নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক ও দার্শনিক মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২৯


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক ও দার্শনিক মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক, সমাজ সংস্কারক, চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর খ্যাতিমান। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃদেব বলে পরিচিত নন, তিনি আপন কৃতিত্বে অতি ভাস্বর। তিনি ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য ও সমাজ নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। উনবিংশ শতকে বাংলাদেশে যে নবজাগরণের সূচনা হয়, তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস অসমাপ্ত থেকে যাবে, বিশেষ করে শিক্ষা ও সংষ্কৃতির ক্ষেত্রে। তিনি দরিদ্র গ্রামবাসীদের চৌকিদারি কর মওকুফের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সম্বলিত একটি পত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করেন। দেবেন্দ্রনাথ বিধবাবিবাহ প্রচলনে উৎসাহী ছিলেন, তবে বাল্য ও বহু বিবাহের বিরোধী ছিলেন। খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব থেকে ভারতীয় যুবকদের রক্ষার জন্য ১৮৬৭ সালে রাধাকান্ত দেব তাঁকে ‘জাতীয় ধর্মের পরিরক্ষক’ ও ব্রাহ্ম সমাজ ‘মহর্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করে। দেবন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল সমাজ সংষ্কারক, শিক্ষাব্রতি ছিলেন না, তিনি বাংলা গদ্য সাহিত্যে উন্মেষ যুগের একজন বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো, বাংলাভাষায় সংষ্কৃত ব্যাকরন, Vedantic Doctrines Vindicated, ব্রাহ্মধর্ম, ব্রাহ্মবিবাহ প্রণালী, জ্ঞান ও ধর্মের উন্নতি, স্বরচিত জীবনচরিত ও পত্রাবলী। ১৯০৫ সালের এই দিনে কলকাতায় জীবনাবসান ঘটে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। আজ তার ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। দার্শনিক মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৮১৭ সালের ১৫ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং মাতা দিগম্বরী দেবী। দেবেন্দ্রনাথ ১৮২৩-২৫ সাল পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করেন। ১৮২৭ সালে তিনি রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত অ্যাংলো হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে কিছুকাল পড়াশোনার পর তিনি পিতার বিষয়সম্পত্তি ও ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি দর্শন ও ধর্মচর্চা শুরু করেন। ১৮৩৮ সালে পিতামহীর মৃত্যুকালে তার মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি ধর্মবিষয়ে আগ্রহী হয়ে মহাভারত, উপনিষদ ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন শুরু করেন। এর ফলে পার্থিব বিষয়ের প্রতি তার বীতস্কৃহা জন্মে এবং তার মধ্যে ঈশ্বরলাভের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়। তত্ত্বালোচনার উদ্দেশ্যে তিনি ‘তত্ত্বরঞ্জনী সভা’ (১৮৩৯) স্থাপন করেন, পরে যার নাম হয় তত্ত্ববোধিনী সভা। এ সময় তিনি কঠোপনিষদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন (১৮৪০)।
১৮৪২ সালে দেবেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী সভা ও ব্রাহ্মসমাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরের বছর তারই অর্থে এবং অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এই পত্রিকায় দেবেন্দ্রনাথকৃত বৃত্তি ও বঙ্গানুবাদসহ উপনিষদ প্রকাশিত হতে থাকে। দেবেন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায় প্রকাশ্য সভায় বেদপাঠও শুরু হয়। ১৮৪৪ সালে দেবেন্দ্রনাথ প্রথম ব্রহ্মোপাসনা পদ্ধতি প্রণয়ন করেন এবং পরের বছর থেকে তা ব্রাহ্মসমাজে ব্যবহূত হতে থাকে। দীর্ঘ শাস্ত্রচর্চার ফলে তিনি উপলব্ধি করেন যে, শুধু উপনিষদের ওপর ব্রাহ্মধর্মের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব নয়। তাই ১৮৪৮ সাল থেকে তিনি ক্রমাম্বয়ে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ঋগ্‌বেদের অনুবাদ প্রকাশ করতে শুরু করেন, যা ব্রাহ্মধর্ম (১৮৬৯) নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৮৫০ সালে তার অপর গ্রন্থ আত্মতত্ত্ববিদ্যা প্রকাশিত হয়। ১৮৫৩ সালে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৮৫৯ সালে ব্রাহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর কিছুদিন পর ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম কেশবচন্দ্রের হাতে ন্যাস্ত করেন। পরে ধর্মীয় আদর্শের কারণে কেশবচন্দ্রের সাথে সংঘাত উপস্থিত হলে – ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়। কেশবচন্দ্রের অনুগামী ধর্মের নাম ছিল 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ', পক্ষান্তরে দেবেন্দ্রনাথের অনুগামী ধর্মের নাম হলো– 'আদি ব্রাহ্মসমাজ'। এরপর ধীরে ধীরে ইনি সকল বৈষয়িক ও ধর্মীয় সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন।

দেবেন্দ্রনাথ পূজা-পার্বণাদি বন্ধ করে ‘মাঘ উৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ ইত্যাদি উৎসব প্রবর্তন করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি বীরভূমের ভুবনডাঙ্গা নামে একটি বিশাল ভূখণ্ড ক্রয় করে আশ্রম স্থাপন করেন। এই আশ্রমই আজকের বিখ্যাত শান্তিনিকেতন। এছাড়াও তিনি হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশনের বেথুন সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৮৫১ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি দরিদ্র গ্রামবাসীদের চৌকিদারি কর মওকুফের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সম্বলিত একটি পত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে ১৮৩৪ সালের মার্চ মাসে যশোরের রামনারায়ণ চৌধুরীর মেয়ে সারদাসুন্দরী দেবীকে বিয়ে করেন দেবেন্দ্রনাথ। এ দম্পতির ছয় মেয়ে ও নয় ছেলে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কনিষ্ঠ পুত্র। নিচে তাদের তালিকা দেওয়া হলো।
১। কন্যা। শৈশবেই মারা যায়। ২। দ্বিজেন্দ্রনাথ। জন্ম : ২৯ ফাল্গুন, ১২৪৬। মৃত্যু : ৪ মাঘ ১৩৩২। জীবনকাল : ৮৬ বৎসর।
৩। সত্যেন্দ্রনাথ। জন্ম : ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১২৪৯। মৃত্যু : ২৪ পৌষ ১৩২৯। জীবনকাল : ৮১ বৎসর। ৪। হেমেন্দ্রনাথ। জন্ম : ০৮ মাঘ, ১২৫০। মৃত্যু : ২১ জ্যৈষ্ঠ ১২৯১। জীবনকাল : ৮০ বৎসর। ৫। বীরেন্দ্রনাথ। জন্ম : ২৭ কার্তিক, ১২৫২। মৃত্যু : ১৩২২। জীবনকাল : ।৭০ বৎসর। ৬। সৌদামিনী। জন্ম : ১২৫৪। মৃত্যু : ৩০ শ্রাবণ ১৩২৭। জীবনকাল : ৭৩ বৎসর। ৭। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। জন্ম : ২২ বৈশাখ, ১২৫৬। মৃত্যু : ফাল্গুন ১৩৩১। জীবনকাল : ৭৬ বৎসর। ৮। সুকুমারী। জন্ম : ১২৫৭। মৃত্যু : জ্যৈষ্ঠ ১২৭১। জীবনকালঃ : ১৪ বৎসর। ৯। পুন্যেণ্দ্রনাথ। জন্ম : ১২৫৮। মৃত্যু : ১২৬৪। জীবনকাল : ৬ বৎসর। ১০। শরত্কুমারী। জন্ম : ১২৬১। মৃত্যু : ১০ আষাঢ় ১৩২৭। জীবনকাল : ৬৬ বৎসর। ১১। স্বর্ণকুমারী। জন্ম : ১৪ ভাদ্র, ১২৬৩। মৃত্যু : ১৯ অষাঢ় ১৩৩৯। জীবনকাল : ৭৬ বৎসর।
১২। বর্ণকুমারী। জন্ম : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ। মৃত্যু : ৩ নভেম্বর ১৯৪৮। জীবনকাল : ৯১ বৎসর। ১৩। সোমেন্দ্রনাথ। জন্ম : ২৯ ভাদ্র, ১২৬৬। মৃত্যু : ১৬ মাঘ ১৩২৮। জীবনকাল : ৬২ বৎসর। ১৪। রবীন্দ্রনাথ। জন্ম : ২৫ বৈশাখ। ১২৬৮। মৃত্যু : ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮। জীবনকাল : ৮০ বৎসর। ১৫. বুধেন্দ্রনাথ। জন্ম : ১৮৬৩। মৃত্যু ১৮৬৪। জীবনকাল : এক বৎসর।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮৮ বছর বয়সে ১৯০৫ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোর নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। দার্শনিক মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আমার বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ বইতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে বিস্তর লিখেছি।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ অন্তত এ কথা না বলার জন্য যে.
যিনি মারা গেছেন তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লাভ কি?
কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না।

আপনার লেখা বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ বইটি
পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.