নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ক

অহরিত

কিছু বলার নেই।

অহরিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামহীন - ২

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫

"কাল যাবি একবার ওর বাসায়?"
আমি মহিমের দিকে তাকিয়ে থাকি। কিছু বুঝতে পারছিনা কি বলবো।রাগ হচ্ছে, খুব রাগ। কিন্তু রাগ ঝাড়ার মানুষ নেই। মহিম আবার জিজ্ঞাসা করে, "হয়তো কোন সমস্যা ছিলো"।

আমি মাথা নাড়ি। আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বলি, "হয়তো ছিলো।"

ওপাশের ঘর থেকে ফাহিম চিৎকার করে বললো, "শালার পুত আগেই বলছিলাম বুইঝ্যা শুইন্যা প্রেম কর। ওর বাপ হইলো সিআইপি। মন্ত্রীগো লগে উঠবস করে। মাইয়া মনে হয় ধরা খাইছে। একটু পর তোরে তো থানায় নিবোই, আমাদেরও নিবো। বোকচোদ আজকে তোর জন্য... তুই শালা একটা ছাগলের বাচ্চা। "

আমি কিছু বলিনা। আফিয়ার সাথে তো সকালেও কথা হলো। বললো সব ঠিক আছে। বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। দুপুর ২টায় ২৭ নম্বর এ থাকবে, স্টার কাবাবের ঠিক বিপরীতের রাস্তায়। আমি ছিলাম ঠিক ১২টা থেকে। নাহ আরোও আগে থেকে হয়তো। ওর দেয়া ফিরোজা রঙের পাঞ্জাবীটা পরেছিলাম আজ। ওর জবা ফুল খুব প্রিয়। আমরা যখন মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে হাটতাম ও ফুলের দোকান দেখে দাড়িয়ে যেতো। আমার দিকে তাকাতো। আমি বুঝতাম, দৌড়ে যেয়ে ফুল কিনে দিতাম। মাঝে মাঝে যখন রাগ করতো, তখনো ফুল কিনে দিতাম। আর যখন খুব সুন্দর করে হাসতো, আমি ওকে একঝাক জবা উপহার দিতাম। আমরা একসাথে কবিতা পরতাম। আমার কবিতা ভালো লাগতোনা। কিন্তু ও গুটুর গুটুর কন্ঠে জঘণ্যভাবে যখন কবিতা আবৃত্তি করতো, আমার ভালো লাগতো, অন্যরকম ভালো। আমার বন্ধুরা বলতো ওর গলা একদম খসখসে। ফোনে কথা বললে মাঝে মাঝে মনে হয় পুরুষালী। আর একটু বেশি লম্বা। আমার ওকে এমনটাই ভালো লাগতো। ওকে সবচেয়ে ভালো লাগতো যেদিন ও হালকা নীল রঙের জামাটা পরতো। সাথে ওর ঝুল ঝুলানো শালটা। যখন বলতাম, 'তুমি এতো সুন্দর কেন?'
ও হাসতো। আমার দিকে তাকাতো না। লজ্জা পেতো। আরেকদিকে মুখ নিয়ে মিটিমিটি হেসে বলতো, "এভাবে বলো কেন? লজ্জা লাগে না..."

আমি এরপর আরো ১৩ বার বলতাম। ও প্রতিবার লজ্জা পেতো, আমিও প্রতিবার আরো মুগ্ধ চোখে ওকে দেখতাম।
ফাহিম আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে ঝাকিয়ে বললো, "সারাদিন কিছু খাইনাই। চল বাইরে থেকে খেয়ে আসি। যা হইছে ভুইল্যা যা। দুই বছর মাত্র প্রেম করছোস। এইটা কোন ব্যাপার না। একটা ফখরুদ্দিন মাইরা দেই আয়। তুই খাবি দুই প্যাকেট। বাসায় আইসা দিবি একটা জোস ঘুম। রাতে একসাথে দেখমু রোমান হলিডে। মনে নতুন নতুন প্রেম ভাব নিয়ে একটা আস্তা ঘুম দিবি। সকালে দেখবি সব ঠিকঠাক। আফিয়া, মাফিয়া সব ভুইলা যাবি"।

আমি আমার ঘরে যেয়ে দরজা আটকিয়ে দিলাম। আফিয়ার মোবাইলে আবার ফোন দিলাম। জানি ফোন বন্ধ থাকবে। তাও দিলাম। রিং দিয়ে অপেক্ষা করছি। কেন যেন মনে হলো রিং হবে। আফিয়া ফোনটা ধরে বলবে তাড়াতাড়ি আসো জিংলিং এ। আমি একেবারে রেডি হয়ে বসে আছি।

অসহ্য একটা নীরবতার পর ফোন থেকে সেই পুরনো ফোনটি বন্ধ আছে কন্ঠটি শুনতে পেলাম। মোবাইলটা বন্ধ করে বিছানায় আলতো করে ফেলে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাতে ওর বিয়ে। ওর পাশে ব্যায়ামবীর সেই ছেলেটা বসে থাকবে। ওকে সবাই এসে বলবে, "বাহ! জামাই বউ দুইটাই তো দেখতে মাশাল্লাহ!"

আমি চারপাশে আলোকিত একটা শহর দেখতে পাই। এতো আলো কেন চারদিকে। আশেপাশে মনে হচ্ছে যেন ঘুরতেছে। মহিম আমার দরজা ধাক্কাচ্ছে। ফাহিম ক্যাচক্যাচ করে বলছে, "আত্নহত্যা করিসনা দোস্ত। করলে এই মাসের শেয়ারের ভাড়াটা দিয়া তারপর করিস।"
মাসখানেক আগে আফিয়ার সাথে বসে ছিলাম গুলশান ১ এর লেকের কাছে। সেদিন ওর খুব মন খারাপ। আমাকে আস্তে আস্তে বললো, "আমি বাসায় তোমার কথা বলেছি। বাবা বলেছে তোমাকে পুলিশে দিয়ে মারবে। খুব ভয় লাগছে। মা খুব মারছে আমাকে। আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা জাহিদ"।
আমি শূণ্য দৃষ্টিতে ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওকে বলল "আমি তো একটা ভালো জব করছি। তোমাদের মত এতো বড়লোক না আমার পরিবার এটা কি আমার অযোগ্যতা এখন? কোনভাবেই রাজি করাতে পারলানা।"
আফিয়া মুখে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমার খারাপ লাগছে। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। কিছু কি বলার আছে আমার? আমরা এরপর দিনের পর দিন চিন্তা করেছি কি করা যায়। ওর এনগেজমেন্টের তারিখ ঠিক করা হয়েছিলো আজকে। কাল রাতে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলো, "জাহিদ তোমার মনে আছে কিভাবে পরিচয় হয়েছিলো?"

আমি খসখস কন্ঠে বললাম' "আমি তোমাকে একদিন অফিস থেকে আসার সময় তোমাদের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কেউ এতো সুন্দর হতে পারে জানতাম না। আমি এরপর প্রতিদিন ঠিক ওই সময়টায় তোমাকে দেখার জন্য ওখান দিয়ে হেটে যেতাম। অফিস যেদিন ছুটি থাকতো আমার একটাই কাজ ছিলো তোমাকে দেখার জন্য পাশের রেস্টুরেন্টে বসে থাকা। কাচের দরজার ফাক দিয়ে খেয়াল করতাম কখন তুমি আসবে। এরপর হঠাৎ করে একদিন তুমি হেঁটে হেঁটে রেস্টুরেন্টে আসছিলা। আমি ভয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বললা, "গত তিনমাস ধরে আমাকে এভাবে স্টক করছেন কেন?"
আমি কাচুমাচু করে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তুমি বাধা দিয়ে বললে, "কি সমস্যা আপনার?"

আমি সাহস করে তোমাকে বললাম, "আমি ঠিক এখানটায় এই কুকুরবিহীন গলির পাচটা বাড়ির মাঝে আটকে গেছি। বের হতে পারছিনা। আপনি আটকিয়ে ফেলেছেন। মুক্তি পাচ্ছিনা।"
আফিয়া ফোনের ওপাশ থেকে খুব কাঁদছিল। আমি বললাম, "আমাকে ভালোবাসো?আমাকে বিশ্বাস করো? কালকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে?"

ও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, "পারবো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা জাহিদ। আমি এখন সব পারবো।"
সারারাত আমরা ঠিক করেছি কি করবো, কিভাবে ও বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে। মাথায় বিচার বিবেচনা, বোধশক্তি কিচ্ছু কাজ করছিলোনা। কিচ্ছু না। আমি জানি আমার ওর সাথে থাকতে হবে। ওকে সারাটাজীবন পাশে বসিয়ে অপলক চোখে দেখতে হবে। আমি ওকে ভালোবাসতাম।

এখন ওর আমার পাশে থাকার কথা। কিন্তু ও নেই। আমি চিৎকার করি। রাগে দুঃখে। কাঁদি, চিৎকার করি। আজকে ওর বিয়ে। যেই মানুষটা আমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারতোনা, সে কি অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে পারবে? পারবে আমার মত করে কারো হাত ধরে থাকতে। বুকের বাম পাশে আলতো করে মাথা রেখে কবিতা শোনাতে।মহিম আর ফাহিম আমার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলছে, দোস্ত কিচ্ছু হবেনা।আমরা আছি তো দোস্ত। এইভাবে কাদিসনা। মহিমের মনটা খুব নরম। ও কাঁদছে। ও জানে আমার জন্য আফিয়া নামে মানুষটা কি ছিলো। সে নারী ছিলোনা, সে প্রেমিকা ছিলোনা, সে ছিলো ভালোবাসা।আমার লেখা একমাত্র কবিতা, অনুচ্চারিত স্বপ্নকথন।
ফাহিম দরজার বাহিরে থেকে গালি গালাজ করে কোথায় যেন বের হয়ে গেলো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এইতো আর একটু পর ওর এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে। তারপর সে হারিয়ে যাবে। বুকে আঘাতটা থাকবে, সম্পর্কটা আরো শক্ত হবে। না বলা কথাগুলো হারিয়ে যাবে।
তারপর কি হয়েছিলো জানিনা। আমি হয়তো স্বজ্ঞানে ছিলাম না। হয়তো কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার দরজা যখন প্রায় ভেঙ্গে ফেলছিলো আমি টের পাচ্ছিলাম না। ফাহিম দরজার লক ভেঙ্গে আমার ঘরে ঢুকে বললো, তুই কি মইর‍্যা গেছোস? বিষ খাইছোস?
আমি হা করে তাকায় থাকি ওর পাশে। আফিয়া দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপ চুপ অবস্থা। আমাকে দেখে কান্না শুরু করলো খুব। আমার হাত ধরে বললো, "তোমার কি হয়েছে? ঠিক আছো তো? পানি খাবে?"

আমি একবার ফাহিমের দিকে, একবার মহিমের দিকে তাকাই। ফাহিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "ওর বাড়িতে গেস্ট হিসেবে গেলাম আমি আর মহিম। সাথে নাবিলারে নিছিলাম। মাম্মা, জোস একটা বাড়ি। যেয়ে দেখি, তোর বউ রুমে বসে কাঁদছে। নাবিলা ওর রুমে যেয়ে ওকে নিয়ে ভাইগা চলে আসছিলো। তখন ওর বাপ আর মায়ের কাছে ধরা খাইলাম। আমি এমন ঝাড়ি দিছি। ওর বাপ মা রাজি হয়া গেলো।"

আফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো, "ভাইয়া মিথ্যা বলছে। আমি সকাল থেকে আটকিয়ে পড়েছিলাম। রাতে তোমার সাথে আমার কথা হচ্ছে আম্মু বুঝে ফেলে। সকাল থেকে ফোন নিয়ে আটকায় রাখছিলো। আমি একটু আগে মাত্র এক বান্ধবী বাসায় আসছিলো বলে ওর ফোনটা নিতে পেরেছিলাম। তোমার ফোন বন্ধ ছিলো তাই ফাহিম ভাইয়াকে ফোন দিয়ে কোনরকমে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি"।
আমার কানে দিয়ে তখন কোন শব্দ আসছিলোনা। ফাহিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "তব্দা খাইছোস? তোর বউ ভাগানোর জন্য আমাদের বৃষ্টিতে ভিজে ৭৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া গেছে আপডাউন। শালা আগে নিজের পকেট খালি করতি, এখন আমাদেরটাও শুরু করে দিছিস"।

আমি আফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। এরপর ফাহিমকে আর মহিমকে জড়িয়ে ধরি। খুব কাদছিলাম। বন্ধুাারও ইমোশনাল হয়ে গেলো। আমি ওদের ভাসা ভাসা কন্ঠে বললাম, "দোস্ত তোদের কি বলবো। কি বলবো বুঝতাছিনা। দোস্ত তোদেরকে অনেক ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি"।

আফিয়ার সাথে যখন একা একা বসে আছি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, "ভয় পেয়েছিলে?"
আফিয়া বুকের ঠিক বামপাশটায় মাথা রেখে বললো, "নাহ! আমার অস্তিত্বে তুমি। ভয় আসবে কোথা?!"

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৪

আরিফ রুবেল বলেছেন: ইহা কি হইল অর্ক ভাই ! মিলায়া দিলেন। 'বড় ছেলে' টাইপের একটা পরিসমাপ্তি না হলে তো জমে না।
কিন্তু একটা কথা বুঝতেছি না আপনার ছয় দিন আগের পোস্টে আমি প্রথম মন্তব্যদাতা ! তাও আবার এমন একটা প্রেমের গল্পে ! অদ্ভুত ভাই অদ্ভুত !

মিলনাত্মক গল্পে পেলাস!

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৫৫

অহরিত বলেছেন: হাহা। ব্লগে লেখাগুলো প্রকাশ করি ক্রনিক্যাল রক্ষা করার জন্য। যেন অনুভূতিগুলো হারিয়ে না যায়। আর কোন কারণ নেই ভাই।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০০

নির্বাক শাওন বলেছেন: গল্প ভাল হইছে।
আপনি নিয়মিত তাই আপনার ব্লগে আনাগোনাও কমে গেছে।
আপনার ব্লগে আমার প্রথম মন্তব্য এটা।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
বেশি বেশি করে লিখুন

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৫৫

অহরিত বলেছেন: প্রিয় নির্বাক শাওন, ধন্যবাদ। শুভ কামনা।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪১

Oshan বলেছেন: দুঃখিত লেখক। অনেক সুন্দর লিখছেন।

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

অহরিত বলেছেন: ধন্যবাদ ওশান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.