![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেশায় ককসবাজারের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। সুশিক্ষা বিতরণের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের মানবিক মানুষে পরিনত করা আমার ব্রত। পেশাকে অন্যরকম ভালবেসে চাকরীর সাড়ে চৌদ্দ বছরে মাত্র তিনদিন ছুটি নিয়েছি। অনন্য শিক্ষকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশবরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে দু’বার সম্মানিত হয়েছি। দেশের ভিন্ন মাত্রার দৈনিক প্রথম আলো’র অন্যরকম সম্বর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। পেয়েছি বিএসবি ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড ২০০৯, আলহামদুলিল্লাহ! আমার পেশায় আমি বেশ ভাল আছি। আপনাদের দোয়া কামনা করছি।
দৃশপট ১:
‘তুমি তো ব্যবহারিক কাজ মোটেও পারনি, নম্বর কেমন পাবে?’ গতানুগতিক প্রশ্ন এক পরীক্ষার্থীকে। ‘স্যার পূর্ণ নম্বর পাব’, হেসে জবাব দেয় পরীক্ষার্র্থী। তার আত্মবিশ্বাস দেখে শুধাই ‘বাপু, কাজ না পারার পরেও তুমি পূর্ণ নম্বর কেমনে পাবে - শুনি?’ ‘স্যার একশত টাকা করে দিয়েছি পূর্ণ নম্বরের জন্য।’ উত্তর শুনে আমি বিব্রত হই। হয়তো মাথাও খানিকটা নুয়ে পড়ে লজ্জায়। টাকার বিনিময়ে ওরা পূর্ণ নম্বর পাবে, এই অনৈতিক ধৃষ্টতা কে শেখালেন তাদের! শ্রদ্ধার মাথা হেলিয়ে এঁদের গোত্রকে কি বলা হয় ‘মানুষ গড়ার কারিগর!’ জেমস্ কি তাঁদের জন্যই গেয়েছেন, ‘সালাম জানাই সহস্রবার যিনি আমার গুরু!’
দৃশ্যপট ২:
১৯৯৭ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশ দিতে গিয়ে আমাকেও ১০ টাকা দিতে হয়েছিল। ব্যবহারিক খাতায় সীল মেরে দেওয়ার নামে টাকা তুলেছিলেন দপ্তরী বাবুল দা। পরীক্ষার কাজে সহযোগিতাকারী দু’জন মিলে টাকাগুলো ভাগ করতেন সে সময়। গতকাল ও আজ বহি:পরীক্ষকের দায়িত্ব পালনের ফাঁকে বাবুল দা’কে বলি, ‘টাকা নেবেন না?’ ‘না, কোন টাকাই নেব না’ দৃঢ় কন্ঠ বাবুল দা’র। লা জওয়াব! আনমনে বলি, পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা তো আগেই গেছে পকেটে! আপনাকে তাই কষ্ট করতে হবেনা দাদা!
চলুন এবার পর্দার অন্তরাল থেকে ঘুরে আসি এবং বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করি।
১। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আগে পরীক্ষা চলাকালীন ব্যবহারিক খাতায় সীল মারার নামে ১০ টাকা করে নিতেন কেন্দ্রের দপ্তরী ও পিয়ন। ওই টাকাগুলোর ভাগ পেতেন ঐ দপ্তরী এবং পিয়নই। উনারা বাৎসরিক এই ইনাম পেয়ে খুশিই হতেন -সন্দেহ নেই।
২। বিগত ৪/৫ বছর কিছু কেন্দ্রে দপ্তরী-পিয়নকে আর এ কাজ করতে হয়নি। অনেক কেন্দ্রে আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকই তুলেছি শিক্ষার্থী প্রতি ২০/৩০ টাকা করে। টাকাগুলো কোন একজনের নিকট জমা রেখে সেখান থেকে পরীক্ষকবৃন্দের খাওয়া-দাওয়া ও যাতায়াত খরচ আরামচে ওঠে গেছে!
৩। ২/১ বছর আবার দেখা গেছে, এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার পূর্বে নিজের স্কুলেই টাকা ওঠিয়ে নিতেন। সেখান থেকে শিক্ষার্থী প্রতি একটি অংশ কেন্দ্রে পাঠিয়ে বাকি অংশ নিজের পকেটে পুরতেন। চমৎকার বুদ্ধি প্রয়োগ!
৪। বোধহয় সেই প্রধান শিক্ষকের বুদ্ধিতে কিংবা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় প্রধানদের যোগসাজশে দৃশ্যপট এখন ভিন্ন। নিজের স্কুলেই প্রতি পরীক্ষার্থী থেকে ১০০ টাকা করে তুলে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কি জন্য এ টাকা। বলা হচ্ছে, এখান থেকে বহি ও অন্ত পরীক্ষকদের সম্মানী দেওয়া হবে। চমৎকার!
৫। ধরি, কেবল ২টি কেন্দ্রেই পরীক্ষার্থী আছে ৬০০ জনের অধিক। পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা হিসেবে টাকার অংক দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকা! পদার্থ, রসায়ন, জীব, উচ্চতর গণিত, কম্পিউটার, গার্হস্থ্য অর্থনীতি মোট ৭ বিষয়ে দুই কেন্দ্রে বহি ও অন্তঃ পরীক্ষক মোট ২৮ জন। তাহলে কি এই ২৮ জনকে ৬০ হাজার টাকা ভাগ করে দেওয়া হবে! মোটেও না। এখান থেকে প্রধান শিক্ষকেরা মিলে হয়তো একটি মোটা অংশ গিলে ফেলবেন!
৬। ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নিয়ে পরীক্ষকবৃন্দের সম্মানী দেওয়ার বিধান নেই। কে বাধা দেবেন শুনি!
৭। আমরা জানি, ব্যবহারিক পরীক্ষায় দায়িত্বপালনকারী শিক্ষকদের জন্য খাতা মূল্যায়ন বাবদ শিক্ষা বোর্ড থেকে সম্মানী দেওয়া হয়।
৮। কেন্দ্রে দায়িত্বপালন বাবদ পরীক্ষকদের সম্মানী পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে নির্বাহ করা হয়। কারণ প্রতি পরীক্ষার্থী থেকে কেন্দ্র ফি বাবদ ২২৫ টাকা করেই নেওয়া হয়।
৯। ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনেক সময় নামমাত্র দায়িত্ব পালন করি আমরা বহি ও অন্তঃ পরীক্ষকরা, অবাক হওয়ারই কথা। প্রধান শিক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবের নির্দেশ মতোই নম্বর দিতে হয় বেচারাদের! কি মজা!
১০। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য যাঁদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, তাঁদের ভেতরের ‘আমি’ কি এসব অনৈতিকতায় সায় দেয়!
প্রিয় পাঠক,
শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরগুলো বিরাট ভমিকা রাখে অস্বীকার করার জো নেই। তাই বলে বুদ্ধিমানদের যোগসাজসে টাকা দিয়ে নম্বর দিতে হবে কেন। অনৈতিক এ কাজটি চলতে থাকলে পরীক্ষক/শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তা বলে অবশিষ্ট কি আর বেশি থাকে! শিক্ষার্থীরা বলে বেড়াবে, ‘ব্যবহারিক কোন সমস্যা না, টাকা দিলে খাতা ভর্তি নম্বর মিলে’। কোনদিন আমরা তাদের সামনে পড়লে হয়তো কানাঘুষা করবে ‘ব্যহারিক পরীক্ষায় ইনাকেই টাকা দিতে হয়েছিল!’ তাছাড়া, পরীক্ষার্থীদের অনুজরা স্কুলে ব্যবহারিক কার্যাদিতে মনোযোগ হারাবে। টাকা দিলে কেল্লা ফতে! এত কষ্টের কি দরকার! ভাবখানা এমন হবেনা, কে নিশ্চয়তা দেবেন! ব্যবহারিক কাজে পাদর্শিতার অভাবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা অনেকটা পঙ্গু হয়ে পড়ে। তাই এ+ পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসও জুটেনা অনেকের কপালে, আফসোস! আমরা চাই, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কর্মে দক্ষ করা হোক। তাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার জোয়ারে ধুয়ে-মুছে সাফ হোক টাকা দিয়ে নম্বর বিলানোর অশুদ্ধতা! অভিযাত্রা শুরু হোক তবে, শুদ্ধতার পথে এবং আলোকিত হোক প্রিয় বাংলাদেশ - অনন্য আলোয়।
১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪০
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: সহমত প্রকাশসহ বিনীত ধন্যবাদ।
২| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২২
বজ্জাদ সাজ্জাদ বলেছেন: আশা করি আপনি তাদের মধ্যে ব্যাতিক্রম হবেন।
১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪০
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: সহমত প্রকাশ করছি।
বিনীত ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২২
বজ্জাদ সাজ্জাদ বলেছেন: আশা করি আপনি তাদের মধ্যে ব্যাতিক্রম হবেন।
১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৯
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: ইনশাআল্লাহ!
৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৩১
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: ভালো লাগল...
১২ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২০
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এস.এস.সি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশের সাথে সংশ্লিষ্ট আমরা অনেক বিজ্ঞানের শিক্ষক আত্ম অহমিকার দোষে দুষ্ট হই, ব্যবহারিক পরীক্ষা সমূহে শিক্ষার্র্থীদেরকে নম্বর দিতে গিয়ে বি.এস-সি ডিগ্রীর দাপট দেখাই। ভাল ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরগুলোও বিরাট ভমিকা রাখে অস্বীকার করার জো নেই। আমি মোটেও বলছি না যে যারা ব্যবহারিক পরীক্ষায় সঠিক পারদর্শিতা দেখাতে পারবে না তাদেরকেও পূর্ণ নম্বর দেওয়া হোক। কারণ অগ্রগামী শিক্ষার্থী, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী সবাইকে পূর্ণ নম্বর দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক পরীক্ষা সঠিক নিয়মে সম্পাদনের মজা পাওয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে ওঠবে। আমি ককসবাজার সরকারী কলেজে পড়া অবস্থায় রসায়ন বিষয়ে ভালভাবে ব্যবহারিক করাতেন শ্রদ্ধেয় আবু সাঈদ স্যার। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিশুদ্ধ মানোন্নয়নে স্যারের আন্তরিক অবদান ককসবাজারবাসী বিন¤্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে। ঐ সময় দেখা যেতো, শহরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী ব্যবহারিক কাজে খুব পারদর্শি। আমরা যারা ক্ষেত্র বিশেষে তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারিনি তারা স্বভাবতই নিজ নিজ স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষকদের ব্যবহারিক অংশের ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলি। শিক্ষকতা জীবনে এসে ঐ অভিযোগটির দৃঢ়তা উপলব্ধি করেছি পদে পদে। আমি দেখেছি, অনেক বিদ্যালয়ে শোকেজ ভর্তি ব্যবহারিক পরীক্ষার উপকরণ রয়েছে কিন্তু প্রতি মাসে এমনকি প্রতি সাময়িক পরীক্ষাতেও ব্যবহারিক পরীক্ষার স্বাদ শিক্ষার্থীরা পায়না। আবার এমন বিদ্যালয়ও রয়েছে যেখানে ব্যবহারিক পরীক্ষার উপকরণ অপর্যাপ্ত কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পাদনের জন্য অতি উৎসাহী। একসময় এমনও চোখে পড়েছে, ক্লাস রুটিনের মধ্যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ব্যবহারিক অংশটি অন্তর্ভূক্ত নেই অথবা থাকলেও রুটিনানুযায়ী ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পাদন হয়না। আমাদের উচিত, আমরা শিক্ষকরা যতদিন শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহারিক কার্যাদি অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দিচ্ছিনা ততদিন আমরা পূর্ণ নম্বর প্রদানের জন্য উদার হবো। কারণ শিক্ষার্থীদেরকে কাজ না শিখিয়ে তাদের উপর খড়গ চালানোর পদ্ধতিটি নৈতিকতার প্রশ্নে টিকেনা। আমরা চাই, এক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক মিলে যথা সময়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পাদনের জন্য ব্যবহারিক অংশটি রুটিনভূক্ত করবেন, তা সঠিক নিয়মে সম্পাদন হচ্ছে কিনা আন্তরিকভাবেই তদারকি করবেন, প্রতি বছরই কিছু কিছু ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি কেনার ব্যবস্থা করবেন। আমরা দেখতে চাই, প্রতি বিদ্যালয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষার উপকরণ পর্যান্ত পরিমানে আছে, প্রতি টার্মেই ব্যবহারিক কাজ হয়, সাময়িক পরীক্ষার রুটিনে ব্যবহারিক পরীক্ষা সংযোজিত হয় এবং তদনুযায়ী সব পরীক্ষা শেষে এস.এস.সি’র ব্যবহারিকের মতো হাতে-কলমে ব্যবহারিক অংশ সম্পাদিত হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১০
ঢাকাবাসী বলেছেন: তাইতো এত হাজার হাজার গোল্ডেন এ প্লাস, কিন্তু তাদের অধিকাংশই দুলাইন বাংলাই ঠিকমত লিখতে পারেনা, ইংরেজীর কথা আর নাই বললাম।