![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মতি নামের একজন যুবক ছিলেন বরিশাল শহরে আমানতগঞ্জ এলাকায় যিনি কিনা দেশের কথা বলতেন। শেখ সাহেবের ভক্ত যুবক ৭০ এর নির্বাচনে নৌকার কথা বলতেন। তখনকার অধিকাংশ পরিবারের মত আমার নানার বাড়ির সবাইও রাজনীতি বলতে পাকিস্তানি শোষণ ই বুঝতেন। এবং দূরে থাকতেন। কিন্তু পরিবাব্রের ছোট ছেলে মতি বলতেন এবার শেখ সাহেব আসবেন। যাঁর কথা বলছি তিনি সম্পর্কে আমার নানা হন।
ডিসেম্বর যেমন সবার কাছে অনেক আনন্দ নিয়ে আসে, মুক্তির আনন্দ। আমার পরিবারের কাছেও তেমন হতে পারত। হ্যা আমাদের কাছেও খুব আনন্দের দিন ১৬ ডিসেম্বর। আম্মুর মুখে শোনা যে পাকিস্তানীরা আসলে বা অপারেশন চললে তাদের বাসার সামনে একটা গুপ্তরুমের মত তৈরি করা হয়েছিলো মাটির নিচে তাতে তাদের বাসার সব বাচ্চা আর মেয়েদের ঢুকিয়ে উপর থেকে লোহার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হত। এরকম একটা জীবন থেকে মুক্তির আনন্দ কিরকম তীব্র হতে পারে অনুভব করা টা কঠিন নয়।
কিন্তু ডিসেম্বর আসলেই আমি জানি কেন আমার সেজো নানু তজবিহ গোণেন। তিনি চিতকার করে কাঁদেন আর বলেন মতির লাশ তো আমরা দেখি নাই, আমার ভাই কি মরে গেছে সত্যি? আমার নানাভাই যতদিন বেঁচে ছিলেন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তার আদরের ছোট ভাই কই আছে খোঁজার।
৭১ এ সবার মত যুদ্ধে যায় মতি নানা। ট্রেনিং ছাড়া যুদ্ধে নামেন। দু'মাস পর ধরা পড়ায় বরিশাল জেলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। সেই জেল ভেঙ্গে পালান তিনি। চলে যান যশোর। যশোর থেকে শেষ চিঠি লেখেন আমার নানাকে। ভারতের ট্রেনিং নিয়ে যশোরে যুদ্ধে ছিলেন তিনি।
নানা ভাই পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে শেষে পৌঁছান যশোরের এক গ্রামে। সেখান থেকে তাকে আলাউদ্দিন মাঝি বলে একজনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি জানান যে ঐ গ্রামের উপর দিয়ে যখন মতি নানা সহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ১৭/১৮ ই ডিসেম্বর পার হচ্ছিলেন তখন সেখানকার চেয়ারম্যান তাঁদেরকে দুপুরে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেন। দাওয়াত কবুল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে তাদের বাড়ির দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে ভাত দেওয়া হয়, তারা ভাতের সামনে বসলে, একদল রাজাকার এসে তাদেরকে দাঁড় করিয়ে ভাতের প্লেটের সামনে গুলি করে মারে। ৫/৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ঐ দলে।
আলাউদ্দিন মাঝি মতি নানার পুরনো একটি ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন যে, তিনি ওই দলের মাঝে ছিলেন। তাদেরকে যখন কবর/মাটি চাপা দেয়া হয় তখন আলাউদ্দিন মাঝি সেখানে ছিলেন।
আমার নানা মারা গেছেন, মতি নানার সব ভাই এখন মৃত, বোনদের মাঝে দুইজন বেঁচে আছেন, সেজো নানুর অপেন হার্ট সার্জারি হইছে, তিনি কবে চলে যাবেন জানি না, এই দুই বোন কি মৃত্যুর আগে তাদের ভাইয়ের খুনীদের বিচার দেখে যেতে পারবেন?
বাংলাদেশের প্রতি পাঁচ পরিবারের এক পরিবারে এরকম কোন না কোন ঘটনা আছে, তারপরও আর কতদিন বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল বলবে যে দেশে কোন যুদ্ধপরাধী নেই? এরকম একটা কথা শোনায যেকনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য অপমানজনক! অবশ্য বলেই বা কি, এমনো ত না যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে আমরা খুব সম্মান দিয়ে মাথায় উঠায় রাখছি!
যে দেশে ৭১ এর পর ৪১টা ১৪ ডিসেম্বর চলে গেছে, তবুও জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সারের মত মানুষদের মৃত্যুর বিচার হয়নি সে দেশে মান সম্মান, অপমান এসব কথা বলাও খুব ঠুনকো শুনায়!
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০১
মাহামুদুল হাসান লেলিন বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে।
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৫২
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: যে দেশে ৭১ এর পর ৪১টা ১৪ ডিসেম্বর চলে গেছে, তবুও জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সারের মত মানুষদের মৃত্যুর বিচার হয়নি সে দেশে মান সম্মান, অপমান এসব কথা বলাও খুব ঠুনকো শুনায়! একমত ।
উনাদের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা রইল ।
ভালো থাকবেন ।
৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪০
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সুস্থ আছেন তো ?
০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
~অপরিচিতা~ বলেছেন: সুস্থ আছি ভাইয়া, আপনারা সবাই ভালো তো?
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৯
আজমান আন্দালিব বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে। বাংলাদেশে এরকম লক্ষ লক্ষ পরিবার আছে স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিংবা তারা আপনজন হারিয়েছে। সেই বীরদের প্রতি রইলো সালাম। পাক হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস এর প্রতি ঘৃণা।