নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক অজয় ভট্টাচার্যের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮


বিখ্যাত বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক অজয় অজয় ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন আধুনিক গানের প্রথম যুগের (মধ্য তিরিশ দশকে যার শুরু) অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকার। বহুবিস্তৃত গানের জগৎ ছিল তাঁর। কাব্যগীতি, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, বাউল, রাগপ্রধান, কীর্তন, সাধনসঙ্গীত, ভজন ইত্যাদি। কাব্যগীতিতেওবিষয়-বৈচিত্র্য ছিল প্রচুর। শচীন দেব বর্মন তাঁর বহু গানে সুর দিয়েছিলেন। গান লেখা ছাড়াও অজয় ভট্টাচার্য চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনা করেছেন। অধিকার, শাপমুক্তি, নিমাই সন্ন্যাস, মহাকবি কালিদাস প্রভৃতি চলচ্চিত্রের গল্প বা সংলাপ রচনা করেন। চলচ্চিত্র ও গ্রামোফোন রেকর্ড উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর লেখা গান সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই তাঁর গান অনেক প্রচলিত ছিল। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে অশোক ও ছদ্মবেশী। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রাতের রূপকথা, ঈগল ও অন্যান্য কবিতা, সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা, ইত্যাদি।আজ গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্র পরিচালক অজয় ভট্টাচার্যের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

কবি ও গীতিকার অজয় ভট্টাচার্য ১৯০৬ সালের জুলাই মাসে (তারিখ জানা যায়নি) ত্রিপুরার শ্যাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিপুরায় জন্ম হলেও তিনি বড় হয়েছেন বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে । তাঁর বাবা রাজকুমার ভট্টাচার্য। মা শশীমুখী দেবী। বাবা কুমিল্লা কোর্টের একজন প্রসিদ্ধ উকিল ছিলেন। অজয়ের পড়াশোনার শুরু কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালায়। ভালো ছাত্র ছিলেন। শুধু পড়াশুনো নয় সাহিত্য, গান, নাটক, ইত্যাদি নানায় বিষয়ে ওঁর প্রচুর উৎসাহ ছিল। ছাত্রজীবনে নজরুল ইসলামের সাথে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন। সেই সূত্রে নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ কাগজে তাঁর প্রথম কবিতা ‘উল্কা’ প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর তিনি অজস্র কবিতা রচনা করেছিলেন। মেধাবী ছাত্র অজয় ভট্টাচার্য ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পরী্ক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। পাশ করার পর কিছুকাল তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। সে চাকরি ছেড়ে ত্রিপুরার কুমার শচীন দেববর্মণের আমন্ত্রণে কলকাতায় চলে আসেন। শিক্ষকতার চাকরি পেলেন কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিট্যুশনে। কিন্তু আয় মূলতঃ হত গান আর সিনেমার জন্যে গল্প ও সংলাপ লিখে। অজয় ভট্টাচার্য কবিতাও লিখতেন, কিন্তু ওঁর মুখ্য পরিচয় গীতিকার হিসেবে। তাঁর প্রথম গান 'হাসনুহানা আজ নিরালায়', গানটিতে সুর দেন সুরসাগর হিমাংশু দত্ত। হিমাংশু দত্তও ছিলেন কুমিল্লা লোক। অজয় ভট্টাচার্যের লেখা আরও অনেক গানে তিনি সুর দিয়েছিলেন।

(শিল্পী শচীন দেব বর্মণ)
অজয় ভট্টাচার্যের লেখা কয়েকটি গানের প্রথম কলিঃ
১.
তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে।
নিয়ে গেছ হায় একটি কুসুম
আমার কবরী হতে।
___সুর ও শিল্পী -শচীন দেববর্মণ
২.
চৈত্র দিনের ঝরা পাতার পথে
দিনগুলি মোর কোথায় গেল, বেলা-শেষের শেষ আলোকের রথে।।
___সুর ও শিল্পী- পঙ্কজ কুমার মল্লিক; ছায়াছবি – ডাক্তার
৩.
ছিল চাঁদ মেঘের ওপারে বিরহীর ব্যথা লয়ে
বাঁশরীর সুর হয়ে কে গো আজ ডাকিল তারে, ছিল চাঁদ
___সুর হিমাংশু দত্ত, শিল্পী অনুপ ঘোষাল
৪.
জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল।
মুখপানে যার কভু চাওনি ফিরে, কেন তারি লাগি আঁখি অশ্রু ব্যাকুল
মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল জীবনে যারে কভু দাওনি মালা?
____সুর হিমাংশু দত্ত, শিল্পী অনুপ ঘোষাল
৫.
দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি রে?
হাসবি তোরা বাঁচবি তোরা, মরণ যদি আসেই ফিরে।
৬.
এ গান তোমার শেষ করে দাও নূতন সুরে বাঁধো বীণাখানি।
আঁধার পথে যাত্রা এবার, শেষ হয়েছে দিনের জানাজানি।।
৭.
আমি ছিনু একা বাসর জাগায়ে
হৃদয়ের ব্যথা ছিল মিশে।
প্রদীপে শুধানু, ‘কিছু জান কি গো?’
_____ শিল্পী - শচীন দেববর্মণ
৮.
আমার ব্যথার গানে তোমায় আমি
ছুঁয়ে গেলাম বারে বারে
কেমন ক’রে ভুলবে তারে।
৯.
কথা কও দাও সাড়া;
শেষ রাগিণীর বীণ বাজে প্রাণে,
ফুটেছে বিদায়-তারা।
১০.
সে নিল বিদায়
না-বলা ব্যথায়
আমি ছিনু অভিমানে
রজনীগন্ধা জানে ইত্যাদি

অজয় ভট্টাচার্য প্রথম জীবনে তিনি রোমান্টিক গান রচনা করলেও, শেষ জীবনে বহু সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ গান রচনা করেছিলেন। বিশেষত চলচ্চিত্রের গানের সূত্রে তাঁর অনেক গান অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য গান গুলোছিল 'এই পেয়েছি অনল জ্বালা', 'একটি পয়সা দাও গো বাবু', 'দুঃখে যাদের জীবন গড়া', 'বাংলার বধূ' গানগুলি লোকের মুখে মুখে ফিরত। অজয় ভট্টাচার্যের জীবিত কালে তাঁর গানের তিনটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো 'আজি আমারি কথা', 'মিলন-বিরহ-গীতি' ও 'শুক-সারী'। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় 'আজও ওঠে চাঁদ'। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্ত্রী রেণুকা ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'অজয় ভট্টাচার্যের গান'। গীতিকার অজয় ভট্টাচার্যের শত শত গানের মধ্যে অনেকগুলিই কালজয়ী ‘আধুনিক বাঙলা গানে’র জগতে চিরস্থায়ী আসন নিয়েছে। তাঁর গানগুলি রয়ে গেছে, কিন্তু তাদের গীতিকার কে - অনেকেই বলতে পারবেন না। গীতিকার হিসেবে অজয় ভট্টাচার্য এখন প্রায় বিস্মৃত। তাঁর জীবনকালের সময়সীমা মাত্র ৩৭ বছরের। এই সময়ে তিনি দেড় হাজার গান রচনা করেছিলেন। শৈশব ও কৈশোরে কুমিল্লার সাংস্কৃতিক জীবন তার সৃষ্টির মনন গড়ে তোলে। যে দু’জনের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার সীমা নেই, একজন সুরসাগর হিমাংশু দত্ত ও অন্যজন সুর ও কণ্ঠের যাদুকর শচীন দেববর্মন। আমাদের শচীনকর্তা। অজয়ের গানের বাণী, সুরসাগরের সুর আর শচীনকর্তার কণ্ঠ-এই ত্রয়ীর সমাহার সে সময়ে বাংলার আকাশ বাতাস মাতিয়ে রেখেছিল। অজয় ও ‘পূর্বাশা’র সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য দুই ভাইয়ের নামই বাংলার কাব্যজগতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। বিখ্যাত বাঙালি গীতিকার অজয় ভট্টাচার্যের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৪৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।একজন আদর্শ শিক্ষক, মানুষ গড়ার কারিগর অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৮

নজসু বলেছেন:


অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুজন ভাই
বিখ্যাত বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক
অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
পোস্ট ভালো লাগার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.