![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ , উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ !
শিব নারায়ণ দাস।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার, তবু কোনো এক অলৌকিক কারণে ইতিহাসে তিনি প্রায় স্বীকৃতিহীন। বরং পতাকার ডিজাইনার হিসেবে অনেক মানুষই জানে পটুয়া কামরুল হাসানের নাম। এই স্বীকৃতিহীনতার জন্য একটা জীবন অভিমান করেই, প্রায় আড়ালে কাটিয়ে দিলেন। ঢাকার কোন কোন একটা অখ্যাত জায়গায় ভাড়া থাকেন। মুক্তিযুদ্ধে বাবা কে হারিয়েছেন। যুদ্ধ করেছেন বাংলার জন্য, দিয়েছেন একটা পতাকা অবয়ব। কিন্তু জানেন, তার মুক্তি যুদ্ধের কোন সার্টিফিকেট নাই। অভিমানী শিব নারায়ণ কোন গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিতে চান না। কি হবে সাক্ষাৎকার দিয়ে।
রশিদ তালুকদার
আসাদের শার্টের ছবি কিংবা ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ছবি কিংবা উত্তাল মার্চে টোকাই এর সেই উদ্দাম চিৎকার। নিভৃতে কাটিয়ে দিয়েছিলেন জীবনের শেষ দিন গুলো। আর রাষ্ট্রীয় সম্মান, সে তো নি জে চোখেই দেখেছি। অভিযোগ ছিলো না, হয় তো মন ভরা অভিমান ছিলো। চলে গেলেন সেই অভিমান নিয়েই। বঙ্গবন্ধুর অন্ধভক্ত রশীদ কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- " কি লাগবে তোর রশীদ?" প্রতিউত্তরে রশীদ তালুকদার বলেছিলেন-" আপনার সান্নিধ্য।"
বাউল শাহ আব্দুল করিম
হাবিবের রিমিক্স 'কৃষ্ণ', তার আগে ? করিম শাহ কে নিয়ে ব্যবসা করেছেন, হাতে কয়েকটি টাকা দিয়ে দাএশের দায়িত্ব শেষ করেছিলাম। করিম শাহ এর মুখে তাই- "আমি একবার রেডিও’র একটা চেক ভাঙ্গাতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এ গেলাম। সেখানে যাবার পর আমি মানুষ গিয়েছি না পশু গিয়েছি এ ব্যাপারে নিজেরই কিছুটা সংশয় এসে গিয়েছিলো। এই কি স্বাধীন দেশের অবস্থা!( করিম শাহ আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠছেন) আমার পাঞ্জাবী ছিড়া তো কি হয়েছে, আমি এই দেশের নাগরিক না? আমার লুঙ্গীতে না হয় তিনটা তালি বসানো, আমি তো ট্যাক্স ফাঁকি দেইনা কখনো। এতো ব্যবধান, এতো বৈষম্য কেনো? মানুষই তো মানুষের কাছে যায়। আমি তো কোন বন্যপশু যাইনি। বন্যপশুর ও অনেক দাম আছে, এদেশে মানুষের কোন দাম নেই, মানুষের কোন ইজ্জত নেই।(করিম শাহ’র চোখ জলে টলোমল)
"হোসেন সোহরাওয়ার্দী আমার গণসঙ্গীত শুনে একশো পঁচাশি টাকা দেন। শেখ মুজিব তখন দুর্নীতি দমন মন্ত্রী, গান শুনে এগারোশো টাকা দিলেন আর বললেন’ আপনার মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হবে। মুজিব ভাই বেঁচে থাকলে করিম ভাই বেঁচে থাকবে,ইনশাল্লাহ’. করিম ভাই জীর্ণ শরীর নিয়ে বেঁচে আছি, উপযুক্ত মর্যাদা কারে কয় এখনো বুঝিনি।উপযুক্ত মর্যাদার দরকার নাই,জীবনের প্রায় আশিবছর দুঃখ-দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে এসেছি, বেঁচেইবা থাকবো আর কয়দিন, নতুন করে আর স্বপ্ন না দেখলেও চলবে।" (সাক্ষাৎকার-টি এম আহমেদ কায়সার)
মইনুল হোসেন
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতি সৌধে সবাই ফুল দিতে যাই। মইনুল হোসেন তিনি জাতীয় স্মৃতি সৌধের স্থপতি. ২৬ বছর বয়সে জমা দিয়েছিলেন স্মৃতি সৌধের নকশা. করেছেন আরও অনেক গূরুত্বপূর্ন ভবনের নকশা. কোথায় তিনি ? কোন অভিমানে হারিয়ে গেলেন।
গোবিন্দ হালদার
'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা'
'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল'
'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি'
১৯৭১ এ এই গান গুলো বাজতো প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কানে, প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালীর কানে. এখনও গান গুলো শুনলে গায়ে কাটা দেয়। এ গান গুলোর শক্তি তখন কতটুকু ছিল তা বোঝানো অনেক কঠিন।
তার নাম গোবিন্দ হালদার. এখন তার শরীর এখন জরাজীর্ণ। এক চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পান না। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও শরীরের নানা সমস্যায় প্রায় দিশেহারা অবস্থা।
আয়কর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণায় এবং উৎসাহে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান রচনা করেন। কামাল আহমেদ তাকে স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্ণধার কামাল লোহানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার হাতে ১৫টি গানের একটি খাতা দেন। এ গান গুলোর মধ্যে স্বাধীন বেতারে প্রথম প্রচারিত হয় সমর দাসের সুরারোপিত পূর্ব দিগণ্তে সূর্য উঠেছে গানটি।
অনেক খুজে কালের কন্ঠে তার কিছু কথা পেলাম.
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দিলেন। বললেন, 'ওই সব দিনের কথা আর মনে করতে চাই না। রাত জেগে গান লিখেছিলাম। কামাল লোহানীর কাছে সেই গান নিয়ে গিয়েছিলেন আমার এক বন্ধু_১০টি গানের মধ্যে সাতটি তিনি পছন্দ করেন, আপেল মাহমুদ সুর দেন।' কালজয়ী এ গীতিকার খানিকটা অভিমান করে বললেন, 'মুক্তিযুদ্ধের জন্য আমি কী করেছি, সেটা আমি জানি না। আরো বেশ কিছু করতে পারলে ভালো হতো। এখন মৃত্যুর সময় এসে গিয়েছে। স্বীকৃতি আর প্রয়োজনও নেই। বাংলাদেশের মানুষ আমার লেখা গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত থাকলে খুশি হব।'
জীবননান্দের মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। ট্রাম দূর্ঘটনা না আত্মহত্যা তার ভেতর যাবো না। শেষ করবো তার কয়েকটি লাইন দিয়ে-
সব ছেড়ে একদিন আমিও স্থবির
হয়ে যাব; সেদিন শীতের রাতে সোনালি জরির কাজ ফেলে
প্রদীপ নিভায়ে রব বিছানায় শুয়ে;
অন্ধকারে ঠেস দিয়ে জেগে রব
বাদুড়ের আঁকাবাঁকা আকাশের মতো;
স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বল তো।
©somewhere in net ltd.