নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পহেলা বৈশাখে আমার কোন স্মৃতি নাই। আমার জন্ম পৈত্রিক নিবাসে একটি জেলা শহরে। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকায় ওঠা। ঢাকায় আসার আগে পহেলা বৈশাখে আমরা 'হালখাতা' পালন করতাম। আমাদের জেলা শহরে চৈত্রের শেষ দিন থেকেই তোড়জোড় চলত 'হালখাতা' এর জন্য। নতুন হিসেবের খাতা আনা হত। পুরোনো খাতাগুলোর হিসেব সম্পন্ন করা হত। খরিদদারদের বাড়িতে আমন্ত্রন কার্ড দেয়া হত।
ভোরবেলা কর্মচারীরা নতুন জামা পড়ে সকাল সকাল দোকানে আসত। আগরবাতি জ্বলিয়ে গোলাপজল ছিটাতো। একটা মোহনীয় ঘ্রাণে দোকানটা ভরে থাকত। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হুজুর আসত। সমস্ত দোকানিরা একসাথ হত। কার দোকানে আগে মিলাদ হবে তা নিয়ে শালা-পরামর্শ হত। প্রথম যার দোকানে মিলাদ হবে সবাই তার দোকানে যেত। হুজুর সুমিষ্ট কন্ঠে মিলাদ পড়াতেন। তারপর দোয়া করতেন। তখনও আবার নতুন করে আগরবাতি জ্বালানো হত আর উপস্থিত সকলের গায়ে গোলাপজল ছিটিয়ে দেয়া হত। মিলাদ শেষে সবাই তাবারকের প্যাকেট নিয়ে পরবর্তী দোকানে যেত। কর্মচারীদের আনন্দের শেষ থাকত না। বাকির টাকা পরিশোধের সময় তাদেরও কিছু বকশিস দিত।
সারাদিনের জন্য কিছু প্যাকেট রেখে দেয়া হত। খরিদদাররা আসত, হিসেব-নিকেশ পরিশোধ শেষে তাবারক নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিত।সারাদিন মনোগ্রাহী ব্যস্ততায় কাটত কর্মচারীদের। বাসায় সুন্দর রান্না হত। ভরপেট খাওয়া দাওয়া হত। দিন শেষে কর্মচারীরা তাদের পাওয়া বকশিস ভাগ করে পরিকল্পনা করত। কেউ কেউ বরিশাল যাবার চিন্তা করত সিনেমা দেখতে। কেউ বলত ঝালকাঠীতেই দেখবে। মান্নার নতুন ছবি আইছে। সন্ধ্যের পরে তারা কোথায় যে উধাও হত কোন খোঁজ থাকত না।
বিকেলের দিকে বন্ধুর বাবার পত্রিকার দোকানে যেতাম পত্রিকা পড়তে। 'হালখাতার' দিন তাবারক পেতাম। তারপর প্রথম আলো, নয়াদগিন্ত সহ সবগুলো পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে দেখতাম। রমনার বটমূল, চারুকলা, মঙ্গল শোভা যাত্রায় হাতির পিঠে বাচ্চা বসে আছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের বৈশাখী সাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। কলামগুলো পড়তাম। বৈশাখ উপলক্ষ্যে সাহিত্য পাতায় নতুন গল্প দিত। সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা দেখতাম।
২০১৩ তে প্রথম ঢাকায় আসা। পহেলা বৈশাখে রমনায় যাবার উত্তেজনায় ঘুমোতে পারিনি। কিন্তু যাওয়া হয়নি। সারাদিন মন খারাপ করে হোস্টেলে শুয়ে ছিলাম। আলিমের দুই বছরে আর যাওয়া হয়নি। ২০১৬ তে কবি নজরুলে ভর্তি হলাম। আলিমে থাকতে একাবার আমি আরেক বন্ধু মিলে রমনায় গেছিলাম। যেয়ে দেখি কি সুন্দর প্রকৃতির আলয়। মুগ্ধ হয়ে দু'জন লেকের পার দিয়ে হাটি । কিছুটা সামনে এগুলে অনেক প্রাতচারীদের দেখতে পাই। একটা গাছের গোড়ায় অনেকজন প্রবীন, মধ্যবয়স্ক মানুষের দেখা পাই। গাছের ডালে একটি নেমপ্লেট দেখতে পাই। লেখা "ক্ষণিকের আলয়"। আমরা গাছের একটু সামনে লেকের পাড়ে থাকা একটি গাছের শেকড়ে বসি। তখন একটি কোকিল কুহু কুহু স্বরে ডেকে ওঠে। আমরা মুগ্ধ হয়ে ডালে ডালে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলাম কোকিলটিকে দেখার জন্যে। আমরা জানতে পারি ফাল্গুনের প্রথম দিন। সেই থেকে প্রতি বছর আমি পহেলা ফাল্গুনে রমনায় যাই।
কলেজে ভর্তি হবার পর প্রথম বারের মত পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি একটি শুভ্র আনন্দ নিয়ে। সকালে উঠে রমনায় যাই ততক্ষণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ। রমনায় তিল পরিমান ঠাই নাই। পরে ব্যর্থ হয়ে চারুকলায় যাই। সুন্দর আল্পনা আর কাগজ কেটে বানানো প্রতিমূর্তি গুলো দেখি। হরিণ ছানার মত সারাদিন ছুটোছুটি করে কাটাই। রাতে মেসে এসে ঘুম যাই। এরপর থেকে ঢাকার এক ঘেয়েমিটা জেঁকে বসে। পরের বৈশাখ গুলোতে বন্ধুবান্ধব একসাথে বিকেলে বের হই। শাড়ি পড়া সবথেকে সুন্দর মেয়েটিকে খুঁজি বাহাদুর শাহ পার্কের আনাচে কানাচে। সমস্ত লক্ষীবাজার জুড়ে শাড়ি আর পাঞ্জাবীর ঢল। আমরা সিগারেট খাই আর মেয়দের দেখি। কোন মেয়েটাকে কতটা সুন্দর লাগল তা নিয়ে মজে থাকি। আর কিছুদিন পরে সেটাও থাকবে না। তখন হয়ত অফিসের একদিনের ছুটি পেয়ে দেদারসে ঘুমানো হবে।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:০১
অধীতি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। সবার জীবনেই বোধয় বৈশাখটা এভাবে আসে।
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
ব্যবসায়ী পরিবারের লোক?
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১৯
অধীতি বলেছেন: এখন আর নেই। ভাগাভাগি হয়ে গেছে।
৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি যে-বয়সে বৈশাখ উদযাপনের কথা বললেন, তখন অনেকখানিই নগরায়নের ছোঁয়া চলে এসেছে। ১লা বৈশাখ উদযাপন মূলত গ্রামীণ ঐতিহ্য। হালখাতা হলো প্রধান বিষয়, যা আপনি সুন্দর ভাবে লিখেছেন। বর্তমানে শহরে শহরে যেভাবে বৈশাখ উদযাপন করা হয়, তা গ্রামীণ বৈশাখ থেকে অনেক আলাদা ও প্রায় সম্পর্কহীন।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২০
অধীতি বলেছেন: হ্যাঁ সেটাই। বর্তমানেরটার শুধু পুরোনো জিনিসকে স্বরণ করা এরকম মনে হয়।
৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৫৩
শায়মা বলেছেন: আমি খুব ছোট থেকেই বৈশাখী অনুষ্ঠান করেছি শিল্পকলা বা নানা স্থানে কিন্তু এখন যেই বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠান চারিদিকে রমরমা ঝমঝমা তেমনটা আগে ছিলো না ......
যত দিন এগিয়েছে তত এই অনুষঠানগুলির চাকচিক্য বেড়ে চলেছে....
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২৭
অধীতি বলেছেন: আপনি ভাগ্যবতী। আমি পুরোনো নাটকে এর কিছু রূপ দেখেছি। অপিকরিমের "ছায়াচোখ জলছাপ" নাটকটা প্রতি বৈশাখেই দেখি।পুরোনো আমেজগুলো ভাল লাগে।
৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর করে লিখেছেন। ধন্যবাদ।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২৭
অধীতি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩০
ওমেরা বলেছেন: বৈশাখ নিয়ে আপনার স্মৃতিকথা খুব ভালো লাগলো ।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২৮
অধীতি বলেছেন: ধন্যবাদ। সবার জীবনের স্মৃতিগুলো সুখের হোক।
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:২৫
আমি রানা বলেছেন: আমার বৈশাখ নিয়ে তেমন কোন সৃত্মি নেই। উৎসবের দিন গুলো কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকতাম এতো বছর।
২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৩১
অধীতি বলেছেন: বয়স হবার পরে উৎসব বলে আর কিছু থাকে বলে মনে হয় না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বৈশাখের স্মৃতি পড়তে গিয়ে অবচেতন মনে নিজের বৈশাখের স্মৃতি চোখে ভেসে উঠলো।