নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মার্কিন নাটকের অন্যতম প্রাণভোমরা হিসেবে খ্যাত আর্থার অ্যাশার মিলার। যিনি আর্থার মিলার না্মে সমাধিক পরিচিত। মিলারের নাটক লেখা শুরু ছাত্রজীবনেই। সুদীর্ঘ সাত দশক ধরে লিখেছিলেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে অল মাই সন্স (১৯৪৭), ডেথ অব এ সেলসম্যান (১৯৪৯), দ্য ক্রুশিবল (১৯৫৩), এ ভিউ ফ্রম দি ব্রিজ (১৯৫৫)। সিনেমার জন্য চিত্রনাট্যও লিখেছেন মিলার। ইহুদিবিরোধী মতবাদ সম্পর্কে লেখা তার একটি অন্যতম নাটক ‘ফোকাস’। তার নাটক সম্পর্কে বিবিসিকে দেওয় এক সাক্ষাৎ কারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নাটকগুলো আসলে আমার আত্মজীবনী। আমি সেই নাটক লিখতে পারিনি যেখানে আমি নেই। আমার প্রতিটি নাটকে আমি আছি। এছাড়া কীভাবে লিখতে হয় আমি জানিই না।’ নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পুলিতৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। মার্কিন নাট্যকার, প্রবন্ধকার এবং লেখক আর্থার মিলারের শততম জন্মবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের আজকের দিনে তিনে যুক্তরাষ্ট্রের কার্নিকাটে মৃত্যুবরণ করেন। মার্কিন নাট্যকার, প্রাবন্ধিক আর্থার মিলারের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আর্থার অ্যাশার মিলার ১৯১৫ সালের ১৭ অক্টোবর আমেরিকার নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। মিলারের জীবনবৃত্তান্তও আশ্চর্য রোমাঞ্চকর।তার পিতা ইসিডোর মিলার এবং মা অগাস্টা মিলার। আর্থারের বাবা একজন ইহুদি ও অবস্থা সম্পন্ন ব্যবসায়ী ছিলেন। মিলারের বাবা পোল্যান্ড থেকে আরও অনেক ভাগ্যান্বেষীর মতোই আমেরিকায় আসেন এবং কালক্রমে একটা জামাকাপড়ের কারখানা গড়ে তোলেন। মিলারের নিজের কথায়, সে কারখানায় প্রায় হাজারখানেক মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। মিলারেরা দু’ ভাই, এক বোন। নির্বিঘ্ন, নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। মিলার-ভায়েরা হার্লেমের কাছেই একটা স্কুলে পড়তে যেত, সে স্কুল এত কাছে যে, মিলারের মা অগাস্টা মিলার বাড়ি থেকেই সেই স্কুলে নজরদারি চালাতে পারতেন। কি্ন্তু ভাগ্যে এত সুখ সইলোনা। উনিশশো উনত্রিশ, আর্থার মিলারের যখন বয়স চোদ্দো বছর, তখন পৃথিবীখ্যাত ওয়াল স্ট্রিটের ঘটনা ঘটল। শেয়ার বাজারে ধস নামল, বিখ্যাত অর্থনৈতিক ডিপ্রেশন শুরু হল। মিলারদেরও ব্যবসা ভেঙে চৌচির হয়ে গেল। মিলাররা ব্রুকলিনে চলে গেলেন। প্রচণ্ড অর্থাভাব দেখা দিল মিলারের পরিবারে। তাদের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। যেদিন থেকে তাদের বাড়িতে টাকা ঢোকা বন্ধ হল তাদের অস্তিত্ব, মর্যাদা সব উধাও হয়ে গেল। আমেরিকা এমন একটা ‘আশা’ বা প্রতিশ্রুতি যা অকেজো হয়ে যাচ্ছিল। আর্থার যখন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলেন, তখন সেখানে পড়ার খরচ জোগাড়ের জন্য তাঁকে দিনের বাকি অংশে নানাবিধ কাজ করতে হতো। সপ্তাতে চার ডলার মইনেতে ভোর চারটেয় উঠে বাড়ি বাড়ি ঘুরে রুটি বিলি করতে হয়েছে। ১৯৩৮ সালে মিলার ইংরেজিতে বিএপাস করেন। স্কুলজীবনে ফুটবল খেলাজনিত আঘাতে আহত হওয়ার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মিলারের নাটক লেখা শুরু ছাত্রজীবনেই। এসময়ই তিনি তার প্রথম নাটক নো ভিলেন রচনা করেন। আব্রাহাম লিঙ্কন হাইস্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি টুকটাক কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ মেটাতে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে তিনি বিশেষ ডিগ্রি লাভ করেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মিলার ছাত্রদের কাগজ মিশিগান ডেইলির রিপোর্টার ও নৈশকালীন সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৬০-এর দশকে ডেথ অব অ্যা সেলসম্যানের জন্য তিনি পুলিতৎজার পুরস্কার লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে পঁচিশ বছর বয়সে মিলার প্রথম বিবাহ করেন মেরি গ্রেস স্ল্যাটারিকে। দুই সন্তানের পিতা মিলার তার ষোলো বছরের দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর মেরিকে ডির্ভোস করে বিয়ে করেন হলিউডের কিংবদন্তি নায়িকা মেরিলিন মনরোকে। মেরিলিন আর মিলারের বিবাহিত জীবনে একটি সন্তান নষ্ট হয়। সন্তানসম্ভবা অবস্থাতেই মেরিলিনের জীবনে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। মিলার তখন স্ত্রীর মন ভাল রাখার জন্য ‘দ্য মিসফিট’ নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন। মিলার বলছেন, ‘আমি তাঁর অভিনেত্রী হিসেবে নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছবিটা শেষ হতে প্রায় তিন বছর লাগল কিন্তু ততদিনে আমরাও সেই পুরুষ আর সেই নারী রইলাম না। সিনেমাটা হল, কিন্তু বিয়েটা টিকল না।’ তােদের এই বিয়ে টিকেছিল পাঁচ বছর। এই নষ্টদাম্পত্য এবং তার পরে পরেই মেরিলিনের আত্মহত্যা। শেষদিকে এসে তিক্ত অবসন্ন মিলার মেরিলিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালেন আর তার পরের বছর বিয়ে করলেন অস্ট্রিয়ান ফোটোগ্রাফার ইঙ্গেবর্গ মোরাথ-কে। তাঁদেরও একটি মেয়ে হল তার পরের বছর। এটিই মিলারের শেষ বিবাহ। মিলার যিনি সম্পর্কের বিষয়ে যথেষ্ট প্যাশনেট ও দায়িত্ববান ছিলেন এবং যে-কোনও সৃজনশীল মানুষের মতোই তা নিয়ে মাঝেমাঝেই অবসাদে ভুগতেন। চুরানব্বই সালে মিলারের শেষ গুরুত্বপূর্ণ নাটক ‘ব্রোকেন গ্লাস’। এই নাটকের প্রেক্ষাপট উনিশশো আটত্রিশের নভেম্বরের ব্রুকলিন।
শেষ বয়সে ক্যানসারে ভুগছিলেন আর্থার অ্যাশার মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের কার্নিকাটের রক্সবেরিতে নিজের বাড়িতে ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছেলো ঊননব্বই বছর। মিলারের মৃত্যুর পরে তাঁর মূল্যায়ন করতে গিয়ে ক্রিস্টোফার বিগস্বি বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া থিয়েটারের সামাজিক স্বীকৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি জীবন বাজি রেখেছিলেন। সেই থিয়েটার যেখানে আমেরিকাবাসী বুঝতে পারবে তাদের সমস্ত ব্যক্তিগত উদ্বেগ, রাজনৈতিক আর সামাজিক কনসার্নের উত্তর তারা একমাত্র সেখান থেকেই পেতে পারে।’ এবং তারপর ‘হি ওয়াজ় অ্যাবাউট দ্য বিজ়নেস অফ প্লেসিং অন স্টেজ মেন অ্যান্ড উইমেন, অ্যাফ্রেড দ্যাট দে উইল পাস আননোটিসড, ডাই উইথ নো ক্লিয়ার আইডিয়া হোয়াই দে হ্যাভ লিভড, অল টু অফন ব্লাইন্ড টু দ্য কনসোলেশনস অ্যান্ড রিডেম্পশনস অন অফার ফ্রম দোজ় উইথ হুম দে হ্যাভ শেয়ারড দেয়ার একজ়িসটেন্স ইফ নট অলওয়েজ় দেয়ার লাইভস।’ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা স্মরণে আমার প্রতিদিনের নৈবদ্য বিশেষ দিনের গুণীজন। মার্কিন নাট্যকার, প্রবন্ধকার এবং লেখক আর্থার মিলারের ১৪তম ত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের ১০া ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কার্নিকাটে মৃত্যুবরণ করেন। মার্কিন নাটকের অন্যতম প্রাণভোমরা হিসেবে খ্যাত আর্থার অ্যাশার মিলারের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ আলী ভাই
খ্যাতিমান মার্কিন এই নাট্যকারের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কেন তুচ্ছ মানূষদের নিয়ে লিখেন না?
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমাকে নিয়ে আমার
লিখতে ভালো লাগেনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খ্যাতিমান মার্কিন এই নাট্যকারের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ।
আপনার ব্লগে থাকা সোনালী দিনের বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাম্মী আক্তারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
শীর্ষক পোষ্টে একটি মন্তব্য রেখে এসেছি , দেখে নিতে পারেন ।
শুভেচ্ছা রইল