নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল শাফায়াত জামিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাক বাহিনীর গণহত্যার অব্যবহিত পরই যেসব অকুতভয় বীর বাঙালি সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই সময়ের মেজর শাফাতাত জামিল ছিলেন তাদের অন্যতম। এ সময় তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। বাঙালি সেনা সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণের অংশ হিসেবে তার কোম্পানিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হলে সেখানেই ২৭ মার্চ তিনি বিদ্রোহ করে তার ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার খিজির হায়াতসহ পাকিস্তানি অফিসারদের বন্দী করেন। বিদ্রোহ সংগঠনের পর সমসের নগর থেকে মেজর খালেদ মোশারফ এসে গোটা ৪র্থ বেঙ্গলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যে কয়েকজন সিনিয়র সেনা অফিসার তাদের নিজস্ব ব্যাটালিয়নের সেনাদের নিয়ে গোটা বা আংশিক ব্যাটালিয়ন শক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রথম প্রথাগত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, মেজর শাফায়াত জামিল ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ও অগ্রগণ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন । ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে তিনি এবং খালেদ মোশাররফ খন্দকার মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ৬ নভেম্বর মোস্তাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন। ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয় এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ কর্নেল শাফায়াত জামিল সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হন। আজ অকুতভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল শাফায়াত জামিলের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
শাফায়াত জামিল ১৯৪০ সালের ১ মার্চ তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার খড়গমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এ এইচ এম করিমউল্লাহ এবং মায়ের নাম লায়লা জোহরা বেগম। তাঁর পিতা এএইচ করিমুল্লাহ ছিল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (জুডিশিয়াল) অফিসার ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম রাশিদা শাফায়াত। তাঁদের তিন ছেলে। শাফায়াত জামিল ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি ঐ একাডেমীতে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের (পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট) সহপাঠি ছিলেন। শাফায়াত জামিল ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে পাকিস্তানি সেনারা এই রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানিকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠায়। একটি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সংবাদ পেয়ে তিনি তাঁর ও অপর কোম্পানির সবাইকে নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধপর্বে আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া-গঙ্গাসাগর এলাকায় যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মতিনগরে যান। তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দেওয়ানগঞ্জ, সিলেটের ছাতকসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, মমত্ব ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প আর শাফায়াত জামিলের অদম্য ও অটল মনোভাব সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তর করেছিল।স্বাধীনতার পর তিনি ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
শাফায়াত বঙ্গবন্ধুর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। তাঁকে ঢাকায় অবস্থিত ৪৬ ব্রিগেডের দায়িত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিহিত ছিল বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবার ও বিশিষ্টজনসহ সামরিক-বেসামরিক চক্রের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কারণে নৃশংসভাবে নিহত হলে তা শাফায়াত জামিলের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তিনি সোচ্চার হন। মূলত তাঁরই অব্যাহত চাপে পরবর্তী সময়ে ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বঙ্গভবনে অবরুদ্ধ খোন্দকার মোশতাক ও তাঁর সহযোগী সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে তিনিই প্রধান ভূমিকা রাখেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই অভিযান ব্যর্থ হয় এবং খালেদ মোশাররফসহ কয়েকজন নিহত হন। শাফায়াত জামিলকে কিছুদিন আটক থাকতে হয় ও পরে তিনি চাকরিচ্যুত হন। একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা যিনি দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন, তিনি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন তাঁরই কিছু সহযোগী-সহকর্মীর হাতে। এ কারনে তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে তাঁকে সবচেয়ে বেশি মর্মপীড়া দিত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যর্থতাকে তিনি মেনে নিতে পারতেন না। নভেম্বরে তাঁদের অভ্যুত্থানের বিপক্ষে যারা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায়, তাদের ষড়যন্ত্র ছিল আরও ন্যক্কারজনক। এমন রটনা হলো যে খালেদ-শাফায়াত ভারতপন্থী। দেশের প্রতি যাঁর ভালোবাসা প্রশ্নাতীত, সেই শাফায়াতকে এই অপবাদ খুবই মর্মাহত করত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যাঁরা প্রথম মুহূর্তেই বিদ্রোহ করেছিলেন এবং ১৫ আগস্টের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন, তাঁদের জন্য এমন অপবাদ অসহনীয় ছিল। এই ঘটনার পর থেকেই তিনি অনেকটাই নিভৃতচারী হয়ে পড়েন। একাত্তরের যুদ্ধ’ ও ‘রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ বইয়ে তিনি লিখে গেছেন ১৯৭৫ সালের সেই সংকটময় সময়ের কথা।
২০১২ সালের ১১ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাড়িতে হার্ট অ্যাটাকে জীবনাবসান হয় এই বীর সেনানীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে রেখে গেছেন। কর্নেল শাফায়াত জামিল ছিলেন একজন শৃঙ্খলাপরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ আদর্শ চরিত্রের সৈনিক। শাফায়াত জামিল শুধু দক্ষ সামরিক কর্মকর্তাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শাফায়াত জামিল ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অমায়িক, বন্ধুুপ্রিয় এবং পরিবারের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত যত্নবান ও স্নেহশীল। তাঁর স্ত্রী রাশিদা শাফায়াত সৈনিক জীবনের শুরু থেকেই তাঁর সুখ-দুঃখের সাথি ছিলেন। আজ অকুতভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল শাফায়াত জামিলের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শুনলাম আপনিও নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
এখন যে পরামর্শ দিলেন তা কি একটু
দেরীতে হলো না !! সময় কালে বুদ্ধি
যখন দিতে পারেন্ নাই, এখন তার
চর্বন নাই বা করলেন!
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪২
আহমেদ জী এস বলেছেন: নূর মোহাম্মদ নূরু,
এই বীর মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশ্যে হাযার সালাম।
মরহুম শাফায়াত জামিলকে নিয়ে শুভেচ্ছা তর্পণের এই লেখাটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনােকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই।
মরহুম শাফায়াত জামিলের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: তিনি একজন গ্রেট ম্যান।
০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার মতো অনেকেরই
সেই রকম ধারণা। তবে কেউ কেউ
বিরুপ মন্তব্যও করে থাকেন।
৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২২
হাবিব বলেছেন: কর্নেল শাফায়াত জামিলের ৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে হাবিব্ ভাই
কর্নেল শাফায়াত জামিলের
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।
৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৫৪
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক ওপারে।
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমিন। আল্লাহর দরবারে কবুল হোক
আপনার প্রার্থনা।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনি শেখ সাহেবের সিকিউরিটি সঠিকভাবে প্ল্যান করেননি; শেখ সাহেব যখন নিজ বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, পাশের বাড়ীগুলোর মানুষকে অন্যত্র থেকার ব্যবস্হা করে, সেসব বাড়ীতে কমান্ডো রাখার দরকার ছিলো।