![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব দ্রুতই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে ঐ এলাকা। আমরা যেদিকটায় বসে অর্থহীন গাল-গল্প করতাম, এলোমেলো পায়ে ধূলাবালি উড়িয়ে হাঁটতাম; ওদিকটায় হয়তো দালানকোঠা উঠে যাবে কয়দিনের মধ্যেই।
আমাদের মুহূর্তগুলো যেখানে চাপা পড়ে গেছে, ওরকম কোনও জায়গাতেই হয়তো উপরের দিকে শরীর বাড়াবে অট্টালিকা। কনক্রিটের নিচে আমার ভূ-গর্ভস্থ স্বপ্ন আর মুহূর্তগুলো ওখানেই আছে নিশ্চয়ই।
হয়তো এলোমেলো চুলের আমার মতন কেউ বাস করবে সেই অট্টালিকায়। ভীষণ একরোখা কোনও একটা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে অবাস্তব প্ল্যান আর অমীমাংসিত তর্ক করবে ছেলেটা। আর ছেলেটার যখন খুব অসহায় লাগবে, খুব কষ্ট হবে, খুব দেখতে ইচ্ছা করবে ঐ অবুঝ মেয়েটাকে, সে-ও হয়তো ইথার তরঙ্গে আঙুলের স্পর্শে ভাসিয়ে দিবে কয়েকটা শব্দ।
আই হেইট ইউ। আই হেইট ইউ।
ভার্সিটিতে আমার ফার্স্ট ইয়ারের ব্লু-মুন পাকাপাকিভাবেই একটা অনিন্দ্যসুন্দর মুখ খোদাই করে দিয়েছে আমার মধ্যে।
ঐ সময়টা শরৎকাল ছিল। আমাদের ভার্সিটির পেছনে একটা জংলা জায়গা আছে। ঝোপঝাড় পার হয়ে কিছুদূর হাঁটলেই বিরাট ফাঁকা জায়গা, তার ওদিকে কাশবন। আমরা তিন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম ওখানে। আর ওদিকে আমার শরতের নীলাকাশ জুড়ে সাইরাস মেঘ হয়ে তখন কেবল একজনই।
হাঁটলাম অনেকক্ষণ কাশবনের পাশ দিয়ে। হুটহাট ছন্নছাড়া বাতাসে কাশফুলের দুয়েক খণ্ড এলোচুল উড়ে এসে শরীর স্পর্শ করে গেলো কয়েকবার।
কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় জেগে ওঠা এই ফুলটা; ঐ মুহূর্তে আমার কাছে অমূল্য হয়ে গেলো কিভাবে যেন। গ্ল্যাডিওলাস, লিলি কিংবা রজনীগন্ধার নয়, কাশফুলের একটা তোড়া তৈরি করতে হবে আমাকে; যে করেই হোক।
কাশফুল ছিঁড়তে হয়েছিল খুব সাবধানে। নাহলে ছোট ছোট হয়ে উড়ে যায় পুরোটাই। গোড়াটা ধরে আস্তে করে ডালসহ ভেঙে ফেলতে হয়। এভাবে গোটা পাঁচেক কাশফুল দিয়ে ছোট্ট একটা তোড়া বানালাম। বক্ষপিঞ্জরে ক্রমাগত ভূমিকম্পের সেই জাদুকরী সময়টাতে নিজ হাতে শরতের মেঘের একটা তোড়া বানিয়ে ফেললাম ঐ মেয়েটার জন্য। বৃষ্টি হবে না এই মেঘে কখনও, তবুও খুব যত্ন করেই তৈরি করলাম।
মেয়েদের হল পর্যন্ত আসতে আসতে বেশ কিছু অংশ হারিয়ে গেলো ক্ষুধার্ত বাতাসে। শেষ পর্যন্ত যখন আমি ফুল হাতে নিচে দাঁড়িয়ে ওকে ফোন করলাম, আমি তখন মাতাল প্রেমিক বায়রন, কিংবা ভালোবাসার সূর্যসেন!!
ও নামতে পারে নি ঐদিন হল থেকে কি এক কারণে। কিন্তু কাশফুলের কথা ও জানতো না। এমনকি এরপর ওকে আর বলাই হয় নি কখনও ঐ ব্যর্থ তোড়ার কথা। তারপর... বৃষ্টিহীন ঐ মেঘমালা আকাশে ভাসতে না পারার কষ্টে বাতাসে মিলিয়ে গেলো একসময়। ফিমেইল উইং এর সামনের রাস্তায় আমিই রেখে এসেছিলাম আমার যত্ন করে বানানো সারপ্রাইজটা।
কারণ, কিছু জিনিস কখনও ফিরিয়ে নেয়া যায় না।
হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি তিন বছর পরপর ফিরে আসে এই ব্লু-মুন। তাই এই বছরের জুলাই মাসের একত্রিশ তারিখেও হয়তো আমাকে খুব কষ্টের একটা চন্দ্রপূর্তি করতে হবে। গভীর রাতে ফোন হাতে নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবো অনেকক্ষণ। মেসেজ টাইপ করে মুছে ফেলবো কিংবা নতুন করে লিখবো।
সেন্ড অপশনের উপর আঙ্গুল রেখে ওর সুন্দর চোখের ভাষা অনুমান করার চেষ্টা করব লম্বা সময় ধরে। প্রচণ্ড রহস্যময়, নীল রঙের জাদুকরী একটা চাঁদকে সাক্ষী রেখে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগল।