![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা, কোনটা আলো, কোনটা হতাশা, কোনটা ছায়া, কোনটা মরিচিকা......। অচেনা হিমালয়ের জগতে সব মিলে-মিশে একাকার......!!
"প্রসঙ্গ ভূমিকম্প: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতীত এবং ভবিষ্যৎ"
-------------------------------------
বাংলাদেশে ইদানিং মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্প হলে আমরা ভীত হই। পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলো ফলাও করে নিউজ করে। তারপর ধীরেধীরে আমরা ভুলে যাই। তারপর আবার ভূমিকম্প হয় এবং আবার আমরা ভীত হই। কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব কমই এটা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভূমিকম্পের কারণ কী, এর ভয়াবহতা কেমন হতে পারে অথবা এ সময় করণীয় কী ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের জানার গভীরতা খুব কম; সেই দলে আমি নিজেও পড়ি। তবে সম্প্রতি কিছু আর্টিকেল পড়লাম, কিছু আলোচনাও শুনলাম যা আমাকে এ বিষয়ে আরো জানতে আগ্রহী করে তোলে। সেই আগ্রহ থেকেই তৈরি করলাম এই লেখাটা।
ভূমিকম্প কেন হয়?
কখনও কি ভেবে দেখেছেন ভূমিকম্প কেন হয়? কেন বিশেষ বিশেষ কিছু স্থানে ভূমিকম্প বেশী হয় আবার কিছু স্থানে মোটামোটি ভূমিকম্প হয় না বললেই চলে? এ প্রশ্নগুলো বহু শত বছর ধরে মানুষকে ভাবালেও এর উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। ১৯১২ সনে জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রের্ড ওয়েগনার পৃথিবীর মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এক সময় পৃথিবীর মহাদেশগুলো একত্রে ছিল যা কালক্রমে ধীরেধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ওয়েগনারের এই তত্ত্বকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট। এ তত্ত্ব বলে পৃথিবীর উপরিতল কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। একেকটি টেকটনিক প্লেট মূলতঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গলিত পদার্থের বাহিরের আবরণ যা একটি পাথরের স্তর। ভূ-স্তরে যা কিছু রয়েছে তা এই প্লেটগুলোর উপরে অবস্থিত।
টেকটনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি লেগে রয়েছে। এগুলো প্রায়ই নিজেদের মাঝে ধাক্কায় জড়িয়ে পড়ে। কখনও মৃদু, কখনও সজোরে। যেহেতু প্লেটগুলো শিলা দ্বারা গঠিত, তাই ধাক্কার ফলে তাদের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এই ঘর্ষণের মাত্রা অধিক হলে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা ভূ-স্তরকে প্রকম্পিত করে। যদিও ভূমিকম্পের আরও কারণ রয়েছে (যেমন আগ্নেয়গিরি), তবে এই কারণটিই অধিকাংশ ভূমিকম্পের জন্যে দায়ী।
উপরের আলোচনা থেকে একটা বিষয় সম্পর্কে অনেকেই হয়তো ধারণা করে নিয়েছেন। তা হলো ভূমিকম্প বেশী হবার সম্ভাবনা থাকবে প্লেট বর্ডারে। হ্যা, আসলেই তাই। যেখানেই দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে সেখানেই ঘর্ষণ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকবে এবং এর ফল স্বরূপ হবে ভূমিকম্প। নিচের ছবিটি দেখুন। এই ছবিতে টেকটনিক প্লেটগুলো এবং সেগুলোর নাড়াচাড়ার গতি পথ দেখানো হয়েছে। জাপান, চিলি, হেইতি বা ইন্দোনেশিয়ার দিকে যদি তাকান তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন কেন ঐ স্থানগুলোতে নিয়মিত বড় বড় ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
এবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশিয় এবং মায়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। ফলে এই প্লেটগুলোর নাড়াচাড়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাছাড়া ভারতীয় এবং ইউরেশিয় প্লেট দুটো হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে রয়েছে এবং ১৯৩৪ সনের পর তেমন কোন বড় ধরনের নাড়াচাড়া প্রদর্শন করে নি। এ কারণে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে এই প্লেট দুটো হয়তো নিকট ভবিষ্যতে নড়ে উঠবে যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হবে।
টেকটনিক প্লেটের অবস্থান দেখলে বোঝা যায় যে আমাদের উত্তর ও পূর্বে দুটো বর্ডার বা টেকনিকাল ভাষায় “ভূ-চ্যুতি” রয়েছে যা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ। এজন্যে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল তথা সিলেট এবং ততসংলগ্ন এলাকা প্রবল ভূমিকম্প প্রবণ। এর পরের অংশগুলোও যেমন ঢাকা ও রাজশাহী শহরও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। নিচের ছবিতে বাংলাদেশের মানচিত্রে লাল অংশ বেশী, হলুদ মাঝারি এবং সবুজ অংশ কম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কি কখনও বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে?
যদিও ইতিহাস ঘটলে দেখা যায় অধিকাংশ ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল বাংলাদেশের বাহিরে, তবে কখনও কখনও সেটা বাংলাদেশের ভেতরেও দেখা গিয়েছে যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হয়েছিল। ১৭৭২ সনে বাংলাদেশে ৭.৮ মাত্রার একটা ভূমিকম্প হয়েছিল যার প্রভাবে নদী এবং বদ্ধ জলাশয়ে ঢেউ-এর সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিতে প্রায় একশ মানুষ মারা গিয়েছিল। এছাড়া গত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে সাতটা বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত করেছিল যার দুটোর উৎপত্তি স্থল ছিল বাংলাদেশের বর্তমান সীমানার ভেতরে। ১৯১৮ সনের ৮ জুলাই শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত করেছিল যদিও এর খুব অল্পই ঢাকায় অনুভূত হয়েছিল। তবে এই ভূমিকম্পে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বাংলো ভেঙ্গে পড়েছিল।
এর আগে ১৮৮৫ সনে মানিকগঞ্জে একটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল তার মাত্রা ৭ এর উপরে ছিল এবং বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর-শেরপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এই ভূমিকম্প এতটাই মারাত্মক ছিল যে এর প্রভাবে পরাক্রমশালী ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদ-এর গতি পথ পরিবর্তন হয়ে যায়। ব্ৰহ্মপুত্ৰ আগে জামালপুর এবং ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় সেই গতিপথকে পরিবর্তন করে বর্তমান ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং একই সাথে এর একটি সরু প্রবাহ যমুনাকে পরম পরাক্রমশালী যমুনা নদীতে পরিণত করেছে। উল্লেখ্য যে এই ভূমিকম্প ইতিহাসে “দ্যা বেঙ্গল আর্থকোয়েক” নামে পরিচিত। এছাড়াও ১৭৬২ সনে ৭.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প চট্টগ্রাম উপকূলকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যদিও এর উৎপত্তিস্থল কোথায় ছিল তা আর জানা যায় নি।
১৮৯৭ সনের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার “দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক” ভারতবর্ষকে আঘাত হানে যা আজও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের শিলং শহর তবে এর প্রভাব বর্তমান বাংলাদেশ সহ বহু দূর পর্যন্ত অনুভূতি হয়েছিল। সে সময়ের ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনারীদের বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়েছিল এই ভূমিকম্পের কারণে। এছাড়াও ঢাকায় ৪৫০ জনের মত নিহত হবার খবর পাওয়া গিয়েছিল যা সেই সময়ের তুলনায় রীতিমত অনেক বড় সংখ্যা।
এ ভূমিকম্পগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মোটামোটি প্রতি একশ বছর পরপর এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ১৯১৮ সন ছিল সর্বশেষ বড় ভূমিকম্পের বছর। এরপর প্রায় একশ বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু আর কোন বড় ভূমিকম্প আঘাত করে নি বাংলাদেশকে যা বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক আবহাওয়াবিদ এটাও মনে করেন যে ছোটছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে সেটার ভয়াবহতা হবে মারাত্মক।
বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে সেটার ভয়াবহতা কেমন হতে পারে?
ভূমিকম্প এমন এক দুর্যোগ যার প্রভাব ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হতে পারে। এমন ঘটনা বিরল নয় যে মাটির নিচে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতা খুঁজে পাওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ববিদরা মন্তব্য করেছেন হয়তো ভূমিকম্পের কারণেই এমনটা ঘটেছিল। এছাড়াও আধুনিক ভূমিকম্পগুলোর প্রভাব শুধু মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ না থেকে গড়িয়েছে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষতিতেও। পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্রার দিক দিয়ে ভয়াবহতম দুটো ভূমিকম্পই হয়েছে দুই এ্যামেরিকা মহাদেশে। ৯.৫ মাত্রার “দ্যা গ্রেট চিলিয়ান আর্থকোয়েক” চিলির অর্থনীতিতে ব্যাপক আঘাত হানে। অন্যদিকে ৯.২ মাত্রার “আলাস্কা আর্থকোয়েক” ১৯৬৪ সনে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যকে তছনছ করে দেয়। আরো একটু পেছনে গেলে একটা ভূমিকম্প খুঁজে পাওয়া যায় যার প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক ভাবে পড়েছিল। ১৭৫৫ সনের “লিসবন আর্থকোয়েক”-এর কারণে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের বিশাল অংশ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ধারণা করা হয় এ সময় লিসবনের ৮৫ শতাংশ বাড়িই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই ভূমিকম্প প্রায় ৬ মিনিট স্থায়ী ছিল। সে সময় পর্তুগাল ছিল বিশ্বকে শাসন করা অন্যতম সম্রাজ্য। কিন্তু এই ভূমিকম্প তাদের সাম্রাজ্যবাদের স্বপ্নকে চরম ভাবে বিপর্যস্ত করে যা পরবর্তিতে তারা কখনওই পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারে নি। আর হালের “হেইতি আর্থকোয়েক” আরো একবার দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা কী পর্যায়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি প্রথম আলো বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক করেছিল। সেখানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব মেহেদী আহম্মদ আনসারী বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আনুমানিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কেমন হতে পারে তার একটা চিত্র তুলে ধরেন যা রীতিমত ভীতিকর। তাঁর ধারণা ১৮৯৭ সনের মত কোন ভূমিকম্প হলে শুধু ঢাকা শহরে ভালো মাটিতে নির্মিত ৭০-৭২ হাজার ভবন ভেঙ্গে পড়বে। জনাব আনসারির মতে মাটি ভরাট করে নির্মিত ভবনের সংখ্যা এখনও বাংলাদেশে কম যা আগামীতে বাড়তেই থাকবে। তখন বিপর্যয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে। তিনি উদাহরণ হিসেবে ১৯৮৫ সনের মেক্সিকোর একটা ভূমিকম্পের কথা বলেন যেখানে ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটি খারাপ ছিল। সেই ভূমিকম্পে ১০ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত ১০ হাজারের মত ভবন ভেঙ্গে ২৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।
ঐ বৈঠকে আরেক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ জনাব আলি আকবর মল্লিক ভূমিকম্পের আরেকটি ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি ১৯২৩ সনের জাপানের টোকিও অঞ্চলের “দ্যা গ্রেট কানতো আর্থকোয়েক” নামক একটি ভূমিকম্পের উদাহরণ দেন যার মাত্রা ছিল ৭.৯। এরকম মাত্রার ভূমিকম্প জাপানের জন্যে তেমন চিন্তার কারণ না হওয়ারই কথা কিন্তু তবুও হতে বাধ্য হয়েছিল শুধু ভূমিকম্প হওয়ার সময়ের জন্যে। এই ভূমিকম্পটা হয়েছিল দুপুর ১২টার কয়েক মিনিট আগে। তখন সবাই দুপুরের খাবার রান্না করছিল। ফলে সব বাসার গ্যাস লাইন ছিল সক্রিয়। সে সময় টোকিও এলাকায় ২ লক্ষ ২০ হাজার গ্যাস সংযোগ ছিল। ভূমিকম্পের সাথে সাথে গ্যাস লাইনে আগুন লেগে যায় যা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ১২৮টি বাড়ি পুড়িয়ে ফেলে। এই ঘটনায় তখন ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৮০৭ জন প্রাণ হারায়। জনাব মল্লিক আমাদের ঢাকা শহরে দেশলাইয়ের কাঠি বাঁচাতে সব সময় গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখার বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেন বাংলাদেশে আমরা সব সময় কানতো আর্থকোয়েকের দুপুর ১২টা বাজিয়ে রাখছি।
আরেকটা বিষয় এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়। ১২ জানুয়ারি ২০১০ হেইতি-তে যে ভূমিকম্প হয়েছিল সেটার মাত্রা ছিল ৭ কিন্তু মানুষ মারা গিয়েছিল ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এর এক মাস পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ চিলিতে হয়েছিল ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প যা ৫০১ গুন শক্তিশালী ছিল হেইতির থেকে। অথচ সেখানে মারা গিয়েছিল মাত্র ৫৬২ জন। এর মূল কারণ বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো। চিলিতে এটা খুব প্রবল ভাবে মানা হয় কিন্তু হেইতিতে কোন বিল্ডিং কোডই নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের বাংলাদেশে বিল্ডিং কোড খুব হেলাফেলায় মান্য করা হয়। এজন্যেই আমরা মাঝে মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিল্ডিং হেলে পড়তে দেখি। বড় ভূমিকম্পের সময় এই বিল্ডিংগুলোর অবস্থা কী হতে পারে সেটা কল্পনা করা কষ্টসাধ্য নয়।
ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত?
ভূমিকম্পের সময় শক্তিশালী টেবিল বা এ ধনের আসবাবের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত। কোন অবস্থাতেই কাঁচের জানালার পাশে অথবা এমন দেয়াল যা পড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, তার পাশে অবস্থান নেয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি ভূমিকম্পের সময় আপনি বিছানায় থাকেন, তাহলে সেখানেই থাকুন এবং বালিশ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ঝাড়বাতি বা ফ্যান জাতীয় কিছু ঘরে থাকলে সেটা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। আশেপাশে শক্ত পিলার থাকলে সেটার নিচে আশ্রয় নিন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভূমিকম্পের সময় অধিকাংশ মানুষ আহত অথবা নিহত হন ভূমিকম্প চলাকালিন অবস্থান পরিবর্তেনের সময়। তাই কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্প হওয়ার সময় দৌড় দেয়া অথবা দ্রুত বিল্ডিং থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। উঁচু দালানের টপ ফ্লোরে থাকলে ছাদে চলে যাওয়া নিরাপদ কিন্তু যদি দরজা বা রাস্তা পরিষ্কার জানা না থাকে তাহলে ঘরেই অবস্থান নেয়া উচিত। আপনি যদি বাহিরে থাকেন এবং ভূমিকম্প হয়, তাহলে বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন। ১৯৩৩ সনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের “লং বিচ আর্থকোয়েক”-এ অধিকাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল যারা বিল্ডিং-এর বাহিরে ছিল। সে সময় বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ধসে তাদের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া আপনি যদি ড্রাইভ করতে থাকেন এবং ভূমিকম্প অনুভব করেন, তাহলে গাছ, বিল্ডিং, বৈদুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে গাড়ি পার্ক করে থেমে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
রেফারেন্স এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার
ফেইসবুক পেইজ: "যে কোন সময় ভূমিকম্প হইতে পারে, সবাই তৈরি থাকেন"
যুক্তরাষ্ট্রের FEMA, বিশেষতঃ এই লিঙ্কটি
প্রথম আলো এবং তাদের আয়োজিত “বাংলাদেশে ভূমিকম্প: ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রস্তুতি অগ্রগতি” গোল টেবিল বৈঠক।
বাংলা ও ইংরেজি উইকিপিডিয়া
এবং আমাদের ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছোট ভাই সুরঞ্জিত মণ্ডল যার শেয়ার করা লিঙ্ক এবং তথ্য দেখে এই লেখাটা লিখতে শুরু করেছিলাম।
==========
লিখেছেন: নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী।
©somewhere in net ltd.