![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাই ফার্মাকোলজির লেকচার বানাই।
পুরাই বঙ্গানুবাদ করা লাগবে, তার সাথে হন্যে হয়ে খুঁজে বের করা কিছু সরল উদাহরণ জোড়া দিবো। সহজের থেকেও সহজ শব্দের উচ্চারণ পাশে লিখে রাখবো। তারপর আগামীকাল বলবো, সব তো লিখাই আছে। পড়াতে হবে? বাসায় পড়ে নিয়েন। ওরা বলবে, না না পড়ান। তারপর ঘন্টা দেড়েক বক বক করব, সারাজীবনের লব্ধ জ্ঞান অপাত্রে ফেলবো। এরপর শিটখানি ওরা ফটোকপি করবে।
পেনিসিলিনের মেকানিজম অব অ্যাকশন পড়াতে যেয়ে দেখব আমার স্টুডেন্ট জানেনা ব্যাকটেরিয়া কি জিনিস কোন গ্রুপের জিনিস। তাহলে সে কোষ প্রাচীর কি জিনিস কীভাবে জানবে।
এরপর বোর্ডে ছবি এঁকে দেখাতে হবে ব্যাকটেরিয়ার সাধারণ গঠন। এরপরও বুঝবে না। বিরক্ত হবো এবং আবিষ্কার করবো এরা এসেছে কমার্স থেকে অথবা আর্টস গ্রুপ থেকে। ন্যূনতম রেজাল্ট নিয়ে কোনমতে পাশ করে এরপর আবার অনেকদিনের গ্যাপ দিয়ে এই কোর্সে ভর্তি হয়েছে। এস.এস.সি/এইচ.এস.সি-তে সাধারণ বিজ্ঞান বইটা খুলে দেখেছিলো কিনা সন্দেহ হয়।
তাদেরকে আমি প্রতিদিন বুঝানোর চেষ্টা করি পিউরিন, পাইরিমিডিন, নিউক্লিক এসিড, বিটা ল্যাকটামেজ ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাদের আমি হেলদ এডুকেশনে কমিউনিকেশন বুঝাই। সেন্ডার, মেসেজ, রিসিভার, চ্যানেল, ফিডব্যাক ইত্যাদি ইত্যাদি। না কিছুই বুঝেনা। তারপর সোজা বাংলায় বলি, "বড়ভাইয়ের চিঠি এসেছে ডাকঘরে, আমার ভালো লাগছে।"
বড়ভাই সেন্ডার, চিঠি মেসেজ, আমি রিসিভার, ডাকঘর চ্যানেল, ভালো লাগা ফিডব্যাক।
না, তবুও বোঝেনা। ইচ্ছে করে মাথার চুল ছিঁড়ি।
চুল ছেঁড়া হয়না। প্রতিদিন সকালে যেয়ে আবার ঘুরে আসি, স্টুডেন্ট আসার নাম নাই। কদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল, কিছুই শেষ হয়নি, তবুও আসেনা। নিজের টাকায় কোর্স ফি দিয়েছে তবু আসেনা। নকল করে পাশ করার কথা ভাবছে কিনা বুঝতে পারছি না।
এদের(ডিপ্লোমা নার্সিং) ফার্স্ট ও থার্ড সেমিস্টার নাই। সোজা ভর্তি হয় সেকেন্ডে, তারপর ফোর্থ। তারপর কি এখনও দেখিনি। যাদের পড়ার বর্ণনা দিলাম উপরে সবাই সেকেন্ড সেমিস্টারে ডিফল্টার। এখন ফোর্থে, দুটোই চালাচ্ছে একসাথে।
আমি প্রায় বলি আমায় এক্সট্রা সময় দিতে, ফার্মাকোলজির সিলেবাস শেষ করাবো। নাহ কেউ সিরিয়াস না।
পেনিসিলিন, এ্যান্টিবায়োটিক চ্যাপ্টারের শেষে যখন দেখি এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মূল কথাগুলোই অনুশীলনীতে নাই, মাথায় ঢুকাতে পারিনা এরা কী পেশেন্ট কেয়ার দিবে।
প্রতিষ্ঠানের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক ও একমাত্র ডাক্তার শিক্ষক হিসেবে আমার কিছুই করার থাকেনা।
মাঝে মাঝে এ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসে, আমি একাই বলে যাই এটা বন্ধ করেন ওটা বন্ধ করেন, বিজ্ঞান না পড়া শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েন না।
এ্যাডমিনিস্ট্রেটর ভদ্রলোক গুরুগম্ভীর হয়ে বলেন, হ্যাঁ এটা তো ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু ওরা এটা কমার্শিয়ালি দেখছে। সরকারী প্যারামেডিকেলে এরকম হয়না, শুধু এরাই এমন করে।
বললাম, তাহলে স্ট্রিক্ট রুল করে দিন। ভদ্রলোক চুপ করে থাকেন।
মাস শেষে বেতন নিতে যেয়ে মাথায় বাজ পড়ে। বন্ধের দিন বাদ দিয়ে টাকা মাত্র আড়াই থেকে তিন হাজার। এবং সেইটা অন্যান্য সাধারণ লেম্যান শিক্ষকদের সমান।
বেকার এমবিবিএস হিসেবে বাদ দেবারও উপায় থাকেনা।
এইসব কথাগুলো আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখা।
শহরের কোনায় কোনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্যারামেডিকেলের ভিতরের কথা এগুলো।
আমরা আসলে আমাদের হেলদ সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করছি। সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে কিনা, সেটা কিছু না। টাকা কত পাওয়া যাচ্ছে সেটাই কথা এখন।
ডাক্তার যে সর্বনিম্ন ডিগ্রিধারীই হোক, তৃণমূল পর্যায়ে তারাই শেষ না। নার্স, প্যাথোলজিস্ট, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট, টেকনিশিয়ান, তৃণমূল স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক। সবাই মিলেই একটা দল, হেলদ টিম।
সেখানে সবাই সমান এ্যাকটিভ না থাকলে সেবা আর সেবা থাকবে না।
দোষ আসবে আমাদের কাঁধে, আমরা পাল্টা দোষ দিবো সিস্টেমকে। মাঝখান থেকে পার পাবে ঐসব কমার্শিয়াল চিন্তাভাবনার লোকজন যারা সত্যিকারের কালপ্রিট।
সত্যি মাথায় ঢুকেনা আমার, এত তালগোলের মাঝে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে কীভাবে।
জয়তু আমার মাতৃভূমি!!!
০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৯
অনিক্স বলেছেন: হুম। হয়তো।
তবে এইসব এমএলএফ আর বেসরকারি প্যারামেডিকেলগুলো, সাথে কিছু দোকানদার অনেকবেশি সমস্যা করে। ওয়ার্ডে রুগী আসলে দেখতাম, এগুলো সবচেয়ে বড় ডাক্তারের চেয়েও বেশি ভাব ধরে। সিস্টারদেরও কিছু করতে দিত না, ডিউটি ডাক্তারকেও কথা বলতে দিত না।
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অরাজকতা সবখানে।
তবু কিভাবে যেন দেশটা মরে পড়ে থাকে না।
০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৩২
অনিক্স বলেছেন: হ্যাঁ। কি যেন জাদুকরী ক্ষমতা আছে দেশটার, যত খারাপ কিছুই হোক, শেষমেশ ভালো জিনিস বের হয়ই।
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
কালীদাস বলেছেন: বাংলাদেশের পাবলিক হেলথ সেক্টর নিয়ে বিশাল ব্যাবসা চলে। বড় বড় সিন্ডিকেট আছে কয়েকটা, এগুলার মধ্যে আবার সিরিয়াস ক্ল্যাশও আছে। এবং ইনভেনশন এইমড রিসার্চও প্রায় বন্ধ এই সিন্ডিকেটগুলার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৪
ইলুসন বলেছেন: আমাদের দেশে বড় ধরণের সমস্যা আছে। প্যারা মেডিকেল আর মেডিকেল টেকনলজিস্টরা নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দেয়। ৬ মাস পড়েই এলএমএএফ ডাক্তার হওয়া যায়। আর ওষুধের দোকানদাররা তো আছেই। এরা কিছু ওষুধের নাম শিখে নিজেরাই ডাক্তার হয়ে যায়। যখন তখন হাই এন্টিবায়োটিক দেয়। একটা সিস্টেম করা উচিত যে রেজিস্টার্ড ডাক্তার ছাড়া আর কেউ প্রেসক্রিপশন লিখতে পারবে না, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। দেশের সব মানুসের হেলথ ইন্সুরেন্স থাকবে, ডাক্তারের ফি সেখান থেকে কাটা হবে। তাহলে এই অবস্থার নিরসন সম্ভব।