| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অপটিমাস
যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে ততটা মেঘ বুকে রেখেছি জমে ..কিভাবে আমায় তুমি কাদবে বল ...
সু ,
তোমায় প্রথম দেখেছিলাম কোনো এক বর্ষার সকালে ...বৃষ্টি স্নাত সেই সকাল কেমন করে ভুলি?
তুমি লাল টুকটুকে একটা ছাতা মাথায় দাড়িয়ে ছিলে...মাথায় ছাতার কত টুকু ছিল বলা মুশকিল ,তুমি বান্ধবীদের সাথে কোনো কিছু নিয়ে হাসছিলে ...হাসতে হাসতে তোমার হাত থেকে ছাতা বারবার সরে যাচ্ছিল...বৃষ্টি তে ভিজে যাচ্ছিলে তুমি ..কি মায়াময় সেই হাসি ...আমি অপলক তাকিয়ে দেখছিলাম তোমায় ...খুব সাধারণ তুমি ,মাথায় ওরনা দেওয়া,তুমি একবার তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে,আনমনেই..ঠিক সেই মুহুর্তেই ..আমি বন্দী হয়ে গেলাম তোমার চোখে ..আজীবনের জন্য ...
একই কলেজে পরতাম আমরা ..একই গ্রুপ এ ...কলেজে ভর্তি হওয়ার তিন মাস পর প্রথম কলেজে যাওয়া আমি তাই তোমায় চিনিনি ...
ওই দিনের পর থেকে তুমি শুধু তুমি ই হয়ে উঠলে আমার ধ্যান জ্ঞান ..কলেজের মাত্র চারঘন্টা যেন মুহুর্তেই উড়ে চলে যেত !!
আমার বাসার সামনে দিয়ে তুমি সকালে ইংরেজি পড়তে যেতে ...তোমায় দেখার জন্য কুম্ভকর্ণ এই আমি,সকালে উঠতে বাসার সব মোবাইল ,সব ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখতাম ...একবার আব্বুর মোবাইল নিয়ে কি যে একটা কাহিনী করে ফেলেছিলাম না!!যে দিনগুলোতে তুমি আসতে না কি যে কষ্ট হত ...পুরো দুনিয়াটা ফাকা মনে হত ...কলেজে আমি আর তুমি ছিলাম আলাদা সেকসনএ..কতদিন যে তোমাদের সেকসন এ যেয়ে বসে থাকতাম...কলেজে রেগুলার যাই ..কিন্তু নিজের ক্লাসে না !!
প্রি টেস্ট এ তো এই কারণেই আমাকে দিতে দিচ্ছিলোনা ,পরে আম্মু আসায় ঠিক করে দিয়েছিল!! আম্মু কিন্তু তোমায় চিনত,তুমি হিসেবে না...একদিন আমি আর আম্মু একই সাথে যাচ্ছিলাম ..আমায় নামিয়ে দিয়ে আম্মু অফিসে যাবে...হঠাত বলে উঠলো,বাঃ ,মেয়েটা তো অনেক সুন্দর,কি ভদ্র,চিনিস?আমি তখন কলেজে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ হিসেবে এই সময় টুকু ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম!!আম্মুর ঠেলায় চোখ মেললাম ...গাড়ি জ্যামে পড়েছিল ..জানালা দিয়ে দেখি ,এ তো আমার চিরচেনা তুমি !!!আমাদের কলেজ ইউনিফর্ম পরা তুমি রাস্তা পার হচ্ছিলে ...আমাদের গাড়ি টার সামনে দিয়েই চলে গেলে ...আম্মু আবার গুতিয়ে বলল ,কি হলো চিনিস না ?তোদের কলেজ এর বলেই তো মনে হলো|আমি আবার চোখ বুজে তোমার স্বপ্নে ডুবে যেতে যেতে বললাম,হতে পারে ,আমি কি আর সব মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকি!!আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম ,কেমন করে আম্মুর সাথে আমার পছন্দ মিলে গেল !!
তোমার সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিল কলেজ এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে,একটু আধটু গিটার বাজাতাম আর আম্মুর জন্য ছোটবেলায় তিন বছর গান শিখতে হয়েছিল, অনেকটা জোর করে করল্লা গেলার মতই !!তাই বন্ধুদের ঠেলাঠেলিতে অনুষ্ঠানে নাম লিখিয়েছিলাম|অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা ছিলে তুমি,নাম শুনতে এসেছিলে তুমি,আমার না গানের খেয়াল করিনি,শুধু শুনেছি নাম,বললাম,একটা গোপন কথা ...তুমি একটু থমকে গিয়ে হেসে উঠেছিলে ,তোমার সেই অসাধারণ মায়াময় হাসি ,যে হাসিতে আমার ভেতর ঝড় ওঠে ,হাসতে হাসতে বললে,গান না তোমার নাম ...বললাম,হারিয়ে গিয়েছি ...আবারও সেই হাসি ...আমি তাকিয়েই থাকি ...তোমার ওই হাসিটা দেখতেই তো আবার আমার ভুল করা....হাসতে হাসতে চলে গেলে ...আমি পেছন থেকে ডেকে বললাম,আমার নাম প্রান্ত,আমি ভুল করেছি কিন্তু তোমার আর কখনো ভুল হবেনা|তুমি একবার পেছনে তাকিয়ে চলে গেলে....
অনুষ্ঠানে তুমি আমার নাম ধরে ডাকলে ,একটু থেমে বললে,যে গায়ক তার নিজের নাম ভুলে যায় কিন্তু গানের নাম নয় !!সেদিনের মত ভালো গান আমি আর কখনো গাইনি,বিশ্বাস কর!শুধু তুমি আমার নাম ধরে ডেকেছিলে ..সেটার জাদু আমায় এক অদ্ভুত শক্তি দিয়েছিল...অনুষ্ঠান শেষে এসে আমার সাথে কথা বলেছিলে অনেকক্ষণ...সেই প্রথম !!রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় তোমায় বাসায় নামিয়ে দিয়েছিলাম,সাথে আর ও বন্ধুরাও ছিল অবশ্য,তুমি তো আর বোঝোনি তোমার জন্যই আমার স্বেচ্ছাশ্রম!!তোমার ফোন নামবার নিয়েছিলাম সেদিনই...বাসায় পৌছে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা মেসেজ দিয়েছিলে ....উত্তর দেইনি ..কি লিখব ,কি বাদ দিব এইটা ভেবে ...তোমার পরা কালো টিপ টার প্রশংসা করব নাকি তোমার কাজলকালো চোখটার উপমা খুজতে যেয়ে যে সব গায়ক আর কবি কে জালাচ্ছি তা লিখব !!!
এভাবেই যাচ্ছিল দিনগুলো...মাঝে মাঝে ফোন এ কথা হত...আর কলেজ এ আমার পাগলামো গুলো কমিয়ে দিয়েছিলাম বাবার আমাকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা পূরণের জন্য|আমি আসলে তোমার উপর কখনই কোনো চাপ তৈরী করতে চাইছিলাম না...শুধু মাঝে মাঝে জানান দিতাম আমি,যখন আর থাকতে পারতাম না...তোমায় আমি একটা গান শোনাতাম বারবার,তুমি কি কিছু বুঝতে পারতে??
একটা গোপন কথা ছিল বলবার ,
বন্ধু সময় হবে কি তোমার ....
বোধহয় বুঝতে পেরেছিলে ,তাইতো ...ফাইনালের আর কিছুদিন বাকি ...তোমার সাথে আমার প্রতি দিনই ফোনে কথা হত ...পরীক্ষার জন্য কলেজ বন্ধ,তাই দেখা হওয়াও বন্ধ ...তাই তুমি যখন দেখা করতে চাইলে,আমি খুশিতে কি করব বুঝে উঠছিলাম না !!তুমি আগেই এসেছিলে ...জায়গাটা ছিল আমার খুব পছন্দের,আমি স্বভাব সুলভ দুষ্টুমির ছলে কথা শুরু করতেই মাথা নিচু করে থাকা তুমি চোখ তুলে তাকালে ...আমার মাঝে যেন কিছু একটা হয়ে গেল ...তোমার চোখে পানি!!তুমি যা বলেছিলে তার মূলকথা ছিল যে তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখতে চাও না |তারপর মাফ চাইলে ...আমার মাথায় কিছু ঢুকছিল না ....তুমি চলে গেলে......আমার দোষ কি ছিল তা না বলেই ...ওই জায়গায় আমি অনেকক্ষণ একা চুপচাপ বসে ছিলাম ...খুব বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন ....আকাশ আমার কষ্ট টা বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল ....
আমি তোমার সাথে তারপর আর যোগাযোগ করিনি বা করতে পারিনি...এরপর ও তোমার সাথে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল..কথা বলিনি ...তোমার উপর আমার অভিমান হয়েছিল খুব ...
এবং তারপর তুমি একবারেই হারিয়ে গেলে ....শুনেছিলাম একটা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছ..
অনেকগুলো দিন কেটে গেছে,আমি বুঝতে শিখেছি ,অন্ধ হয়ে আবেগের পিছনে ছোটা বন্ধ করেছি,বাস্তবতা টাকে মেনে নিয়েছি,প্রতিষ্ঠিত হয়েছি,আম্মুর জন্য তোমার মতোই একজন কে উপহার দিয়েছি ...তুমি চলে যাওয়ার পর কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল আমার,বাবার স্বপ্ন টা পূরণ করতে পারিনি তাই,কাউকে তোমার কথা বলিনি কখনো ,শুধু যেবার ঘুমের অসুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম ,ঘোরের মাঝে শুধু তোমার নাম ধরে ডাকতাম ...আম্মু তখন সব বুঝতে পারে...আস্তে আস্তে আমি সুস্থ হয়ে উঠি ....ভার্সিটিতে যেতে শুরু করি,শুধু আম্মুর জন্য হলেও মুখে হাসি নিয়ে থাকি ....ওখানেই পরিচয় হয় মোহনার সাথে |এই পাগলিটা আমায় প্রচন্ড ভালবাসে....ওকে ফেরাতে চেয়েও পারিনা...ও ই আমার চলার সাথী ...আমি ওকেও বলিনি তোমার নাম,তোমার কোনো কথা ,মাকে ওয়াদা দিয়েছিলাম যে......!
জানিনা কোথায় আছ,কেমন আছ ,কি ভুলে এত বড় একটা শাস্তি পেলাম টা আজও জানিনা ,আমার প্রথম বিশুদ্ধ আবেগ তুমি ছিলে ,তোমাকে ভোলা যায়না ,ভুলবনা .........
প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে একবার তোমায় একটা মেসেজ দিয়েছিলাম....পেয়েছ কিনা জানিনা...
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় ,
বুঝিনি কভু সেই মায়া তো আমার তরে নয়,
ভুলগুলো জমিয়ে রেখে মনের মনি কোঠায়,
আপন মনের আড়াল থেকে
ভালবাসব তোমায় ,
তোমার চিরচেনা পথের ওই সীমা ছাড়িয়ে,
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়ত যাব হারিয়ে,
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছা জড়িয়ে
একবার শুধু একটি বার হাত টা দাও বাড়িয়ে ...
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন .......................
মোহনা ডায়রিটা বন্ধ করে রাখল, গাল বেয়ে একফোটা পানিও কি পড়ল ?? পুরনো বুকশেলফ পরিষ্কার করতে গিয়ে ডায়রিটা পেয়েছে ও, না পেলেও কিছু অজানা ছিলনা ওর, বিয়ের আগেই সব জানতে পেরেছিল ও , প্রান্তর মায়ের কাছ থেকে. ..... আর হ্যা মেয়েটার নাম ওজানে ....
পরী ...
চোখ মুছে নিল মোহনা,স্কুল থেকে আসার সময় হয়ে গেছে পরীর....ওদের পাঁচ বছরের মেয়ে ।
"যে লিখেছিল,
সে ভালবেসে লিখেছিল,
আমি শুধুই জানিয়ে গেলাম"
©somewhere in net ltd.