত্যের এই গবেষকের ১২০তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যের গবেষক এবং শিক্ষাবিদ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের আত্মিক সত্ত্বায়, আমরা সবাই অমর স্রোতের মহান ধারা, এক পার থেকে আরেক পারে যাওয়া-আসা।উনি কঠিন সব বই লিখেছেন। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কিছু লিখেন নি। কেন লিখেন নি?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সৃষ্টিকর্তা মানুষের কল্যাণের জন্য এক এক জনকে এক এক রকম ক্ষমতা ও দ্বায়িত্ব দিয়ে
পৃথিবীতে পাঠান। তাই কেউ হয় কবি, কেউ দার্শনিক, কেই বিজ্ঞানী আবার কেউ ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ার। তাই কেউ লেখে কবিতা, কেই গল্প উপন্যাস আবার কেউ গবেষণায় লাভ
করে বুৎপত্তি। ভালোবাসা, প্রেম নিয়ে অনেকে অনেক বই লিখেছেন উনি না হয় গবেষণা
নিয়েই থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.