নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৫


তারকেশ্বর দস্তিদার ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিপ্লবী দলের সদস্য হিসেবে ১৮ এপ্রিল, ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। প্রধান নেতা সূর্য সেন ধরা পড়লে তিনি ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির নেতৃত্ব নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে বিপ্লব পরিচালনা করেন। ১৯ মে ১৯৩৩ তারিখে গহিড়ায় পূর্ণ তালুকদারের বাড়িতে পুলিসের সংগে সংঘর্ষের সময় গ্রেপ্তার হন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি, মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। বাঙালি জাতির জীবনে ১২ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গৌরবের দিন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি বিপ্ল­বী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন ও বিপ্ল­বী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ শাসকরা নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে ফাঁসি দেয়ার আগে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে প্রায় অর্ধমৃত করে ফেলে। পরে রাত ১২ ঘটিকার সময় একই দিনে একই সময়ে ও একই মঞ্চে চট্টগ্রাম কারাগারে ফাঁসি দেয় ব্রিটিশ শাসক। তাদের মৃতদেহ দুটি আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সিক্ষদের কাছে ফেরত না দিয়ে ভোর হওয়ার পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে একটা জাহাজে করে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পাথর বেঁধে ডুবিয়ে দেয়। শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের আজ ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের জন্ম ১৯০৯ সালে। বাবার নাম চন্দ্রমোহন দস্তিদার। মায়ের নাম প্রমিলা। বাড়ি সরোয়াতলী গ্রাম। থানা বোয়ালখালী। জেলা চট্টগ্রাম। তার ডাক নাম ছিল ফুটু। সরোয়াতলী স্কুলে পড়ার সময় তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন। সরোয়াতলী গ্রামে বীণাপাণি লাইব্রেরী ও একটি ব্যায়ামাগার স্থাপন করেন। গ্রামের স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশান পরীক্ষায় পাশ করে চট্টগ্রাম শহরের গভর্নমেন্ট কলেজে আই এস সি পড়ার জন্য ভর্তি হলে তার বিপ্লবী কাজের পরিধি আরো বেড়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারকেশ্বর চট্টগ্রাম বিপ্লবী সংগঠনের সম্পূর্ণ দ্বায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলের গহিরা গ্রামের যুদ্ধতে তারকেশ্বর, কল্পনা দত্ত ও সুধীন দাশ বন্দী হন। বিপ্লবী মনোরঞ্জন দাশগুপ্ত ও আশ্রয়দাতা পূর্ণ তালুকদার এই যুদ্ধে নিহত হন। বিচারে মাস্টারদা ও তারকেশ্বরের ফাঁসীর আদেশ হয়। হাইকোর্টের আপিলেও তারা দুজনের ফাঁসীর রায় বহাল থাকে। দিনটি ছিল ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সাল। চট্টগ্রাম জেলে মাস্টারদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু সেদিন মাস্টারদার সাথে আরও একজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়, তিনি ছিলেন তারকেশ্বর দস্তিদার।

চট্টগ্রাম জেল থেকে ফাঁসীর আগে তারকেশ্বর তার বৌদিকে যে চিঠিটা লিখেছিলেন-
" বৌদি, তোমাদের স্নেহ ভালবাসা থেকে চিরদিনের মত চলে যাচ্ছি। মাকে বলো, আমার যে টাইফয়েড হয়েছিল, তখনও তো মারা যেতে পারতাম। কত লোক যে প্রতিদিন নানাভাবে মারা যাচ্ছে! আমার মৃত্যূ তা থেকে অনেক শ্রেয়। মনকে প্রবোধ দিও।"
সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে হাতুড়ী পেটা করল প্রথমে । হাতুড়ীঘাতে মুখমণ্ডল থেঁতলে গেল তাদের , ভেঙ্গে গেল সবকটা দাঁত। হাতের নখ উপড়ে তুলে ফেলা হল একের পর এক। হাঁটু থেকে শুরু করে সমগ্র শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে চলল নির্বিচারে আঘাতের পর আঘাত । শরীরের সকল হাড় ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারালেন। তারপর মৃতপ্রায় শরীর দুটিকে টানতে টানতে , তাদের গলায় বেঁধে দেয়া হয় হল ফাঁসীর দড়ি । মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফাঁসীর মঞ্চে ঝুলে পড়লেন সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদার। লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হল। তারপর তাদেরকে ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে, তাদের বুকে বেঁধে দেয়া হল লোহার বড় বড় টুকরো। জাহাজ চলে আসল বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগর সংলগ্ন কোন এক গভীর অভ্যন্তরে। অতল গভীর জলে নেমে গেলেন, সূর্যসেন ও তারেকশ্বর দস্তিদার।
গৌরবগাঁথা দুই মহান বিপ্ল­বীর ঐতিহাসিক ফাঁসির দিনটিকে স্মৃতিবহ করে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে বিপ্লবীদের ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিপ্ল­বী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন ও বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির মঞ্চটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে শ্রদ্ধার সহিত সাজিয়ে রেখেছেন। আজ শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.