নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অজ্ঞ কিন্তু আমি শিক্ষিত হতে চাই না,আমি মানুষ হতে চাই।

অজ্ঞ মানব।

আমি এক অজ্ঞ মানব,অবাস্তব সুখস্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি।

অজ্ঞ মানব। › বিস্তারিত পোস্টঃ

একাকীত্ব

১৪ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৪৩

ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি সকাল ৯ টা ১০ বাজে। হাত বাড়িয়ে ঘড়ির অ্যালার্ম বন্ধ করলাম । শুনতে পেলাম আমার মার কণ্ঠ। মা বলে উঠে "কীরে
বাবা ঘুম থেকে উঠ অফিসের জন্য যে বড্ড দেড়ি হয়ে যাচ্ছে"। আমার মা যেন এখনও মনে করে আমি সেই ছোট আমিটাই আছি। হাজার হোক মা বলে কথা।

চোখ মুছতে মুছতে বিছানা থেকে নেমে চেয়ারের উপর রাখা ঘামছাটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। দাড়ি গোঁফ বেশ বড় হয়ে গেছে। মা কেন জানি দাড়ি গোঁফ বড় রাখা পছন্দ করে না। মা বলে "দাড়ি গোঁফ বড় বড় রাখিস কেন বাবা ওসবে তোকে ভালো দেখায় না। হাঁয় আল্লাহ। আমার ছেলেকে কবে জানি পুলিশ জামায়েত ভেবে ধরে নিয়ে যায়"। শেভ করতে করতে নিজের অজান্তে হেঁসে ফেলি।

মার কণ্ঠ আবার শোনা গেলো "কীরে হলো তোর"? গোসল শেষে বেরিয়ে এলাম। আলমারি খুলে একটা ইস্ত্রি করা শার্ট এবং একটা প্যান্ট নামালাম। মা সে ছোট বেলায় কাপড় ইস্ত্রি করা শিখিয়ে ছিল বোধ করি তারপর থেকে আর কখনো মাকে আমার কাপড় ইস্ত্রি করে দিতে হয়নি।

সকালের নাস্তায় রুটি আর ডিম আমার খুব পচ্ছন্দ । ডিম নেই বলে আজ রুটি আর টেবিলে রাখা জেলি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। মা জানলে হয়তো বা ডিমের যোগারটা ঠিক করে রাখতো। মা আবার বলে "সবশেষ করেই উঠবি তার আগে নয়" ।

মার এটা পুরনো অভ্যাস খাবার শেষ না করে কিছুতে ছাড় দিবে না। তাই কথা মতো পুরো খাবারটা খেয়ে নিলাম। খাবার শেষ করে হাত টা ধুয়ে নিলাম তারপর টেবিলের উপর রাখা আমার অফিস ব্যাগটা কাধে নিয়ে পা বাড়ায় সদর দরজার দিকে। বের হবার আগে শেষবারের মতো শুনতে পাই মার কণ্ঠ " বাবা দুপুরে ভালো করে খেয়ে নিবি কিন্তু আর জলদি চলে আসিস বাবা একা থাকতে বড্ড একঘেয়ামি লাগে আমার আর হ্যাঁ মনে করে আমার জন্য ফুল নিয়ে আসিস বাবা"। আমি দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়।

প্রতিদিন এর মতো আমি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রইলাম বাস এর জন্য এবং যথারীতি বাস আসলে আমি বাসে উঠে পড়ি। বাসে উঠে জানালার পাশের সিটে
বসে পড়ি আর জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি। বাইরে দিয়ে আমি দেখতে পাই এক ব্যস্তময় জীবন। সবাই সবার কাজের উদ্দেশে ছুটে চলছে। বাস থামলে
নেমে পড়ি ভাড়া মিটিয়ে। অফিসে পৌঁছে গিয়েছি সঠিক সময়ে। অফিসে প্রবেশ করতেই সদর দরজার সামনে থাকা সিকিউরিটি গার্ড আমাকে সালাম জানায়।

কাজ করতে করতে চোখ যায় মার দেওয়া হাত ঘড়ির দিকে। বেলা ৪ টা ৩০ বাজে। না আজ আর ভালো লাগছে না ব্যাগ টা কাঁধে ঝুলিয়ে বের হয়ে এলাম অফিস থেকে। অফিস থেকে বের হয়ে আর বাস এর জন্য অপেক্ষা করলাম না। রাস্তার পাশ ধরে আমি হাঁটছি আর খেয়াল করছিলাম ধীরে ধীরে সূর্যের অস্ত যাওয়া। তখনি সামনে একটা ফুলের দোকান দেখলাম। দোকানদার ফুলে অল্প করে পানি ছিটাছিল। আমার মনে পরে যায় মা ফুল নিয়ে যেতে বলেছিল।

আমি গিয়ে দোকানদার কে বলি "ও ভাই রজনীগন্ধা ফুল কত করে"। দোকানদার আমাকে বলে " প্রতি পিস দশ টাকা"। আমি মানিব্যাগ থেকে ৫০ টাকা বের করে দোকানদারকে দিলাম এবং পাঁচ পিস রজনীগন্ধা ফুল নিলাম। রজনীগন্ধা ফুল আমার মার খুব পচ্ছন্দের ফুল। ছোট থাকতে যখন আমি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যেতাম সেখানে রজনীগন্ধা ফুল দিলে আমি বাসায় এসে মাকে দিতাম। আর আমার মাও সেই রজনীগন্ধা ফুল খুব যত্ন সহকারে ফুলদানিতে রাখতো।

হাঁটতে হাঁটতে একসময় শুনলাম মাগরিবের আযান। আযান ভেসে আসছে গোরস্থান সংলগ্ন মসজিদ থেকে। জুতা খুলে মসজিদে ঢুকলাম এবং অজু করে জামাতের সাথে মাগরিব নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষ হলে বেরিয়ে আসি মসজিদ থেকে। জুতা পড়ে নিলাম। এসে দাঁড়ালাম গোরস্থানের ফোটকের সামনে। ভেতরে ঢুকার সময় দেখা হলো ইব্রাহিম চাচার সাথে। তাকে দেখে সালাম দিলাম তিনিও আমার সালাম এর উত্তর দিলেন।তিনি হলেন গোরস্থানের প্রহরী।

তারপর ফুল হাতে করে খালি পায়ে কয়েক কদম সামনে চলে এলাম। থামলাম একটা কবর এর সামনে।সালাম দিয়ে ফুল টা রাখলাম কবর এর উপর। কিছুক্ষণ দু হাত তুলে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলাম। তারপর বসে পরলাম কবরটির সামনে।

"মা ও মা আমি এসেছি মা তোমার আর একঘেয়ামি লাগবেনা না আমি আছি তোমার জন্য মা। দেখো মা আমি ফুল নিয়ে এসেছি মা তোমার প্রিয় ফুল। মা কথা বলো মা। তোমার ছেলে আসছে মা কথা বলো"। কান্তে কান্তে আমি মাথা রাখলাম আমার মার কবরের উপর।

পিছন থেকে একটা স্পর্শ অনুভব করি। ফিরে দেখি ইব্রাহিম চাচা। তিনি আমাকে বলেন "বাপজান অম্নে কান্তে হয় না এতে নাকি কবরবাসী গো কষ্ট হয়। তোমার মা ওপারে নিশ্চয়ই ভালো আসে তুমি খালি তোমার মার জন্য নামাজ পইড়া দুআ করবা আল্লাহর কাছে"।এই বলে তিনি আমাকে টেনে তুলেন এবং আমিও চোখ মুছে উঠে পড়ি। তারপর আমরা গোরস্থানের সদর দরজার দিকে হাঁটা শুরু করি।

পিছন থেকে মার কণ্ঠ শুনলাম" ভালো থাকিস বাবা আর আমাকে দেখতে আসিস"।

সত্যি মা তুমি ছাড়া যে আমি আজ বড্ড অসহায়। ওপারে ভালো থেকো মা। ওপারে ভালো থেকো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:১৯

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: এটা কি আপনার গল্প..?? নাকি এমনিই লিখা গল্প...?

আপনার হোক বা না হোক.. গল্পটা সত্যিই...

মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে গেল...

পৃথিবীর সকম মা বাবা যেন ভাল থাকে সেই দোয়া করি....

ভাইয়া, আপনাকে দুইটা বইয়ের সাজেস্ট করব.. পড়িয়েন.. আর অন্যদেরকেও পড়তে দিয়েন...

বই দুটি হল,


মায়ের চিঠি- পরিতোষ বাড়ৈ

মা মা মা এবং বাবা - আরিফ আজাদা (বইয়ের সম্পাদক)

১৪ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১১

অজ্ঞ মানব। বলেছেন: ঠিক আছে বই দুটি আমি পড়বো। আর গল্পটি এমনি লিখলেও এক সময়ের কথা ভেবে লিখেছি।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৩:২৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ইব্রাহীম চাচা যথার্থ বলেছেন।

১৫ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:২৩

অজ্ঞ মানব। বলেছেন: আপনার কথার সাথে আমিও একমত।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: মনে করো, একদিন আমি কোথাও নেই!
পরে থাকবে আমার টুথ ব্রাশ, জামা জুতো সব
শুধু আমি কোথাও নেই।

১৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৫১

অজ্ঞ মানব। বলেছেন: মানুষ জন্ম নিলে মৃত্যু তার জন্য অনিবার্য। কিন্তু তবুও আমারা প্রিয় মানুষকে হারানোর পর বেঁচে থাকি তার স্মৃতি নিয়ে। আর এটাই সত্য এটাই বাস্তব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.