নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচিন ফেরারি

আমার মধ্যে অনেকগুলা আমি বাস করে। এদের সবাইকে নিয়েই আমার আমিত্ব।

অচিন ফেরারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন পাগলে হলো মেলা (প্রথম পর্ব)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৩৮

ফাইনাল ইয়ারে এসে আমাদের মেজর সাবজেক্ট তিনভাগে ভাগ হয়ে যায়, ইলেকট্রনিক্স, পাওয়ার আর কমিউনিকেশন। ইলেকট্রিকালের একেক বিষয়ে ইন্টারেস্ট কিংবা ক্যারিয়ার অপরচুনিটি এসব ভেবেই সাধারণত প্রত্যেকে মেজর সাবজেক্ট বেছে নেয়। কিন্তু অনিন্দ্য আর দানিয়েলকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কমিউনিকেশন কেন নিলি, ওরা সরল মনে উত্তর দেয়ঃ



উচ্ছ্বাস কমিউনিকেশন নিলো, ধ্রুবও নিলো, তাই আমিও নিলাম।



কখনও কখনও আবার সামির-এর নামও নেয় ওরা।

আর আমি কেন কমিউনিকেশন নিলাম?? মানুষজন জিজ্ঞেস করলে আমি একটা আঁতেল-মার্কা হাসি দিয়ে মোবাইল টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন, ওয়েব-সার্ভার এইসব কঠিন শব্দে ভরপুর সুন্দর একটা উত্তর দেই। তবে আসল উত্তরটা এখানে না বলাই ভালো। কারণ সেটা মোটামুটি আমার একটা প্রেম-কাহিনীর ভেতরেই চলে আসবে সামনে কোনদিন।



যাইহোক, থার্ড ইয়ারে ওঠার পর থেকেই আমাদের ক্লাসটা খুব বাজেভাবে বদলে গেলো। আমাদের সাথে ঘুরেফিরে বেড়ানো অনেকেই হুট করে ক্যারিয়ার-পড়াশুনা এসব নিয়ে ভেবে ভেবে চুল-দাঁড়ি এবং আরো অনেক কিছু পাকানো শুরু করে দিলো। থিসিস করতে হয় ফোর্থ ইয়ারে ওঠার পর, কিন্তু তখন থেকেই তিনজনের গ্রুপ ভাগ হয়ে যেতে লাগলো ক্লাসের অভিজাত শ্রেণীর সিজি-ধারীদের মধ্যে।



আমি এইদিক দিয়ে আমাদের ক্লাসে নিম্ন-মধ্যবিত্ত বলা যায়। আর ফার্স্ট-ইয়ার থেকে আমার রেজাল্টের গ্রাফটা ক্রমেই নিচের দিকে নামছে এখন পর্যন্ত। আমি যে পড়াশুনা নিয়ে চূড়ান্ত মাত্রার ড্যাম কেয়ার সেটাও সবাই বুঝে গেছে এর মধ্যে।



কিসের থিসিস??

এরকম একটা ভাব নিয়ে কাটিয়ে দিলাম থার্ড ইয়ার-সেকেন্ড টার্মের অর্ধেক পর্যন্ত।

হুট করেই একসময় দেখলাম, ক্লাসের সবাই গ্রুপ ভাগ করে ফেলেছে, কিন্তু আমি কারও গ্রুপে নাই। এমনিতেই আমি সিঙ্গেল, আরো সিঙ্গেল লাগতে থাকলো নিজেকে।



বরাবরই ওমর সানীর ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ নীতিতে বিশ্বাসী আমি। তাই কোনও কথা বললাম না। যা হওয়ার হবে। ওদিকে গ্রুপ-হীন বেকার মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর আমি শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি।

আমাকে গ্রুপে না নিয়ে সবাই যে কতবড় ভুল করলো সেটা ভেবে প্রায়ই আফসোস হতো!!



থিসিস গ্রুপ জমা দেয়ার নোটিস-ও চলে এসেছে ততদিনে। এরপর একদম শেষের দিকে এসে হুট করে আমিও ঢুকে পড়লাম একটা গ্রুপে।

আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, লালন শাহ আমাদের গ্রুপটা নিয়েই লিখেছিলেন, তিন পাগলে হলো মেলা...

হয়েছেও অনেকটা তাই। এমআইএসটির ইতিহাসে আমাদের মতন গ্রুপ হয়তো ছিলো অতীতে, কিন্তু আমাদের ব্যাচে ফাঁকিবাজির দিক থেকে নিঃসন্দেহে আমাদের গ্রুপের চেয়ে কেউ একবিন্দু উপরে কেউ নাই।



আমি, অনিন্দ্য, দানিয়েল- শেষ পর্যন্ত এই হলো আমাদের তিন পাগলের মেলা, থ্রি মাস্কেটিয়ার্স।





সম্প্রতি বিশাল এক ভুঁড়ি গড়ে তুললেও অনিন্দ্য ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না। ওর চোখেমুখে একটা মাপা কর্পোরেট ভাব, মাথার ভিতরে ব্যবসায়ী টাইপের চিন্তা। হাল-ফ্যাশনের আর্কিটেকচারাল মাপের চুল-দাঁড়ি। কিন্তু এইসব বলে অনিন্দ্যকে কোনওভাবেই ছোট করা উচিত না।



এই ছেলেটার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো, ছেলেটা প্রেমিক। ছেলেটার বুক-পেট ভর্তি উগলানো প্রেম।

পরীক্ষার খাতার পৃষ্ঠায় ছেলেটা ভীষণ উদাসীন হলেও প্রেমপত্রে সে হুমায়ূন আহমেদের সমপর্যায়ের বলেই আমার ধারণা। তাই আন্তঃডিপার্টমেন্ট-প্রেমে অনিন্দ্য আহমেদ এমআইএসটিতে আজ এক পরিচিত মুখ।



আমি কিংবা দানিয়েল যখন অর্ধেক ক্লাস করে শুকনা মুখে হেঁটে ওসমানি হল কিংবা বাসার রাস্তা ধরি, তখন অনিন্দ্য গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে ফিরতে থাকে। আমরা যখন বিশ টাকায় দুপুরের খাওয়া শেষ করি, অনিন্দ্য বিশ টাকার টিপস দিয়ে কোনও এক রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়।

পাশ দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের বাতাস লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে দয়া করে অবশ্য বলে, তোকে নামায় দিবো?

আর আমি আমার উত্তপ্ত দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলিঃ না থাক, লাগবে না।





এইবার আসি দানিয়েলের কথায়। ওকে আদর করে আমি আর অনিন্দ্য ‘ড্যানিয়েল’ বলেই ডাকি। হালকা পাতলা হলেও কিন্তু এই ছেলেটার আছে পেটানো শরীর; যা প্রায়ই ক্লাসের নারীসমাজে আলোড়ন তোলে।

থাক সে কথা। তবে আমি প্রথম থেকেই শুনে আসছি, ছেলেটার নাকি অস্থির বেসিক। সেই দিক দিয়ে ওকে গ্রুপে পাওয়া অবশ্যই ভালো একটা ব্যাপার। তবে সমস্যা হলো, যতই বেসিক থাকুক না কেন; বেসিকালি ওর মত অলস মানুষ দুনিয়াতে খুব বেশি নাই। আর হ্যাঁ, যেই ব্যাপারটা না বললেই না, সেটা হলোঃ দানিয়েলের গল্প বানানোর দক্ষতা আর নিপুণ অভিনয়।

কারণে-অকারণে, সময়-অসময়ে চোখের পাতি না ফেলে ছেলেটা অকপটে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে পারে। যখন যেখানে দরকার, মুখ-করুণ করে একটা কাহিনী তৈরি করে ফেলতে পারে। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কিংবা অ্যাক্টিং বলতে যা বুঝি, দানিয়েল সেটাকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।



- তুই কই?

- আমি তো হলের নিচে।

- আমরাও হলের নিচে, তোরে দেখি না ক্যান?

- আররে, আমি লিফটের বাটন চিপে দাঁড়ায় আছি। বালের লিফটে আসে না কেন জানি। আর এক মিনিট দাঁড়া।




প্রিয় পাঠক, বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, দানিয়েল তখন ওর রুমে বসে ভাবছিল, শার্টটা গায়ে দিয়ে টয়লেটে যাবে, নাকি টয়লেট সেরে এসে শার্টটা পড়বে।

তবে এখন পর্যন্ত ব্যাপারটাকে আমরা ভালোভাবেই নিয়েছি। কারণ শুধুমাত্র চোয়ালের জোরেই এখন পর্যন্ত আমাদের ‘তথাকথিত’ থিসিস চলছে। আর চোয়ালের সর্বাধিক প্রয়োগে ওর চেয়ে ভালো কেউ হতে পারে বলে আমার মনে হয় না



(প্রথম পর্ব এখানেই শেষ, দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক Click This Link)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.