![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাগলের প্রলাপ লিখে প্রকাশ করি
গল্পগুচ্ছের রবীন্দ্রনাথ নামে জমিদার । ছত্রধারী এক রাজপুত্র বলেও মনে হয় । ধারণা করা যেতেই পারে, লোকটি পাইক-পেয়াদা দ্বারা পরিবেষ্টিত । রাজস্ব আদায়ে খুব হিসেবি । রাজস্ব আদায়ে একটু হেরফের হলেই হিংস্র আর দয়ামায়াহীন হয়ে ওঠেন । পদ্য লেখা, গদ্যে হাত দেয়া এসব বুঝি গ্রাম জীবনের মুহূর্ত গুলোকে নির্বাসিত দেবার জন্য করা ! ঊনবিংশ শতাব্দীর জমিদারদের চরিত্র এমন-ই ছিল । খাজনা দিতে না পারলে কাচারিতে ডেকে সীমাহীন নির্যাতন করা । নারী-লোলুপতা, নর্তকী বিলাস, টাকা আদায় করে বাহিরে বাতাস খেতে বের হতে যাওয়া এসব ছিল জমিদারদের চাল-চরিত । কিন্তু শিলাইদহ আসার পর তো বটেই, কলকাতায় বসবাসকালীন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এসব জমিদার সুলভ আচরণ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ, প্রকৃতপক্ষে তিনি জমিদার পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন সন্ন্যাসী । ১৮৮৯ সালের শেষভাগে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে আসেন । রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন তার একটা বর্ণনা শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে পাওয়া যায়-
“ একজন রাজপুত্র জন্মেছিলেন এখানে । আমরা কেউ তাঁকে দেখি নি । শুনেছি তাঁর গায়ের রং কনক চাপার আভা । আর সে কি চেহারা ! ছ’ফুটেরও বেশি দীর্ঘ শরীর, হাতে কব্জি যেন পাঠানের । গায়ে আঙরাঙ্গা, শুভ্র দাড়ি যেন সূফী তাপসের ললাট কী দিব্য জ্যোতিষ্মান। ”
শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রবীন্দ্র স্মৃতিবিজরিত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র । কুষ্টিয়া শহর থেকে ১০-১২ কি.মি হবে হয়তো । ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র বলা হলেও বাস্তবে তা সংরক্ষণে তেমন কিছু চোখে পড়ে নি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে বাঙ্গালির ভূমিকা লবডঙ্গা তাঁর প্রমাণ এখানেও পেয়েছি ।
বন্ধুদের সাথে মজা করতে যাবার কারণে কোন নোট নিতে পারি নি তবে হাতের মোবাইলটায় অনেক কিছু ধারন করতে সক্ষম হয়েছি মূলত ধারণকৃত বিষয়বস্তুই আমার এই লেখার উপজীব্য ।
শিলাইদহ নামটি আধুনিক পূর্বে এর নাম ছিল খোরশেদপুর । উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কোলকাতা জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার এই গ্রামটি কেনার আগে এখানে একটি নীলকুঠি ছিল । শেলী নামের একজন নীলকর এটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায় । গড়াই এবং পদ্মা নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে সৃষ্ট গভীর একটি ‘দহ’ ( ঘূর্ণিস্রোত) থেকে গ্রামটি শেলী-দহ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল । কালক্রমে তা শিলাইদহ-এ পরিণত হয় । ১৮০৭ সালে রামমোচন ঠাকুরের উইল মতে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিক লাভ করেন এবং ১৮৮৯ সালের নভেম্বরে রবীন্দ্রনাথ জমিদারী দেখাশুনার জন্য শিলাইদহ আসেন ।
শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ প্রথমেই গ্রামোন্নয়ন ও আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, পরে পতিসরে তিনি যার বাস্তব রূপ দেন । তিনি জমিদারী থেকে আসমানদারি করেছেন বেশি । জমিদারীর নিরস ও নিষ্ঠুর কাজগুলির চেয়ে সাধারণ মানুষের চিন্তন মননের সন্ধান করেছেন বেশি । শিলাইদহের প্রজাদের সাথে রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন তাঁর একটা নিদর্শন কুঠিবাড়ি পাওয়া যায়ঃ-
“পল্লীর সাধারণ মানুষ থেকে রবীন্দ্রনাথ দূরে ছিলেন-তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে তিনি অজ্ঞ ছিলেন । নাগরিক জীবনে তিনি দূর থেকে দেখতেন- এদের কথা তিনি দূর থেকে শুনতেন । রবীন্দ্রনাথ কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদের কাছাকাছি এসে পড়েন- সাধারণ মানুষও তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় । তিনি সাধারণ মানুষকে চোখ মেলে দেখতে পেলেন-অসহায় অজ্ঞ মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে তাদের জীবন বৃত্তান্ত শুনে আকুতি জানালেন । ‘পৃথিবীর জল যখন শুকিয়ে যায় তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে’ ।”
কবিগুরুর শিলাইদহ নিয়ে যখন লিখছি বাউল রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে না লিখলে এ লেখাটি একেবারেই নিরর্থক হয়ে যাবে । বাঙ্গালির জীবনের এমন কোন শাখা নেই সেখানে কবির পদধূলি পড়ে নি । কবির একান্ত চৈতন্যের মধ্যে তিনি বাঙ্গালির মননের সন্ধান করেছেন সেই অনুসন্ধানী দৃষ্টির মধ্যে বেশ বড় পরিসরে ধরা পড়েছে বাউলের জীবন ও সাধনা । বিশেষ করে তিনি নিরীক্ষণ করেছেন তাদের যাপিত জীবন । সেই সঙ্গে তাঁকে আকৃষ্ট করেছে বাউলের সাধন সঙ্গীত । কবির মধ্যে যে উদাসীনতা ভাব ছিল তা প্রতিনিয়ত তাঁকে তাড়িত করেছে বাউল গানে । আপ্লুত কবি বাউলদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন-
“বাউলের গান শিলাইদহে খাঁটি বাউলের মুখে শুনেছি ও তাদের পুরাতন খাতা দেখেছি , নিঃসন্দেহে জানি বাউলগানে একটা অকৃত্রিম বিশিষ্টতা আছে, যা চিরকেলে আধুনিক । আমার অনেক গান বাউলের ছাঁচের, কিন্তু জাল করতে চেষ্টাও করি নি , সেগুলি রবীন্দ্র-বাউলের রচনা । ”
কবি শিলাইদহে আসার পর থেকে বাউল ফকিরদের সাথে পরিচিত হতে থাকেন । প্রথমে তিনি শিলাইদহ পোস্ট অফিসের পিয়ন গগণ হরকরা (গগণ দাস) –এর গানের প্রতি আকৃষ্ট হন । তাঁর রচিত গাওয়া গান-
“কোথায় পাব তারে / আমার মনের মানুষ যেরে”
এই গানে মুগ্ধ হন । কেবল মুগ্ধ হয়েই ক্ষান্ত হননি । আমাদের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” এই বাণীর সাথে গগণের গানের সুর যোজনা করেন । গগণ ঠিক যেই সুরে তাঁর মনের মানুষের গান গেয়েছিলেন কবি ঠিক একই সুর দেন সোনার বাংলায় ।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সাল থেকে প্রায় এক দশক শিলাইদহে অনিয়মিত ভাবে অবস্থান করেন । তাঁর অবস্থানকালে শিলাইদহে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, দিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার সহ অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী শিলাইদহে আসেন । এই কুঠিবাড়ি ও পদ্মা বোটে বসে রচিত হয় রবীন্দ্রসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতা, পদ্মাপর্বের গল্প, নাটক চিরকুমার সভ্য, অচলায়তন, চিত্রাঙ্গদা, উপন্যাস- চোখের বালি, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, গোরা, পত্রাবলী , গীতাঞ্জলী ও গীতিমাল্যের গান উল্লেখযোগ্য ।
এখানে বসেই কবি গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন যা ১৯১৩ সালে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারের সম্মান এনে দেন । শিলাইদহ ও পদ্মার প্রতি কবির ছিল গভীর অনুরাগ , ছিন্নপত্রাবলীতে যার প্রমাণ আছে । কবি জীবন সায়াহ্নে এক চিঠিতে লিখেছেন -
“আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস-সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহচুম্বিত শিলাইদহ পল্লীতে ।”
“ বাস্তবিক, আমি পদ্মা নদীকে ভালোবাসি, আমি যখন শিলাইদহ বোটে থাকি, তখন পদ্মা আমার কাছে স্বতন্ত্র মানুষের মতো ।” [ছিন্নপত্র]
“আমি এখন বোটে । এ যেন আমার নিজের বাড়ি । এখানে আমিই একমাত্র কর্তা । এখানে আমার উপরে আমার সময়ের উপরে আর কারও কোন অধিকার নেই ।” [ছিন্নপত্র]
“ এই সর্বনাশী পদ্মার ডাকে খোকাবাবু যখন সাড়া দেয় তখন হতবুদ্ধি রাইচরনের অসহয়তাও তীব্রতর হয় ।” [খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন]
"বাস্তবিক আমি পদ্মাকে ভালোবাসি । এখন পদ্মার জল অনেক কমে গেছে । বেশ স্বচ্ছ কৃশকায়া হয়ে এসেছে,একটি পাণ্ডুবর্ণ ছিপিছিপে মেয়ের মতো, নরম শাড়িটি গায়ের সঙ্গে বেশ সংলগ্ন । সুন্দর ভঙ্গিতে চলে যাচ্ছে, আর শাড়িটি বেশ গায়ের সাথে বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে ।”
পদ্মা কবিতায় কবি লিখেছেন-
“ হে পদ্মা আমার,
তোমায় আমায় দেখা শত শত বার ।”
রবীন্দ্র সাহিত্যের একটি বড় অংশ রচিত হয় শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিতে । গল্পগুচ্ছের রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্র বাউল, উপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ, নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ কোন কিছুই থেমে থাকে নি জমিদারীর জন্য । কবিগুরুর স্ত্রী মৃণালিনীও শিলাইদহ কুঠি বাড়ি কে খুব ভালবাসতেন চারিদিকে ফুলের বাগান, আম-কাঁঠালের বাগান, পুকুর ঘাঁট তাঁর প্রমাণ রেখে গেছে । কবিগুরুর সাইজি প্রেম , সাইজির গানের খাতা সংরক্ষণ, তৎকালীন পত্রিকায় লালন সাইজির গান প্রকাশ সাহিত্য জগতে রবি বাউল কে আমাদের মাঝে নতুন করে নয় বরং অন্য এক রবীন্দ্রনাথকে পরিচয় করিয়ে দেয় । লেখাটি শেষ করতে ইচ্ছে করছে না মনে হচ্ছে আরও লিখি অনেক কিছু বাদ পড়ে যাচ্ছে । কবি গুরুর “অনন্ত জীবন” কবিতার চারটি লাইন দিয়ে আমার ভ্রমণ পর্ব শেষ করছি-
“অধিক করিনা আশা, কিসের বিষাদ,
জনমেছি দু দিনের তরে-
যাহা মনে আসে নেই আপনার মনে
গান গায় আনন্দের ভবে ।”
#মোহাঃ রাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী আইন বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৬
অনন্ত৪২ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
২| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৪
অনন্ত৪২ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
অসাধারণ।++
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৫
অনন্ত৪২ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন...
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৫
অনন্ত৪২ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বাহ! অসাধারণ পোস্ট