নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের কালজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনীচিত্রের পরিচালক। সর্বাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রের নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ফতেহ্ লোহানী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন। ১৯৫৫ সালে ভারতের জামশেদপুরের টাটানগরে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করেন প্রখ্যাত এই নির্মাতা। ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানীর সঙ্গে আসিয়া ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ করেন ওবায়েদ উল হকসহ আরও অনেকের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক চাষী নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন আর সবার মতো। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কাহিনীচিত্র ‘ওরা ১১জন’ নির্মাণের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- মুক্তিযুদ্ধের ছবি- সংগ্রাম ,হাঙ্গর নদী গ্রেনেট, মেঘের পরে মেঘ, সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র-দেবদাস, শুভদা, চন্দ্রনাথ, রবী ঠাকুরের সুভা, শাস্তি, বঙ্কিম চন্দ্রের বিষবৃক্ষ উপন্যাস অবলম্বনে বিরহ ব্যথা, শিল্পী হাসন রাজা প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি তিনি দেশবরেণ্য তিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক এবং দেশ-জাতি-জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন জীবন ভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। কাজের স্বীকৃতিসরুপ তি্নি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। চাষী নজরুল ইসলাম চার বার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি। এ ছাড়া অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী নির্মাতা, স্বনামধন্য চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৫ সালের আজকের দিনে তিনি প্রয়াত হন। স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ লস্কর এবং মায়ের নাম শায়েস্তা বেগম। নজরুল ইসলাম ছিলেন বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র। নজরুল ইসলামের পারিবারিক উপাধি ছিলো লস্কর। তার বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ লস্করের পূর্বপুরুষেদের সমন্ধে যা জানা যায় তাদের প্রথম পুরুষ আমিন লস্কর, তারপর মোমেন লস্কর। এভাবে আহমেদ লস্কর, জরিপ লস্কর তারপর চাষীর দাদা হেলাল উদ্দিন আহমদ লস্কর। জানা যায়, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক চাষীর নাম রেখেছিলেন। চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এবং নবযুগ ও লাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের 'চাষী' আর কাজী নজরুল ইসলামের 'নজরুল ইসলাম' মিলিয়ে একটা নাম দেন চাষী নজরুর ইসলাম। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ লস্কর, ভারতের বিহারে টাটা আয়রন এন্ড স্টীল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিন মাস বয়সের চাষীকে নিয়ে চাষীর মা স্বামীর চাকরিস্থল জামশেদপুরে গিয়েছিলেন। তারপর টানা চার বছর সেখানে ছিলেন। এরপর কিছুদিনের জন্য আবার নিজেদের গ্রাম বিক্রমপুরে ফিরে এলেন। বিক্রমপুরে চাষীদের বাড়ির সামনে বেশ খোলা জায়গা ছিল। তার কিছু অংশে পারিবারিক হাট বসতো-সবাই বলতো হাটখোলা। পাশেই ছিল একটা প্রাইমারি স্কুল। এ স্কুলটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন,বর্তমানে সমরপুর হাইস্কুল ও কলেজ। ঐ স্কুলেই ক্লাস ওয়ানে তাকে ভর্তি করানো হয়। ক্লাস টুতে ওঠার পর চাষীর বাবা আবার তাকে নিয়ে গেলেন জামশেদপুরে। ওখানে চাষীর বাবারই প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে তিনি ফাইভ পর্যন্ত পড়েন। তারপর ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। তারপর আরডি টাটা হাইস্কুলে-এখান থেকেই পরে চাষী ইলেভেন পাস করেন। ঠিক এ সময় চাষীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি চাননি সবাই বিক্রমপুরে ফিরে আসুক। মোসলেহ উদ্দিন সাহেব ভেবেছিলেন টাটা কোম্পানিতে চাষীর একটা চাকরি হবে। মূলত তিনি জামশেদপুরে স্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন। চাষীর মা শায়েস্তা খানম সেরকমটি চাইলেন না। শেষমেশ ১৯৫৮ সালে সবাই বিক্রমপুর চলে এলেন। ১৯৫৭ সালের দিকে মুসলেহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাটার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সপরিবারে স্বদেশে চলে এলেন। কিছুদিন পর তিনি মারা যান। পিতার শোক ভুলে যাবার আগেই সংসারে বড় ছেলে হিসেবে সব দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। এজি অফিসে অফিসের পোস্ট-সর্টার হিসেবে ১৯৬৯ পর্যন্ত চাকরি করেছেন তিনি। চাষী চাকরির ফাঁকে ফাঁকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, একই সঙ্গে শুরু করলেন নাটক। ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানীর সঙ্গে আসিয়া ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ করেন ওবায়েদ উল হকসহ আরও অনেকের সঙ্গে। অভিনয়ও করেন কয়েকটি ছবিতে। এছাড়া নিয়মিত বেতারে, টিভিতে সান্ধ্য অভিনয় অব্যাহত ছিল তার। ১৯৭২ সালে পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি ওরা ১১ জন। চাষী নজরুল ইসলাম সব মিলিয়ে ৩৫টির মতো ছবি নির্মাণ করেছেন।
১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’, ১৯৯৭ সালে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর তিনি একুশে পদক পেয়েছেন ২০০৪ সালে । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৭ সালে ব্যান্ড ‘লাল সবুজের দল’এক আলোচনা সভা ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে চাষী নজরুল ইসলামকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। চাষী নজরুল ইসলামের পক্ষ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর স্ত্রী জোসনা কাজী।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দেশের অন্যতম বিখ্যাত কাজী পরিবারের কে জি আহমেদের মেয়ে জ্যোৎস্না কাজীকে বিয়ে করেন চাষী নজরুল ইসলাম। চাষী নজরুল ইসলামের দুই মেয়ে চাষী আন্নি ইসলাম ও চাষী মান্নি ইসলাম। গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রোববার ভোর পাঁচটা ৫১ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই দুরারোগ্য অসুখে ভুগছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। এর আগের দিন থেকে তিনি ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছরের কিছু বেশি। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছয় নাতিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। একজন গুণী ও মেধাসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুল ইসলাম যে কৃতিত্ব ও সুনাম অর্জন করেছিলেন, তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ চাষী নজরুল ইসলামের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নির্মম সত্য।
আমরা শুধু নিতেই জানি
দিতে কৃর্পন্য করি।
যত চাও তত লও তরণী-'পরে।
আর আছে?-- আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে--
এখন আমারে লহ করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই-- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি--
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: তিনি একজন ভালো পরিচালক।
আমি তাকে পছন্দ করতাম।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৪
এস এম ইসমাঈল বলেছেন: প্রতিভাবান সংগঠক, মুক্তি যোদধা, একজন গুণী চলচিত্র নিরমাতা চাষি সাহেবকে আল্লাহ বেহেসত নসীব করুন।
লেখক কে জানাই শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ।
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তিনি যে শ্রীনগরের মানুষ, এটা জানতাম না। একজন গুণী পরিচালক হিসাবেই তাঁকে জানতাম।
তাঁর নাম রাখার ব্যাপারটা বেশ মজার।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:০৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক ওপারে।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৬
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আজকাল কেউ উনার নাম মুখেও নেয় না । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ উনি করেছেন