নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভেসে আসি সমুদ্রের ঢেউয়ে,বালুচর চুষে নেয় আমারে।

অধীতি

আপনারেই চিনার তরে,পরিচয় দেই কি করে??

অধীতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

যবনিকা

২৮ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:০২

ড্রেন থেকে ইঁদুরটা বেয়ে উপরে উঠে। কয়েকটা চিকা ভাগারের থেকে খাচ্ছে। ভিজে চুপসে হয়ে আছে ও। ধূসর বিড়ালটার হাত থেকে কোনমতে বেঁচে ফিরেছে। যদিও থাবার আঁচড় থেকে বাঁচতে পারেনি। চামচিকার উড়াউড়ি আর চিকার কারনে এ যাত্রা বেঁচে ফিরেছে। পেছনটা কেটে রক্ত ঝড়ছে। বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি উপচে ওঠায় প্রবল স্রোতে ভেসে যায়নি। বাসা পানিতে ডুবে গেছে। চিকাগুলোর ভাব তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না। বিড়ালটাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। ঠান্ডা আর জ্বালাপোড়ায় বিপর্যস্ত। ভাবছে পানির পাইপ বেয়ে বুড়ো লোকটার রুমে যাবে। ওটা নিরাপদ আশ্রয়। বুড়োর ছেড়া অব্যবহৃত কম্বলটা আশ্রয়ের একমাত্র ভরসা। উপরে উঠে আসে ও। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হচ্ছে এখনো। বুড়ো বসে আছে দরজায় চেয়ার পেতে। সিগারেট খেতে খেতে বৃষ্টি দেখছে। জানালার ফাঁক গলে যেতে হবে। বিড়ালটা ঘুমাচ্ছে ট্যাংকির নীচে। ঘুম সুবিধার মনে হচ্ছে না। বৃষ্টিতে আসবে না এটাই ভরসা। সন্তর্পণে খানিক্ষন দেখে নেয় আশপাশ। বুড়োর চোখ ফাঁকি দিয়ে জানালার ফাঁক গলে চলে আসে কম্বলের ভেতর।
মশরুরর সাহেব একজন অধ্যাপক। বিপত্নীক হবার পর থেকে চিলেকোঠায় থাকেন। ষাটোর্ধ প্রবীণ মানুষ। কলেজের চত্ত্বরটা দেখা যায় জানালা থেকে। কলেজ কাছে হবার সুবাদে থাকা। ছেলেমেয়ে সব বিদেশে স্থায়ী হয়েছে। দেশে যারা আছে তাদের সাথে যোগাযোগ তেমন আর নেই। চাকরির সুবাদে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়। কলেজ শেষে জানালা অথবা দরজার সামনে চেয়ার পেতে বসে থাকেন আনমনে। কখনো একটা বই থাকে সঙ্গী হিসেবে। সকালের দিকে একজন বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়। সারাদিন কাটে কলেজ , লেখালেখি আর শুন্য বিকেলকে সঙ্গী করে।



লোকটাকে ইঁদুরটার ভালই মনে হয়। সারাক্ষণ চুপকরে বসে থাকেন। মাঝে কলম মেঝেতে পড়ে যাবার শব্দ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই। সকালে হালকা নাস্তা করে বের হন কলেজে। আসেন ভর দুপুরে। ইদানিং বের হচ্ছেন না। সারাক্ষণ বাসায় পড়ে থাকেন। মাঝে মাঝে মোবাইলে পড়ান। সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতা হাতে বের হন অধ্যাপক। কলেজ বন্ধ লক - ডাউনে। করোনায় প্রবীনদের ঝুঁকি প্রবল। মাঠের প্রান্তে এসে দাড়ান। চারিদিক সুনসান নীরবতা। বই হাতে কারো কোলাহল নেই। পূবের ক্যান্টিন লাগোয়া ভবনটি ঠায় দাড়িয়ে আছে। একগুচ্ছ বৃষ্টির শব্দ সবুজ ঘাস থেকে উঠে আসছে। জোহরের আজান হচ্ছে। ভাঙ্গা গলায় মুয়াজ্জিনের বেসুরো আজান যেন হৃদয়ে কিসের আহ্বান জড়ো করছে। ঘাসগুলো দুলে উঠছে বৃষ্টির ফোটার আছড়ে পড়ার সঙ্গে। ঘাসের সবুজাভ মুগ্ধতায় ডুবে যান। তার এই মুহূর্তে ঘাস হতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঐতো দেখা যাচ্ছে তার ডিপার্টমেন্টের সাইনবোর্ড। নীলের ওপর সাদা তুলির আচড়ে মোহ ছড়াচ্ছে নামটি। মনে হচ্ছে ওয়ার্ডসওয়ার্থ বৃষ্টি দেখছে জানালা দিয়ে। জীবনানন্দ লিখছে বারান্দায়। নিবিড় ছায়াঘন কৃষ্ণচুড়ার পাদদেশ। নিজের কলেজটিকে আজ বড় অচেনা মনে হচ্ছে। চোখ বুঝে লম্বা শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করেন । শ্বাস প্রলম্বিত হচ্ছে না । কৃষ্ণচূড়া থেকে একটি আধভেজা কাক উড়ে পশ্চিমে বাদামগাছ লাগোয়া অধ্যাপকের জানালায় গিয়ে বসে। ইঁদুরটার ক্ষতটা বেড়েই চলছে। সাথে যন্ত্রনাও। ক্ষুধা তো আর ব্যাথা মানেনা। পাইপ বেয়ে নীচে নেমে আসে। কিঞ্চিৎ বিস্কিট আর রুটির টুকরো সাবার করে সাবধানী চোখে ফিরে আসে রুমে। কাশিটা বাড়ার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ হয়ে আসছে। মেঘ ঘনিয়ে জমাট কালো অন্ধকার। ঠান্ডা বাতাস বইছে। মেঘের ফাঁক গলে আসছে ধ্রুব আলো। চেয়ারটা নিয়ে দরজায় বসেন । এই প্রকৃতি পরাবস্তব শুন্যতার সৃষ্টি করেছে । প্রশ্বাস আরো ক্ষীণ হয়ে আসছে। মেঘের দিকে তাকান। ধ্রুব আলো গলে নেমে আসছে মুখরিত চত্ত্বরে। তিনি দাড়িয়ে আছেন ব্লাকবোর্ডের সামনে। টেবিলটার দিকে তাকান। পত্রিকার শিরোনামঃ " মৃত বেড়ে একশত উনিশ। " লেখাটা ঝাপসা হয়ে আসে।

অনেক্ষণ মোবাইলে রিং বেজে চলছে। বুড়োটা বসেই আছে টেবিলে মাথা রেখে। বাইরে বৃষ্টি কমেছে মাত্র। পাইপ বেয়ে ভয়ানক সতর্কতায় নেমে আসে ও। জনমানবহীন ভুতুরে শহর। কোন মানুষ নেই। দোকানপাট বন্ধ। ক্ষুধা ব্যাথায় কাতর অবস্থা। কলেজের মাঠে বাদামের সন্ধানে ছুটে। মেঘ ফরকে আবার বৃষ্টি নামে। লাল পলেস্তারা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে ইঁদুরটি। পলেস্তারা খসে পড়ে। পলেস্তারা খসে পড়ার শব্দে শালিকেরা ছুটে পালাতে থাকে বৃষ্টির শহরে।

নবদ্বীপ বসাক লেন,
২৯ আষাঢ়, ১৪২৯

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখায় তো গভীরতা আছে। ছোট লেখা। কিন্তু শব্দ চয়ন উন্নত। যা ব্লগে সচারচর দেখা যায় না।

আপনার পোষ্ট পড়ে একটা কবিতার লাইন মাথায় এসেছে।
''সুন্দর সময়, দুষ্ট ইঁদুরেরা চিবিয়ে খাচ্ছে।''

বলেন তো লাইনটা কার?

২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:৪৬

অধীতি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্য।
কবিতার লাইনটা কার তা জানা নেই, হুমায়ুন আজাদ অথবা রফিক আজাদের হতে পারে।
পঙক্তিটি সুন্দর এবং অর্থবহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.