নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

১২ রবিউল আউয়ালঃ নবীকুলের শিরোমণি, বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মও মৃত্যু দিবস

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৩


আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী এবং একই সাথে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাত দিবস দিবসটি একই সঙ্গে আনন্দের এবং দুঃখেরও। এই দিনেই আমাদের প্রিয় নবী, শেষ নবী, নবীকুলের শিরোমণি, বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মও মৃত্যু দিবস। ১২ রবিউল আউয়ালকে মুসলিম বিশ্ব মহানবীর জন্ম ও ওফাতের দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। পবিত্র এই দিনটিকে কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী আবার কেউ কেউ সিরাতুন্নবী হিসেবে পালন করেন। মিলাদ ও সিরাত দুটি আরবি শব্দ। মিলাদ অর্থ জন্ম আর সিরাত শব্দের অর্থ জীবনচরিত। সুতরাং মিলাদুন্নবী (সাঃ) অর্থ নবীজির জন্ম আর সিরাতুন্নবী (সাঃ) এর অর্থ নবীজির জীবনচরিত। নবীজির শুভ জন্মকে স্মরণ করে যে অনুষ্ঠান হয় তাকে মিলাদুন্নবী (সাঃ) আর নবীজির সমগ্র জীবনচরিত আলোচনার জন্য যে অনুষ্ঠান তাকে সিরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল বলা হয়। মিলাদুন্নবী (সাঃ) শিরোনামে যে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সেখানে রাসূলে পাক (সাঃ) এর জন্মবৃত্তান্ত অর্থাৎ তার জন্মদিনটাকে প্রধান্য দিয়ে আলোচনা হয়। অন্যদিকে সিরাতুন্নবী (সাঃ) শিরোনামে যে মাহফিল হয় সেখানে রাসূলে পাক (সাঃ) এর জন্ম থেকে শুরু করে পুরো জীবনীই আলোচনা করা হয়।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। তবে তার জন্মের সুনির্দিষ্ট তারিখ কোনটি সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক ও হাদিস বর্ণনাকারীদের সিংহভাগের মতে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। এ মাসের কোন তারিখে মহানবীর (সাঃ) জন্ম তা নিয়ে ইসলামের দুটি প্রধান সম্প্রদায় সুন্নী ও শিয়াদের মত ভিন্নতা লক্ষণীয়। সুন্নী মতাবলম্বীদের সিংহভাগ ১২ রবিউল আউয়াল সোমবারকে মহানবীর জন্মদিন বলে ভাবেন। অন্যদিকে সিংহভাগ শিয়া ইতিহাসবিদ ও জীবনীকারের মতে, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম ১৭ রবিউল আউয়াল শুক্রবার। শিয়া জীবনীকারদের মধ্যে একমাত্র আল কুলাইনী মনে করেন, ১২ রবিউল আউয়ালেই মহানবী (সাঃ)-এর জন্ম। মহানবী (সাঃ)-এর জন্মদিন সম্পর্কে মতভিন্নতার কারণ হলো তিনি যে সময় জন্ম নেন সে সময় আরবদের মধ্যে দিন ও পঞ্জিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। মহানবী (সাঃ)-এর জীবনীকার তের শতকের ইতিহাসবিদ আল-ইরবিলি এ ধারণাই দিয়েছেন। স্মর্তব্য, শুধু মহানবী (সাঃ) নয়, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক হজরত ঈশা (আঃ) বা যিশুখ্রিস্টের জন্ম তারিখ নিয়েও রয়েছে একই ধরনের বিভ্রান্তি। ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হলেও এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য দলিল নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ঐতিহাসিক এবং সীরাতকারগণের মধ্যে যদিও মতভেদ রয়েছে, তথাপি তারা এ বিষয়ে একমত যে, মহানবী (সাঃ) রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম পক্ষে সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তা ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যকার কোনো একদিন ছিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।

অপর দিকে রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত। বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল, মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে তিনি মৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয়। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে দিনটিতে আমাদের প্রিয় নাবীর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় সে দিনটি তাঁর মৃত্যু দিবস ও। সুতরাং এদিনটি পালন করতে হলে একই সাথে উৎসব ও দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু আমরা দুঃখ প্রকাশ না করে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থাৎ খুশিকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রকারন্তে যা দুঃখের দিনে খুশি হওয়ার সামিল।

বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী, সারওয়ারে কাওনাইন, রাহমাতুল্ লিল আলামীন, শাহানশাহে আরব ও আজম বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীতে শুভাগমন নিঃসন্দেহে ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। রূহানী দুনিয়া থেকে বস্তুজগতে মহানবীর (সাঃ) আবির্ভাব সত্যি সত্যিই বিশ্বস্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীনের এক অপরূপ করুণা। তাঁর আগমনে শিরক, পৌত্তলিকতা, জাহেলিয়াত ও বর্বরতা দূরীভূত হয়। তাঁর শুভাগমনে বিশ্বের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এমন মহামানবের জীবনচরিত আলোচনা একটি বড় এবাদত। তাঁর পবিত্র জীবনের প্রতিটি ঘটনা মানুষের হেদায়েতের জন্য উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
মিলাদুন্নবী রসুল পাক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জন্মদিন। অর্থাৎ খুশির দিন। তবে এদিন তো তাঁর ওফাত দিবসও যা শোকের বা দুঃখের। মুসলমান হিসেবে রবিউল আউয়ালে সবাই আন্দোলিত হই। প্রিয়নবীর প্রতি আমাদের ব্যাকুল অন্তরের আকুল অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। মহব্বতে রাসূলের নতুন হাওয়া বইতে থাকে চারদিকে। তবে আমাদের মহব্বতের প্রকাশভঙ্গিটা যথার্থ কি-না তা বিবেচনার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানের হিড়িক, চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য এবং মহব্বতে রাসূলের সস্তা প্রয়োগের কারণে মাহে রবিউল আউয়াল আমাদের জীবনধারায় কোনোই পরিবর্তন আনতে পারে না। গতানুগতিক বহমান স্রোতে পণ্ড হয়ে যায় রবিউল আউয়ালের প্রকৃত চেতনা ও দাবি। রবিউল আউয়ালের পয়গাম ও দাবি কী, সেগুলোও আমাদের কাছে আজ স্পষ্ট নয়। আনুষ্ঠানিকতার সব আয়োজনই আমরা সম্পন্ন করি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও শিক্ষা, বাস্তবজীবনে নবীজির আদর্শের কোনো ছাপ রাখতে পারি না। তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার জিবদ্দশায় তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে শুনেছি এমনকি তাঁর সাহাবারাও তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্ভবতঃ হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওফাতের ৬০০ বছর পরে তাঁর জন্মদিন পালনের প্রচলন হয়। সুতরাং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন শরিয়ত মতে কতটুকু যুক্তিযুক্ত! তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার জিবদ্দশায় তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে শুনেছি এমনকি তাঁর সাহাবারাও তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্ভবতঃ হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওফাতের ৬০০ বছর পরে তাঁর জন্মদিন পালনের প্রচলন হয়। সুতরাং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন শরিয়ত মতে কতটুকু যুক্তিযুক্ত! তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার জিবদ্দশায় তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে শুনেছি এমনকি তাঁর সাহাবারাও তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্ভবতঃ হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওফাতের ৬০০ বছর পরে তাঁর জন্মদিন পালনের প্রচলন হয়। সুতরাং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন শরিয়ত মতে কতটুকু যুক্তিযুক্ত! এ জন্য সিরাতুন্নবীর যথার্থ দাবি আদায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া ইমানদীপ্ত চেতনার সর্বপ্রধান দায়িত্ব।

একজন মুসলমানের ঈমানের দাবি হলো প্রিয়নবী (সা.) এর স্মরণে তাঁর গোটা জীবনকে ভরিয়ে রাখা। নবীজির স্মরণকে বিশেষ কোনো পদ্ধতির মধ্যে সীমিত করা সঙ্কীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক। তবে বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মও মৃত্যু দিবসকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে আমরা সিরাতুন্নবী হিসেবে এই দিনকে অথবা বছরের যে কোন একটি দিনকে পালন করতে পারি। কারণ হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর জীবনে একটি দিবসে গন্ডিতে না থেকে তার ৬২ বছরের জীবনের আলোচনা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া তাঁর জন্মদিনের আদর্শ বাস্তবায়ন না করে তার সমগ্র জীবনের আদর্শ বাস্তবায়ন করা বা করার চেষ্টা করা বা করতে উদ্বুদ্ধ করা হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশেষ করে এই পবিত্র দিনে আমরা মহানবী (সা.)-এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। হানাহানি ও অশান্তিতে ভরা এই বিশ্বে শান্তি স্থাপনে তার রেখে যাওয়া আদর্শ মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। মানব জাতির জন্য যার প্রয়োজন আজ সবচেয়ে বেশি।

রাসূলে পাক (সাঃ) এর স্মরণ, তার মিলাদুন্নবী (সাঃ) অনুষ্ঠান আর সিরাতুন্নবী (সাঃ) অনুষ্ঠান যেভাবেই হোক না কেন তা যেন মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত না করে সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। মিলাদুন্নবী বা সিরাতুন্নবী (সাঃ) যে নামেই হোক না কেন, আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে দুটি। একটি হচ্ছে রাসূল (সাঃ) এর ভালোবাসায় আমাদের ঈমান তেজোদ্দীপ্ত করা এবং অন্তর আলোকিত করা। অপরটি রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণের জ্ঞান আহরণ এবং তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে প্রিয়তর না হই।' নবীজির ভালোবাসা লাভ করতে হলে তাঁকে ভালোভাবে জানতে হবে। তিনি যে মহান আদর্শ নিয়ে বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন, তা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। তবেই তাঁকে ভালোভাবে জানতে পারব এবং তখনই তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা যথার্থ হবে। এজন্যই প্রয়োজন তার জীবনী বা সিরাত নিয়ে আলোচনা। এ বিষয়ে আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ বন্ধুদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত আশা করছি যা আমাদের সঠিক ভাবে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন বা তার সারা জীবনের আদর্শ অর্থাৎ সিরাতুন্নবী পালনে উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহি বুঝ বুঝবার তৌফিক দান করুন। আমিন-

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৫

নতুন বলেছেন: I don't think his birthday was properly recorded. When he was born he was not a significant figure also people of that time wasn't having celebrating birthday concept
Therefore birthday date is not a certain thing.

But he was died this day and people are celebrating like eid in his death anniversary.

It's all about money and marketing. Lots of pir and their group collect money from their followers and they are showing off their popularity to get more followers.

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫

রেযা খান বলেছেন: নতুন ভাইয়ের উত্তরঃ
মহানবী (সঃ) এর জন্ম তারিখ কবে ?
সহীহ্‌ সনদে মহানবী (সঃ) এর জন্ম তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার । নিম্নে এ সম্পর্কিত দলিলসমূহ পেশ করা হলঃ
হাফিজে হাদীস হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২৩৫ হিজরি) যেটা বিশুদ্ধ সনদে হাদীস শরীফে বর্ননা করেন-
ورواه ابن أبى شيبة في مصنفه عن عفان ، عن سعيد بن ميناء ، عن جابر وابن عباس أنهما قالا : ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول
অর্থ : হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত,তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হুজুর পাক (সঃ) এর বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার হয়েছিল।
— মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা; বুলূগুল আমানী ফী শরহিল ফাততিহর রব্বানী' ২য় খণ্ড, ১৮৯ পৃঃ বৈরুতে মুদ্রিত; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ' ২য় খণ্ড, ২৬০ পৃঃ বৈরুতে মুদ্রিত
উক্ত হাদীস শরীফের সম্মানিত রাবীগণ হচ্ছেন--
হযরত আফফান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
সাঈদ ইবনে মীনা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
উক্ত বর্ণনার 'সনদ'- এর মধ্যে শেষের দু’জন হলেন বিশিষ্ট সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। খোদ বুখারী-মুসলিমে তাদের থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। প্রথম দু’জন বর্ণনাকারী সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন,
আফফান একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব
— খোলাসাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃঃ বৈরুতে মুদ্রিত
দ্বিতীয় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা । তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ।
— খোলাসাহ ১৪৩ পৃঃ এবং তাক্বরীব ১২৬ পৃঃ
এ দুজন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ সাহাবীর বিশুদ্ধ সনদসহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো, ১২ই রবিউল আউয়াল হচ্ছে হুযূর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মিলাদ দিবস। সুতরাং পরবর্তী যুগগোলোর কোন ইতিহাস লেখকের ভিন্নকথা, ধারণা বা অনুমান অথবা কোনো জ্যোতির্বিদ (যেমন- মাহমুদ পাশা) উক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনার মোকাবেলায় দৃষ্টিপাতযোগ্য ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। কেননা উপরের সনদটি সব থেকে ছোট এবং সম্পূর্ণ সহীহ। ১২ তারিখ ব্যতীত অন্য যে সব তারিখের কথা শোনা যায় সেগুলোর একটাও সহীহ সনদে বর্ণিত নয়।
অতএব, হযরত যোবায়ের ইবনে বাক্কার, ইমাম ইবনুল আসাকির, ইমাম জামাল উদ্দিন ইবনে জূযী এবং ইবনুল জাযযার প্রমুখ ১২ই রবিউল আউয়াল 'বিশ্বনবীর মিলাদ দিবস' হওয়াই নির্ভরযোগ্য ও সেটার উপর গবেষক ইমামদের 'ইজমা' (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হবার কথা ঘোষনা করেছেন।
— মায়াহেবুল লাদুননিয়া; সীরাত ই হালবিয়াহ ১ম খণ্ডঃ ৯৩ পৃঃ; যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব ১ম খণ্ডঃ ১৩২ পৃঃ; মা-সাবাতা মিনাস সুন্নাহ কৃত শায়খ আল-মুহাক্বক্বিক্ব দেহলভী ৯৮ পৃঃ; শামামাহ-ই আম্বিয়াহ কৃত নাওয়াব সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী আহলে হাদীস ০৭ পৃঃ
আরও যে সমস্ত কিতাবে ১২ই রবিউল আউয়াল পাওয়া যায় সেগুলো হল,
১. মুহাম্মাদ বিন ইসহাক (রাহ) এর মতঃ
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক কে? তাঁর পুরো নাম হচ্ছে আবু বাকার মুহাম্মাদ বিন ইসহাক। তিনি ৮৫ হিজরীতে মদীনা মুনাওওয়ারায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মদীনা শরীফে কাটিয়েছেন। তিনিই হচ্ছেন প্রথম মুসলিম ঐতিহাসিক যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান জীবনের উপর গ্রন্থ লিখেছিলেন। তাঁর সীরাত গ্রন্থটির নাম হচ্ছে “সীরাতু রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত উলামাদের মন্তব্যঃ
ক) ইমাম সুফিয়ান ছাওরী বলেন, আমি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের মজলিসে ৭০ বছরের চেয়েও বেশীদিন বসেছিলাম। আমি কাউকে কোনদিন তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে দেখিনি। [তারীখে বাগদাদঃ ১/২১৮]
খ) ইমাম শু’বাহ বলেন, ইমাম ইবনে ইসহাককে হাদিস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তির কারণে ইমামুল মুহাদ্দিসীন তথা মুহাদ্দিসগণের ইমাম বলা উচিৎ। [তারীখে বাগদাদঃ ১/২১৮]
গ) ইয়াহিয়া বিন মুয়ীন বলেন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য। [তারিখে বাগদাদঃ ১/২১৮]
নোটঃ
ইমাম যাহাবীর লিখিত কিতাব ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ পড়লে উপরোক্ত তথ্যগুলো পাবেন। কেউ কেউ ইমাম ইবনে ইসহাক সম্পর্কে সমালোচনা করার চেষ্টা করেছেন। ইমাম যাহাবী তাঁর এই কিতাবে প্রমাণ করেছেন যে, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে সকল অভিযোগ মিথ্যা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতঃ
বিশ্বনন্দিত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবনু হিশাম বলেন, ইমাম ইবনু ইসহাক বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আমুল ফীলে (ঐ বছর, যে বছরে আবরাহা তার হস্তি বাহিনী নিয়ে মক্কা মুকাররামাহ আক্রমণ করেছিল) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
— আস-সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ, পৃঃ ২০৮
২. তারীখুল ইসলাম, অধ্যায়ঃ মাওলিদুহুল মুবারাকু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এই গ্রন্থে ইমাম যাহাবী (রা) ১২ই রবিউল আউয়াল সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তাঁর উল্লেখকৃত প্রথম হাদীস সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এটি সহীহ নয়। উল্লেখকৃত বাকী হাদীসগুলোর ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি, যা প্রমাণ করে যে ঐ হাদীস গুলো সহীহ। অন্যথায় প্রথম হাদীসের ন্যায় এগুলোর ব্যাপারেও একই মন্তব্য করতেন। এখানে দুর্বল সনদের হাদীসটি উল্লেখ করছিনা। বরং যে সহীহ হাদীসগুলো ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন, তা উল্লেখ করছিঃ
ইমাম যুহরী বলেন, সাঈদ বিন মুসাইয়াব বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
মা’রুফ বিন খাররাবুয (রা) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
৩. আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ, খন্ড ১, পৃঃ ১৯৯
ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করেছেন, যেমন, কেউ কেউ বলেছেন, ৮ই রবিউল আউয়াল কেউ কেউ বলেছেন, ১০ ই রবিউল আউয়াল কেউ কেউ বলেছেন, রামাদান মাসে কেউ কেউ বলেছেন, সফর মাসে তারপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন, কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ১২ই রবিউল আউয়াল। ইমাম ইবনু ইসহাক এই মতকে গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া ১২ই রবিউল আউয়ালের ব্যাপারে হাদীস ও পাওয়া যায়। হযরত জাবির ও ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছেন। এইদিন তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। এইদিন তিনি মিরাজে যান, এবং এইদিন তিনি ইন্তেকাল করেন। এরপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন, এটাই (১২ই রবিউল আউয়াল) বেশীরভাগ উলামাগণ বলেছেন এবং এটাই সুপ্রসিদ্ধ মত।
৪. আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাতু ওয়া আখবারুল খুলাফা, পৃঃ ৭
গ্রন্থকারঃ আল- হাফিযুল কাবীর আবু হাতিম মুহাম্মাদ বিন হিব্বান বলেন, রাসুল (সঃ) আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মগ্রহণ করেন।
৫. উয়ূনুল আছারি ফী ফুনূনিল মাগাযী ওয়াশ শামাইলি ওয়াস সিয়ারি, খন্ড ১, পৃঃ ৩৮
ইমাম, হাফিয ইবনু সায়্যিদিন নাস তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমু ফীলের ঘটনার ৫০ দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
৬. আর রাউদুল উনফ, খন্ড ১, পৃঃ ৩০০
ইমাম সুহাইলী ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন।
৭. সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদি ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদি, খন্ড ১, পৃঃ ৩৩৪-৩৩৬
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আস সালিহী এই গ্রন্থে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। শুধু তাই বলেই তিনি শেষ করেননি, তিনি এটাও বলেছেন, ‘আমাদেরকে এটা অনুসরণ করতে হবে’।
৮. বাহজাতুল মাহাফিলি ওয়া বাগিয়্যাতুল আমাছিলি ফী তালখীসিল মু’জিযাতি ওয়াস সিয়ারি ওয়াশ শামা ইলি, খন্ড ১, পৃঃ ৫১
ইমাম আবু যাকারিয়া ইমাদুদ্দীন আল আমিরী বলেন, সকল উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশীর ভাগ উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর এটাই বিশুদ্ধ মত।
৯. আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ ফী সীরাতিল আমীনিল মা’মূন (অন্য নাম ইনসানুল উয়ূন), খন্ড ১, পৃঃ ৯৩
ইমাম আলী বিন বুরহানুদ্দীন আল হালাবি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে এটাই অনুসরণ করতে হবে।
১০. তারীখু তাবারী, অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ খন্ড ১, পৃঃ ২৬২
ইমাম, ফকীহ, মুফাসসির, মু’আররিখ আবু জা’ফার মুহাম্মাদ বিন জারীর আত তাবারী, ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি উল্লেখ পূর্বক সহমত পোষণ করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
১১. আল কামিলু ফিত তারীখ, অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ, খন্ডঃ১, পেইজ নাম্বারঃ ৩৫৫
ইমাম ইবনুল আছীর ও একইভাবে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি প্রাধান্য দিয়ে বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন।
১২. দিওয়ানুল মুবতাদা ই ওয়াল খাবারি ফী তারীখিল আরাবি ওয়াল বারারি (গ্রন্থটি তারীখু ইবন খালদুন নামে পরিচিত), খন্ড ২, পৃঃ ৪০৭
বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক আব্দুর রাহমান ইবনু খালদুন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বলেন, এটা ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
১৩. দালায়েলুল নবুওত ১ম খন্ড ৭৪ পৃঃ
প্রশিদ্ধ মোহাদ্দেস ইমাম বায়হাক্বী লিখেছেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম সোমবারের দিনে ১২ ই রবিউল আওয়ালে জন্মগ্রহন করেছিলেন।
১৪. আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম ফি মাওলিদে সাইয়্যিদে উলদে আদম
আল্লামা ইবন হাজর হাইসামি (রাহঃ) বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিবাগত রাতে জন্মগ্রহণ করেন।
ওহাবীদের মন্তব্যঃ
ভারতীয় উপমহাদেশের আহলে হাদীস ফিরকার জনক নবাব সিদ্দিক হাসান খান বোহাপালভি ১২ই রবিউল আউয়াল বলে উল্লেখ করেন।
— আশ শুমামা তুল আম্বিয়া ফি মাওলিদ খায়ির আল বারিয়া পৃঃ ০৭
দেওবন্দীদের মন্তব্যঃ
তাদের অতিস্বনামধন্য আলেম তাফসির মা’রিফুল কুর’আনের রচয়িতা “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ” এর অন্যতম লেখক মুফতি শফী উসমানী (রঃ) ১২ই রবিউল আউয়াল বলে মন্তব্য করেছেন। [সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া পৃঃ ১৩, নাদিয়াতুল কুর’আন প্রকাশনী, চকবাজার, ঢাকা] তিনি উক্ত কিতাবে আরও বলেন,
১২ই রবিউল আউয়াল প্রসিদ্ধ অভিমত। হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) এর উপর ইজহার দাবী করেছেন। মাহমুদ পাশা মিশরী যাহা গণনার মাধ্যমে ৯ তারিখ গ্রহণ করেছেন। তাহার অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য অভিমতের বিরুদ্ধে সনদ বিহীন উক্তি। চন্দ্রোদয়ের স্থান বিভিন্ন হওয়ার কারণে গণনার উপর এমন কোন নির্ভরযোগ্যতার জন্ম হয় না যে, এর উপর ভিত্তি করে জামহুরের বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে।
— প্রাগুক্ত ১৪ পৃ এর টিকা নং ১
সুতরাং উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে প্রতীয়মাণ হল, ১২ই রবিউল আউয়াল হল সর্বগ্রহণযোগ্য মত, এর উপর সহীহ সনদে হাদীস বর্ণিত রয়েছে এবং এটার উপর ইজমাও হয়েছে। এছাড়া বাকি যে সব তারিখ আছে সেগুলো সহীহ সনদে বর্ণিত নয়।
একটি সংশয় নিরশনঃ
ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর বংজ্ঞানুবাদে বিলাদাত শরীফের তারিখ ১৯ লিখা আছে। কিন্তু মূল আরবী কিতাবে ১২ লিখা আছে। এরপর ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন
وهذا هو المشهور عند الجمهور والله أعلم
অর্থঃ এটাই বেশীর ভাগ আলেমদের মত এবং আল্লাহ-ই ভাল জানেন।
তিনি হাদীসটি মুসান্নাফ আবি শায়বা থেকে সংগৃহীত করেন। সেখানেও ১২ লিখা আছে।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৮

রেযা খান বলেছেন: রাসূল (দ।) জীবদ্দশায় ১২ই রবিউল আউয়াল(মিলাদুন্নবী) পালন করেছেন কি না ?

সর্ব প্রথম মিলাদের ব্যবহারিক অভিধানিক অর্থ জানা প্রয়োজন, অভিধানে মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময় কাল এবং ব্যবহারিক অর্থ হুযুর পাক জন্মের খুশিতে তাঁর মুযেজা, বৈশিস্ট্য, জীবনী প্রভৃতি বয়ান করা এবং সরকার নিজেই নিজের মিলাদ শরীফ মানিয়েছেন, হাদিসঃ

হযরত আবু কাতাদাহ বর্ননা করেন যে,হুযুর কে জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি সোমবারের দিন কেন রোযা রাখেন, হুযুর ইরশাদ করলেন ওই দিন আমার জন্ম হয় এবং ওই দিনই আমার উপর ওহী নাযীল হয়।

— মুসলিম ২য় খন্ড ৮১৯ পৃঃ, হাদিস নং১১৬২, ইমাম বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃঃ, হাদিস নং ৮১৮২

এ ছাড়াও হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর নিজের জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন ।[1][2][3] তাহলে বোঝা গেল মিলাদ শরীফ পালন করা হুযুরের সুন্নাত এ ছাড়া যুলুস প্রসঙ্গে এটা বলা হয় যামানার উন্নতির সাথে সাথে মিলাদের ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্য এটা প্রচলিত হয়েছে। প্রথম দিকে মিলাদ শরীফ এরুপ হত যে, সাহাবায়ে কেরাম মিলাদ শরীফে জমায়াত হয়ে হুযুরের প্রশংসা, সাদকা, খয়রাত করত।

তথ্যসূত্র
ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃঃ
হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাউলিদ ৬৫ পৃঃ
ইমাম নাবহানী হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ
মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্ন সমূহ ও তাদের উত্তর (লেখকঃ মুফতী নুরুল আরেফিন রেযবী আযহারী এম.এ(ডবল),রিসার্চ(আযহার ইউনিভারসিটি,মিসর), ডিপ্লোমা ইন ইংলিশ(আমেরিকা ইউনিভারসিটি ,কায়রো))ভফন ১২ই রবিউল আউয়াল পালন করা ও যুলুস বের করার কি কোন প্রমাণ আছে ?
মিলাদ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
হুযুর পাক (সঃ) এর আগমন বা মিলাদুন্নবীর উদ্দেশ্যে খুশি উদযাপন করার কোন দলীল কি কোরআনে রয়েছে ?
হুযুর পাক (সঃ) এর সঠিক জন্ম তারিখ সমন্ধে ওলামায়ে কেরামগণের মন্তব্য কী ?
হুযুর পাক (সঃ) এর ওফাত দিবস সমন্ধে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে কি কোন দ্বিমত আছে এবং সঠিক মত কোনটি ?
একই দিনে হুযুর (সঃ) এর ওফাত হয়েছিল কিন্তু সে কারনে কেন দুঃখ প্রকাশ করা হয় না ?
৩৩ বছর যাহেরী যামানায় ১২ই রবিউল আউয়াল পালন করা ও যুলুস বের করার কি কোন প্রমাণ আছে ?
মক্কায় পুরাতন ব্যবস্থায় মিলাদ কি প্রচলন ছিল ?
মিলাদ শরীফ সম্পর্কে হাদিসে কিভাবে এসেছে ?
ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন মুসলমানেরা রোযা রাখতে পারে কী ?
ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন বহু লোক ভাল ভাল খাবার প্রস্তুত করে নিয়াজ ফাতেহা দেয়; এটা কি জায়েজ ?
উত্তরঃ
সর্ব প্রথম মিলাদের ব্যবহারিক অভিধানিক অর্থ জানা প্রয়োজন, অভিধানে মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময় কাল এবং ব্যবহারিক অর্থ হুযুর পাক জন্মের খুশিতে তাঁর মুযেজা, বৈশিস্ট্য, জীবনী প্রভৃতি বয়ান করা এবং সরকার নিজেই নিজের মিলাদ শরীফ মানিয়েছেন, হাদিসঃ

হযরত আবু কাতাদাহ বর্ননা করেন যে,হুযুর কে জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি সোমবারের দিন কেন রোযা রাখেন, হুযুর ইরশাদ করলেন ওই দিন আমার জন্ম হয় এবং ওই দিনই আমার উপর ওহী নাযীল হয়।

— মুসলিম ২য় খন্ড ৮১৯ পৃঃ, হাদিস নং১১৬২, ইমাম বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃঃ, হাদিস নং ৮১৮২

এ ছাড়াও হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর নিজের জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন ।[1][2][3] তাহলে বোঝা গেল মিলাদ শরীফ পালন করা হুযুরের সুন্নাত এ ছাড়া যুলুস প্রসঙ্গে এটা বলা হয় যামানার উন্নতির সাথে সাথে মিলাদের ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্য এটা প্রচলিত হয়েছে। প্রথম দিকে মিলাদ শরীফ এরুপ হত যে, সাহাবায়ে কেরাম মিলাদ শরীফে জমায়াত হয়ে হুযুরের প্রশংসা, সাদকা, খয়রাত করত।

তথ্যসূত্র
ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃঃ
হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাউলিদ ৬৫ পৃঃ
ইমাম নাবহানী হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ
মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্ন সমূহ ও তাদের উত্তর (লেখকঃ মুফতী নুরুল আরেফিন রেযবী আযহারী এম.এ(ডবল),রিসার্চ(আযহার ইউনিভারসিটি,মিসর), ডিপ্লোমা ইন ইংলিশ(আমেরিকা ইউনিভারসিটি ,কায়রো))

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

রেযা খান বলেছেন: সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দ কি মীলাদুন্নবী (দঃ) উদযাপন করেছিলেন ?
আমাদের মধ্যে একটি সংখ্যালঘু দল সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) কর্তৃক মীলাদুন্নবী (দঃ) পালনের প্রমাণ প্রদর্শনের জন্যে প্রায়ই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতকে চ্যালেন্জ করে থাকে। এসব সংকীর্ণ মস্তিষ্কের লোক যা উপলব্ধি করে না তা হলো, প্রতিটি এবাদত-বন্দেগী, প্রতিটি পুণ্যদায়ক কর্ম যা আমরা অনুশীলন করি, তা প্রকৃতপক্ষে মীলাদেরই উদযাপন তথা যিকর-তাযকিরাহ। কেননা, প্রিয়নবী (দঃ)-এর বেলাদত তথা মীলাদ না হলে আমরা এমন কি মুসলমানও হতে পারতাম না। ইসলামের পথে আমরা যদি এমন কি মুসলমান-ই না হতে পারি, তাহলে আমাদের হৃদস্পন্দনের কী-ই বা মূল্য থাকবে? আমাদের নেয়া প্রতিটি নিঃশ্বাস যে মহানবী (দঃ)-এর মীলাদ (ধরাধামে শুভাগমন)-এর কারণে আল্লাহতা’লার দানকৃত এক রহমত (করুণা)-বিশেষ, সে কথা যারা বুঝতে পারে না, আল্লাহতা’লা যেন তাদেরকে হেদায়াত দান করেন।

সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দ এই বিষয়ে যে আমল পালন করেছেন, এ দলটি তার সপক্ষে প্রামাণ্য দলিল দেখতে চায়। আমরা মীলাদের বিষয়টি আপাততঃ স্থগিত রেখে এই সংখ্যালঘু দলকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনারা পালন করেন এমন যে কোনো একটিমাত্র আমল দেখান, যেটি মহানবী (দঃ)-এর সাহাবী (রাঃ)-বৃন্দের আমলের মতো একই জযবাত, শক্তি ও মহিমা ধারণ করে? সত্যি, তারা এর জবাব কখনোই দিতে সক্ষম হবে না; কারণ সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) শ্রেষ্ঠত্বের আসনে ছিলেন আসীন, যাঁদের এবাদত ও আমল সরাসরি মহানবী (দঃ)-এর শিক্ষা দ্বারা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

হয়তো এসব লোক অনুধাবন করতে পারে না যে মহানবী (দঃ)-এর বেলাদত না হলে হযরত আবূ বকর (রাঃ) নবী দাবিদার ভণ্ডদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-ই করতেন না; হযরত উমর ফারূক (রাঃ) আফ্রিকা ও ইউরোপে মুসলিম সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন-ও করতেন না; হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর সমস্ত সম্পদ মুসলমানদের জন্যে দান-ও করতেন না; আর হযরত আলী (ক:)-ও খারেজী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়তেন না।

আজকে কেউই বাস্তবিকভাবে শীর্ষস্থানীয় সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ)-এর আমল অনুসরণের দাবি করতে পারে না, কেননা ইসলামের জন্যে তাঁদের খেদমত ও ত্যাগ অতুলনীয় ছিল। তবে আমরা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমাদের আমলকে নিশ্চিত করতে পারি। অতএব চলুন, আমরা সত্যকে মিথ্যে দাবি হতে এক্ষণে পৃথক করি; মীলাদ-সংক্রান্ত যাবতীয় আমলকে আমরা যাচাই করি এবং পর্যবেক্ষণ করি সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) কখনো এগুলো পালন করেছিলেন কি না।

জরুরি জ্ঞাতব্য
প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপনের আগে পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে শরীয়তের বিধানের এই বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে যে, মহানবী (দঃ)-এর সামনে কোনো ঘটনা বা কর্ম সংঘটিত হওয়ার সময় তাঁর মৌনতা-ই ওই বিষয়ের প্রতি তাঁর সমর্থন বলে বিবেচিত হবে (যদি না তিনি তাতে বাধা দেন বা স্পষ্টভাবে নিষেধ করেন); অার সেটি তাঁর অনুমোদিত আমল (সুন্নাতে তাকরিরী) হিসেবেও সাব্যস্ত হবে। বর্তমানকালে এটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক যে মীলাদ মাহফিলে বা মজলিশে মুসলমানদেরকে শেরেক (অংশীবাদ) সংঘটনের দোষারোপ করা হচ্ছে। এই দোষারোপ একেবারেই বৃথা, কেননা মুসলমান হওয়ার মানেই হলো এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করা, যিনি সর্বশক্তিমান।

উদাহরণস্বরূপ, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (রহ:)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করা যায়। তিনি বলেন:

আমাদের সময় মওলিদ বা মীলাদের যে সমাবেশ হয়, সেগুলো মূলতঃ নেক আমল। যেমন, এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দান-সদকাহ, যিকর-আযকার, মহানবী (দঃ)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ ও তাঁর প্রশংসা......আর মীলাদের দ্বিতীয় ধরনের মজলিশ হলো সুন্নাত, যা যিকর-আযকার সংক্রান্ত হাদীসসমূহে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ ফরমান: মানুষেরা আল্লাহর যিকির-তাযকেরায় উপবিষ্ট থাকাকালীন ফেরেশতাকুল তাদের ঘিরে রাখে এবং তাদের ওপর শান্তি নেমে আসে।

— ফাতাওয়া অাল-হাদিসীয়্যা, ২০২ পৃষ্ঠা

এই ফতোওয়ায় নিষিদ্ধ কাজগুলো সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে, তবে ওপরের এ বক্তব্য সারা বছর ওই হারাম কাজ থেকে বাঁচার এক মানদণ্ড বটে

মীলাদুন্নবী (দঃ)-এর সংজ্ঞা
মীলাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে (আরবী) ‘বেলাদত’ শব্দটি থেকে। সুতরাং আরবী ভাষায় মীলাদ শব্দটির অর্থ জন্মের স্থান ও সময়। শরীয়তের অালোকে আমরা বুঝি, মহানবী (দঃ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা-ই হচ্ছে মীলাদ; আর আমরা এই শুভলগ্নে তাঁর সীরাহ (জীবন ও কর্ম) আলোচনার সুযোগও পেয়ে থাকি। এছাড়াও মীলাদে আমরা মহানবী (দঃ)-এর প্রতি হাদীয়া হিসেবে দরুদ ও সালাম পেশ করে থাকি। মানুষের কাছে প্রিয়নবী (দঃ)-এর অনুপম বৈশিষ্ট্যাবলী বর্ণনা এবং তাঁর প্রশংসাও করা হয়। আমরা বিশ্বাস করি না যে মীলাদ মাহফিল কোনো নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ রাখা চাই, বরং রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর যিকর-তাযকেরা (স্মরণ) প্রতিটি মিনিট ও প্রতিটি সেকেন্ডেই করা চাই। মীলাদুন্নবী (দঃ) হচ্ছে ধর্মপ্রচারের এক মহা উৎস। এটি দাওয়াহ কার্যক্রমের একটি মোক্ষম সুযোগ এবং এই শুভলগ্নে উলামাবৃন্দ মুসলমানদেরকে ধর্মশিক্ষা দিতে পারেন; মহানবী (দঃ)-এর নৈতিক আচার-ব্যবহার, সৌজন্য, তাঁর বিষয়াদি ও সীরাত, তাঁর লেনদেন ও শামায়েল সম্পর্কেও তাঁরা শেখাতে পারেন।

ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে কোনো নির্দিষ্ট দিন-তারিখ নির্ধারণ
মুসলিম উম্মাহ (জাতি) ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ যেভাবে উদযাপন করে থাকেন, সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ)-ও কি ইসলাম প্রচারের জন্যে এরকম দিন-তারিখ ঠিক করতেন? সহীহ বোখারী শরীফের উদ্ধৃতিটি দেখুন:

আবূ ওয়াইল বর্ণনা করেন যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রতি বৃহষ্পতিবার মানুষের কাছে ধর্মীয় ওয়ায-নসীহত করতেন। একবার এক ব্যক্তি আরয করেন, “এয়া আবা আবদ্ আর্ রাহমান, আল্লাহর কসম! আমি চাই আপনি যদি আমাদের মাঝে প্রতিদিনই ধর্মের বাণী প্রচার করতেন।” তিনি উত্তর দেন, “আমাকে এ কাজে বাধা দিচ্ছে একমাত্র যে জিনিসটি, তা হলো আমি তোমাদের বিরক্তির কারণ হওয়াকে অপছন্দ করি; আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের মাঝে ধর্মের বাণী প্রচারে যত্নবান বিধায় এমন উপযুক্ত সময়ই বেছে নিয়েছি, যেমনটি একই বিরক্তির আশঙ্কায় মহানবী (দঃ) আমাদের (সাহাবীদের) মাঝে ধর্মপ্রচারের সময়-ক্ষণ বেছে নিয়েছিলেন।”

— সহীহ বোখারী, ১ম খণ্ড, ৩য় বই, হাদীস নং ৭০

অবশ্যঅবশ্য মীলাদুন্নবী (দঃ)-এর উদযাপন কেবল ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়, বরং সর্বদা আল্লাহতা’লা ও তাঁর রাসূল (দঃ)-এর যিকর-তাযকেরায় আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে স্মরণ করা উচিত।

আল্লাহতা’লা ও তাঁর রাসূল (দঃ)-এর যিকর-তাযকেরার উদ্দেশ্যে সমাবেশ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,

একবার একদল সাহাবী (রাঃ) সমবেত হয়ে মজলিশে বসেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (দঃ) তাঁদের দিকে আসার সময় তাঁদেরকে বলাবলি করতে শুনতে পান। তাঁদের কেউ কেউ বলছিলেন যে আল্লাহতা’লা হযরত ইব্রাহীম (আ:)-কে বন্ধু (খলীলউল্লাহ) হিসেবে গ্রহণ করেন; আবার অন্য সাহাবী (রাঃ)-বৃন্দ বলাবলি করছিলেন যে আল্লাহ পাক হযরত মূসা (আ:)-কে কালীমউল্লাহ (আল্লাহর সাথে সরাসরি আলাপকারী) হিসেবে গ্রহণ করেন; আরো কিছু সাহাবী (রাঃ) বলেন যে অাল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তা’লা হযরত ঈসা (আ:)-কে ‘আল্লাহর বাক্য’ হিসেবে গ্রহণ করে নেন; অপর কিছু সাহাবী (রাঃ) মতামত ব্যক্ত করেন যে আল্লাহতা’লা হযরত আদম (আ:)-কে পছন্দ করে নেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (দঃ) তাঁদেরকে বলেন, “আমি তোমাদের এ আলাপ শুনতে পেয়েছি। তোমরা আশ্চর্যান্বিত হচ্ছো হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর খলীলউল্লাহ হওয়ার বিষয়ে, এবং এটি সত্য; আর হযরত মূসা (আ:)-এর নাজীউল্লাহ (আল্লাহ কর্তৃক নাজাতপ্রাপ্ত) হওয়ার বিষয়েও, এবং এটিও সত্য; আর হযরত ঈসা (আ:)-এর রূহুল্লাহ হওয়ার বিষয়েও, এবং এটিও সত্য; আর হযরত আদম (আ:)-এর আল্লাহ কর্তৃক পছন্দকৃত হওয়ার বিষয়েও, এবং এটিও সত্য; কিন্তু আমি হলাম হাবীবউল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু), এবং আমি এ কথা গর্ব না করেই বলছি (হাবীবুল্লাহ ওয়া লা ফাখর); আর শেষ বিচার দিবসে আমি-ই হবো প্রশংসার পতাকাবাহক; আর হযরত আদম (আ:) ও তাঁর বংশের (অর্থাৎ, মানবকুলের) সবাই ওই দিন আমার পতাকাতলে থাকবেন, এবং আমি এ কথা গর্ব না করেই বলছি; শেষ বিচার দিবসে আমি-ই হবো প্রথম শাফায়াত তথা সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম সুপারিশ আমি-ই করবো, এবং আমি এ কথা গর্ব না করেই বলছি; আর আমি-ই সর্বপ্রথম বেহেশতের দরজার চাবি খুলবো এবং আল্লাহ আমার জন্যে বেহেশত উন্মুক্ত করবেন, আর আমি-ই সর্বপ্রথম তাতে প্রবেশ করবো; আর আমার সাথে থাকবে আমারই উম্মতের গরিব ও বিনয়ী ঈমানদারবৃন্দ, এবং আমি এ কথা গর্ব না করেই বলছি; আর সৃষ্টিকুলের মাঝে প্রথম হতে শেষ জনের মধ্যে আমাকেই সর্বপ্রথম সম্মানিত করা হবে, এবং আমি এ কথা গর্ব না করেই বলছি।

নোটঃ
তিরমিযী শরীফ: কিতাবুল মানাকিব; বাবুন্ ফী ফযল আন্ নবী (অনুপম বৈশিষ্ট্যাবলী অধ্যায়);
ইমাম দারিমী, হাফেয ইবনে কাসীর, ইমাম সৈয়ুতী ও অন্যান্য উলামাও এ হাদীস বর্ণনা করেন
সন্দেহ পোষণকারীদের বোঝা উচিত, মীলাদুন্নবী (দঃ)-এর প্রকৃত মজলিশ হলো মসজিদে (বা অন্যত্র) সমবেত হয়ে সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের যিকর-তাযকেরা করা, ঠিক যেমনটি সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) অন্যান্য নবী-রাসূল (আ:)-বৃন্দের যিকর-তাযকেরা করেছিলেন।

হযরত আবূ হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন মহানবী (দঃ)-এর বাণী, যিনি বলেন:

আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘আমার (প্রিয়) বান্দা আমার প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা রাখে, আমি তা পূরণ করি; সে আমার যিকর করলে আমি তার সাথে থাকি; সে নিভৃতে আমায় স্মরণ করলে আমিও তাকে নিভৃতে স্মরণ করি; অার দলবদ্ধভাবে স্মরণ করলে অামি তার চেয়েও উত্তম এক দলে তাকে স্মরণ করি...।”

— একটি বড় বর্ণনার অংশ এটি; সহীহ বোখারী, ৯ম খণ্ড, ৯৩তম বই, হাদীস নং ৫০২

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) মসজিদে অনুষ্ঠিত একটি হালাকায় (যিকরের সমাবেশে) উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কী কারণে এই মজলিশে বসেছো?”

তারা উত্তর দেন, “আমরা আল্লাহতা’লার যিকর করতেই এখানে উপবিষ্ট।”

তিনি বলেন, “আমি তোমাদের শপথ করেই বলতে বলছি (তোমরা এই উদ্দেশ্যেই এখানে বসেছো কি)?”

তারা উত্তর দেন, “আল্লাহর নামে শপথ, আমরা এই বিশেষ উদ্দেশ্যেই বসেছি।”

এমতাবস্থায় হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, “আমি এ কারণে তোমাদেরকে শপথ করতে বলিনি যে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে, বা রাসুলুল্লাহ (দঃ)-এর দৃষ্টিতে হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে আমার কোনো মর্যাদার খাতিরেও তা দাবি করিনি, যেহেতু আমি এতো স্বল্প সংখ্যক হাদীসের রাবী। (কিন্তু) সত্য হলো রাসূলুল্লাহ (দঃ) একবার তাঁর সাহাবী (রাঃ)-বৃন্দের হালাকায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা কেন এখানে বসেছো?’

তাঁরা উত্তর দেন, ‘আমরা এখানে আল্লাহতা’লার যিকর ও প্রশংসা করতে জমায়েত হয়েছি, কেননা তিনি-ই আমাদেরকে ইসলামের দিকে হেদায়াত দিয়েছেন এবং আমাদের প্রতি রহমত তথা করুণা বর্ষণ করেছেন।’

এমতাবস্থায় হুযূর পাক (দঃ) আল্লাহর নামে শপথ করে তাঁদেরকে বলতে বলেন তাঁরা সত্যি ওই উদ্দেশ্যে সেখানে উপবিষ্ট হয়েছেন কি না। তাঁরা শপথ করে বলেন, ‘আমরা আল্লাহর নামে কসম করছি, এছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্যে এখানে বসিনি।’ অতঃপর মহানবী (দঃ) বলেন, ‘আমি শপথ করতে বলেছি এ কারণে নয় যে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে; বরং এ কারণে যে জিবরীল (আ:) আমার কাছে এসে আমাকে জানিয়েছেন, মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের (অর্থাৎ, সাহাবীদের) শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন’।”

— সহীহ মুসলিম, ৩৫তম বই, হাদীস নং ৬৫৩১

ভালোভাবে লক্ষ্য করুন যে সাহাবা (আ:)-বৃন্দ আল্লাহর যিকর, হেদায়াত, ইসলাম ও রহমত তথা করুণার কথা উল্লেখ করেছিলেন; আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রিয়নবী (দঃ) হলেন আল্লাহতা’লার সর্বশ্রেষ্ঠ করুণা (রহমত) এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের এই করুণাপ্রাপ্তিতে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়, তিনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। এটি নিশ্চিত যে ওই সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দকে এই ধরনের যিকরের দল গঠনের কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়নি - আর তাঁদের সাক্ষী ছিলেন স্বয়ং মহানবী (দঃ) যিনি তাঁদেরকে এই নেক আমলের ব্যাপারে (নেয়ামতের) সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকেও (অর্থাৎ, মুসলমানদেরকেও) অনুরূপ জ্ঞান-প্রজ্ঞা মঞ্জুর করুন, আমীন।

যিকরের সমাবেশ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার অভিমত
ইবনে তাইমিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয় সেসব মানুষ সম্পর্কে যারা মসজিদে সমবেত হয়ে যিকর করেন এবং কুরআন তেলাওয়াত করেন; আর আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করার সময় মাথা থেকে পাগড়ী অপসারণ করেন (খালি মাথায় থাকেন)। এ সময় তাঁদের নিয়্যত অহঙ্কার নয়, বা রিয়া তথা প্রদর্শনীও নয়, বরঞ্চ আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করাই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। এটি গ্রহণযোগ্য কি না?

ইবনে তাইমিয়া উত্তর দেয়:

এটি গ্রহণযোগ্যই শুধু নয়, বরং উত্তম ও প্রশংসনীয় (নেক) আমল।

— মজমু’আয়ে ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, ২২তম খণ্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা, বাদশাহ খালেদ বিন আবদ্ আল-আযীয সংস্করণ

দান-সদকাহ
হযরত আসমা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলে পাক (দঃ)-এর হাদীস, যিনি বলেন:

দান-সদকাহ করো এবং অনিচ্ছাসহ তা করো না, যাতে আল্লাহতা’লা তোমাদের প্রতি তাঁর দান সীমিত না করে দেন; আর তোমাদের অর্থ (দান-খয়রাত হতে) আটকে রেখো না, যাতে আল্লাহতা’লা তোমাদের কাছ থেকে তা আটকে না রাখেন।

— সহীহ বোখারী, ৩য় খণ্ড, ৪৭তম বই, হাদীস নং ৭৬৪

হযরত আবূ হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত; একবার এক ব্যক্তি মহানবী (দঃ)-কে প্রশ্ন করেন, “এয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! কোন্ ধরনের দান-সদকাহ সবচেয়ে ভালো?”

তিনি উত্তর দেন, “দান-সদকাহ করা ঠিক ওই সময়ে, যখন তুমি স্বাস্থ্যবান এবং সম্পদ আহরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখো, আর গরিব হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত থাকো। দান-সদকাহ করায় বিলম্ব করো না যতোক্ষণ না তুমি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে বলো, ‘অমুককে এইটুকু দেবে, তমুককে ওইটুকু দেবে’; কেননা ওই সময় সহায়-সম্পত্তি আর তোমার নেই, বরং তা অমুক-তমুকের হয়ে গিয়েছে (মানে উত্তরাধিকারীদের মালিকানাধীন হয়েছে)।”

— সহীহ বোখারী, ৪র্থ খণ্ড, ৫১তম বই, হাদীস নং ১১

তাহলে দান-সদকাহ করা কি বেদআত? অবশ্যই নয়! আর এই দান করার জন্যে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি যে কখন হালাল হবে আর কখন তা হারাম হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান-সদকাহ করা বছরের প্রতিটি দিন-ই জায়েয। এই নেক তথা পুণ্যদায়ক কাজ হতে মানুষদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করাই হলো খোদ এক বেদআত! অতএব, আপনারা নিজেরাই দেখুন কারা বেদআতী!

মহানবী (দঃ)-এর প্রতি দরূদ-সালাম পাঠ
আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:

নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাবৃন্দ দরূদ প্রেরণ করেন ওই অদৃশ্য বক্তা (নবী)-এর প্রতি। হে ঈমানদার মুসলমান সকল! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও (ভক্তিসহ) সালাম প্রেরণ করো।

— আল-কুরআন, ৩৩:৫৬; তাফসীরে কানযুল ঈমান বাংলা সংস্করণ

হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আল-’আস্ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে তিনি মহানবী (দঃ)-কে বলতে শুনেছেন,

কেউ আমার প্রতি একবার সালাওয়াত পাঠ করলে আল্লাহতা’লা তার প্রতি দশটি নেকী বর্ষণ করেন।

— সহীহ মুসলিম

তাহলে মহানবী (দঃ)-এর প্রতি দরূদ-সালাম পাঠ করা কি বেদআত? অবশ্যই নয়! আর এই সালাওয়াত পাঠ করার জন্যে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি যে কখন হালাল হবে আর কখন তা হারাম হবে (কিছু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া)। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর প্রতি দরূদ-সালাম পাঠ করা বছরের প্রতিটি দিন-ই জায়েয। এই নেক তথা পুণ্যদায়ক কাজ হতে মানুষদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করাই হলো খোদ এক বেদআত! অতএব, আপনারা নিজেরাই দেখুন কারা বেদআতী!

বস্তুতঃ কেউ যতো বেশি সালাত-সালাম পাঠ করবেন, তিনি ততোই পুরস্কৃত হবেন, যেমনটি বিবৃত হয়েছে নিচের হাদীসটিতে:

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর বাণী, যিনি বলেন,

“নিশ্চয় কেয়ামত ময়দানে আমার সবচেয়ে নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে সে-ই, যে ব্যক্তি আমার প্রতি সর্বাধিক দুরূদ-সালাম প্রেরণ করেছে।”

— তিরমিযী, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৪৮৪

পদ্য, নাশীদ ও না’ত আবৃত্তি
হযরত উবাই বিন কা’আব (রাঃ) বর্ণনা করেন নবী পাক (দঃ)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “কিছু কাব্য জ্ঞান ধারণ করে।

— সহীহ বোখারী, ৮ম খণ্ড, ৭৩তম বই, হাদীস নং ১৬৬

সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ করে একে অপরকে রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর শানে কবিতা (না’ত শরীফ) শোনানোর অনুরোধ করতেন। এতে প্রমাণিত হয় যে মীলাদ সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দের সুন্নাত (রীতি)। সাইয়্যেদুনা আতা’ ইবনে এয়াসার (রাঃ) বলেন,

আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে তৌরীত ঐশীগ্রন্থে পাওয়া যায় প্রিয়নবী (দঃ)-এর শানে এমন একখানি না’ত শোনানোর অনুরোধ করি। তিনি আমাকে তা আবৃত্তি করে শোনান।

— মেশকাত, বাবু ফাদায়েলিস্ সাইয়্যেদিল মুরসালীন, ১ম অনুচ্ছেদ

হযরত সালামা বিন আল-আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর সাথে খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি এবং রাতে ভ্রমণ করি। মানুষদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমির বিন আল-আকওয়া (রাঃ)-কে বলেন, “আপনি কি আমাদের আপনার কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবেন না?” আমির ছিলেন কবি, তাই তিনি (সওয়ার থেকে) নেমে মানুষের জন্যে হেদায়াতমূলক কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন; এই কাব্যের গতি উটের পা ফেলার সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে থাকে আর বলতে থাকে, “হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া আমরা সঠিক পথে পরিচালিত হতাম না, দান-সদকাও করতাম না, নামায-দোয়াও পড়তাম না। অতএব, অনুগ্রহ করে আমাদের কৃতকর্ম ক্ষমা করে দিন। আপনার উদ্দেশ্য সাধনে আমাদের উৎসর্গ করুন। আর আমরা যখন শত্রুর মোকাবেলা করবো, তখন আমাদের পাগুলোকে সুদৃঢ় রাখুন এবং আমাদের মাঝে শান্তি ও স্থিরতা মঞ্জুর করুন। আর যদি শত্রুরা আমাদেরকে অন্যায় কোনো কিছুর প্রতি আহ্বান করে, তবে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করবো। কাফেররা আমাদের বিরুদ্ধে অন্যদের কাছে সাহায্য চাওয়ার বেলায় অনেক হৈচৈ করেছে।”

এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (দঃ) জিজ্ঞেস করেন, “(উটের) ওই চালক কে?”

সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দ উত্তর দেন, “তিনি আমির বিন আল-আকওয়া।”

এমতাবস্থায় রাসূল (দঃ) বলেন, “আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।”

— সহীহ বোখারী, ৮ম খণ্ড, ৭৩তম বই, হাদীস নং ১৬৯

রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) একটি কবিতা রচনা করেন যা’তে তিনি হুযূর পূর নূর (দঃ)-এর বেলাদত শরীফের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ওই পদ্যে নিচের কয়েকটি চরণ পাওয়া যায় -

(হে নবী) আপনার বেলাদত হয়েছিল যবে

ভুবন ও দিগন্ত আলোকিত হয়েছিল আপনারই নূরের বৈভবে

সেই নূরের আলোয় ও ন্যায়ের পথেই চলেছি আমরা সবে।

নোটঃ
ইবনে সাইয়্যেদ আল-নাস নিজের এসনাদ-সহ আত্ তাবারানী ও আল-বাযযার হতে এটি বর্ণনা করেন তাঁরই ‘মিনাহ আল-মায’ গ্রন্থে (১৯২-৩ পৃষ্ঠা);
এছাড়াও ইবনে কাসীর নিজের ‘আল-সীরাহ আন্ নাবাউইয়্যা’ (মোস্তফা আবদ্ আল-ওয়াহিদ সংস্করণ ৪:৫১) পুস্তকে এটি উদ্ধৃত করে;
মোল্লা আলী কারী নিজ ‘শরহে শেফা’ গ্রন্থে (১:৩৬৪) বলেন যে এ বর্ণনা আবূ বকর শাফেঈ ও আত্ তাবারানীর;
আর এটি উদ্ধৃত করেছেন আবদুল বর্র তাঁর ‘আল-এস্তে’য়াব’ পুস্তকে, ইবনে কাইয়্যেম নিজ ‘যাদ আল-মা’আদ’ বইয়ে এবং ইবনে হাজর তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে
ওপরোক্ত পদ্যে হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর উল্লেখিত ‘নূর’ তথা জ্যোতি শব্দটি স্বয়ং নবী পাক (দঃ) নিশ্চিত করেছেন তাঁরই বেলাদত-সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত হাদীসে।

হযরত এরবাদ ইবনে সারিয়্যা (রাঃ) ও আবূ উমামা (রাঃ) বলেন যে মহানবী (দঃ) এরশাদ করেন: “আমি হলাম পিতা ইব্রাহীম (আ:)-এর দোয়া এবং আমার ভাই হযরত ঈসা (আ:)-এর প্রদত্ত শুভ সংবাদ। যে রাতে আমার বেলাদত হয়, সে সময় আমার মা একটি নূর দেখতে পান, যেটি দামেশকের প্রাসাদগুলোকে এমনভাবে আলোকিত করেছিল যে তিনি সেগুলো দেখতে পাচ্ছিলেন।”

নোটঃ
এ হাদীস বর্ণনা করেন আল-হাকীম (২:৬১৬-১৭), ইমাম আহমদ নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে;
আরো বর্ণনা করেন আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নবুওয়া’ পুস্তকে (১:১১০, ২:৮),
ইবনে জাওযী উদ্ধৃত করেন নিজ ‘আল-ওয়াফা’ বইয়ে;
আর ইবনে কাসীর উদ্ধৃত করেছে নিজ ‘মওলিদ-এ-রাসূল আল্লাহ’ এবং ‘তাফসীরে কাসীর’ গ্রন্থে (৪:৩৬০)।
আল-হায়সামী (৮:২২১) বলেন যে আত্ তাবারানী ও ইমাম আহমদ এটি বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে ইমাম আহমদের এসনাদ তথা সনদ ‘হাসান’।
এছাড়াও ইবনে হিশাম নিজ ‘সীরাতে রাসূল-আল্লাহ’ (দারুল উইফাক সংস্করণ ১/২:১৬৬) এবং আত্ তাবারী তাঁর ইতিহাস পুস্তকে এই রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেন
প্রিয়নবী (দঃ) বিখ্যাত খন্দকের যুদ্ধের সময় হযরত আনাস (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ)-দের নবী-বন্দনাসূচক কবিতা ও গান শোনেন, যা’তে তাঁরা বলছিলেন: “আমরাই জ্বেহাদের উদ্দেশ্যে মহানবী (দঃ)-এর হাতে বায়াত হয়েছি - যতোদিন বেঁচে আছি।”

— ইমাম বোখারী এবং ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা নিজ ‘মাদারিজ আস্ সালেকীন’ পুস্তকের ১ম খণ্ড

ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা আরো উদ্ধৃত করেন

হযরত ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-এর দীর্ঘ কবিতা, যা তিনি মক্কায় প্রবেশের সময় মহানবী (দঃ)-এর শানে আবৃত্তি করেন; এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (দঃ) তাঁর জন্যে দোয়া করেন। তিনি অপর কবি ও সাহাবী হযরত হাসান বিন সাবেত (রাঃ)-এর জন্যেও দোয়া করেন, যাতে তিনি যতোদিন কবিতা দ্বারা মহানবী (দঃ)-কে সাহায্য করবেন, ততোদিন তাঁকে আল্লাহতা’লা পবিত্র রূহ দ্বারা সমর্থন দেন। অনুরূপভাবে, তিনি হযরত কা’আব ইবনে যুবায়র (রাঃ)-কে তাঁর কবিতার জন্যে খুশি হয়ে নিজ চাদর মোবারক দান করেন। ইবনে কাইয়্যেম এ প্রসঙ্গে বলে, “হযরত আয়েশা (রাঃ) সব সময়ই তাঁর প্রশংসাসূচক কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং তিনি তাঁর প্রতি রাজি ছিলেন।”

— ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা কৃত ‘মাদারিজ আস্ সালেকীন’

রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর কবি হযরত হাসান বিন সাবেত (রাঃ) বলেন:

আল্লাহর কসম! কোনো নারী-ই জন্ম দেয় নি পয়গম্বর ও মানুষের হেদায়াতদাতা মহানবী (দঃ)-এর মতো কাউকে; আর অাল্লাহতা’লা-ও তাঁর সৃষ্টিকুলের মাঝে সৃষ্টি করেননি মহানবী (দঃ)-এর মতো আমাদের (হেদায়াতের) নূরের উৎসস্বরূপ আরেকজন বিশ্বাসীকে, যিনি তাঁরই সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ও ওয়াদা (-এর বহিঃপ্রকাশ)।”

— ইবনে হিশাম কর্তৃক তাঁর ‘সীরাতে রাসূল-আল্লাহ’ গ্রন্থের শেষ কয়েক লাইনে উদ্ধৃত

এর পরও কি আশীর্বাদধন্য রাজাধিরাজের (ধরাধামে) শুভাগমন উদযাপনে কবিতা আবৃত্তি করা বিদআত বলে মনে হয় এর বিরোধিতাকারীদের কাছে? তারা এই দালিলিক প্রমাণগুলো যখন হজম করতে ব্যস্ত, আমরা তখন সৃষ্টির সেরা মহান সত্তার প্রতি সালাওয়াত পাঠে নিজেদের প্রবৃত্ত করবো এবং সারা রাত-দিন তাঁরই নূরের বন্দনা করবো যেভাবে তাঁর আনসার সাহাবা (রাঃ)-বৃন্দ আদর্শ স্থাপন করেছেন নিচের পদ্যে:

হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র আমাদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’য় হয়েছেন উদিত

যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী থাকবেন আমরা শোকর করতে হবো বাধিত।

নোটঃ
এটি বর্ণনা করেন আত্ তাবারী তাঁর ‘আল-রিয়াদ আন্ নাদিরা’ (১:৪৮০) গ্রন্থে এবং
ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’ (মা’আরিফ সংস্করণ, ৩:১৯৭, ৫:২৩) পুস্তকে
প্রিয়নবী (দঃ)-এর প্রতি মহব্বত প্রকাশ ও জশনে জলূস
হযরত সাইয়্যেদুনা আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন: মহানবী (দঃ) মদীনায় হিজরত করে এলে আবিসিনীয় (আফ্রিকী) লোকেরা এই খুশিতে বর্শা নিয়ে (ঐতিহ্যবাহী) খেলায় মেতে ওঠে।

— সুনানে আবি দাউদ, ৪১তম বই, হাদীস নং ৪৯০৫

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত: ....মদীনার মুসলমানবৃন্দ (হিজরতের সময়) যখন রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর মক্কা ছেড়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ পান, তখন তাঁরা প্রতিদিন সকালে হাররায় গমন করতে থাকেন। তাঁরা সেখানে অপেক্ষা করতেন যতোক্ষণ না মধ্যাহ্ন সূর্যের খরতাপ তাঁদেরকে ফেরত আসতে বাধ্য করতো। একদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁরা বাড়ি ফিরলে জনৈক ইহুদী কোনো জিনিস খুঁজতে তাঁর গোত্রের দুর্গের একটি ছাদে ওঠেন এবং দূরে মরু-মরীচিকার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসা সাদা পোশাক পরিহিত আল্লাহর রাসূল (দঃ) ও তাঁর সাহাবীদের দেখতে পান। ওই ইহুদী তাঁর সাধ্যানুযায়ী উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলেন, “ওহে আরবকুল! তোমাদের সেই মহান ব্যক্তিত্ব এখানে উপস্থিত, যাঁর জন্যে তোমরা অপেক্ষা করছো।” এমতাবস্থায় সকল মুসলমান ব্যক্তি হাররার চূড়ায় ছুটে যান এবং সেখানে মহানবী (দঃ)-কে স্বাগত জানান। রাসূলুল্লাহ (দঃ) তাঁদের সাথে ডান দিকে ফেরেন এবং বনূ আমর বিন আউফ গোত্রের বসতস্থানে (সওয়ার হতে) নেমে যান; আর এটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের এক সোমবার দিন।.....(একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ এটি)। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৪৫]

হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন: ....হুযূর পাক (দঃ)-এর মদীনায় আগমনের খবর প্রচার হয়ে যায়। মানুষেরা ঘর থেকে বেরিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতে থাকেন এবং বলতে থাকেন, “আল্লাহর রাসূল (দঃ) এসেছেন! আল্লাহর নবী এসেছেন!” এমতাবস্থায় মহানবী (দঃ) চলতে থাকেন যতোক্ষণ না তিনি হযরত অাবূ আইয়্যুব আনসারী (রাঃ)-এর ঘরের সামনে (সওয়ার থেকে) নামেন।...(একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ এটি)। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৫০]

হযরত আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন: মদীনায় আমাদের কাছে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিবৃন্দ আসেন তাঁরা হলেন সর্ব-হযরত মুস’আব বিন উমর (রাঃ) ও ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ); এঁরা মানুষদেরকে কুরআন মজীদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এর পর এলেন হযরত বেলাল (রাঃ), সা’দ (রাঃ) ও আম্মার ইবনে এয়াসীর (রাঃ)। অতঃপর হযরত উমর ফারূক (রাঃ) তাঁর সাথে আরো বিশজন সাহাবী (রাঃ)-কে নিয়ে মদীনায় আসেন। এরই পরবর্তী পর্যায়ে মহানবী (দঃ) মদীনায় তাশরীফ আনেন এবং তাঁর আগমন উপলক্ষে মদীনাবাসী মানুষ যতোখানি আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন, অতোটুকু উৎফুল্ল হতে আমি তাঁদেরকে আগে কখনোই দেখিনি। এমন কি দাসী মেয়েরাও গান করছিল, “রাসূলুল্লাহ (দঃ) আগমন করেছেন।” তাঁর তাশরীফ আনার আগেই আমি “আপন রবের নামের পবিত্রতা বর্ণনা করো, যিনি সবার ঊর্ধ্বে” (আল-কুরঅান, ৮৭:১)-সহ মুফাসসিলের অন্যান্য সূরা পাঠ করেছিলাম। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৬২]

সহীহ বোখারী শরীফ ও অন্যান্য সীরাহ-গ্রন্থে উদ্ধৃত এসব হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে মহানবী (দঃ) যখন মক্কা মোয়াযযমা হতে মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করেন, তখন ওই নগরীর মানুষ তাঁকে মহা উৎসাহে স্বাগত জানান। মদীনায় এক আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার নজির ইতিপূর্বে কখনোই দেখা যায়নি। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে সর্বসাধারণ রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হন; নারী-পুরুষ ও শিশু সবাই উৎফুল্লচিত্তে তাঁকে সম্ভাষণ জানান। এই সময় অবিরাম দফ বাজিয়ে গান করা হয় -

“হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র আমাদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’ এলাকায় হয়েছেন উদিত যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী থাকবেন আমরা শোকর করতে হবো বাধিত হে রাসূল, আপনি আমাদের মাঝেই হয়েছেন (খোদা কর্তৃক) লালিত, পালিত এসেছেন নিয়ে এক কর্তব্য যা হতে হবে মান্যকৃত আপনি এনেছেন এ নগরীর জন্যে মাহাত্ম্য তাই স্বাগতম, আল্লাহর রাস্তার দিকে সেরা (ওই) আহ্বান, উদাত্ত।"

ইনশা’আল্লাহ, পুনরুত্থান দিবসেও রাস্তাগুলো মহানবী (দঃ)-এর প্রতি সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ)-এর ভালোবাসার সাক্ষ্য প্রদান করবে।

সোবহানাল্লাহ! আর ভেবে দেখুন কতো তারিখে মহানবী (দঃ) মদীনায় প্রবেশ করেন এবং সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) উৎসবে মাতেন! এটি ছিল সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, ঠিক একই তারিখ যেদিন তাঁর ধরাধামে শুভাগমন হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর মাহাত্ম্যকে স্বীকার করার উদ্দেশ্যে এ দিনটিতে উৎসবের আয়োজন করাটা এই দলিলে সিদ্ধ ও জায়েয প্রমাণিত হয়।

সোবহানাল্লাহ! জুলূস তথা মিছিলসহ রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর প্রশংসাসূচক না’ত-পদ্য-নাশীদ ইত্যাদি করা যে জায়েয, তার অনুমতি হিজরতের সময় স্বয়ং হুযূর পাক (দঃ)-ই দিয়েছেন (কেননা, মদীনার আনসার সাহাবীবৃন্দ খুশিতে মিছিল করছিলেন - অনুবাদক)। অধিকন্তু, মক্কা বিজয়ের সময়ও তিনি সেখানে প্রবেশ করলে সাহাবা-এ-কেরাম (রাঃ) আনন্দে তাঁরই প্রশংসাসূচক না’ত/পদ্য উচ্চস্বরে আবৃত্তি করেন। এই শুভলগ্নে হযরত আবদুল্লাহ বিন রওয়াহা (রাঃ) ইসলামী বাহিনীর অগ্রভাগে হাঁটছিলেন এবং উচ্চস্বরে না’ত-পদ্য গাইছিলেন। হযরত উমর তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি যে রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর সামনে এতো জোরে না’ত গাইছো, তা কি যথার্থ?” এমতাবস্থায় খোদ মহানবী (দঃ) হযরত উমর (রাঃ)-কে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “ওকে বাধা দেবে না। কেননা, তার পদ্যগুলো কাফেরদের অন্তরে তীরের মতো বিঁধছে।” [সর্ব-ইমাম তিরমিযী, নাসাঈ ও ‘সুনানে কুবরা’; ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীও এটি উদ্ধৃত করেন]

৭/ - মসজিদ আলোকসজ্জা

বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে রমজান মাস, লায়লাতুল কদর উপলক্ষে কুরআন খতম কিংবা ঈদে মীলাদুন্নবী (দঃ)-তে মসজিদগুলো উজ্জ্বল রাখা তথা আলোকসজ্জা করা একটি বড় এবাদত। এ সম্পর্কে অনেক প্রামাণ্য দলিল বিদ্যমান, যেগুলো এখানে আলোকপাত করা হলো।

সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “আল্লাহর মসজিদসমূহ তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাউকেও ভয় করে না; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে এসব মানুষ সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [আল-কুরআন, ৯:১৮; তাফসীরে নূরুল এরফান বাংলা সংস্করণ]

মুফাসসিরীনে কুরআন (ব্যাখ্যাকারীবৃন্দ) বিবৃত করেন যে মসজিদে (জামাআতে) সালাত আদায়, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, উন্নতমানের ম্যাট বিছানো, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি কার্যক্রম মসজিদের উন্নয়নে সহায়ক। হযরত সোলা্য়মান (আ:) ‘কিবরীত-এ-আহমার’ (এক ধরনের দাহ্য পদার্থ) দ্বারা মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাস আলোকিত করে রাখতেন। এর এমনই উজ্জ্বলতা ছিল যে বহু দূরে অবস্থিত মহিলাবর্গ তাদের সুতো কাটতে পারতেন! [তাফসীরে রূহুল বয়ান]

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন: “সাহাবী হযরত তামীম দারী (রাঃ)-ই ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি মসজিদগুলোতে চেরাগ জ্বালান।” [সুনানে ইবনে মাজাহ]

উম্মুল মো’মেনীন সাইয়্যেদাহ মায়মুনাহ (রাঃ) মহানবী (দঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন: “বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিন।” তিনি উত্তরে বলেন, “সেখানে যেয়ে সালাত আদায় করো।” ওই সময় সেখানে একটি যুদ্ধ চলছিল। এই কারণে মহানবী (দঃ) বলেন, “তোমরা যদি মসজিদে পৌঁছুতে না পার

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৯

নতুন বলেছেন: অর্থ : হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত,তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হুজুর পাক (সঃ) এর বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার হয়েছিল।

:- হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কোথায় পেয়েছেন রাসুলের জন্মতারিখ?

রাসুল সা: কি বলেছেন নিজে কখনো?

৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৬

রেযা খান বলেছেন: সাহাবীদের রাসূল (দ) বলেননি! আপনাদের এসে বলেছেন তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতবেদ আছে।

৭| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

রাজীব নুর বলেছেন: নবীজির (সঃ) এর হাদীস গুলো আমাদের সবার মেনে চলা উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.