নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডাক দিয়ে যাই

পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।

নুরুজ্জামান মানিক

ঢাবি হতে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর । আগ্রহের বিষয় কবিতা-দর্শন-বিজ্ঞান । ১৯৯০'র দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ,পাক্ষিক ও মাসিক সাময়িকী সমুহে প্রবন্ধ-উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ-প্রতিবেদন-ফিচার লিখছি । লেখার বিষয় বিচিত্র -রাজনীতি ,অর্থনীতি,শিল্প-বানিজ্য ,কৃষি,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি,তথ্য - প্রযুক্তি,মহাকাশ বিজ্ঞান -গবেষণা,পরিবেশ-প্রকৃতি,স্বাস্থ্য,শিল্প-সংস্কৃতি , ফ্যাশন-বিনোদন,ইন্টেরিয়র , ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা ইত্যাদি।

নুরুজ্জামান মানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্র -নজরুল কাব্যে বৈশাখ ও ঝড়

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:২৫

বৈশাখ পুরাতনের বিদায় ও নবীন বরণ মাস । বৈশাখ আসে ঝড় নিয়ে, বিদায় হয় ধবংসের সহযাত্রী হয়ে । বৈশাখ সাহসী, ক্ষ্যাপা,বৈরী , অশান্ত, অসীম, মারমুখো, নির্দয়।কিন্তু তার সৃজনক্ষমতা শিল্পীর সুনিপুন সৌকর্যকে হার মানায়, তার নতুন করার পালা তার নবায়নী ধারা প্রকৃতির সকল পারক্ষমকে হার মানায়। কবিগুরু বৈশাখকে আহবান করেনঃ



"এসো হে বৈশাখ ! এসো এসো,

তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক

যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,

অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি,

আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ

মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।"




কিন্তু বৈশাখ কে আহবান করে কোন কবিতা লিখেননি নজরুল । (অবশ্য, বৈশাখী ঝড়ের ব্যবহার তার একাধিক কবিতায় বিদ্যমান) কেন? আমার ব্যক্তিগত মত হল, নজরুল স্বয়ং ছিলেন বৈশাখের প্রতীক । তিনি নিজেই কালবৈশাখীর মত আবির্ভুত হন বাংলা কবিতায় । স্বয়ং কবি নিজেই তার বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী"তে ঘোষণা করেছেন :



"আমি ধূর্জটি , আমি এলোকেশে ঝড় অকালবৈশাখীর "



আমাদের কবি মনে আলোড়ন জাগাতে আসে বৈশাখের বাত্যা । প্রেমিকের অন্তর সাধনায় বিশ্বাস ও প্রেমের মাত্রাযোগ ঘটায় এ বৈশাখ। চৈত্রের দাবদাহে জীবন যখন মরুপ্রায় , রোদে পুড়ে কাদামাটি ঠনঠনে , তখনি বৈশাখ আনে ঝড় , সাথে পানির ফোয়ারা , বিজলীর ছোড়া পুঞ্জিভুত শিলা থেকে ঘুর্নির শঠতা ।



মহাকবি শেলী তার "Ode To The West Wind" (২৫ অক্টোবর ১৮১৯) নামক কবিতায় ঝড়ের প্রশস্তি গেয়েছেন-



"Drive my dead thoughts over the

universe,

Like wither'd leaves, to quicken a new birth;

And, by the incantation of this verse,

Scatter, as from an unextinguish'd hearth

Ashes and sparks, my words among mankind
"



কারণ , শেলীর বিশ্বাস যে, ঝড় শুষ্ক পত্র ঝড়িয়ে দেয় ,সেই নবীন জন্মকে তরান্নিত করে । শেলী প্রকৃতির কাছ থেকে এই জ্ঞান লাভ করেছেন-"The trumpet of a prophecy! O Wind, If Winter comes, can Spring be far behind?"



কোন ঋতু যেমন স্থায়ী নয় , তেমনি দুঃখময় সময়ও স্থায়ী নয়। যখন ঝড় আসে , তখন সে সব কিছু ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়ে যায়। তার দূর্দান্ত গতি ও প্রচন্ডতা দ্বারা । এজন্য, ঝড় ধবংসের প্রতীক ।কিন্তু সেই ধবংসই আবার সৃষ্টির সম্ভাবনাকে ত্বরান্নিত করে। কবিগুরু তাই "ক্লান্ত বরষের সর্বশেষ গান " এ ঝড়কে আহবান করে বলে উঠেন-



"ধাও গান,প্রাণ ভরা ঝড়ের মতন র্ধব বেগে

অশান্ত আকাশে ।

উড়ে যাক, দূরে যাক বিবর্ণ বিশীর্ণ জীর্ণ পাতা

বিপুল নিঃশ্বাসে ।"

যেহেতু কবিগুরু নতুনের প্রতি আগ্রহী তাই তিনি আমন্ত্রন জানান কালবৈশাখীকে -

"আনন্দে আতঙ্কে নিশি নন্দনে উল্লাসে গরজিয়া

মত্ত হাহা রবে

ঝার সঞ্জীব বাধ উন্মাদিনী কালবৈশাখীর

নৃত্য হোক তবে ।"




কবিগুরুর "বর্ষশেষ"কবিতায় শেলীর জীবনদর্শন সুস্পষ্টভাবে ততটা চিহ্নিত নয়, যতটা নজরুলের "প্রলয়োল্লাস" কবিতায় প্রস্ফুটিত । নজরুল যখন বলেন-



"ধবংস দেখে ভয় কেন তোর?প্রণয় নুতন সৃজন বেদন

আসছে নবীন জীবন হারা অসুন্দররে করতে ছেদন

তাই সে এমন কেনো যেনো

প্রলয় বয়েও আসছে হেসে মধুর হেসে

ভেঙ্গে আবার গড়ছে জানে সে চির সুন্দর।
"



তখন বোঝা যায় দ্বান্দ্বিক দর্শনের সাথে তিনি সুপরিচিত। প্রথম স্তবকেই তাকে বলতে দেখি :



"তোরা সব জয়ধ্বনি কর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্‌-বোশেখীর ঝড়।
।"



নজরুলে আরেকটা ব্যাপার আছে "সময়ের হিসাব" । সময় কখনও রাত্রির অনুগত , কখনও দিনের অর্থাৎ সময় কখনও সুখের, কখনও দুঃখের অনুকুলে । তাই তিনি ঐ কবিতার ষষ্ঠ স্তবকে বলেন-



"ঐ সে মহাকাল সারথী রক্ত-তড়িত চাবুক স্থানে,

রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্র-গানে ঝড় তুফানে!

ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!

গগন-তলের নীল খিলানে।

অন্ধ কারার বন্ধ ক্থপে

দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে

পাষান-স্তুপে!

এই তো রে তোর আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর-

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
।"



আমাদের দেশে বৈশাখে যেমন ঝড় হয় তেমনি আশ্বিনেও ঝড় হতে দেখা যায়। অবশ্য , আশ্বিনের ঝড়টা বৈশাখের মত অবশ্যম্ভাবী না । এজন্যেই ঝড়ের কথা উঠলেই মনে আসে বৈশাখী ঝড়ের কথা । কালবৈশাখী বলতে আমরা দুরন্ত ঝড়কেই বুঝি । কোন গতিশীল ধবংসাত্বক বিষয়ের উপমা দিতে তাই কবিরা উল্লেখ করেন কালবৈশাখীর । নজরুল এর 'ভাষার গান' এ দেখি-



"নাচে ঐ কালবৈশাখী

কাটাবি কাল বসে কি ?

দেরে দেখি

ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি
।"



আর রবীন্দ্রনাথ তার "পৃথিবী" তে লিখলেন-



"বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎ চঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে

ছিনিয়ে নিতে এল

কালো শ্যেন পাখির মত তোমার ঝড়

সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন

কেশর দোলা সিংহ;

তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে

হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উপুড় হয়ে ।
"



এখানে ঝড় ও বৈশাখ একাত্ব হয়ে প্রকাশ পেয়েছে । শেলীর "Ode To The West Wind" কিন্তু হেমন্তের ঝড় (একে আশ্বিনের ঝড়ও বলা যায়) । কবিতাটির প্রথম পঙতি হল -

O WILD West Wind, thou breath of Autumn's being; এখানে স্পষ্টভাবে হেমন্ত এর উল্লেখ আছে। সুতরাং শেলীর ঝড়টা বৈশাখের ঝড় নয় , আশ্বিনের ঝড়। নজরুলের ঝড়ের উপর লেখা দুটি কবিতা হল-'ঝড়ঃ পুর্ব তরঙ্গ '(কল্লোলে প্রকাশ শ্রাবন মাসে ১৩৩১ সালে ) ও 'ঝড়ঃ পশ্চিম তরঙ্গ' (বিষের বাশি কাব্যে ১৬ই শ্রাবন ১৩৩১ সালে তবে প্রথম প্রকাশ কল্লোল ২য় বর্ষ ৩য় সংখ্যায় ১৩৩১ সালের আষাঢ়ে)।



শেলীর "Ode To The West Wind ,রবীন্দ্রনাথের 'বর্ষশেষ'এবং নজরুলের 'ঝড়ঃপশ্চিম তরঙ্গ' এর রচনাকালের একটা সাদৃশ্য রয়েছে। শেলী তার কবিতা লিখেছিলেন ঝড়ের দিনে (তবে সেটা হেমন্ত এর ঝড়)। রবীন্দ্রনাথ এর 'বর্ষশেষ'কবিতার নিচে লেখা আছে ,১৩০৫ সালে ৩০চৈত্র ঝড়ের দিনে রচিত । আর নজরুল ইসলামের 'ঝড়ঃ পশ্চিম তরঙ্গ' লেখার শানে নুজুল সম্পর্কে প্রাণতোষ চট্রৌপাধ্যায় লিখেছেন -"এই বছরেই (১৯২৪) কবি কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা ও গান লেখেন । তার মধ্যে ‘ঝড়ঃপশ্চিম তরঙ্গ’ কবিতাটি অন্যতম । .......... দীর্ঘ আট পৃষ্ঠা কবিতা ব্যাসিলরি দিসেনট্রি ও প্রবল জ্বরের মধ্যে তিন/চার ঘন্টা ধরে একাগ্র মনে লিখে আমাদের শুনিয়ে তবে তিনি বালিশে মাথা রেখে চোখ বুজলেন ।'' (হুগলীতে কাজী নজরুল )



বস্তত, শেলীর "Ode To The West Wind এর অনুসরনে বা অনুকরনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ঝড় ও বৈশাখ এর উপর একাধিক কবিতা লিখেছেন। এজরা পাউন্ডের সিলেকটেড পয়েমস এর ভুমিকায় এলিয়ট বলেছেন :'যথার্থ মৌলিকতা কবিতার উৎকর্ষ সাধন '। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের কবিতাগুলির মৌলিকত্ব ঐ উত্কর্ষ সাধন প্রচেষ্টার উপর নির্ভরশীল ।





(পুরনো কাগজ পত্র ঘাটতে গিয়ে আমার এই খসড়া লেখাটি পেলাম । যতদুর মনে পরে ,এটি ১৬/১৭ বছর আগে লেখা । কোথাও ছাপার জন্যে পাঠানো হইনি , সেই জন্যই লেখাটি পাওয়া গেল নতুবা নির্ঘাত্ এটি চলে যেত সাহিত্য সম্পাদকের ওয়েস্ট পেপার ঝুড়িতে ।



মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-১

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৩০

তানভির আহমেদ বলেছেন: এবারের বৈশাখ আমার বাংগালিয়ানা ফিরে পাবার বৈশাখ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:১১

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: হোক

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ২:০৮

গৌতম রায় বলেছেন: নুরুজ্জামান মানিকের লেখাগুলো অন্যরকম। তথ্যে ভরপুর।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:২৬

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: ধন্যবাদ গৌতম

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩

সালাহ্ উদ্দিন শুভ্র বলেছেন: অনেক আলোচনার দাবি রাখ। বিশেষত শেলীর উপস্থিতি।

তবে বিষয়ের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। এই লিখা আরো পড়বো। আর এই মুহূর্তে নজরুল আমার হাতের কাছে নেই-ফলে কিছু পড়াশোনা করে কোন একদিন আবার আলাপ তুলবো।


ভালো থাকুন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:৪০

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৫ শে মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৮

শাহনাজ সুলতানা বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। আপনাকে শুভেচ্ছা।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৫৪

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৪২

হায়রে দুনিয়া বলেছেন: মানিক ভাই, জিয়ার উপরে আপনাদের সিরিজটা কি এই ১৪১৭ সালের মধ্যে আসবে বলে মনে হয়, নাকি পরের বৈশাখেও অপেক্ষা করতে হবে? :(

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ভাই। অরপিকে তো আজকাল আমুতেও দেখি না। ওইখান থেকেও বের হয়ে গেছে নাকি?

যাহোক, শুভ নববর্ষ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৫১

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: আসবে শীঘ্রই ।
শুভ নববর্ষ।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

মেঘ বলেছেন: ভালো লেখা বরাবরের মতো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.