![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাগলের প্রলাপ লিখে প্রকাশ করি
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী। বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি, প্রেমের কবি, গীতিকার, সুরকার কোনটা বললে কবির সঠিক মূল্যায়ন হবে তা আমার জানা নেই। বাংলা সাহিত্যের একটা বড় অংশ নজরুল রচনা । শৈশব থেকে উদাসীন কবি অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়েছেন। সেদিনের সেই দুখু মিয়া আমাদের জাতীয় কবি, তার কবিতার ভাষা মানেই বিদ্রোহের ঝঙ্কার, তার কবিতা মানেই প্রিয়ার খোপায় তারার ফুল। 'এক হাতে বাশের বাশরী, অন্য হাতে রণতুর্য '। কবি মানেই নারীর সঠিক মূল্যায়ন তিনি লিখে গেছেন 'নারী' নামে সেই বিখ্যাত কবিতা। কবির লেখায় উঠে এসেছে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর ভূমিকা, নারীর কতটা অংশগ্রহণ থাকবে, নারী সহযোগী সে পুরুষের বিজয়ের প্রথম অনুপ্রেরণা।
কবি বাংলাতে শুধু কবিতা লিখে গেছেন তা নয়। নজরুলের মতো আরবি বা ফার্সি ভাষায় পান্ডিত্য কোনো কবির নেই, ছিলও না। এখনকার মৌলভীরা যে মিলাদে সুর করে করে হামদ নাথ পড়ে তাও কবির-ই রচনা। কবির গজলের কথা কে বা না জানে? মসজিদের পাশে কবর দিও ভাই, মুর্শিদ মুহাম্মদের নাম, মনে বড় আশা ছিল যাবো মদিনায় ইত্যাদি চমৎকার চমৎকার গজল কে না শুনেছে।
কবির গজল, হামদ নাথ পড়ে মৌলভীরা ঢেকুর তুললেও কবির অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল সে সময় কবিকেও আজকে কথায় কথায় যেমন আস্তিক আর নাস্তিকের বিভাজন করা হয় কবির ক্ষেত্রেও এমন নিষ্ঠুর সমালোচনা হয়েছে।
কবি শুধু মৌলভীদের চক্ষুশূল ছিল না অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন।
আজ আমি অসাম্প্রদায়িক নজরুল কে নিয়ে লিখবো। কবির কবিতা বা বক্তব্য থেকে আমি যতটুকু মনে রাখতে পেরেছি তাই তুলে ধরবো ---
শান্তি, সাম্য, অধিকার, স্বাধিকার নজরুলের কাব্যিক চেতনার একেকটি হীরকখণ্ড। সাম্প্রদায়িকতা,কুসংস্কার আর কুপমণ্ডুকতা ছিলো তার চেতনার প্রতিপক্ষ। তিনি ছিলেন চেতনার কবি। তিনি যেমন মেনে নেন নি নারীর প্রতি অবিচার আর বৈষম্য, তেমনি মেনে নেন নি দুর্বলের প্রতি সবলের আধিপত্য।
কবি তার বিভিন্ন লেখায় হিন্দু-মুসলমানদের বিভেদের অবশান চেয়েছেন। কবিতা ও গানে তার সাক্ষর রেখে গেছেন। মুসলিসদের জন্য যেমন লিখে গেছেন হামদ নাথ ও গজল তেমনি হিন্দুদের জন্য লিখে গেছেন গান ও কীর্তন। তিনি গান ও কবিতায় ইচ্ছাকৃত ভাবেই সাম্প্রদায়িক শব্দ ব্যবহার করতেন -
“আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের কুসংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি, হিন্দু দেব দেবীর নাম নিই। অবশ্য এরজন্য অনেক জায়গায় আমার সৌন্দর্যের হানি হয়েছে। তবু আমি জেনে শুনেই তা করেছি।”
(শব্দ ধানুকী নজরুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহমদ)
নজরুলের ধূমকেতু আজও আমাদের চেতনা কে নাড়া দেয়। সপ্তাহে ২ বার ধূমকেতু প্রকাশ হতো। ধূমকেতুর বিশেষ একটি সংখ্যার কারণে কবি গ্রেফতার পর্যন্ত হন এবং পরবর্তীতে কবিকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কবি রাজবন্দীর জবানবন্দী তে বলে গেছেন-
"… আমি কবি। আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়।”
কবির সাম্যবাদী কবিতায় কবি যা লিখে গেছেন তা পড়ে আজকের সুশীল সমাজের অনেকের গা জ্বলে যাবে। কবির নারী, মানুষ, সাম্যবাদী এই তিনটি কবিতায় কবি যেভাবে ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে লিখে গেছেন।
“গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান।
যেখানে মিশেছে হিন্দু-মুসলিম-বুদ্ধ খ্রিশ্চান।”
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্ফুসিয়াস্? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!”
[সাম্যবাদি/ নজরুল]
দেশভাগের ঘোর বিরোধী ছিলেন কবি নজরুল। তিনি লিখে গেছেন -
"হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি,
ভাবলি এতেই জাতির জান,
তাই তো বেকুব করলি তোরা
এক জাতিকে একশ' খান।"
কবি কবিতায় ধর্মীয় অন্ধতার বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে লিখে গেছেন। তার কয়েকটি নমুনা নিচে বিভিন্ন কবিতা থেকে সংগ্রহ করা তুলে দিলাম-
'যে জাত ধর্ম ঠুনকো তত
আজ নয় কাল ভাঙবে সেত,
যাকনা সে জাত জাহান্নামে,
রইবে মানুষ, নাই পরোয়া।'
#
'সকল জাতই সৃষ্টি যে তাঁর,
এ বিশ্বমায়ের বিশ্বঘর,
মায়ের ছেলে সবাই সমান,
তাঁর কাছে নাই আত্মপর।'
#
'বলতে পারিস বিশ্বপিতা
ভগবানের কোন সে জাত
কোন ছেলের তার লাগলে
ছোঁয়া অশুচি হন জগন্নাথ
নারায়ণের জাত যদি নাই
তোদের কেন জাতের বালাই'
#
'মানুষ আজ পশুতে পরিচিত হয়েছে,
তাদের চিরন্তন আত্মীয়তা ভুলেছে।
পশুর লেজ গজিয়েছে ওদের
মাথার ওপর,
ওদের সারা মুখে।
ওরা মারছে লুঙ্গিকে,
মারছে নেঙটিকে।
মারছে টিকিকে,
মারছে দাড়িকে।
বাইরের চিহ্ন নিয়ে এই
মূর্খদের মারামারির
কি অবসান নেই।'
বিদ্রোহী নজরুলের লেখা সমাজের অনাচার, ধর্মীয় গোড়ামি, অন্ধতা, অনগ্রসরতাকে দারুণ ভাবে কুঠারাঘাত করেছে। মানবসৃষ্ট অসাম্যের সকল প্রাচীর ভেঙে নজরুল সাম্যের গান শুনিয়েছেন। মানব-সাগরে তিনি সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং সাম্যের বার্তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
২| ২৫ শে মে, ২০২২ বিকাল ৪:১৯
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: নরুলের মতো অন্য কবিরা এতো সাম্যেরগান গায়নি।
৩| ২৫ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: নজরুল একজন দুঃখী কবি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মে, ২০২২ দুপুর ২:৪৮
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
স্থান,কাল ও পাত্র ভেদে নজরুলের জন্ম সঠিক ছিলো??