![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনটা যেন এক পথের পথিক, সীমানার শেষ নেই। শুধু পথ অতিক্রম করা যায়, তবুও সীমান্ত পাওয়া যায় না।
ছোটবেলা দেখতাম বাবা দেশ ছেড়ে আসার সময় মায়ের হাতে পুরানো খবরের কাগজ মোড়ানো একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিতেন। সেই সময়টায় মায়ের দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকতো, কয়েকবার মা-বাবা দুইজনের চোখের কোণে জলও দেখেছিলাম বোধহয়। তখন কিশোর মনে রাজ্যর প্রশ্ন জাগত, বাবা প্রতিবার মায়ের হাতে কিসের প্যাকেট দেয়? মা শব্দহীন হয়ে সেই প্যাকেট ন্যাপথলিন ছড়ানো ভাঁজ করা কাপড়ের ফাঁকে লুকিয়ে রাখতেন।
একটা সময় ফুফু কিংবা দাদীর আঁচল গুঁজা মুখে কান্নার শব্দ শোনা যেত। আমি সেই প্যাকেট আর কান্নার কথা ভুলে যেতাম যখন বাবা বলতেন, সামনের মাসে কাকার কাছে আমার জন্য রিমোট চালিত উড়োজাহাজ পাঠাবেন।
বাবা ঠিকই তার কথা রাখতেন, কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারতাম না। বাবার কাছে আমার চাহিদা জ্বালানী তেলের দামে বাড়তেই থাকত।
একমাত্র ছেলে হওয়ায় যা চেয়েছি তাই পেতে পেতে শৈশব পিছনে ঠেলে আমি বড় হয়ে উঠি। তারপর বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার বরাত দিয়ে ডাকাতের মত প্রতিমাসে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতাম। চার মাসান্তে আমার সেমিস্টার ফ্রি লাগতো ২২,০০০ টাকা আর আমি বাবার কাছে বলতাম ৪৫,০০০ টাকা। বাবা পাল্টা প্রশ্ন না করেই টাকা ছেড়ে দিতেন আমার ব্র্যাক ব্যাংকের এ্যকাউন্টে। আমিও মচকা মেরে উড়াতাম।
এখন আমিও বাবার মতন দেশের বাহিরে থাকছি। নিজের পরিবার-পরিজন ছেড়ে আট ঘণ্টা কামলা দিয়ে পয়সা উপার্জন কি পরিমাণ কষ্টদায়ক আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাই। বাবার কষ্টে অর্জিত টাকা দুহাতে উড়াতে একটুও খারাপ লাগতো না আমার। জেদ, আবদার, চাহিদা, বায়না পূরণ করা বাবা, কোন দিনও বিনিময়ে কিছু আশা করেনি আমার থেকে। আমিও স্বার্থপরের মত বাবাকে কিছু দেয়ার কথা ভাবেনি কোনদিন।
কথা গুলো আজ মনে পড়ছে কারণ, এত গুলো বছর পর কিছুদিন আগে বাবা আমার কাছে একটা জিনিষ চেয়েছিলেন। আর আমি নিজেকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে বাবার সেই কথা পানির সাথে ঢোক গিলে বসে ছিলাম।
বাবা আমার কিংবা আমার পরিবারবর্গের মডার্ন চাহিদা গুলো মিটিয়ে থাকলেও তিনি এখনো এই যুগের হতে পারেননি। সেই নোকিয়া ফোন আর সাদা মাটা চেকের শার্টেই আটকে আছেন এখনো। আমি ইলেকট্রনিক্সে কাজ করি বিধায়, সেইদিন কথায় কথায় বলেছিলেন, "দেখি তোদের মত মডার্ন হওয়া যায় কিনা। নোকিয়া ছেড়ে একটা টাচ মোবাইল ব্যাবহার করতে হবে" আমি বাবার গর্দভ ছেলে, সেই কথা বুঝতে পারিনি যে বাবাকে একটা মাল্টিমিডিয়া মোবাইল কিনে দেয়ার দরকার।
আজ কথাটা মনে পড়ায় নিজেকে খুব ছোট লাগছে। যে বাবা এত কষ্ট করে মানুষ করেছেন, সেই বাবারও যে চাহিদা থাকতে পারে তা আমরা ভুলে যাই। এই যেমন আমি গিয়েছিলাম।
চঞ্চল অভিনীত গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল, "মায়ের জন্য এইবার একটা মোবাইল নিয়ে যাচ্ছি" তেমনি আজ আমি বাবার জন্য একটা মোবাইল নিয়ে যাচ্ছি।
আজকাল দেখছি বাবা বুড়িয়ে যাচ্ছেন, তারপরও বিদেশে পড়ে আছেন আমার মাথার উপর ছায়া হয়ে। আমি সাফ কথায় জানিয়ে দিয়েছি এই বছরের শেষ নাগাদ দেশে ফিরে যাও। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে। বাবার শান্ত চোখ দুটো আমি পড়তে পারি। পুরোটা জীবন তিনি একা কাটিয়েছেন আমাদের জন্য। যৌবন পুড়িয়ে বুড়ো হয়ে দেশে ফিরছেন। লাভ ম্যারেজ করা বউ, মানে আমার মাকে নিজ থেকে দুরে রেখেছিলেন সারাটা জীবন। এখন দেশে ফিরে গিয়ে কি আর করবেন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা ছাড়া?
আজ আমি বাবার জীবন ঘেঁটে আমার জীবন নিয়ে ভাবছি। আমারও হয়তো বাবার মতন এইভাবেই পার করতে হবে জীবনটা। এমন একটা দেশে জন্মিলাম যে দেশে উপার্জন তো দুরের কথা, রাস্তায় বেরুলেই পেট্রল বোমা খেয়ে মরতে হয়। এই যে আমরা দেশের বাহিরে পশুর মত জীবন পার করছি, শুধুই আমার দেশের অবস্থার জন্য। আর বিশেষ করে রাজনৈতিক অবস্থা।
যাইহোক, মালয়েশিয়া আমেরিকা হয়ে উঠতে পারে, তবুও আমার দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবার নয়।
তো শেষ করার আগে বলেই দেই, বিদেশ আসার আগে বাবা মাকে কিসের প্যাকেট দিতেন। (প্যাকেটের মধ্যে থাকতো শুকনো মাটি) যদি আমার দাদা-দাদির কেউ মারা যায় তাহলে ছেলের ছোঁয়া মাটি গুলো যেন তাদের কবরের উপর ছিটিয়ে দেয়া হয়।
আমার বাবাও দেশে চলে যাচ্ছেন। আগামী বার দেশ ছেড়ে আসার সময় হয়তো আমাকেও মাটির প্যাকেট রেখে আসতে হবে মা-বাবার কবরের জন্য। বাবার সেই চোখের পানির কারণ আমি এখন উপলব্ধি করছি। জীবিত বাবা-মায়ের জন্য কবরের মাটি রেখে আসতে কেমন লাগে একজন সন্তানের?
কিন্তু, আমাদের কিচ্ছু করার নেই তাতে। এইটাই হল আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবন চক্র।
২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭
সুমন কর বলেছেন: লেখা হৃদয় ছুঁয়ে গেল। চমৎকার।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: এভাবেই জীবন তার চক্র পূর্ণ করে। বড় নিষ্ঠুর সে। কারো জন্যে থেমে থাকে না। শুভেচ্ছা।
৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৯
জার্মান প্রবাসে বলেছেন: প্রবাস জীবন আসলেই অনেক কঠিন .
৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: খুব টাচি একটা লেখা, মনটা কেমন মেঘলা করে দিল। ঠিক বলেছেন, যে বাবা এত কষ্ট করে মানুষ করেছেন, সেই বাবারও যে চাহিদা থাকতে পারে তা আমরা ভুলে যাই। সকল বাবাদের প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম। ভালো থাকুন সকল বাবারা।
৬| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৫৯
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আপনার দুঃখে আমি ও সমব্যাথী, নিজের পায়ে শক্ত ভাবে দাড়ান যাতে দেশে চলে আসতে পারেন, দেশ উন্নত হচ্ছে, হয়তোবা মালয়েশিয়া হবে না তবে আমাদের মতো মানুষ দেশে কিছু করে পরিবার পরিজনের সাথে থাকতে পারবো সেই অবস্থা দেশে হয়ে গেছে বা হবে দ্রুত, তাই আশা ছাড়বেন না।
আপনার জন্য ও বাংলাদেশের সমস্ত প্রবাসীর জন্য দোয়া করি সবাই যেনো স্বনির্ভর হয়ে নিজ ভূমিতে ফিরে আসতে পারেন এবং দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, দেশে পরিবার পরিজনের সাথে জীবন যাপন করতে পারেন, মহান করুণাময় আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন জীবনের মুল্যবান সময় যেনো আমরা পরিবার পরিজনের সঙ্গে কাটাতে পারি । আমীন ।
৭| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:১৩
জামানবিডি বলেছেন: অনেক শিক্ষনীয় কিছু। আসলে আমরা সঠিক সময়ে সঠিক বিষটি বুঝতে পারি না।
SSC English
৮| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২৭
মন্জুরুল আলম বলেছেন: আমি জানিনা যারা প্রবাসে কখনো থাকেনি তারা এই লেখার সব টাচ করতে পারবে কিনা। কিন্তু এই প্রবাসে যখন শুনি, আপনজন কেউ মারা গেছে তখন যে কেমন লাগে তা আল্লাহই ভাল জানে .......
৯| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:২৯
পলাশ রহমান বলেছেন: আমিও একজন প্রবাসী, সুতরাং কিছুই বলার নেই!
১০| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল
১১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১১
ডি মুন বলেছেন: এমন লেখা পড়ার পর কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। মন্তব্যে আর কী বা লেখা যায় !
যাহোক, আপনার বাবার জন্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।
সব দুঃখ-বেদনাকে পাশ কাটিয়ে হাসি আনন্দে থাকুন।
জীবন চলুক জীবনের নিয়মে।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৩১
প্রামানিক বলেছেন: অনেক কষ্টের কথা। জীবিত বাবা মায়ের জন্য নিজের হাতের ছোয়া মাটি রেখে আসা।