নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার মোঃ ফজলে রাব্বীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮


জাতির সবচেয়ে মেধাবী চিকিৎসকের একজন শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী। তাঁর কাছে দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার জন্য আসতেন উপমহাদেশের অসংখ্য মানুষ। মেডিসিনের উপর তাঁর গবেষণা পত্র ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এবং ল্যান্সেট এ প্রকাশিত হয়। ভালো ছাত্রের পাশাপাশি তিনি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শহীদ ডা. রাব্বী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। যদিও '৭১ এর মু্ক্তিযুদ্ধে তিনি নিজ হাতে রাইফেল ধরেননি যুদ্ধ করার জন্য, কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবেই তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ কালরাত্রির পর ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করে পাক বাহিনী। কাউকে বাহিরে দেখলেই গুলি। এর মাঝেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডা. রাব্বী চলে আসেন তার কর্মস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজে। একজন চিকিৎসক হিসেবেই তিনি পাশে দাড়ান মুক্তিযোদ্ধাদের। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশের এই সংকটে নিজের ডাক্তারি বিদ্যাটাকেই কাজে লাগাবেন তিনি। যুদ্ধের নয় মাস সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অক্লান্ত সেবা করে যান আহত মুক্তিযদ্ধাদের সাড়িয়ে তুলতে। নিজেই ওষুধ কিনে দিতেন তাদের। গেরিলা যোদ্ধাদের করতেন দরকারি অর্থ সাহায্য। কেবল তিনি নন তার স্ত্রী জাহানারা রাব্বির পাশে দাঁড়ান মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন সেনাসহ রাজাকার-আলবদররা ডা. ফজলে রাব্বীকে তাঁর সিদ্ধেশ্বরী বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বর দিনের বেলায় শহীদ ডা. ফজলে রাব্বীর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ তার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার মোঃ ফজলে রাব্বীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ফজলে রাব্বী ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার হেমায়েতপুর থানার ছাতিয়ানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আফসার উদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তিনি ১৯৪৮ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে মেধা তালিকায় বিশিষ্ট স্থান দখল করে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ভি.পি.আই ও জেলা ভিত্তিক বৃত্তি লাভ করেন। তাঁর পরবর্তী শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজে। পরবর্তী ১৯৫০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি এমবিবিএস- এ প্রথম পার্ট পরীক্ষায় অ্যানাটমি ও ফার্মাকোলজিতে সম্মানসহ এমবিবিএস ফাইনালে শীর্ষস্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৫০-৫৫ সাল পর্যন্ত ছাত্র থাকাকালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রসেক্টর হন। ১৯৫৫-৫৬ সালে কমপালসারি ইন্টার্নিশিপ ট্রেনিং নেন। ১৯৬০ সনে তিনি ইউকের এডিনবরা থেকে এমআরসিপি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৬৩ সনে দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সনে তিনি মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মেডিসিন ও কার্ডিওলজির প্রফেসর হন। তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ল্যান্সেট ও ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে। ১৯৭০ সালে মনোনীত হন পাকিস্তানের সেরা অধ্যাপক পুরস্কারের জন্য। অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে সদা প্রতিবাদী ফজলে রাব্বি প্রত্যাখ্যান করেন অনাচারী পাকিস্তান সরকারের এই পুরস্কার। ফলে সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় এই মানুষটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন ঢাকায়। করেছেন অগণিত যুদ্ধাহত মানুষের সেবা। ডাক্তার হিসেবে মানুষের প্রতি নিজের কর্তব্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা না করে, নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেবা দিয়ে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তারপর এল সেই বিষাদের দিন। একাত্তরের ১৫ই ডিসেম্বর। বাড়ি ঘিরে ধরেছে রাজাকার-আল বদরের দল, সাথে পাক সেনারা। বাবুর্চিকে তালা খোলার নির্দেশ নিয়ে দৃঢ় পদে তিনি হেঁটে গেলেন তাদের দিকে। গম্ভীর গলায় বললেন, 'আমার গায়ে হাত দেবেন না।' এই বলে, পেছনে ফিরে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন সৈন্যদের সাথে। জীবন নিয়ে আর ফিরে আসেননি তাঁর সিদ্ধেশ্বরীর তার প্রিয় বাসভবন। রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। মৃত্যুর পর চোখ বাঁধা অবস্থায় কাত হয়ে পড়ে ছিল তার নিথর দেহখানা। ১৮ই ডিসেম্বর, রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া গেল ডাঃ ফজলে রাব্বির লাশ। চোখ উপড়ানো , হাত মুচড়ে পেছনে বাঁধা, সারা শরীরে বেয়োনেটের চিহ্ন। মৃতদেহটা তখনও তাজা। জল্লাদ বাহিনী তাঁর বুকের ভেতর থেকে কলিজাটা তুলে নিয়েছে। এভাবেই বর্বর হানাদারদের কাপুরুষোচিত হামলায় জীবনাবসান হয় বাংলার সূর্যসন্তান, দেশপ্রেমিক এই চিকিৎসকের। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছেলেদের হলে শোভা পায় তাঁর নাম। তিনি ঢাকা মেডিকেলের গর্ব। তিনি আমাদের সকলের, সমগ্র বাংলাদেশের অহংকার।

(স্ত্রী জাহানারা রাব্বির পাশে ডাঃ ফজলে রাব্বী)
ডাক্তার মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, প্রফেসর অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কারডিওলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এই তাঁর পরিচয় । তার চেয়েও বড় এবং সত্য পরিচয় হলো তিনি একজন মানুষ ছিলেন। সত্যিকারের মানুষ যেমন সচরাচর চােখে পড়ে না। পড়াশোনার জন্য বেশিরভাগ সময় কেটেছে ঢাকায়, তারপর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলাত গমন। ফিরে এসে ঢাকায়ই কর্মজীবনের শুরু। এই অল্প সময়ের মধ্যে পাবনা আর তাঁর তেমন আসা হয়ে ওঠেনি। ফলে নিজগ্রাম এবং নিজ জেলার মানুষের সাথে তাঁর যোগাযোগের একটা গ্যাপ ছিল। অতি উঁচু মাপের মানুষ হয়েও পাবনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি একরকম অজানা-অচেনাই রয়ে গেছেন। স্বাধীনতার চার দশক পার হয়ে গেলেও স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের দ্বারাও তিনি মূল্যায়িত হননি। এমনকি পাবনার মুক্তিযোদ্ধারাও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীকে নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা করেন না। চাইলে লণ্ডনেই নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন স্বর্ণপদক জয়ী এ চিকিৎসক। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় সব ছেড়ে নিরাপদে পালিয়েও যেতে পারতেন। কিন্তু তার বুকে ছিল গভীর এক দেশপ্রেম তার এ দেশের মানুষের জন্য সীমাহীন দায় বদ্ধতা। আর তাই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশের জন্যই।পাবনার গৌরব এমন একজন গুণী মানুষকে নিয়ে পাবনার রাজনীতিকদের মুখেও কোন কথা শোনা যায় না। অথচ পাবনার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সম্মিলিত চেষ্টায় এই পাবনায় অনেক কিছুই তার নামে হতে পারতো। আজ শহীদ ডা. ফজলে রাব্বীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার মোঃ ফজলে রাব্বীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আল্লাহ তাকে বেহেশ্ত নসিব করুন।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার প্রার্থনা কবুল হোক
মহান আল্লাহর দরবারে। আমিন

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.