![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা, কোনটা আলো, কোনটা হতাশা, কোনটা ছায়া, কোনটা মরিচিকা......। অচেনা হিমালয়ের জগতে সব মিলে-মিশে একাকার......!!
বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের (জুলাই ২৩, ১৯২৫ - নভেম্বর ৩, ১৯৭৫ ) জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা। যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম লেখা থাকবে, ততদিন তাজউদ্দিন আহমদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে…
তাজউদ্দীন আহমদেকে নিয়ে এই লেখাটি সবার পড়া উচিত।
------
এক.
তাজউদ্দীন আহমদ- এই নামটার সাথে আমাদের জাতীয় ইতিহাস এমন ভাবে জড়িত যে চাইলেও বাংলাদেশ শব্দটা থেকে তাজউদ্দীন শব্দটাকে আলাদা করা যায় না। এমন একজন নেতাকে জানতে জানতে আরও বুঁদ হয়ে পড়তে ইচ্ছে করে তাঁর কাজের ভেতর। শুধু তাজউদ্দীন আহমদের গল্প বলতে বলতে একটা পুরো রাত কাটিয়ে দেয়া যায়। বঙ্গুবন্ধু মার্চের পঁচিশ থেকেই ছিলেন বন্দী। এর মধ্যে শুধু একটা শার্ট আর লুঙ্গী পরে সীমান্ত পার হয়ে যাওয়া, একটা প্যান্টের অভাবে ইন্দিরা গান্ধির সাথে দেখা না করতে পারা, প্রবাসী সরকার গঠন, দেশকে সেক্টর অনুসারে ভাগ করা, বাইরের সমর্থন অর্জন, দেশ স্বাধীন করা। শুধু কি তাই- স্বাধীনতার আগেও হাজারো আন্দোলনে ক্রমাগত কাজ করে যাওয়া, এই মানুষটার এত এত গল্প কি এই নিমোখারাম জাতির অজানাই থেকে যাবে?
ভুট্টো বলেছিলঃ
“আলোচনা বৈঠকে মুজিবকে আমি ভয় পাই না। ইমোশনাল এপ্রোচে মুজিবকে কাবু করা যায়, কিন্তু তার পেছনে ফাইল বগলে চুপচাপ যে নটোরিয়াস লোকটি বসে থাকে তাঁকে কাবু করা শক্ত। দিস তাজউদ্দীন, আই টেল ইউ, হি উইল বি আওয়ার মেইন প্রবলেম।”
আর আমাদের এই ভূমিতে দেশের জন্য কাজ করা প্রত্যেকটা মানুষের ওপর যেই খড়গ নেমে আসে সেই খড়গটা তাজউদ্দীন আহমেদের ওপরই পড়েছিলো সবার আগে।
সেটা হচ্ছে তাঁকে বারবার নাস্তিক, পারতপক্ষে হিন্দু প্রমাণের চেষ্টা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনী লিফলেট ছড়াতো;
“তাজউদ্দীন ভারতে গিয়া হিন্দু হইয়াছেন…”
যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দৈনিক সংগ্রামের লেখা গুলো পড়েছেন তারা ভালো করেই জানেন পুরোটা একাত্তর জুড়ে তাজউদ্দীন আহমেদ কে তারা ‘শ্রী তাজউদ্দীন’ লিখতো। গোলাম আজম সংগ্রামের সম্পাদকীয় লিখেছিলো;
“বাংলাদেশ বাঙালীদের দ্বারা শাসিত হবে; এ মতবাদ শ্রী তাজউদ্দীনের…”
……………………………
দুই.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার তাঁর এক কলামে একবার লিখেছিলেন এমন করে-
“বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সময়ের পার্থক্য সবসময়ই ছিলো ৩০ মিনিট। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার ভারতের মাটিতে থেকে কাজ করত, চলত ভারতের সময়ে। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ কোনো দিন তাঁর হাতঘড়ির সময় পরিবর্তন করেননি, সেটি চলত বাংলাদেশের সময়ে।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানি দানবেরা এই দেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলো। তখন আকাশে শকুন উড়ত, নদীর পানিতে ভেসে বেড়াত ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ, শুকনো মাটিতে দাউ দাউ করে জ্বলত আগুনের লেলিহান শিখা, বাতাস ভারী হয়ে থাকত স্বজনহারা মানুষের কান্নায়। শুধু বাংলাদেশের সময়টুকু তারা কেড়ে নিতে পারেনি। তাজউদ্দীন আহমদ পরম মমতায় সেই সময়টুকুকে তাঁর হাতঘড়িতে ধরে রেখেছিলেন।
ঘাতকের বুলেট তাজউদ্দীন আহমদের হৎস্পন্দনকে চিরদিনের জন্য থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাঁর হাতের ঘড়িতে ধরে রাখা বাংলাদেশের সময়টিকে কোনো দিন থামাতে পারবে না। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন তাজউদ্দীন আহমদের ঘড়ি আমাদের হৃদয়ে টিকটিক করে চলতে থাকবে। চলতেই থাকবে।”
……………………………
তিন.
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার সাথে মিটিং-এ বসেছেন তাজউদ্দীন আহমেদ। প্রাথমিক আলোচনার পর বিস্তারিত আলোচনার জন্য ম্যাকনামারা জানতে চাইলেন বাংলাদেশের জন্য কোথায় কী ধরনের সাহায্য দরকার।
তাজউদ্দীন আহমদ বললেন,
‘আমাদের যা দরকার তা আপনি দিতে পারবেন কি-না আমার সন্দেহ আছে।’
ম্যাকনামারা বললেন,
‘মিস্টার মিনিস্টার, আপনি বলুন, আমরা চেষ্টা করব দিতে।’
তখন তাজউদ্দীন আহমদ বললেন,
‘মিস্টার ম্যাকনামারা, আমার গরু এবং দড়ি দরকার।
যুদ্ধের সময় গরু সব হারিয়ে গেছে। এখানে-ওখানে চলে গেছে, মরে গেছে।
পাকিস্তান যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, চাষিরা এদিক-সেদিক পালিয়ে গেছে, তখন গরু হারিয়ে গেছে। এখন যুদ্ধ শেষ, চাষি ফিরেছে কিন্তু গরু নাই, তাই চাষ করবে কীভাবে?
কাজেই আমাদের অগ্রাধিকার চাহিদা হলো গরু।’
ম্যাকনামারার চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে, তাজউদ্দীন আহমদ বলে চলেছেন,
‘আর আমাদের সমস্ত দড়ি তো পাকিস্তানিরা নষ্ট করে ফেলেছে,
এখন গরু পেলে গরু বাঁধতে দড়ি প্রয়োজন।
গরু এবং দড়ি প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি, না হলে সামনে জমিতে চাষ হবে না।’
অস্বস্তিকর এই মিটিং শেষে যখন তাজউদ্দীন আহমেদকে জিজ্ঞেস করা হল, কেন তিনি এরকম করলেন। উনি তখন বললেন,
‘কেন?
গরু ছাড়া কি চাষ হয়?
আর এই লোকটাই তো আমেরিকার ডিফেন্স সেক্রেটারি ছিলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে আমেরিকা। আমাদেরকে স্যাবোটাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে। আর তার কাছে সাহায্য চাইবো আমি?’
…………………………………..
চার.
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতায় আগুনে পোড়া নিজের পৈত্রিক ভিটার সামনে এসে দাঁড়ালে সমবেত জনতা বলে ওঠে- আর চিন্তা কি, তাজউদ্দীন ভাইসাবের পোড়া ভিটায় নতুন বাড়ি উঠবে।
তিনি তখন বলেছিলেন-
“যতদিন পর্যন্ত এই বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই না হবে,
ততদিন এই ভিটায় বাড়ি উঠবে না”।
সেই ভিটায় বাড়ি আর ওঠেনি
…………………………………..
পাঁচ.
আমার পড়ালেখা দিয়ে আমি যতটুকু বুঝি, মুক্তিযুদ্ধকালীন অবদানের জন্য যদি আমাকে একক ভাবে কোন মানুষকে এক নাম্বারে স্বীকৃতি দিতে বলা হয় আমি সেটা তাজউদ্দীন আহমেদকেই দেবো। নির্লোভ নিরহংকারী মানুষটাকে ডেকে একবার বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করেন নাই কি করে দেশটাকে স্বাধীন করছিলেন তারা। তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন;
“একটা কষ্ট আমার মনে রয়েই গেল। যে মুজিব ভাইকে আমি তিল তিল করে আমার মনে ধারণ করেছিলাম, যাকে আমি কোনদিন নিজ থেকে আলাদা করে ভাবতে পারিনি, সেই মুজিব ভাই একটা দিনের জন্যও আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন না, তাজউদ্দীন, ১৯৭১-এ আমি যখন ছিলাম না তোমরা তখন কি করে কি করলে? একবারও বললেন না, তাজউদ্দীন তুমি বল, আমি ১৯৭১ এর কথা শুনব’।”
অথচ এই ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর
মাঝেমাঝেই মাঝরাতে ঘুম থেকে ধড়ফড় করে জেগে উঠতেন এই বলে;
“আমার মনে হচ্ছে মুজিব ভাই আমাকে ডাকছেন…”
……………………………
ছয়.
আমার কাছে তাজউদ্দীন আহমদের বলা সবচেয়ে প্রিয় উক্তিটিঃ
“আমি দেশের জন্য এমনভাবে কাজ করবো। যেন দেশের ইতিহাস লেখার সময় সবাই এদেশটাকেই খুঁজে পায়; কিন্তু আমাকে হারিয়ে ফেলে…
(সুত্রঃ অনলাইন )
২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: তাজউদ্দিন শেখ মুজিবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাই আওয়ামী লীগ তাকে বেশী উপরে উঠায় না। আর বঙ্গবন্ধুর হঠাৎ মৃত্যু না হলে শেখ মুজিবও আজ এত বড় নেতা হতে পারতেন না...
৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
তিনি ভালো মানুষ ছিলেন, ভালো আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন।
তাজুদ্দিন সাহেব রাজনীতি বুঝতেন না, তিনি ভুল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
আপনি অনেকে উনাকে রূপকথার মানুষ বানায়েছেন।
৪| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
"ভুট্টো বলেছিলঃ
“আলোচনা বৈঠকে মুজিবকে আমি ভয় পাই না। ইমোশনাল এপ্রোচে মুজিবকে কাবু করা যায়, কিন্তু তার পেছনে ফাইল বগলে চুপচাপ যে নটোরিয়াস লোকটি বসে থাকে তাঁকে কাবু করা শক্ত। দিস তাজউদ্দীন, আই টেল ইউ, হি উইল বি আওয়ার মেইন প্রবলেম।” "
-ভুট্টো ফাঁসীতে চড়ে নিজকে ইডিয়ট বলে প্রমাণ করেনি? ইডিয়টের কোট আপনার পছন্দ হয়েছে?
৫| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ইতিহাস কাউকে ভুলেনা যার যে স্থান ইতিহাস এক সময় তাকে তা যথাযোগ্যভাবেই দেয় । ইতিহাসের কালপরিক্রমা অনেক লম্বা ।
মরহুম তাজউদ্দীন বাংলার তাজ হয়েই থাকবেন স্বমহিমায় ।
ধন্যবাদ অতি মুল্যবান লিখাটির জন্য ।
৬| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
তাজুদ্দিন সাহেব ১৯৭২/৭৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ না নিয়ে পুরো জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, নিজের বেকুবত্বকে বড় করেছেন; উনি ভালো লোক ছিলেন, ঋণ নিলে কাজ হতো, চুরি হতো না।
এখন ঋণ নিয়েছে ২৯ বিলিয়ন ডলার, সম পরিমাণ ডলার চুরি হয়েছে।
৭| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪১
আততায়ী আলতাইয়ার বলেছেন: তিনি ভালো মানুষ ছিলেন, ভালো আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন।
তাজুদ্দিন সাহেব রাজনীতি বুঝতেন না, তিনি ভুল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
আপনি অনেকে উনাকে রূপকথার মানুষ বানায়েছেন
একমত।
আবার এটাও ঠিক অন্য কোন নেতা বঙ্গবন্ধুুকে ছাড়িয়ে যাক এটা বঙ্গবন্ধু নিজেও স্বয়ং চাইতেন না।
৮| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২৯
রাজীব বলেছেন: এরকম কিছু পাগল ছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। রাজনীতি বুঝা ভালো রাজনীতিক থাকলে দেশ কখনো স্বাধীন হতো না।
৯| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩০
রাজীব বলেছেন: আমাদের দুর্ভাগ্য এরকম কয়েকটি পাগল দেশপ্রেমিক এই জামানায় নেই
১০| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:৩৮
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: “একটা কষ্ট আমার মনে রয়েই গেল। যে মুজিব ভাইকে আমি তিল তিল করে আমার মনে ধারণ করেছিলাম, যাকে আমি কোনদিন নিজ থেকে আলাদা করে ভাবতে পারিনি, সেই মুজিব ভাই একটা দিনের জন্যও আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন না, তাজউদ্দীন, ১৯৭১-এ আমি যখন ছিলাম না তোমরা তখন কি করে কি করলে? একবারও বললেন না, তাজউদ্দীন তুমি বল, আমি ১৯৭১ এর কথা শুনব’।”
ইতিহাস কথা কয়......................কইবে
সেল্যুট বঙ্গতাজ
১১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:৩৯
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: লেখকে ধন্যবাদ
১২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
কোলড বলেছেন: Fact is he (Tajuddin) had to grovel before McNamara for aid at the end. Nice try creating myth though!
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: ১৯৭১ সালে যখন ভারতে বসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবং দেশের শাসনকার্য নিয়ে ব্যস্ত, তখনকার ঘটনা । On Time অফিসে আসা তাজউদ্দিন সাহেব এসে দেখলেন, তাঁর পিয়ন তখনো আসেনি । তিনি থিয়েটার রোডের পিয়নের সেই বাসায় চলে গেলেন । তাঁর অন্য এক কর্মচারী অফিসে এসে, তাঁকে না পেয়ে সেই পিয়নের বাসায় গেলেন । গিয়ে দেখেন, বাসায় আর কেউ নেই, শুধু প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেব জ্বরে আক্রান্ত পিয়নের মাথায় বদনা দিয়ে পানি ঢালছেন ।