![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাগলের প্রলাপ লিখে প্রকাশ করি
আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনে একটা মাটির দুচালা ঘর ছিল। সেই ঘরটি গরমের সময় খুবই ঠাণ্ডা থাকত। গরম এলেই ভিড় জমে যেত ঐ দুচালা মাটির ঘরটির কাছে । ঐ ঘরে বাস করত আকবর চাচা, উনার স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে । আকবর চাচার বাড়িতে আরও একজন সদস্য ছিল মনা । মনা আকবর চাচার একমাত্র পোষা কুকুরের নাম । লাল রঙের মনা, দেশীয় কুত্তা হলেও দেখতে খুব সুন্দর । আকবর চাচা কৃষক ছিলেন । উনি যখন তপ্ত দুপুরে বাড়ি ফিরতেন, একটু জিরিয়ে নিয়ে মনার গোসল করিয়ে দিতেন । লাক্স সাবান দিয়ে মনার গোসল করাতেন তারপর খাঁটি সরিষার তেল মাখাতেন । ঐ সময় মনাকে অনেক চমৎকার দেখাতো । মনার প্রতি আকবর চাচা যেমন যত্নশীল ঠিক তেমনি মনা ও যেন আকবর চাচাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না । আমরা প্রায় চাচাকে ঠাট্টা করতাম চাচা আপনি কুত্তা নিয়ে কি করেন এ গুলো তো পাগলামি । তাছাড়া কুত্তার লালা খুব খারাপ, আর ভুলক্রমে যদি একবার কামরায় ১৪ টা ইঞ্জেকশান কোন মাফ নাই । চাচা হাসত আর বলত শোন ব্যাটা মানুষ মানুষের উপকার ভুলে যায় কিন্তু এই কুত্তা কিন্তু ভুলে না । সে মনিবের বাড়ি ঠিকই রাতজেগে পাহারা দেয় । আকবর চাচা আর মনার দিনকাল বেশ ভালই কাটছিল । মনা অপেক্ষায় থাকত কখন চাচা মাঠ থেকে ফিরে তার গোসল করিয়ে দেবে । আমি নিজে অনেকদিন দেখেছি চাচা যখন খেতে বসতেন মনাকেও খেতে দিতেন আর বলতেন মনা আমার বাড়িতে তো মাছ, মাংসের হাড় পাবি না যা জোটে তাই খা । মনা ও কোন শব্দ না করে চাচার সাথে খেয়ে উঠত । এভাবে চলছিল । একদিন চাচা সিদ্ধান্ত নিল তিনি সৌদি আরবে চলে যাবেন এভাবে মাঠে কাজ করে আর চলছে না । তবে যাব বললেই কি যাওয়া যায় । আকবর চাচার একটা জমি ছিল তিনি ২ লাখ টাকাই জমিটা বেঁচে দিলেন । এবার ঢাকায় যেতে হবে সবকিছু ঠিক করতে , আমাদের বাড়ি থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৩০০কি.মি । আসতে যেতে ২ দিন লেগে যায় । আমার মনে আছে চাচা যখন ২ দিন ঢাকায় ছিল মনার মন খুব খারাপ ছিল । শুধু তাই নয় একদিন দুপুরে মনার গোসলও হল না । চাচা ২ দিন পর আসলেন জানালেন ১০দিন পর ফ্লাইট ঠিক হবে । এবার চাচা বাড়ি ফিরে আর মনার কোন খোঁজ রাখলেন না । চাচার চোখে এখন বিদেশের নীল স্বপ্ন । যে স্বপ্ন প্রতিটা মানুষই দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ১-দিন ২ দিন এভাবে চাচার বিদেশ ভ্রমণের সময় নিকটে চলে এলো । চাচা একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল শুধু বিদায় নিতে পারল না মনার কাছ থেকে । অনেকেই সেদিন চাচাকে ঠাট্টা করছিল আকবর একাই যাচ্ছিস তোর মনাকে নিলি না। চাচা সেদিকে কর্ণপাত করলেন না । আমি শুনেছি জীবজন্তু না কি মানুষকে বুঝতে পারে আর হয়তো সেই অভিমানেই মনা সেদিন চাচার সামনে যায় নি । চাচা চলে গেলো , চাচা যাবার পর মনা আমাদের বাড়ি থাকত । যে মনা চুপচাপ মনিব যা দিত তাই খেত সেই মনা এখন অন্য কুত্তাদের সাথে যুদ্ধ করে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে খাই । এখন আর কেউ তাকে লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দেই না । এভাবে মাস দুয়েক চলছিল । একদিন শুনলাম মনা না কি বাড়ির মুরগি ধরে খায় । এবার পাড়ার সবাই সিদ্ধান্ত নিল মনাকে বস্তাই পুরে দূরে কোন গ্রামে রেখে আসতে হবে । একদিন সত্যিই তাই করা হল , মনাকে পাশের গ্রামে রেখে আসা হল । এরই মাঝে আকবর চাচা একটা চিঠি আর কিছু টাকা পাঠালেন বাড়িতে । তবে আশ্চর্য হলাম আকবর চাচা চিঠিতে সবার আগে মনার খবর জানতে চাইলেন । বিদেশে থাকলে না কি আপনজনদের বেশি মনে পড়ে । হয়তো চাচার সে কারনেই মনাকে সবার আগে মনে পড়েছিল । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস একদিন পাশের গ্রামে গেলাম এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে । বন্ধু খুব করে ধরল আজ না খেয়ে যেতে পারবি না । যদিও ইচ্ছা ছিল না কি আর করার খেতে বসলাম। খাওয়া শেষ করে উঠানে এলাম হাত ধুঁয়ার জন্য । দেখি উঠানে দুইটা কুত্তা, আমার চিনতে কষ্ট হল না এর মাঝে লাল যে কুত্তাটা এটাই মনা ।এখন মনা আর সেই লাল সুন্দর নেই সারা গায়ে কাদামাটি, হাড্ডিসার দেহ । ইতিমধ্যে আমার বন্ধুও হাত ধুঁয়ার জন্য এলো আমি বললাম এই কুত্তাটা কোথায় থেকে এলো । বন্ধু বলল কি জানি কারা যেন বস্তায় করে আমাদের গ্রামে রেখে গিয়েছিল। আমি আরও নিশ্চিত হয়ে গেলাম । আমি এবার মনা কে বললাম মনা যাবি আমাদের গ্রামে ? মনা কোন সাড়ায় দিল না । সেদিন বাড়ি চলে এলাম । এরপর মাঝে মাঝে যেতাম বন্ধুর বাড়ি মনাকে দেখতে । একদিন সাইকেল চড়ে যাচ্ছিলাম বন্ধুর বাড়ি পথের মাঝে দেখি একটা কুত্তা মরে পড়ে আছে লাল রঙের । আমি পাশ দিয়ে চলে গেলাম । অনেকক্ষণ ছিলাম বন্ধুদের বাড়ি কিন্তু সেদিন আর মনার দেখা পেলাম না । আমি আমার বন্ধুকে বললাম তোদের লাল কুত্তা টা কই বলল লাল কুত্তাটা মুরগি খেত তাই কারা যেন মেরে রাস্তায় ফেলে এসেছে । আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো । সেদিন যখন বাড়ি ফিরছিলাম মনার লাশের পাশ দিয়ে বার বার আকবর চাচার কথা মনে পড়ছিল । কত যত্নই না করতেন মনাকে, মনা যদি চাচার মতো কাউকে পেত তাহলে হইত এভাবে মরতে হত না। আকবর চাচা আপনি যে মনাকে লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে খাঁটি সরিষার তেল মাখাতেন সেই মনার মরা দেহটা আজ রাস্তায় পড়ে আছে হইত শেয়ালে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে .........।।
©somewhere in net ltd.