নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেতন ভাগতের নতুন উপন্যাস The girl in room 105 অবলম্বনে এই গল্প । বলা চলে বইয়ের সারমর্ম । যারা বই পড়বেন তারা এই গল্প পড়বেন না । আর যারা পড়তে চান না তারা এই গল্প পড়তে পারেন । সময় বেঁচে যাবে ।
জারা ছিল কাশ্মিরের মেয়ে । জারাকে আমি প্রথম দেখেছি ক্লাশ অব টাইটান ডিবেট ফাইনালে । সাদা সেলোয়ার কামিজে জারাকে প্রথমে দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম । ডিবেটের পুরোটা সময় আমি কেবল জারার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম । অন্য কে কি বলছিলো সেদিকে কোন লক্ষ্যই ছিল না । ডিবেটের মাঝে আমি একবার জোরে শীষ বাজিয়ে উঠেছিলাম জারার যু্ক্তি দেওয়া শুনে । মেয়ে যেমন সুন্দরী তেমনই কথাতেও পটু ।
ডিবেট শেষ হওয়ার পরেই জারার সাথে কথা হল । আমি দর্শকের সারি থেকে যে ওকে উৎসাহ দিচ্ছিলাম সেটা ওর চোখে পড়েছিলো । সেই আমাকে এগিয়ে এসে ধন্যবাদ দিল । বলা চলে সেটাই আমাদের প্রথম কথা বলা । ওকে মেইন রোড পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার সময়ই জারা আমাকে বলল যে তার ক্ষুধা লেগেছে । এক সাথেই আমি খেতে গেলাম । সেদিনই বেশ গল্প করলাম । নাম্বারও নিয়ে নিলাম ।
ওর সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিলো ইন্ডিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে একটা প্রোটেস্টে । কাশ্মিরে ইন্ডিয়ান আর্মি নীরিহ লোকজনের উপর গুলি চালিয়েছিল । সেটার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ । ছোট থেকে দিল্লীতে বড় হলেও একটা সময় ও ওর বাবার সাথে কাশ্মীরে থাকতো । ওর মা মারা যাওয়ার পরে ওর বাবা সেখানে ফারজানা নামের এক বিধবা কে বিয়ে করে । ফারজানার আগে একটা ছেলে ছিল সিকান্দার নামে । কিন্তু জারার বাবা একটা সময়ে জানতে পারে যে তাদের সাথে কাশ্মীরের এক টেরোরিস্ট গ্রুপের যোগাযোগ আছে । তারপরেই জারার বাবা সেখান থেকে চলে আসে । ফারজানা কে ডিভোর্স দিয়ে । কিন্তু কাশ্মীরের প্রতি জারার ভালবাসা কখনও কম ছিল না । তার সৎ ভাইয়ের সাথেও তার যোগাযোগ ছিল নিয়োমিত ।
জারা আমাকে সেই প্রটেস্টে নিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো । যদিও আমার প্রটেস্টে যাওয়ার কোন আগ্রহ ছিল না । আমার কেবল জারার সাথে সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিল । জারা ওখানে ওর পরিচিত বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল । তারপরই আমাদের দেখা সাক্ষাত যেন আরও বেড়ে গিয়েছিলো অনেক গুণে । আমরা গোয়াতে বেড়াতে গেলাম এক সাথে । সেদিনই প্রথমবার জারার সাথে একই সাথে ঘুমিয়েছিলাম । জীবনে এতো চমৎকার রাত আমার জীবনে এসেছিলো কি না আমার জানা ছিল না ।
জারাও যে আমাকে ভালবাসতো সেটাও বুঝতে আমার কষ্ট হয় নি । মাঝেই ও এমআইটি থেকে স্কলারশীপ পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু কেবল মাত্র আমার কাছাকাছি থাকার জন্যই ও সেটা ছেড়ে দিয়েছিলো । আমাদের আইআইটিতেই প্রফেসর সাকসেনার আন্ডারে পিএইচডি করছিলো । আমি মাঝে মাঝেই ওর হোস্টেলে গিয়ে হাজির হতাম রাতের বেলা । যদিও মেয়েদের হোস্টেলে ছেলেদের যাওয়া একদম মানা ছিল কিন্তু দুই প্রেমীকে কেউ কি আটকাতে পারে ।
জারার রুম হিমা্দ্রী বিল্ডিং এ । রুম নম্বর ছিল ১০৫ । ওর রুমের ঠিক পাশেই একটা আম গাছ ছিল । আমি সেই আম গাছে উঠেই ঢুকে পড়তাম ওর রুমে । তারপর রাত ভর চলতো আমাদের ভালবাসা । এভাবেই দিন এগিয়ে যাচ্ছিলো ।
পড়ালেখা শেষ করে আমি একটা চন্দন কোচিং এ ঢুকেছিলাম । ভাল একটা চাকরীর জন্য চেষ্টা করছিলাম । আমার রেজাল্ট ছিল একেবারে শেষের দিকে । তাই সেদিক থেকে খুব একটা এগোচ্ছিলো না ।
একটা সময় মনে হল জারাকে আমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে । আমি ওকে আমাদের বাসাতেই নিয়ে হাজির হলাম । জারাকে প্রথম দেখে মা খুবই খুশি হল । কিন্তু যখনই জানতে পারলো যে জারা একজন মুসলিম তখনই মায়ের মুখ কালো হয়ে গেল । তখনও আমি বলি নি যে জারাকে আমি ভালবাসি । কেবল বলেছিলো জারা আমাদের শহর দেখতে চায় সেই জন্য এনেছি । ও আমার ভাল বন্ধু ।
কিন্তু বাবা এসেই সব তালগোল পাকিয়ে ফেলল । জারা যে মুসলিম সেটা জানার পরে সে খুব বেশি করে যাতা বলতে লাগলো । একটা সময় আমি বাবা মাকে বলেই ফেললাম যে আমি জারাকে ভালবাসি । ওকেই বিয়ে করতে চাই । বাবা তো পরিস্কার বলে দিল এই মেয়েকে নিয়ে এখনই আমাকে চলে যেতে হবে । কোন ভাবেই কোন কাশ্মীরের মুসলিম মেয়ে তার বাসাতে থাকতে পারবে না ।
বাবা আরএসএসের সিনিয়র সদস্য । একজন ড্রাইভারকে দিয়ে আমাদের তখনই পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন । আমি জারাকে কেবল বললাম যে আমার একটা ইন্টারভিউ কল এসেছে । আমাকে এখনই যেতে হবে । অন্য কিছু বলতে পারলাম না ।
কয়েকদিন পরে আমরা গিয়ে হাজির হলাম জারার বাসায় । ওর বাড়ি দেখার পর আমার কেবল মনে হয়েছিলো এতো চমৎকার বাসা থাকা সত্ত্বেও জারা কেন হোস্টেলে থাকে ? জারাকে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল যে ও হোস্টেলের ১০৫ নম্বার রুমটা পছন্দ করে । সেখানে থাকলে ওর নাকি নিজেকে খুব বেশি জীবন্ত মনে হয় ।
জারার বাবা কাশ্মিরের সব ব্যবসা দিল্লীতেই নিয়ে এসেছিলো । এখানে বেশ জমিয়েও ফেলেছে । সে আমাদের ব্যাপারটা জানার পরেও তেমন একটা রিএক্ট করলো না । সম্ভবত জারা তাকে আগেই বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখেছি । সে খুব শান্ত ভাবেই বলল যে সে আমাদের বিয়েতে রাজি । তবে আগে আমাকে মুসলিম হতে হবে ।
আমার পক্ষে কোন ভাবেই আমার ধর্ম ত্যাগ করা সম্ভব ছিল । জারা ভেবেছিলো হয়তো আমি ওর জন্য আমার সব কিছু ছেড়ে দিব । আমার বাবা মা যেহেতু ওকে পছন্দ করে নি সুতরাং ওকে পাওয়ার জন্য আমাকে তাদের ত্যাগ করতেই হবে । আমার প্লান ছিল যে আমরা আগে বিয়ে করবো তারপরই আমার বাবাকে বুঝাবো কিন্তু জারা কেন জানি রাজি হল না ।
তারপর থেকেই আমার সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করলো । দিনকে দিন আমাদের মাঝে দুরত্ব বাড়তেই লাগলো । একটা সময় সেটা শেষ হয়ে গেল । জারার বাবা এবং সৎ ভাই আমাকে জারার কাছ থেকে দুরে থাকতে বলল । আমাকে তারা সুযোগ দিয়েছিল কিন্তু আমি সেটা গ্রহন করি নি । আমার এখন কোন অধিকার নেই ওদের সাথে থাকার । আমার বরং দুরেই থাকা উচিৎ ।
কিন্তু আমি কিছুতেই জারাকে আমার মন থেকে বের করতে পারছিলাম না । বারবার ওকে ফোন করতাম ও ধরতো না । মাঝে মাঝে ধরতো তবে খুব একটা কিছু বলতো না । তারপর জারা রাঘুর সাথে যুক্ত হয়ে গেল । এটা দেখে আমার মাথা আরও খারাপ হওয়ার মত অবস্থা । রাঘু আমারই ব্যাচমেট ছিল । দেখতে শুনতে ভাল কিন্তু খুব ভাল ছাত্র ছিল । গোল্ড মেডেলিস্ট । পড়াশুনা শেষ করে নিজের টেক কোম্পানিও দাড় করিয়ে ফেলেছিলো । এবং সব থেকে বড় কথা ও নিজে মুসলিমে কনভার্ট হওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিল । কেবলমাত্র জারাকে পাওয়ার জন্য ।
এভাবেই কয়েক বছর কেটে গেল । আমি তখনই জারাকে আমার মাথার ভেতর থেকে বাইরে বের করতে পারি নি । কিন্তু যখন বের করতে পারলাম তখনই জারা আমাকে নক করলো । জারার জন্মদিনে । আমার মনে পড়লো শেষ মুহুর্ত । যখন রাত আড়াইটার মত বাজে । আমি আর সৌরভ মিলে ড্রিংক করছিলাম আমাদের ফ্ল্যাটে । সৌরভের সাথেই আমি ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকতাম, একই সাথে চন্দন ক্লাসে পড়াতাম । এই সময়ে সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো । আমরা সব বিষয় নিয়ে কথা বলতাম । জারার ব্যাপারে সব জানতো সে ।
একবার মনে হল জারার জন্মদিনে আমি ওকে উইশ করি কিন্তু সেটা করলাম না । নিজেকে বোঝালাম যে জারা আর আমার জীবনে নেই । ওকে ভুলে যেতেই হবে । ঠিক সেই সময়েই আমার হোয়াটসএপ টোন বেজে উঠলো । একবার দুইবার তিনবার .....
আমি মেসেজ দিকে তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে । জারা আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে । । এতো দিন পরে সে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে । সৌরভকে বলতেই সৌরভ বলল যে আমি যেন মেসেজটা দেখি । যেহেতু জারা পাঠিয়েছে যেহেতু আমি দেখতেই পারি ।
মেসেজ খুলে আমি কেবল অবাক হয়ে গেলাম । সে খানিকটা অভিমানী হয়ে আমাকে জানিয়েছে আজকে তার জন্মদিন ছিল আমি ভুলে গেছি । আমি তাকে বললাম যে আমি ভুলি নি । আমি তাকে ফোন করতে চাইলাম কিন্তু সে আমাকে বলল যেন আমি নিজে এসে ওকে উইস করি ।
আমার কাছে এটা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল । আমি খুবই অবাক হলাম । রাঘুর কথা জিজ্ঞেস করতেই ও রাঘু ভাল ছেলে কিন্তু সে আমাকে মিস করে । আমাকে ছাড়া তার সব কিছু যেন শূন্য শূন্য লাগে ।
লাইনটার দিকে তামি কেবল তাকিয়েই রইলাম একভাবে । তারপরই বললাম আধা ঘন্টার মধ্যেই আমি সেখানে হাজির হচ্ছি ।
সৌরভ প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না কিন্তু একটা সময় সে ঠিকই রাজি হয়ে গেল । আমরা আমার বাইক নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম ক্যাম্পাসে । পুলিশ মাঝ রাতে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আমি না থেমে সোজা বাইক টান দিল । পুলিশ পেছন পেছন আসছিলো তবে এটা জানতাম যে আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ ঢুকতে পারে না । আর পুলিশ ঢুকবেও না কারন আইআইটির অনেক ছাত্রই এমনটা রাতের বেলা বের হয় সেটা ওদের ভাল করেই জানা আছে । গেটের কাছে আসতেই সৌরভ কে বললাম আমার পুরানো আইডি কার্ড দারোয়ানকে দেখাতে । এক্সপায়ার ডেটের উপর সৌরভ আঙ্গুল রেখে দারোয়ান কে দেখাতেই আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে পড়লাম । সোজা গিয়ে হাজির হলাম হিমাদ্রী হোস্টেলের সামনে ।
আমি আম গাছে চড়ে ঢুকে পড়লাম জারার রুমে । আমার জন্যই জানালাটা ও খুলে রেখেছিলো । সৌরভকে বলে দিলাম যে নিচে কেউ এসে হাজির হলে আমাকে যেন ও জানান দেয় । অন্ধকারে সয়ে এলে আমি জারাকে দেখতে পেলাম খাটে শুয়ে আছে । বেশ কয়েকবার ডাক দিল । হ্যাপি বার্ডডে গান গাইলাম কিন্তু ও কোন উত্তর দিল না । একটা সময় আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে ওর গায়ে গায়ে হাত দিতেই মনে হল কিছু যেন ঠিক নেই । কপালে হাত দিতেই কপালটা ঠান্ডা ঠেকলো খুব । একটা ভয় আমার পুরো শরীর জুড়ে বয়ে গেল । ওর নাকের কাছে হাত দিতেই আমি শক খেলাম । জারা মারা গেছে । আমার জারা মারা গেছে । আমার পুরো পৃথিবী যেন ভেঙ্গে পড়লো সাথে সাথেই ।
দুই
আমি আর সৌরভ পুলিশ স্টেশনে বসে আছি । এরই মধ্যে আমি অনেক বেশি বিখ্যাত হয়ে গেছি । আমার ব্যাপারে টিভিতে পর্যন্ত খবর চলে গেছে । আমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে কেউ খুন করে রেখে গেছে তার হোস্টেলে এবং আমাকে পাওয়া গেছে সেই রাতে তারই হোস্টেলের রুমে ।
রুমে জারাকে মৃত অবস্থায় দেখে আমি প্রথমে খুব শক খেয়েছিলাম । সৌরভকে ডেকে উপড়ে আসতে বললাম। সেও অবাক হয়ে গেল জারাকে মৃত অবস্থায় দেখে । একবার মনে হয়েছিলো ও আত্মহত্যা করেছে কিন্তু তারপরেই মনে হল যে কোন ভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না । ওকে কেউ হত্যা করেছে । কিন্তু কে করেছে ?
একটা সময় সৌরভ বলল যে আমাদের এখনই এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । আমারও তাই মনে হল কিন্তু তারপরেই মনে হল যে এভাবে চলে গেল মানুষ আমাদেরকেই হত্যা কারি মনে করবে । গেটের দারোয়ান আমাদের ঢুকতে দেখেছে । ঐ পুলিশের কাছেও নিশ্চয়ই আমার বাইক নাম্বার আছে । তাই ঠিক করলাম যে পালাবো না । এখান থেকেই সবাইকে জানাবো ।
মোবাইল বের করে প্রথমে জারার বাবাকে ফোন দিলাম । তারপর ফোন দিলাম পুলিশে । ওপারেটর থেকে জানালো যে আমি যেন ওখানেই থাকি । ওরা এখনই আসছে । আমি জারার রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে হাজির হলাম দারোয়ানের কাছে । ওকে জাগিয়ে তুলে বললাম যে একজন খুন হয়েছে ।
পুলিশ আসতে বেশি সময় লাগলো না । আমাদের কাছে এসে জানতে চাইলো কেশভ কে ? আমি হাত তুলে বললাম আমি । আমিই তাদেরকে ফোন করেছি । আমি পুলিশ অফিসার ব্যাচের দিকে তাকিয়ে তার নাম জানতে পারলাম । ইনেসপেক্টর রানা । সবাই ক্রাইম সিনে হাজির হলাম । দেখে শুনে ফরেনসিক এক্সপার্ট বলল যে গলা টিপে মারা হয়েছে ।
এরপর রানা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে জানতে চাইলো যে আমি কে আর মেয়েদের হোস্টেলে আমি কি করছি । আমি যা বললাম স্বাভাবিক ভাবেই সেটা বিশ্বাস করার কোন কারন ছিল না । প্রাথমিক দেখলে যে কারোই মনে হবে যে খুনটা আসলে আমিই করেছি । কিন্তু আমি জানি যে আমি কিছু করি নি । আমাদের দুইজন কে নিয়ে আসা হল পুলিশ স্টেশনে । তবে লকাবে না ঢুকিয়ে বাইরেই বসিয়ে রাখা হল । এরই মাঝে মিডিয়া সব টের পেয়ে গিয়েছিলো । সেই দিক থেকে খবর পুরো নিউজ চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ।
আমরা থানার আসার পর আবারও পুরো ঘটনা বিস্তারিত বললাম । আমার ফোনের হোয়াটসএপ মেসেজও দেখালাম । তবে ইনেসপেক্টর রানা কে খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখলাম না । আমরা লকাপের বাইরেই বসে ছিলাম । সকালের দিকে ক্ষুধা লাগার কারনে বাইরে বের হতেই এক ঝাক রিপোর্টার আমাকে ঘিরে ধরলো । ওদের হাত থেকে কোন রকমে নিজেকে রক্ষা করে আবারও থানার ভেতরে ঢুকে পড়লাম । তারপরই রানা আবারও আমাদের তার রুমে ডাক দিলো । এবার তার ব্যবহার বেশ ভাল মনে হল । সে বলল আমার বাবা আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো । সে আমাকে নিতে আসছে । আমার প্রতি এতো ভাল ব্যবহারের কারন বুঝতে পারলাম ।
আমার মনের কথা ধরতে পরেই রানা বলল যে আমার বাবার কানেকশন ভাল এই জন্য সে আমার সাথে ভাল ব্যবহার করছে না । সে বুঝতে পেরেছে যে আমরা আসলে নিরাপরাধ । কারন আমরা যে সময়ে সেখানে পৌছেছি সেই সময়ে যদি জারাকে খুন করতাম তাহলে লাশের অবস্থা অন্য রকম হত । খুনটা আরও আগে করা হয়েছে । সে আরও জানালো যে সিসিটিভিতে দুইটা তিন থেকে দুইটা চল্লিশ পর্যন্ত দারোয়ান লক্ষনকে কোথায় যেতে দেখা গেছে । তাকেই প্রধান সাসপেক্ট হিসাবে ধরা হয়েছে ।
এরই মধ্যে জারার বাবা এসে জারার লাশটা নিয়ে গেছে । জারার বাবা বেশ ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী । তার কানেশন ভাল । সে তার মেয়েকে কাটা ছেড়া করতে দিতে রাজি নয় । অন্য দিকে তার ফিয়ন্সে রাঘু তখন হায়েদ্রাবেদে এক হাসপাতালে ভর্তি । তার উপর কারা যেন হামলা করেছে । সে আসতে পারছে না । পুলিশ চেক করে দেখেছে ঐ সময়ে রাঘুর ফোন লোকেশন হায়েদ্রাবেদের ঐ এপোলো হাসপাতালেই ছিল ।
বাবা মা এসে আমাকে আর সৌরভ কে থানা থেকে নিয়ে গেল । তবে রানা আমাদের জানিয়ে দিল যে আমাদের নিয়মিত এসে থানায় হাজিরা দিতে হবে । আর তার অনুমতি ছাড়া শহর ছেড়ে যেতে পারবো না । আমার অবশ্য ইচ্ছাও ছিল না ।
বাসায় এসে আরও খবরে জানা গেল যে দায়োয়ান লক্ষনের সাথে এক মাস আছে জারার ঝগড়া হয়েছিল । জারা তাকে সবার সামনে চড় মেরে ছিলো । পুলিশ তাকেই খুনি মেনে এগিয়ে চলছে । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল কোন কিছু ঠিক নেই । তার উপরে রঘুকে যারা হামলা করা হয়েছে তাদের
বসে বসে ভাবতে লাগলাম যে কেবল একটা চড় মাড়ার জন্য দারোয়ান জারাকে মেরে ফেলবে !
পরদিন রানার কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলাম দারোয়ানের সাথে দেখা করার জন্য । তাকে কেবল বললাম যে আমি কেবল সত্যটা জানতে চাই । আর কিছু না । রানা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে গেল ।
লক্ষনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে কষ্ট হল না যে পুলিশ তাকে সেই মাইর দিয়েছে । তবে তাকে দেখে সত্যিই মনে হল না যে সে খুন করতে পারে । তাকে বলতেই সে তার তিন বছরের মেয়ের কসম কেটে বলল যে সে জারাকে মারে নি । আমি জানতে চাইলাম তাহলে এই ৪০ মিনিট ধরে সে কোথায় ছিল ? বাথরুমে কেউ এতো সময়ে থাকে না । উত্তরে যা বলল তা শুনে আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
ফিরে এসে সৌরভকে সব কিছু বললাম । দারোয়ানের কথা প্রমান করতে প্রথমে ওর বউয়ের কাছ থেকে ওর ফোনটা নিয়ে এলাম । তারপর আবারও আইআইটির ক্যাম্পাসে গিয়ে হিমাদ্রির ওয়াইফাইয়ের সাথে কানেক্ট করলাম সেটাকে । সৌরভ প্রয়োজনীয় ফোন থেকে দরকারী ডাটা পেন ড্রাইভে নিয়ে নিল । বাসায় এসে পরীক্ষা করে দেখলাম আসলেই ঐ সময়ে লক্ষন বাথরুমে বসে বসে হিমাদ্রী হোস্টেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে পর্ণ দেখছিলো ।
ইনেসপেক্টর রানাকে সব কিছু বলার পরে রানা আমার দিকে তাকিয়ে বলল যে তার পনের বছরের অভিজ্ঞতা আছে । সে প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছে যে লক্ষন কিছু করে নি কিন্তু এর থেকে ভাল অপশন নেই । যতদিন না আর কেউ ধরা পরছে ততদিন লক্ষনকে থাকতে হবে জেলে ।
জারার শেষ ক্রিয়া কর্ম অনুষ্ঠানে আমি গিয়ে হাজির হলাম । সেখানে অনেকেই ছিল । রাঘুও ছিল । জারার ভাই সিকান্দার ছিল । প্রোফেসর সাকসেনা এসেছিলো তার স্ত্রী সমেত । জারার বাবা আমাকে দেখে খুশি হল না । আমাকে চলে যেতে বলল । এমন দেখলাম এক সুদর্শন মত ছেলে জারার বাবাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল । আমার তখনও মনে হচ্ছে জারার খুনি এখনও বাইরে রয়েই গেছে ।
রাঘুর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলাম । এমন একটা সন্দেহ করা হচ্ছিলো যে রাঘুর উপর যারা হামলা করেছে তারাও এই দারোয়ান লক্ষনের লোক । কারন দারোয়ানের বাসাও ওখানেই । তবে রাঘুও বলল যে ওর উপর হামলা কারীরা সব শহুরে ছিল আর অন্য দিক দিয়ে লক্ষন একেবারেই গ্রামের মানুষ ।
তখন রাঘু আমাকে প্রোফেসর সাকসেনার কথা বলল । সে জানালো যে জারা এই প্রফেসরকে নিয়ে খানিকটা অস্বস্তিতে ছিল । সে নাকি তাকে ডিসটার্ব করছিলো । জারা ওকে পাঠানো ইমেইল দেখালো । সেখানে জারা পরিস্কার লিখেছে যে প্রোফেসর তাকে ইচ্ছে তার পিএইচডি কম্প্লিট করতে দিচ্ছে না ।
আমি খোজ নিয়ে দেখলাম হিমাদ্রী হোস্টেলে প্রোফেসর গত তিন মাসে মোট আট বার গিয়ে হাজির হয়েছে । আমার প্রথম সন্দেহটা গেল তার দিকেই । আমি আর সৌরভ তার অফিসে গিয়ে কথাটা বলতেই সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো । তারপর আমাদের বের করে দিতে চাইলেই আমি জারার ইমেলটা দেখলাম তাকে । সে বার বলল যে এতে কিছুই প্রমান হয় না । আমি তখন বললাম, প্রমান হওয়ার তো দরকার নেই । এই তথ্য আমি যদি মিডিয়াতে গিয়ে দেই তখন তার কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখতে । সামনের মাসে তার পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ার একটা সম্ভবনা আছে । সেটা কি তখন সে পাবে ?
সেখানে থেকে আমরা প্রোফেসরের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । আমাদের লক্ষ্য ছিল যে প্রোফেসরের স্ত্রী যদি বলে যে সেই রাতে সে বাইরে ছিল তাহলেই আমরা আমাদের খুনি পেয়ে যাবো । প্রোফেসরের স্ত্রী যেন একেবারে ভেঙ্গে পড়লো । প্রোফেসর তখন স্বীকার করলো যে সে জারাকে পছন্দ করতো । ইচ্ছে করেই তার পিএইডিতে দেরি করারচ্ছিলো কিন্তু সে তাকে হত্যা করে নি ।
পরদিন আবারও যখন আমি প্রফেসরের সাথে কথা বললাম তখন আমার মনে হল যে প্রোফেসর লুচ্চা হতে পারে তবে তার পক্ষে আসলেই জারা কে খুন করা সম্ভব না । কারন খুনি যেই ছিল যে মেইণ দরজা দিয়ে আসে নি । তাকে আসতে হয়েছে ঐ আম গাছ চড়েই । প্রোফেসরের পক্ষে এটা সম্ভব না । তখনই প্রোফেসর আমাকে জানালো যে তার স্ত্রীর মনে হয়েছে এক মাত্র মেয়ে মারা গেলেও জারার ফ্যামিলিকে মোটেই ওট টা দুঃখী মনে হয় নি । হয়তো ওদের পরিবার থেকেও কেউ কাজটা করতে পারে । তার উপর ওরা জারার পোস্ট মোর্টামও করতে দেয় নি ।
আমি আর সৌরভ এবার গিয়ে হাজির হলাম জারাদের বাসায় । জারার বাবা সফদার আমাদের সাথে প্রথমে একদমই কথা বলতে রাজি হচ্ছিলো না । কিন্তু তখন আমি তাকে বললাম যে আপনাদের পরিবার থেকেই হয়তো কেউ জারাকে খুন করেছে এটাই সবাই বলছে । অনেকটা অনার কিলিং । আপনারা মুসলিক অন্য দিকে জারা আগের বয়ফ্রেন্ড, মানে আমি হিন্দু অন্য দিকে তার যার সাথে বিয়ে হতে চলেছে সেও হিন্দু । এমন অনেক ফ্যামিলি আছে যারা এসব ঠিক ভাবে মেনে নিতে পারে না ।
একটা সময়ে তাকে আমি হুমকিই দিলাম যে আসলে কথা যদি সে আমাকে না বলে তাহলে আমি পুলিশের কাছেই যাবো । সব কিছু তাকেই বলব । দেখলাম একটা সময়ে জারার বাবা খানিকটা ভেঙ্গে পড়লো । সে বলল যে সে তার এক মাত্র মাত্র মেয়েকে হত্যা করে নি । করতে পারে না । সে ছাড়া আর কেউ নেই তার । আমি তাকে শান্তনা দিয়ে কেবল বললাম যে আমি কেবল সত্যটা জানতে চাই । জানতে চাই জারাকে কে হত্যা করেছে ।
তারপর জারার রুমটা দেখতে চাইলাম । আমি যদিও জানি না সেখানে আমি কি পাবো তবে আমার মনে হল সেখানে একটু খুজে দেখা দরকার । জারার বাবা মানা করলো না । জারার রুমে ঢুকে পুরো রুমটাই আমি আর সৌরভ খুজে দেখতে লাগলাম । একটা সময় একটা ছোট্ট সেফ খুজে পেলাম । সেটা ভাঙ্গতেই সেখান থেকে একটা মোবাইল বের হয়ে এল । তারপর বেশ কিছু টাকা । এক জোড়া কানের দুল । দেখে বেশ দামী মনে হল । আর একটা ক্যান বের হল । সেটার ভেতরে পাউডার দেখতে পেলাম । কিসের পাউডার সেটা বুঝতে পারলা না । আরও পাওয়া গেল কয়েকটা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট । জারা কি প্রেগনেন্ট ছিল ?
আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না ।
ফোনটা অন করতে গ্যালারীতে একটা ছবি দেখতে পেলাম । জারা আর ওর ভাই সিকান্দার হাসি মুখে ছবি তুলে আছে । সিকান্দারের হাতে একটা মেসিনগান । জারা বলেছিলো কাশ্মিরের এক টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে সিকান্দারের মায়ের সংযোগ খুজে পেয়েই ওর বাবা তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে । তাহলে কি জারাও এই টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে আছে ?
সেই মোবাইলটাতে কেবল তিনটা কনট্যাক্ট দেখতে পেলাম । যার একটা এস দিয়ে সেভ করা । নাম্বারটা নিজের মোবাইলে ডায়েল করতেই দেখতে পেলাম সেটা একটা পাকিস্তানি নাম্বার । আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে গেল । তাহলে কি সত্যি সত্যিই জারা কোন টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিল ।
আমরা সব কিছু নিয়ে বাসায় চলে এলাম । তারপর সেই ফোনটা দিয়ে এস নাম্বারে ফোন দিলাম । আমাদের কাছে মনে হল যে এস তে সিকান্দার হবে । দশবার রিং হলেও কেউ ফোন ধরলো না । সৌরভ অবশ্য খুব ভয় পাচ্ছিলো । যখনই সে শুনেছে টেরোরিস্ট তখনই সে ভয়ে চুপসে গেছে ।
আমার তখনই সত্যটা জানতেই হবে । যে কোন ভাবেই । আমি ফোন টা রেখে দেওয়ার কিছু সময় পরেই ফোনটা বেজে উঠলো । আমি রিসিভ করতেই সিকান্দারকে চাইলাম । প্রথমে আমার পরিচয় জানতে চাইলো আমি সেটা দিতেই মনে হল সিকান্দার আমাকে চিনতে পারলো । তারপর আমার সাথে দেখাও করতে রাজি হয়ে গেল ।
কিন্তু সিকান্দারের সাথে কথা বার্তা ভাল ভাবে শেষ হল না । একটা পর্যায়ে সে আমার আর সৌরভের দিকে পিস্তল তাক করে গুলি করতে চাইলো । আর বলল যেন আমি তার পিছু নেওয়া ছেড়ে দেই । আমার দিকে কেউ কোন দিন পিস্তল তাক করে নি । সৌরভের দিকেও না । আমরা কেবল কয়েক মুহুর্ত স্ট্রাচু খেয়ে গেলাম । সিকান্দার আমাদের রেখে চলে যাওয়ার যেন নড়তে পারছিলাম না ।
তারপর বেশ কিছু দিন আমরা কোন কিছুই করলাম না । কেবল জারার সেফ থেকে পাওয়া পাউডারের ক্যান থেকে খানিকটা কাগজে পুড়ে নিয়ে গেলাম ইনেসপেক্টর রানার কাছে । বললাম যে আমাদের কোচিংয়ের এক ছেলের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি । সে আমাদেরকে জানালো যে এটা আসলে কোকেন । আমাদের মনে এবার সত্যি সত্যি সন্দেহ দানা বাঁধলো যে জারা সত্যি সত্যিই কোন টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথেই যুক্ত ছিল । তারাই হয়তো তাকে মেরে ফেলেছে । এখানে আমাদের আসলে আর কিছুই করার নেই ।
তবে আমাদের দুজনের কারো মনেই শান্তি পাচ্ছিলাম না । শেষে সৌরফ নিজেই এগিয়ে এল । সে বলল যে এটার শেষ সে দেখতে চায় । সে সব খোজ খবর নিয়ে নিয়েছে । আমাদের সিকান্দারকে খুজে বের করতে হবে । যাই হোক না কেন সত্যটা জানতেই হবে । সিকান্দারকে পাওয়া যাবে কেবল কাশ্মিরে । সেখানেই যাওয়ার প্লান করলাম । যদিও আমাদের চন্দন কোচিংয়ের হেড চন্দন স্যার আমাদের ছুটি দিতে চাইলো না তখন আমরা খানিকটা বাকা পথ ধরলাম । তাকে বললাম যে যে তার সেক্রেটারি শীলা আন্টির সাথে রাতে এখানে অকাম করেছে সেটা আমরা জানি আর যদি আমরা এটা তার স্ত্রীর পর্যন্ত না নিয়ে যাই তাহলে.... আমাদের লাইন শেষ করতে হল না । তার আগেই সে আমাদের ছুটি দিয়ে দিল ।
তিন
হাজারটা চেকিং শেষ করে আমরা কাশ্মিরে ঢুকতে পারলাম । খোজ খবোর নিয়ে সিকান্দারের মা ফারজানার খোজ বের করলাম । তার মায়ের কাছে গিয়েই আমাদের সন্দেহের কথা বলতেই ফারজানা জোর দিয়ে বলল যে তার ছেলে সিকান্দার আর জারার ভেতরে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল । সিকান্দার কোন ভাবেই তার বোনকে মারতে পারে না । আমরা তবুও বললাম যে তার সাথে আমরা কথা বলতে চাই । ফারজানার নাম্বার দিয়েই আমরা সিকান্দারের কাছে ফোন দিলাম । মায়ের ফোনে আমাদের কন্ঠ শুনতে পেয়ে সে এবার একটু ভয় পেল এবং আমাদের সাথে দেখা করতে রাজি হয়ে গেল ।
এবার সিকান্দারের কাছ থেকে আমরা সব তথ্য জোগার করলাম । সিকান্দার জানালো যে সে আসলেই একটা টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে যুক্ত । তারা পাকিস্তান থেকে ড্রাগস নিয়ে আসে তাদের ফান্ডিংয়ের জন্য । বিভিন্ন উপায় আছে । তার তারা বিভিন্ন কালচারাল ফাংশন ওরগানাইজ করে । এমন একটা কালচারাল ফাংশন আয়োজন করা হয়েছিলো করাচিতে । আমার মনে পড়লো জারার ইনস্টাগ্রাম ফটোতে আমি দেখেছিলাম ও এমন একটা ছবি পোস্ট করেছিলো । সিকান্দার আরো জানালো ওর মাধ্যমেই প্রায় ৫ কোটি টাকার কোকেইন সে ইন্ডিয়ার ভেতরে এনেছিলো । জারা ছিল একজন পিএইচডি স্টুডেন্ট তার উপর কালচারাল ফাংশনে গিয়েছিলো । কেউ জারাকে সন্দেহ করে নি ।
কিন্তু যখন হোটেলে সিাকন্দার সেই ব্যাগটা আনতে যায় তার আগেই জারা সেটা খুলে ফেলে । এবং সিকান্দারকে খুব বকাঝকা করে । শেষ সিকান্দারকে রাজি করায় যে সে ফিরিয়ে আনবে । সিকান্দারও রাজি হয় । বলে এই কাজটা শেষ করার পরে সে আর এদের সাথে যুক্ত হবে না । তারপর তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল । আমি জনাতে চায় সিকান্দারের সাথে জারার যে ছবিটা ছিল সেটা কোথায় তোলা যেখানে সে মেসিনগান হাতে নিয়ে পোজ দিয়েছে । সে জানায় দিল্লীর এক হোটেলে । জারার মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই ।
তখনই আমার মনে ধাক্কা মারে । আমি সিকান্দারের কলার চেপে ধরে বলি যে একটু আগেই সে বলল যে সে জারার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে সে ছেড়ে দিবে সব তাহলে ওর মৃত্যুর আগে কিভাবে মেশিন গান নিয়ে হাসিমুখে পোজ দিল । সে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল । আর বলে গেল সে আবারও আসবে তবে এখন তাকে যেতেই হবে ।
আমার বদ্ধমুল ধারনা জন্মে গেল যে সিকান্দার সব কিছু জানে জারার খুনের ব্যাপারে । আমি তখনই ইনেসপেক্টর রানা ফোন করে সব বললাম । সে বলল যে সে স্থানীয় পুলিশকে সব জানাচ্ছে । আমরা যেন একা একা কিছু না করি ।
কিন্তু সব কিছু এতো সহজ ভাবে হল না । আমি আবার যখন সিকান্দারের ফোনে ফোন দিলাম আহমেদ নামের একজন ফোন ধরলো । আমাদের জলদিন করে সেখানে হাজির হতে বলল । আমরা গিয়ে দেখি সিকান্দার নিজের রুমে মরে পড়ে আছে । নিজের মুখে পিস্তল পুরে সে গুলি করেছে । পুলিশও এসে হাজির হল । ইনেসপেক্টর রানার সাথে তার কথা হয়েছে ।
মরার আগে সিকান্দার তার পকেটে একটা চিরকুট লিখে রেখেছিলো । সেখানে একটা লিংক দেওয়া দিল । লিংক ওয়েবে চালু করতেই সিকান্দারকে দেখতে পেলাম । এই হোটেল ঘরেরই সে বসে ভিডিও করেছিলো । সে ভিডিওর দিকে তাকিয়ে হাসেম ভাই যে দিকা তাদের টেরোরিস্ট গ্রুপের হেড তাকে উদ্দেশ্য করে বলল যে সে হয়তো ধরা পড়তে পারে তার জন্যই সে সুইসাইড করছে । তবে সে তার জারা আপাকে হত্যা করে নি । কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পরলে তাকে টরচার করে অন্য অনেক কিছু বের করে নিবে তারা তাই সে নিজের জান দিয়ে গেল ।
আমরা আবারও কানা গলিতে এসে পড়লাম । মৃত্যুর সময় কেউ মিথ্যা কথা বলে না । সে হয়তো টেরোরিস্ট ছিল কিন্তু জারাকে সে হত্যা করে নি । তাহলে কে মেরেছে জারাকে । আর আমার বারবার মনে হল সিকান্দার আমাদের কারনেই নিজের জান দিয়ে গেল । নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল । বারবার মনে হল অনেক হয়েছে । আর না । এখানেই সব শেষ করা উচিৎ । এখানে সব কিছু থামানো দরকার । এখনই ফিরে গিয়ে চন্দন কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করাই বরং ভাল আমার জন্য ।
কিন্তু সৌরভের ভাব দেখে মনে হল সে এসব না ভেবে অন্য কিছু ভাবছে । সৌরভকে আমি প্লেনের টিকিট কাটতে বললে ও জানালো যে নেট কাজ করছে না বেশ কিছু সময় ধরে । আমি বললাম যে তাহলে অনলাইনে কাটার দরকার নেই । আমরা এয়ারপোর্টে গিয়েই কাটবো । তখনই সৌরভ বলল আমরা হয়তো ভুল করছিলাম । আমরা এতো সময় কেবল একটা দিক নিয়ে ভাবছিলাম আমাদের আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবা দরকার । আমি কিছু শুনতে চাইলাম না । সৌরভ বলল যে আমাদের জারার ঐ সেফের আরও জিনিস পত্র নিয়ে ভাবতে হবে । আমি সাথে করে সেই কানের দুল নিয়ে এসেছিলাম । আমি সেটা বের করলাম । সৌরভ বলল যে এতো দুর এসে আমাদের ফিরে যাওয়া ঠিক না । কানের দুলের দিকে তাকিয়ে বলল যে জিনিসটা দেখে এই কাশ্মিরি মনে হচ্ছে, আর জিনিসটা বেশ দামিও । এমন হতে পারে যে এই দুলটা জারাকে যে দিয়েছে সেই মারতে পারে তাকে ।
তখন আমাদের হোটেলের বয় আমাদের দরজায় উকি দিয়ে জানালো যে আবারও নেট চলে এসেছে । তারপর আমার হাতের কানের দুলের দিকে তাকিয়ে বলল যে এই কানের দুল এখানেই তৈরি । সৌরভ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো । তার ধারনা সঠিক হয়েছে ।
আমরা আবার খোজ নিতে বের হলাম । হোটেল বয়ই আমাদের বলে দিল কোথায় কোথায় খুজতে হবে । আমরা প্রায় সব গুলো জুয়েলারির দোকানই খুজে ফেললাম । সবারই কানের দুলটা দেখে বলল যে তারা এর থেকে ভাল করে বানিয়ে দিতে পারবে । যখন মনে হল আবারও হয়তো আমরা কানা গলিতে এসে পড়বো তখনই আমরা সেই দোকানটা খুজে পেলাম যেখান থেকে এই দুলটা বানানো হয়েছিলো বছর খানেক আগে । দুলটার ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে দুলটার দাম পড়েছিলো তিন লাখ আশি হাজার রুপি । আর একজন আর্মির লোক দুলটা বানিয়েছিলো । এবং লোকটা দেখতে উচু লম্বা আর বেশ সুদর্শনও ছিল ।
আমরা আবার জারার ইনস্টাগ্রামে একাউন্টে ঢুকে কাশ্মিরের পোস্ট খুজতে লাগলাম । একটা ছবি পেয়েও গেলাম । তারিখটা দেখে মনে হল বছর খানেক আগে ও এই কাশ্মিরে এসেছিলো আর্মিদের উপর একটা রিপোর্ট বানানে । আমি পোস্টের নিচে দেওয়া ওর ব্লগ লিংকে ক্লিক করলাম । বেশ কয়েকটা ছবি দেখতে পেলাম সেখানে । সেখানে থেকেই আমি একজন আর্মিকে চিনতে পারলাম । এই সুদর্শন লোকটা জারার শেষ ক্রিয়া অনুষ্ঠানে এসেছিলো । জারার বাবা যখন আমাকে চলে যেতে বলছিলো তখন তার পাশে এই লোকটাই দাড়িয়ে ছিল ।
আমি জারার বন্ধু মহসিন ছবিটা হোয়াটসএপ করে করে তার নাম জানতে চাইলাম । মহসিন বলল তার নাম ফাইজ খান । ক্যাপ্টেন ফাইজ খান । ওদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড ! স্কুলে ওর কয়েক বছর সিনিয়র ছিল । এবং তার পোস্টিং এখন এই কাশ্মিরেই ।
আমি আবার জারার বাবার কাছে ফোন দিলাম । ক্যাপ্টেন ফাইজের সাথে দেখা করার একটা ব্যবস্থা করলাম । বললাম যে এখন ওর সাথে কথা বলা দরকার । তাকে বলা হল যে আমরা আর্মি ক্যাম্পটা ঘুরে দেখতে চাই । খুব বেশি সমস্যা হল না । জারার বাবা ব্যবস্থা করে দিল ।
আমরা পরদিনই ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হলাম । ফাইজ নিজেই আমাদের কে রিসিভ করলো । আমাদের সাথে নানান কথা বলল । আমি তাকে আমাদের ইনভেস্টিগেশনের কথাও জানালাম । তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কিছু সন্দেহ করে কি না কিংবা এখানে জারা যখন এসেছিলো তখন বিশেষ কিছু হয়েছিলো কি না । আমি কেবল তার মুখ দিয়ে কানের দুলের কথাটা আনতে চাই । আমি অপেক্ষা করছিলাম ও কখন কানের দুলের কথা স্বীকার করবে । কিন্তু করলাম না । আমরা জানতে পারলাম যে ক্যাপ্টেন ফাইজ বিবাহিত । তার একটা বাচ্চাও আছে । তবে তারা এখন বর্তমানে ডুবাইতে থাকে । দিল্লির বাবা ফাঁকাই থাকে আপাতত ।
ফাইজের কাছ থেকে আসার পর আমার মাথায় আরেকটা পরিকল্পনা এসে হাজির হল । সৌরভকে বলতে সে যেন আকাশ থেকে পরলো । কিছুতেই সে আমার সাথে যাবে না বলে দিল কিন্তু আমি জানতাম সে যাবেই । আমরা আবারও দিল্লিতে ফিরে এলাম । খুজে বের করলাম ক্যাপ্টেম ফাইজের বাসাটা । তারপর একদিন সুযোগ বুঝে সেখানে গিয়ে হাজির হলাম । মনের ভেতরে ভয়ভয় করছিলো যে যদি কোন ভাবে ধরা পড়ি তাহলে আমাদের সরাসরি জেলে যেতে হবে ।
তবে একটু বুদ্ধি করে আমি ঠিকই ঢুকে পড়লাম ক্যাপ্টেন ফাইজের ফ্ল্যাটে । তারপর তার ঘর খুজতে লাগলাম । সেফ ভাঙ্গতেই সেখানে দেখতে পেলাম বেশ কিছু টাকা । আর বেশ কিছু সোনার বিস্কিট । আমরা দুজনে কেবল একে অন্যের দিকে তাকালাম । ক্যাপ্টেন নিশ্চয়ই অন্য কোন অবৈধ কাজ করছে । দেশের সাথে বেইমানি করছে নয়তো তার কাছে কেন সোনার এতো গুলো বিস্কিট থাকবে । আর দেখতে পেলাম প্রেগনেন্সী কিট । আরেকটু ভাল করে লক্ষ্য করতেই ব্যাপারটা ধরতে পারলাম । ঐদিন জারার সেফ থেকে যে প্রেগনেন্সী কিট টা পেয়েছিলাম এগুলোও ঠিক সেই একই ব্রান্ডের এই কোম্পানীর । আমার মনে হল সেগুলো একই সাথে কেনা হয়েছিলো ।
ফাইজের পিসি চালু করেও আমরা বেশ কিছু ছবি খুজে পেলাম । তার ভেতরে কয়েকটা আছে জারা আর তার একসাথে তোলা সেলফি । একটাতে ফাইজ জারাকে এক হাত দিয়ে ধরে আছে । ছবিটা দেখে আমার বুকের ভেতরে কেমন করতে লাগলো । তাহলে সত্যি জারার এই ফাইজের সাথে পরকিয়াতে লিপ্ত ছিল ।
তাহলে কি দাড়ালো ?
জারা আর ফাইজের মধ্যে কিছু চলছিলো ? থিউরীটা খুব ভাল ভাবে কাজ করে । জারা আর ফাইজের মধ্যে কিছু চলছিলো জারা প্রেগনেন্ট হয়ে যায়, তারপর বিয়েট জন্য চাপ দেয় । এই জন্য ফাইজ তাকে মেরে ফেলল অথবা উল্টোটা । জারা সম্পর্ক শেষ করতে চাইছিলো কিন্তু ফাইজ চাইছিলো । দুজনের কথা কাটাকাটি হয় তারপর ....
সৌরভ ফাইজের ওয়েব হিস্টরীও চেক করলো । সেখানে দেখা গেল ফাইজ বেশ পর্ন সাইটে ঢুকেছে । সেই সাথে সে দিল্লির ডোভোর্স লইয়ের খোজও করেছে । এর মানে কি ফাইজ তার বউকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলো ? নাকি জারার কারনে সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো !
জারার বাবাকে সব কিছু বলতে সে চিৎকার করে উঠলো । জারার যে ক্যাপ্টেন ফাইজের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল এটা সে কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না । একটা সময় সে হিংস্র হয়ে উঠলো । ফাইজেকে খুন করে ফেলবে এটাই বলল । আমি তাকে শান্ত করে বললাম তাকে একবার আমাদের সাথে এক রুমে দেখা করিয়ে দিন । তারপর আমরা তার মুখ দিয়ে সত্য কথাটা বের করিয়ে নিব । আইন তাকে সাজা দিবে ।
ঠিক হল জারার জন্য বিশেষ দোয়া হবে এই বাহনাতেই ফাইজকে ডাকা হবে । তারপরেই আমরা তাকে ধরে তুলে দেব ইনেসপেক্টর রানার হাতে ।
রঘুকেও ফোন দিয়ে দোয়ার দিন আসতে বললাম । সে বলল যে সে বেশ ব্যস্ত । এরই মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে রঘুর কোম্পানীতে বিদেশ ইনভেস্টটরেরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে । তার কোম্পানী এখন ৩০০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানী হয়ে গেছে । সে এখন বেশ ব্যস্ত । সে তবুও আমাকে বলল যে এতো সাকসেস ফুল জীবনে তবুও তার মনে হচ্ছে যেন কিছুই নেই । জারাকে ছাড়া তার সব শূন্য শূন্য মনে হয় ।
আমি তখন বললাম যে আমরা খুনিকে বের করে ফেলেছি । রঘু চিৎকার করে বলল কে সে ? ক্যাপ্টেন ফাইজের নাম বলতেই সে আবারও চিৎকার করে তাকে গালি দিতে লাগলো । তাকে আমাদের পরিকল্পনার কথা বলতেই সে জানালো যে দোয়ার দিন সে আসবেই । নিজে থেকে বেটাকে শায়েস্তা করবে ।
আমি এবসের কাছ থেকে একটু দুরে চলে যেতে চাইলাম । দোয়া শুরু হওয়ার এখনও পাঁচ দিন বাকি আছে । আমি সৌরভকে চন্দন ক্লাসে পাঠিয়ে দিলাম । বললাম ও যেন একটু মেনেজ করে নেয় । তারপর নিজে বেরিয়ে পড়লাম ঘর থেকে ।
শেষ দৃশ্য
আমি একটু বেশি উত্তেজিত ছিলাম মনে মনে তবে বাইরে তা প্রকাশ করলাম না । দোয়া শুরু হওয়ার বেশ কিছুটা পরে ক্যাপ্টেন ফাইজ এসে হাজির হল । সে সোজা এয়ারপোর্ট থেকে এখানে চলে এসেছে । নিজের বাসায় যায় নি । সবাই জারাকে নিয়ে কথা বলল । রঘু বেশ ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলো । দোয়া শেষ হতেই ফাইজ চলে যেতে চাইলো । কিন্তু তাকে বলা হল যে রাতে যেন এক সাথেই খেয়ে যায় । প্রথমে রাজি না হলেও শেষে রাজি হয়ে গেল । তারপর তাকে নিয়ে আমরা একটা রুমে এসে হাজির হলাম । সেখানে সৌরভ আর রঘু আগে থেকেই ছিল । ফাইজকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই জারার বাবা ফাইজের কলার চেপে ধরলো । তারপর চিৎকার করে বলল, হারামদাজা তোকে আমি নিজের ছেলের মত আদর করেছি আর তুই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছিস ? ফাইজ খানিকটা অবাকই হয়েছিল । তারপর কোন মতে বলল আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । আমি জারার বাবাকে শান্ত হতে বললাম । সে ফাইজকে ছেড়ে দিল । আমি সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললাম যে খুনি এই ঘরের ভেতরেই আছে । আমি চাই সে নিজেই সব কিছু স্বীকার করুক । সেই সময়ে রঘু বাইরে যেতে চাইলো । তার নাকি এখনই যাওয়া দরকার । আমি ফাইজের দিকে ইশারা করলাম । চোখের ইশারা সে বুঝতে পারলো । তারপরই রঘুকে চেপে ধরলো । তুই কোথাও যাচ্ছিস না এখন !
সৌরভ কিছুই বুঝতে পারছিলো না । এমন কি জারার বাবাও বুঝতে পারছিলো না । আমি তাদেরকে বললাম যে আমরা সবাইকে সন্দেহ করলেও রঘুকে কেউ সন্দেহ করে নি কেউ , কারন সে তখন হাসপাতালে ছিল তখন । কিন্তু তার পক্ষেও আসা সম্ভব ছিল সেই রাতের বেলা । হায়েদ্রাবাদ থেকে সাড়ে এগারোটায় একটা প্লেন আছে যেটা দুইটায় পৌছায় দিল্লীতে আবার সাথে চারটায় সেই প্লেন ফিরে যায় । আমি সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্যই রাতে জার্নি করি । ওর পক্ষে ঠিকই সম্ভব ছিল সেই রাতের বেলা এসে আবার সকালের ভেতরে ফিরে যাওয়া । আর ওর এমন ব্যবসায়িক জার্নি করে অভ্যাস আছে অনেক ।
আমি ঐ হাসপাতালে গিয়েও কথা বলেছি । রঘু নিজের ফোনটা একজন নার্স কে দিয়ে বলে যে সে একটা মেসেজ টাইপ করে রেখেছে সেটা যেন ও তার ফিয়ন্সেকে ঠিক সাড়ে তিনটার সময় পাঠায় । এই জন্যই তার ফোন লোকেশন দেখিয়েছিলো সেই এপোলো হাসপাতাম । রঘু এসেছে প্লেনে করে রাতে । দুইটার সময় এখানে ল্যান্ড করেছে । ট্যাক্সি করে ক্যাম্পাসে গিয়ে জারাকে মেরেছে । তারপর আবার ফিরে গেছে রাত সাড়ে চারটার প্লেটে । আমি ইনেসপেক্টর রানাকে কিছু পয়েন্টের সিসিটিভি ফুটেজ বের করতে বলেছিলাম । সেখানে দেখা গেছে রঘুর মত কাউকে হেটে যেতে ।
জারার বাবা এবার রঘুর দিকে চিৎকার করে জানতে চাইলো যে সে কেন সে তার মেয়েকে হত্যা করেছে । এবার রঘু নিজের কথা শুরু করলো । সে সব জানতে পেরেছিলো । ওর পিঠ পিছনে জারা ক্যাপ্টেন ফাইয়ের সাথে রাতে শুয়ে বেড়াচ্ছিলো । এমন কি হয়তো প্রেগনেন্টও হয়ে গেছিলো । সেটাই সে জানতে পারে । এমন কি জারার একটা পরিকল্পনা ছিল যে ফাইজের বাচ্চাকেই সে জন্ম দিবে কিন্তু বিয়ে করবে রঘুকে । এতো কিছুর পরেও রঘু জারাকে হারানোর ভয় ছিল । তাই সে নিজ হাতেই জারাকে খুন করেছিলো সেদিন ।
ফাইজ তাকে একটা ঘুসি মারলো । তবে রঘুকে বিন্দু মাত্র বিচলিত দেখা গেল না । সে বলল যে এসব সে ঠিকই সহ্য করে নিতে পারে । সে ঐদিন নিজের উপরই হামলা করিয়েছিলো যাতে করে এই খুনটা সে করতে পারে । সবই তার পরিকল্পনা ছিল ।
ফাইজ জানালো যে জারা সত্যি সত্যি প্রেগনেন্ট ছিল না । ও নিজেই ওকে প্রেগনেন্সি কিট কিনে দিয়েছিলো । তারপর বলল তার আসলেই ভুল ছিল জারার সাথে মেলামেশা করা তার কথা শোনা । জারা ওর কাছে সাহায্য চেয়েছিলো । সিকান্দারের ব্যাপারে সাহায্য । ও চেয়েছিলো যে সিকান্দার যে টেরোরিস্ট গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়েছিলো সেটাকে ধরতে কিন্তু সিকান্দারকে যেন যেতে দেয় । এটাই ছিল পরিকল্পনা । কিন্তু ওদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঠিক হয় নি । সিকান্দার নাকি ওকে বেশ কিছু সোনার বিস্কিট দিয়েছিলো । জারাও সিকান্দারকে কনভেন্স করেছিলো যে সেও তার দলের হয়ে কাজ করবে আজাদ কাশ্মির গঠনের জন্য । এই দিকে ফাইজের সাথে পরিকল্পনা করেছিলো যে কিভাবে সিকান্দারকে মুক্ত করা যায় !
একটু পরেই ইনেসপেক্টর রানা এসে হাজির হয়ে গেল । রঘুকে নিয়ে গেল যে । তার মুখ খুব হাসি হাসি । এটা ছিল একটা হাই প্রোফাইল কেস । সোজা ওয়াচম্যান থেকে মিলেনিয়র ধরা পরলো ।
আমি আর সৌরভ চন্দন ক্লাসের চাকরি ছেড়ে দিলাম । তারপর নিজেরা একটা ছোট ডিটেকটিভ অফিস খুলে বসলাম । আমরা কিছুই জানতাম না গোয়েন্দাগিরির । তবে আমরা লেগেছিলাম বলেই হয়তো এটার সমাধান হয়েছে ।
তবে সব থেকে কষ্টের ব্যাপারটা হচ্ছে সেদিন রাতে জারা আমাকে মেসেজ পাঠায় নি । তখন সে মরে গিয়েছিলো । এটা না জানলেই হয়তো আমার জন্য ভাল হত ।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৪৭
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পড়লাম। ধন্যবাদ।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:১০
মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: আরো একবার পড়তে হবে
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: আরও একবার পড়ুন
৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:২৬
কে ত ন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো যে জারা প্রেমে অন্ধ হয়ে আরএসএস এর নেতার ছেলেকে বিয়ে করার মত ভুল করেনি। আজকালকার প্রেমের গল্পগুলোকে ধর্মীয় বিশ্বাসকে জাস্ট আবর্জনার মত ছুঁড়ে দেয়া হয়। আমার মতে, প্রেমের জন্য যারা ধর্ম পরিবর্তন করে, বা ধর্মকে উপেক্ষা করে, তাদের কোন চরিত্রই নেই। গল্পের নায়ককেও এজন্যে শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পারছিনা, প্রেমে পরে নিজের চরিত্র নষ্ট না করার জন্য।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
সাইন বোর্ড বলেছেন: বইটা মাত্র কয়েক দিন অাগে নীলক্ষেত থেকে কিনেছি, এখনো পড়া হয়নি, গল্পটি পড়ার পর মনে হচ্ছে বইটি না কিনলেও চলতো । ব্লপে সম্ভবত এটাই প্রথম, এতটা সময় নিয়ে গল্পটি পড়ে শেষ করলাম ।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৯
অপু তানভীর বলেছেন: বই কিনেছেন তাহলে গল্প পড়া ঠিক হয় নি । এখন আর পড়া হবে না বই টা !
তবুও ধন্যবাদ
৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯
নোমান গাজী বলেছেন: পড়ে খুবই ভালো লাগলো
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪২
নজসু বলেছেন: বেশ লাগলো।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৭
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভাল লিখেন সন্দেহ নেই। নিরিবিলি রত্ন ছড়িয়ে যাচ্ছেন হয়ত।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৯| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৬:৪০
মলাসইলমুইনা বলেছেন: চেতন ভগতের গল্পইতো আপনার না তাইতো ? সেভাবেই মন্তব্যটা করছি কিন্তু ।
মনে হলো অসম্ভব সুন্দর একটা প্লট খুব হালকা হয়ে গেলো । গল্পের শেষটা খুব জমজমাট মনে হলো না কেন যেন ।মনে হলো এতো সুন্দর একটা গল্পের কেন্দ্রীয় মেয়ের চরিত্রটা আরো যত্ন করে আঁকা যেত । কাশ্মীর নিয়ে আমাদের সবারই একটা সেন্টিমেন্ট আছে কৃষ্ণ চন্দরের লেখা পরে। সেই লেখাগুলোর মেয়েদের চরিত্রের সাথে এই চরিত্রটা মিললো না বলেই নাকি আমি শিওর না । আর আর শেষটা আরেকটু অন্য ভাবে (ঠিক কেমন সেটা অবশ্য শিওর না) লিখলেই ভালো হতো ।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
অপু তানভীর বলেছেন: পুরো ৩০০ পেইজের উপন্যাস এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে । তাই হয়তো আসল চরিত্র বুঝতে কষ্ট হয়েছে । তবে এটা একটা থ্রিলার উপন্যাস । তাই এখানে সাসপেন্সটাই মুখ্য । অন্য কিছু নয় ।
ধন্যবাড মন্তব্যের জন্য ।
তবে বই পড়ার অনুরোধ থাকবে তাহলে হয়তো আপনি আরও ভাল করে বুঝতে পারবেন ।
১০| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩
অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:
দারুন লিখেছেন !!!!!!!
তবে বইটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ে ফেলুন
১১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৪
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: Let's order it online!!!
কেমন আছেন
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: অর্ডার করে ফেলেন !
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।