নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি চিত্রশিল্পী হামিদুর রাহমানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩১


বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান। ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের প্রতীক হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে যে শহীদ মিনার তা তাঁরই সৃষ্টি। চিত্রশিল্পী হলেও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদের স্মরণে হামিদুর রহমানের নকশা অনুসারে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। উল্লেখ্য হামিদুর রহমানের রূপকল্পনা অনুসারে ১৯৬২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভটি জননী-জন্মভূমির প্রতীক। পরম স্নেহে জননী তাঁর সন্তানের দিকে ঝুঁকে আছেন। দুই পাশে দাঁড়ানো রয়েছে তাঁর চারটি শহীদ সন্তান, যাঁরা মাতৃভাষার জন্য, মাতৃভূমির জন্য, মায়ের জন্য জীবন দিয়েছেন। এই শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে- তিনি হলেন শিল্পী হামিদুর রহমান। হামিদুর রাহমান চিত্রশিল্পী হলেও শৈশবে তাঁর মূল আগ্রহের জায়গা ছিল গান ও কবিতা। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়ন ছাড়াও ঢাকার অনেক বিশিষ্ট ভবনের দেয়ালে শিল্পী হামিদুর রাহমান অনেক মুরাল করেছিলেন। ১৯৮৮ সালের ১৯ আজকের দিনে শিল্পী হামিদুর রাহমান কানাডার মন্ট্রিয়লে মৃত্যুকে বরণ করেন। আজ তার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ মিনারের স্থপতি চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান ১৯২৮ সালে পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম হামিদ আহমদ হলেও তিনি তা পরিবর্তন করে হামিদুর রহমান করেন। কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এত গভীর ছিল যে দুজনেই নাম মিলিয়ে রেখেছিলেন। 'হামিদ আহমদ' বদলে নাম নিয়েছিলেন হামিদুর রহমান। তাঁর পিতা মির্জা ফকির মোহাম্মদ এবং পিতামহ মির্জা আবদুল কাদের সরদার। চার ছেলের মধ্যে হামিদ ছিলেন তৃতীয়। হামিদের বড় ভাই নাসির আহমদ ছিলেন সংস্কৃতিমনা ও ব্যবসায়ী। পরে নাজির আহমদ ছিলেন বিশিষ্ট বেতার ব্যক্তিত্ব। হামিদুর রাহমানের ছোট সাঈদ আহমদ বাংলাদেশের পথিকৃত নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম। এই দম্পতির তিন মেয়ে। মেহেরুননিসা বেগম, শামসুন্নাহার বেগম ও লুত্‍ফুন্নাহার বেগম। হামিদুর রহমান ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ও পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চিত্রকলার উপরে উচ্চশিক্ষার্থে ইউরোপ যান। প্যারিসের ইকোল দ্যা বোজ আর্টস শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স একাডেমী দ্য বেল আর্ট থেকে মুরাল পেইন্টিংয়ের ওপরে গ্রীষ্মকালীন কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপরে লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৫৯-১৯৬০ পর্যন্ত তিনি পেনসিলভিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস- চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলোঃ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়ন , পাকিস্তানের বিশিষ্ট অনেক ভবনের দেয়ালে তাঁর করা অনেক মুরাল রয়েছে। ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরির দেয়ালে মুরাল করেছেন তিনি। এছাড়া মুরাল করেছেন লন্ডন, করাচি, ব্রাসেলস ও কানাডার বিভিন্ন ভবনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেয়ালে তাঁর মুরালের মোট আয়তন ২০ হাজার বর্গফুটেরও বেশি।পেশাগত জীবনে হামিদুর রাহমান কোথাও স্থির হননি। চিত্রশিল্পের নেশায় ঘুরে বেরিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পেশায় চিত্রকলার শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় একাডেমী অব ফাইন আর্টসে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ অধ্যাপনা করেছেন কানাডার ম্যাকডোনাল্ড কার্টিয়ার পলিটেকনিক মন্ট্রিয়লে।

(হামিদুর রহমানের নকশা অনুসারে নির্মিত)
শিল্পচর্চায় অবদানের ফলে হামিদুর রহমান দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭২ সালে মাদার অ্যান্ড স্মোক চিত্রের জন্য তিনি 'ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব বাংলাদেশী পেইন্টার্স' থেকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তাঁর ফ্লাওয়ার ইন মাই বডি চিত্র ইরানের '৫ম তেহরান দ্বিবার্ষিক'-এ প্রথম পুরস্কার লাভ করে। কমনওয়েলথ পেইন্টার্স এক্সিবিশনে শ্রেষ্ট পুরস্কার হিসেবে সম্মানিত হয় তাঁর অঙ্কিত বোট। ১৯৬২ সালে তাঁর সানফ্লাওয়ার চিত্রটি পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে 'ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিংস অ্যান্ড স্কালপচার্স'-এ শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে 'প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অব প্রাইড অব পারফরমেন্স ফর পেইন্টিং' পদক প্রদান করলেও হামিদুর রহমান কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক প্রদান করে। চিত্রশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর হামিদুর রহমানের পরিবার থেকে তাঁর নামাঙ্কিত হামিদুর রহমান পুরস্কার প্রদান করা হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬০ সালে আশরাফ রহমানকে বিয়ে করেন হামিদুর রহমান। হামিদুর রহমান ও আশরাফ রাহমান দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে নাদিম রাহমান, ছোট ছেলে ফাহিম রাহমান, মেয়ে নওশাবা রাহমনের সাথে বিয়ে হয় হামিদুর রাহমানের। জাতীয় শহীদ মিনারের রূপকার ও চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮৮ সালের আজকের দিনে তিনি কানাডার মন্ট্রিলে মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সনেট কবি বলেছেন: তাঁর জন্য শ্রদ্ধা।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: ৭২ সালে উনি যে পুরস্কারটা পান এটা কোন দেশ থেকে?

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪১

আরোহী আশা বলেছেন: ভালো লিখেছেন

৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৩

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধ্যা ও ভালবাসা......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.