নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে আমার মত থাকতে দাও

ওরে ভয় নাই আর , দুলিয়া উঠেছে হিমালয়-চাপা প্রাচী ! গৌরশিখরে তুহিন ভেদিয়া জাগিছে সব্যসাচী !

স্ক্রু ঢিলা

কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ , উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ !

স্ক্রু ঢিলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিউশানি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২০

দোস্ত..একটা টিউশনি দিতে পারবি ? টাকার খুব অভাবে আছি ব্যাটা !

-আরে কইছ না ! আমারও হইছে প্যাঁড়া !! যখন চাই তখন পাইনা । যখন চাইনা তখন হাজারটা আইসা পায়ের সামনে গড়াগড়ি খায় !

আচ্ছা দোস্ত ঠিক আছে ! .... আজ তাহলে উঠিরে , বাবার ওষুধ কিনতে হবে ।



হাতের সস্তা সিগারেটে সুখটান টা দিয়ে ছুড়ে ফেলে পায়ের নিচে মাডিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে শামীম ।

আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর । একটু ঠান্ডা ঠান্ডা , অন্ধকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো জ্বলে উঠছে সবে । আঁধার হয়ে পড়ছে চারদিক । সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে ।

এমন একটা সুন্দর সন্ধ্যায় ওর বয়েসী যে কোন যুবকই গুনগুনিয়ে গেয়ে ফেলত কোন রোমান্টিক গান , অথবা দিব্যি আওড়ে যেন সুনীলের কোন কবিতার দু-চার লাইন । কিন্তু শামীমের অবস্থা আর দশটা সাধারণ ছেলের মত নয় । তার ভেতরের আবহাওয়া টা লাশ রাখার হিমঘরের মত । নিরেট , গুমোট , নিস্তব্ধ...। ক্ষুধায় পেট চুঁইচুঁই করছে । সেই কখন থেকে হেঁটে যাচ্ছে গন্তব্যহীনের মত ! পকেটে ঘামে ভেজা ভাঁজ করা এক পাতার প্রেসক্রিপশান । ওটা এখন প্রচন্ড ভারী !

সাদা এপ্রোন পরা ডাক্তারের ধমক কানে বাজছে এখনও । এরপর আর হাসপাতালের দিকে যাওয়ার সাহস হয়নি ওর ।

তাই এখন বুকে পুরো পৃথিবীর বোঝা বয়ে চলছে ।



সবেমাত্র আটে পা রাখা ছোট্ট অলিভা । দেখলেই গাল দুটো টেনে আদর করতে ইচ্ছা করে । শামীমের বোন ।

এখন হসপিটালের বেডে পড়ে আছে । একদম ছোটবেলাতেই ওর থ্যালোসেমিয়া ধরা পরে । তারপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর অলিভার রক্ত চেঞ্জ করতে হচ্ছে ।

বাবা নেই । শামীমই এখন পরিবারের ভরসা । আর এই বোনটাই ওর সব ।

বাবা মারা যাওয়ার পর চাচারা ওদের আলাদা করে দেয় । কিছু জমিজমা অবশ্য পেয়েছে । তবে তাদের বেশীরভাগ সম্পত্তিই চাচারা মেরে দিয়েছে ।

ওই জমিজমা বেচে-বন্ধক দিয়ে এতদিন অলিভার চিকিৎসার খরচ চলছিল । এখন তো তাও শেষ !

অনার্স শেষ করে বেকার হয়ে বসে আছে শামীম । পকেটে এক কানাকড়ি নেই । একটা চাকরীর জন্য কত চেষ্টাই না করল ! কিন্তু শেষমেশ চাকরী আর মেলেনা । ঘুরেফিরে ইন্টারভিউ অফিসাররা টেবিলের নিচের দিকেই হাত বাড়িয়ে দেন । আর শামীম টেবিলের ওপরে রাখা শূন্য হাতটা গুটিয়ে চলে আসে ।



কাল সকালে হাসপাতালে গিয়েছিল শামীম । অলিভার জন্য চার ব্যাগ রক্ত দরকার । মাত্র দুই ব্যাগ দেয়া হয়েছে । সেই দুই ব্যাগ রক্তও শামীম নিজের রক্ত বিক্রি করে কিনে এনেছিল ।

অলিভার নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত । খুবই রেয়ার । বাকি দুই ব্যাগ শামীমকেই জোগাড় করতে হবে । ডাক্তার খুব ধমক দিয়েছিল । বলেছিল... শামীম কেমন ভাই ! যে ছেলেকে বোনের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পাওয়া যায়না ষে আবার কেমন ভাই !!!

এসব শুনার ক্ষমতা শামীমের নেই । তাই ভুলেও ওদিকে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা ওর ।

পকেটে আছে মাত্র তিনশ সত্তুর টাকা । শামীম জানে... রক্ত তো দূরের কথা , এই টাকা দিয়ে সবকটা ওষুধও কিনা যাবেনা । ‘একটা টিউশনি খুব দরকার’ দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বিড়বিড়িয়ে বলল শামীম ।



ফুটপাতে বসে ছিল । আর মনে মনে ভাবছিল কত মানুষ আসে-যায় এই পথে..তারা কেউ কারো দিকে তাকায়না । কেউ কারো জন্য না । সবাই কেমন যেন রোবট হয়ে গেছে ! পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে মাটি খামচে খামচে ধরতে থাকে শামীম ।

হঠাত একটা ফোন আসে , নম্বরটা অচেনা । রিসিভ করে শামীম -

হ্যালো , স্লামালিকুম । কে বলছেন ?

- ওয়ালাইকুম । তুমি কি শামীম ?

একটা ভারী কর্কশ পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে ওপার থেকে । প্রথমেই তুমি বলে সম্বোধন করেছে । তার মানে এই লোক মানুষকে হুকুম দিতেই বেশী অভ্যস্ত ।

জি আমি শামীম । আপনি কে বলছেন ?

- আমার ছেলের জন্য একটা টিচার দরকার । রাস্তার মোড়ে তোমার লিফলেটটা দেখেছিলাম । আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি । কাল আমার বাসায় আসো ।



শামীমের মন খুশিতে ঝলমল করে ওঠে । ঠিকানাটা টুকে নিয়ে একটা বন্ধুকে ফোন দেয়-

হ্যালো রাহাত..

- হ্যাঁ দোস্ত , বল ।

আমাকে কিছু টাকা ধার দে না ! এই হাজারখানেক !

- টাকা দিতে পারব । তবে ধার শোধ করবি কেমনে ?

দোস্ত নতুন একটা টিউশনি পেয়েছি । আগামী মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যেই পেয়ে যাবি ।

রাহাত একটু অবাক হয় ! এই মাসের মাঝখানে টিউশানি ! তবুও ষে বলে..

- টাকা কখন লাগবে তোর ?

এখন দিলেই ভালো হয় দোস্ত ।

- আচ্ছা আমার বাসার সামনে আয় ।

থ্যানক্স দোস্ত । তোর এই উপকার আমি কক্ষনো ভুলবোনা । আমি এক্ষুনি আসতেছি ।



শামীম হেঁটে হেঁটে রাহাতের বাসায় গেল । সেখান থেকে টাকাগুলো নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে । তারপর ফার্মেসী ।

ভালো কিছু খাবার কিনে সোজা হসপিটালে ।

অলিভা আজ অনেক খুশি । ভাইটা তার জন্য অনেক করতেছে ! আজকে হাসপাতাল থেকে বাসায় যাবে সে । আর শামীম যাবে তার নতুন টিউশানিতে ।



কাল রাতের দেয়া ঠিকানায় এসে শামীম পুরাই অবাক । বিশাল বাড়ী । একেবারে রাজবাড়ীর মত । শিল্পপতি জাফর আহমেদের বাড়ী ।

কোন কথাবার্তা ছাড়াই ওর বেতন নির্ধারণ হল দশ হাজার টাকা । এতো টাকার কথা শুনে শামীমও অবাক ।

শামীম তার পুরোটা দিয়ে পড়াতে লাগল । প্রথম কয়দিনে ছাত্রের কাছে শুনে যা বুঝতে পারল , তা হল এই ছেলের টিচার খুব ঘন ঘন বদল হয় । গত তিনমাসে সে পাঁচটা টিচারের কাছে পড়ছে !

তাই শামীম তার সর্বোচ্চ দিয়ে পড়াতে থাকল ।

যে করেই হোক এটা টিকিয়ে রাখতে হবে ।



সেদিন সকালে অলিভা শামীমের হাত ধরে বলল.. ‘ভাইয়া আমি বেঁচে থাকব তো ?’

শামীম প্রথমে কিছু বলতে পারেনি । অন্যদিকে ফিরে ঠোঁট কামড়ে কান্নাটা চেপে রেখেছিল । তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলল.. তোর ভাইটা বেঁচে থাকতে তোকে কি ও মরতে দেবে কখনো ??

অলিভা জড়িয়ে ধরেছিল ওকে । ভাইবোন একত্রে হুঁ...হুঁ করে কেঁদেছিল অনেকক্ষণ ।



সেদিন সন্ধ্যায় শামীম হেঁটে হেঁটে জাফর সাহেবদের বাড়িতে যাচ্ছিল । হঠাত জাফর সাহেবের ফোন-

হ্যালো , স্লামালিকুম আঙ্কেল ।

- শুনো শামীম , আজ থেকে তোমার আর আসার দরকার নেই ।

কিন্তু আঙ্কেল.....

- কোন কিন্তু ফিন্তু নয়...আমি মানা করে দিয়েছি । ব্যাস ! এটাই যথেষ্ট ।

তবে আঙ্কেল.....

- আর তোমার টাকার ব্যাপারটা আমি ম্যানেজ করে দিব । যে কদিন এসেছিলে ওই পরিমাণ টাকা গুনে গুনে তোমার মোবাইলে দিয়ে দেব । টেনশান কোরোনা ।

এটা বলেই লাইনটা খট করে কেটে যায় ।

শামীম আর কিছু বলতে পারেনা । বলার ইচ্ছেও করেনা ।

আজও আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর । একটু ঠান্ডা ঠান্ডা , অন্ধকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো জ্বলে উঠছে সবে । আঁধার হয়ে পড়ছে চারদিক । সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে ।

হয়তো এমন একটা সুন্দর সন্ধ্যায় ওর বয়েসী যে কোন যুবকই গুনগুনিয়ে গেয়ে ফেলত কোন রোমান্টিক গান , অথবা দিব্যি আওড়ে যেন সুনীলের কোন কবিতার দু-চার লাইন ।

কিন্তু তার যে ওষুধ কিনতে হবে । আরও চার ব্যাগ রক্ত কেনার টাকা জোগাড় করতে হবে ! রাহাতের টাকা ফেরত দিতে হবে পাঁচ তারিখের মধ্যে !!

শামীম আর হাঁটতে পারেনা । ফুটপাতে বসে পড়ে ।

ওর বুকের ভেতরে কোন গান বাসা বাঁধেনা , কোন কবিতার ছন্দ খেলা করেনা । ওর ভেতরটা নিরেট , গুমোট , স্তব্ধ ।

ওর মাথার ভেতর বাজতে থাকে আট বছরের ছোট্ট বোন অলিভার কথা...‘ভাইয়া আমি বেঁচে থাকব তো ?’

একফোঁটা জল চুইয়ে পড়ে শামীমের বাঁ চোখ থেকে । ল্যাম্পপোস্টের হলুদ সোডিয়াম বাতির আলো এসে চকচক করে শামীমের চোখের পানি ।

বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মাটি খামচাতে থাকে শামীম ।

হঠাৎ করেই চোখের পানিটা টুপ করে পড়ে শামীমের বুড়ো আঙ্গুলের ওপর ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অসাধারন গল্প যেন জীবনের কথা বলে। ভাল লাগা রইল।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩২

স্ক্রু ঢিলা বলেছেন: ধন্যবাদ সুজন ভাই । আপনি আসলেই সু-জন ।
ভালো থাকবেন :)

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

মদন বলেছেন: +++++++++

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৪

স্ক্রু ঢিলা বলেছেন: মদন !! পিলাচ দিয়া ধইন্যা কইরা দিলেন এই অধমরে !

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

বাঁশ আর বাঁশ বলেছেন: ★★★

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১১

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: খুব কষ্টের গল্প

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮

স্ক্রু ঢিলা বলেছেন: হাহাহা !!!
লিখার পর আমারও কিছুক্ষণ মন খারাপ ছিল !

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০

অদিব বলেছেন: বেশ সুন্দর গল্প! পোস্টে অবশ্যই +!!!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

স্ক্রু ঢিলা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.