নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, ঐ মেয়ে তোকে কিভাবে চিনে? আজকাল এই সব মেয়ের তোর চলাচল হচ্ছে?
আমি খুব ভাল করেই জানি আব্বু কোন মেয়ের কথা বলছে। কিন্তু তবুও না বোঝার ভান করে বললাম, কোন মেয়ের কথা বলছো?
আমার মাথায় তখন এই চিন্তা কাজ করছে যে নিশির কথা আব্বু কিভাবে জানলো? নিশির সাথে কি আব্বুর দেখা হয়েছে?
অবশ্য দেখা হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক না। আর নিশি যেমন মেয়ে সে আব্বুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতেই পারে। কিন্তু নিশির সাথে যে আমার পরিচয় আছে এটা আব্বু কিভাবে জানলো?
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বেশি ঢং করবি না। বুঝতে পারছিস না কার কথা বলছি?
আমি সত্যি বলার ভঙ্গি করে বললাম, সত্যিই বুঝতে পারছি না। কার কথা বলছো? আমার ক্লাসের কারো সাথে দেখা হইছে?
আমার গলার স্বর শুনে এবার আব্বু খানিকটা দ্বিধায় পরে গেল। ঠিক বুঝতে পারছে না আমার উপর ঠিক সে রাগ করবে কি না।
আব্বু বলল, ঐ যে কমিশনারের বোন, নিশি না ফিশি নাম?
যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই। এই বদ মেয়েই নিশ্চয়ই কিছু বলেছে। আমি তবুও নিজেকে খানিকটা শান্ত রেখে বললাম, আব্বু আমরা কদিন হয় এসেছি এই এলাকাতে বল তো! আর এতোদিন ধরে আমাকে চিনো, আমাকে তোমার এই মনে হয়? আমি এমন মেয়েকে চিনতে পারি বল?
এবার আমি আব্বুর চেহারাতে খানিকটা দ্বিধার ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম। আমি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বললাম, আরে আব্বু ঐ মেয়ে এলাকার সবাইকে জ্বালাতন করে! আমি আজ পর্যন্ত কথাও বলিও নি।
আব্বু বলল, জ্বালাতন! সবাইকে?
-হ্যা সবাইকে। কাউকে ছাড় দেয় না। আর কেউ কিছু বলতেও পারে না ওর ভাইয়ের জন্য।
বাবা খানিকটা চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইলো। তারপর খানিকটা পরে বলল, তাই নাকি?
হ্যা৷ সত্যি তাই।
আচ্ছা যা দেখি আমি কি করতে পারি।
আমি আর কিছু না ভেবে আব্বুর সামনে থেকে চলে এলাম। একবার ভেবেছিলাম আব্বুকে জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু পরে ভাবলাম থাকুক। পরে জানা যাবে। আর এই মেয়ের ব্যাপারে আমার সাবধানে থাকতে হবে।
ইদানিং কালে প্রায়ই মেয়েদের স্কুটিতে চলাচল করতে দেখি ঢাকার রাস্তায়। আমার কেন জানি এই দৃশ্যটা বেশ লাগে৷ প্রত্যেক স্কুটি চালানো মেয়েকে আমার বড় শক্ত আর সাহসী মনে হয়। মনে হয় এই মেয়ে অনায়াসে সব ঝড় সহ্য করতে পারবে৷
কিন্তু নতুন এলাকাতে বাসা সিফট করে যে এমন একজনকে দেখতে পাবো সেটা ভাবি নি। এই মেয়ে কোন স্কুটি ফিস্কুটি চালাচ্ছে না। সরাসরি বাইক চালাচ্ছে। আর বাইকটাও ইয়া বড়। আমার আবার বাইকের ব্যাপারে ধারনা কম। সম্ভব আরওয়ান কিংবা এফজেদ টাইপের কোন বাইক হবে।
মুল কথা হল এই বাইক মেয়েরা চালায় না। আমি অন্তত দেখি নি। আর এই মেয়ে কি স্বাছন্দেই না চালাচ্ছে! আমি চাইলেও চোখ সরাতে পারলাম না। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরিই তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা একটা টাইট জিন্স পরে আছে৷ সেই সাথে একটা কালো টিশার্ট। চুল গুলো পনি টেইল করে বাঁধা। হাতে সর্ট গ্লোভস পরা। আমি আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। মেয়েটা এলাকার রাস্তা ধরেই বাইক চালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে মেয়েটার দিকে সরাসরি কেউ তাকাচ্ছে না। এটা খানিকটা আমার কাছে অন্য রকম লাগলো। একে তো মেয়েটা বাইক চালাচ্ছে তার উপর এরকম পোশাক পরে আছে। মানুষের তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার কথা। বলতে গেলে কেবল আমিই তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে।
এই ব্যাপারটা কেবল আমিই নই সম্ভবত মেয়েটাও লক্ষ্য করলো। আমার থেকে একটু দূরে বাইক দাড় করিয়ে আমাকে হাতের ইশারাই ডাকলো। আমি কি করবো প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না। কেন যেন মনে হল আমি নতুন এলাকাতে বিপদে পড়তে যাচ্ছি। এই মেয়েটা সম্ভবত সাধাতন কেউ নয়।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়েই বলল, এলাকাতে নতুন?
আমি কিছু না বলে কেবল মাথা ঝাকালাম। তখনই পেছন থেকে কেউ আমার মাথায় একটা ছোট করর ধাক্কা দিল। তাতারপর কর্কশ কন্ঠে বলল, কি রে বেটা গলায় স্বর নাই? বোবা!
পেছনে তাকিয়ে দেখি চারজন আমাকে ঘিরে ধরেছে। বুঝতে বাকি রইলো না আজকে আমার খবর আছে।
মেয়েটি হাতের ইশারায় ছেলেটাকে থামতে বলল। ছেলেটা বলল, কিন্তু আপু এই পোলার আপনার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল! বেটা জানে না নিশি আপার দিকে চোখ তুলে তাকানো নিষেধ!
আচ্ছা তাহলে এই মেয়ের নাম নিশি। এ আবার কোন আপদ কে জানে! নিশি নামের মেয়েটা এবার একটু গলা চড়িয়ে বলল, বাবলু তোমাকে বলতে বলেছি? যাও নিজের কাজে।
বাবলু তার দলবল নিয়ে চলে গেল। নিশি আবারও বাইক স্টার্ট দিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল, কোন বাসায় উঠেছো?
মেতেটা সেই কখন থেকে আমাকে তুমি করে বলে যাচ্ছে। আমি কোন ভাবেই মেয়েটার থেকে ছোট হব না, বরং বড়ই হব৷ আর এই মেয়ে কি না আমাকে তুমি তুমি করে যাচ্ছে। অবশ্য আমার বুঝতে কষ্ট হল না মেয়েটা এখনকার স্থানীয় এবং প্রভাবশালী। একটু আগের আচরনই সেটা স্পষ্ট। আমি বললাম, আজগর সাহেবের বাসায়।
নিশি বলল, ইরাদের বাসা! আচ্ছা যাও আর এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকাবে না। আমার এটা পছন্দ না। প্রথমবার বলে কিছু বললাম না।
তারপর বাইক ঘুরিয়ে নিশি চলে গেল৷ আমি চুপ করে আরও কিছু সময় সেদিকে তাকিয়েই রইলাম। এমন মেয়ের সাথে কোন দিন আমার পরিচয় হতে পারে সেটা আম কোনদিন ভাবতেও পারি নি৷
নিশির ব্যাপারে আরও ভালভাবে জানতে পারি ইরার কাছ থেকে। ইরা আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। বিকেল বেলা ছাদে উঠেছিলাম। দেখলাম সেও উঠেছে। বাড়িওয়ালার মেয়েরা সাধারণত একটু ভাব নিয়েই থাকে তবে দেখলাম ইরা নিজ থেকে এগিয়ে এল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছেন অপু ভাইয়া? আপনার নাম অপুই তো!
আমি বললাম, হ্যা।
ইরা বলল, যাক নিশি আপুকে সঠিক কথাটা বলেছি। তথ্য ভুল হলে উনি আবার রাগ করতেন।
আবারও নিশির নাম শুনে একটু নড়েচড়ে বসলাম। তারপর বললাম, তোমরা ঐ মেয়েকে খুব ভয় পাও নাকি?
ইরা একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ঠিক ভয় না, আসলে তার কথা না শুনে উপায়ও নেই। তার ভাই হচ্ছে এলাকার কমিশনার। চাইলেই অনেক ঝামেলা বাঁধাতে পারে। আমরা তো শান্তিতে থাকতে চাই। তাই চুপচাপ সহ্য করি।
আমি হাসলাম একটু। আমার দেখাদেখি ইরাও হাসলো। তারপর বলল, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে?
ইরা খানিকটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, সম্ভবত নিশি আপুর আপনাকে মনে ধরেছে৷ তাই আপনার ব্যাপারে খোজ খবর নিয়েছে আমার কাছে। তাই জানতে চাইলাম। যদি প্রেমিকা থাকে তাহলে হয়তো....
-তাহলে হয়তো?
-জানি না। নিশি আপুর মেজাজ মর্জি বোঝা দায়! কি করে কিছুই বলা যায় না।
আমি খানিকটা চিন্তিত বোধ করলাম। যদিও আমার বর্তমানে কারো সাথে কিছু চলছে না। কিন্তু ঐ গুন্ডি মেয়ের নাকি আমার উপর আগ্রহ জন্মেছে!
কি আজিব কথা বার্তা! আমার উপর আগ্রহ কেন জন্মাবে? আমি এমন কিছু কি করলাম!
ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হতেই ইরার দিকে চোখ পড়লো । আমার দিকে চোখ পড়তেই ইরা এগিয়ে এল । একটু ভাল করে মেয়েটার দিকে তাকালাম । মেয়েটাকে আজকে অন্য রকম মনে হচ্ছে । ওদের এই বাসাতে উঠে এসেছি মাস খানেক হল । বলতে গেলে মেয়েটার সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হয় । সন্ধ্যা কিংবা রাতে আমি যখন ছাদে উঠি তখনই মেয়েটাকে দেখতে পাই । অন্যান্য মেয়েদের মত মুড নিয়ে থাকে না । নিজ থেকেই এগিয়ে আসে । আজকেও এগিয়ে এল হাসি মুখে ।
-কোথায় যাচ্ছেন অপু ভাইয়া ?
-ক্যাম্পাসে !
-আসেন আপনাকে লিফট দেই !
আমি এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না । ইরা আমার তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
-আরে এই সময়ে এখানে রিক্সা পাবেন না ।
-তাহলে লিফট দিবা কিসে ?
আমার কথা মুখেই রয়ে গেল তার আগেই দেখলাম আমাদের বাসার দারোয়ান একটা রিক্সা নিয়ে হাজির হল । রিক্সাতে উঠতে উঠতে ইরা বলল
-কই আসুন ! নাকি আমার সাথে রিক্সায় চড়তে সমস্যা ?
-না সেটা না ! তোমার বাবা দেখলে সমস্যা করবে না । হয়তো দেখা যাবে আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে বলতেছে ।
ইরা শব্দ করে হাসলো । তারপর বলল
-ভয় নেই । কিছু হবে না । বাবা বাসা ছাড়তে বলবে না । আসুন !
আমি রিক্সাতে উঠে বসলাম । আমমি অবশ্য এমনিতেই ইরার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম । গতকাল রাতে ইরার সাথে আমার কথা হয় নি । গতকাল রাতেই আমি ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু গতকাল রাতে ও আসে নি । কিংবা হয়তো এসেছিলো আমি যাওয়ার আগেই চলে গিয়েছে ।
রিক্সা চলতে শুরু করলো । এলাকার ভেতর দিয়ে ইরার সাথে রিক্সায় একটু যে অস্বস্তি লাগছিলো না সেটা বলবো না । যদিও এই এলাকা আমার জন্য নতুন তবে ইতিমধ্যে কয়েকজনের সাথে চেনা পরিচয় হয়েছে । তারাও আমাকে এবং আমার ফ্যামিলির মানুষকে চিনতে শুরু করেছে । এই খবর বাসায় পৌছাতে খুব বেশি দেরি হবে না ।
এলাকা থেকে বের হওয়ার ঠিক আগে নিশির সাথে দেখা হয়ে গেল । মোড়ের মাথায় নিশি সাধারনত বসে বসে আড্ডা দেয় । এই সকাল বেলাতেই যে ও আড্ডা দিবে সেটা ভাবি নি । আমাদের দিকে সরু চোখে তাকালো । আমি অনুভব করলাম ইরা তখনই যেন আমার দিকে খানিকটা সরে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-কি ব্যাপার অপু ভাইয়া এরকম জড়সড় হয়ে বসে আছেন কেন ?
-না মানে !
-শুনেন এতো অস্বস্তি নিয়ে থাকবেন না তো ! আমার পাশে বসলে নিশ্চয়ই আপনার মান ইজ্জত চলে যাবে না । নাকি যাবে ?
-আরে না না কি বলছো এসব ? আমার তো বরং ভাল লাগছে !
-সত্যি ?
-হুম !
-যাক ! ভাল । আমি খানিকটা চিন্তিত ছিলাম । আমি আপানকে না জানিয়েই একটা কাজ করে ফেলেছি !
আমি বললাম
-কি কাজ ?
-কেন আপনার তো আন্দাজ করার কথা !
সত্যিই আমার আন্দাজ করার করার কথা । আমি সম্ভবত বুঝতেও পেরেছি যে ইরা আসলে কি বলতে চাইছে । গতকাল রাতে ঠিক এই কারনেই আমি ওর সাথে কথা বলতে চাইছিলাম । গতকাল সন্ধ্যার সময় আমি বাসায় ফেরার সময় নিশি তার বাইক নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাইকে ওঠো ?
আমি বললাম
-আমি বাইকে উঠি না !
-কেন ? ভয় লাগে ?
-হ্যা ।
-পোলা মানুষ হয়ে বাইকে ভয় ?
আমি কিছু বললাম না । চুপ করে রইলাম । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইরা কি তোমার গার্লফ্রেন্ড ?
আমি খানিকটা চমকে গেলাম । এই কথা হঠাৎ ! আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । ইরা আমার প্রেমিকা হতে যাবে কেন ? এই এলাকাতে আসার আগে ওকে আমি চিনতামও না ।
আমি বললাম
-হলেই না কি ? কেন ? হতে পারে না ? নাকি একালায় থাকতে হলে প্রেম করা যাবে না ? এমন কোন নিয়ম আছে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ?
শেষ কথাটা খানিকটা টিটকারির সুরেই বললাম । এই একালাতে আসার পরে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি যে নিশির ভাইকে এলাকার মানুষ খুব ভয় পায় । অবশ্য ভয় পাওয়ার কথা । ক্ষমতায় যেই আসুন কমিশনার সব সময় ওর ভাই ই থাকে । আগে ওর বাবা ছিল এখন ওর বড় ভাই । এই এলাকার শেষে ওদের বাপ দাদার আমলের কাঠের ব্যবসা । লোক মুখে শুনেছি যে এই এলাকার বসতি ওরাই নাকি শুরু করেছে ।
-না এমন কোন নিয়ম নেই ।
এইবার আমি খানিকটা অবাকই হলাম । কারন নিশির কন্ঠে আমি খানিকটা আশাহতের সুর শুনতে পেলাম । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বাইকটা স্টার্ট দিল । আর কিছু না বলে চলে গেল । আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আমার সাথে ইরার কিচু চলছে কি না সেটা এই মেয়ের চিন্তার কেন ? এই মেয়ে এই তথ্য কোথা থেকে পেল !
এইটা জানার জন্যই আমি ফ্রশ হয়ে ছাদে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম । ইরার সাথে কথা বলতে হবে । কিন্তু ইরা রাতে ছাদে এল না । ওর নাম্বারও আমি চেয়ে নেই নি তারই ফোন করতে পারলাম না ।
ইরা বলল
-গতকাল সকালে নিশি আপু আমাকে ধরেছিলো !
-কি ব্যাপারে ?
-আপনার ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়ার জন্য । আমি যে আপনার সাথে যে আমি প্রায়ই ছাদে বসে গল্প করি এটা তার কানে গেছে ।
আমি খানিকটা রাগান্বিত হয়ে বললাম
-আমি তোমার সাথে গল্প করলে তোমার বাবার অপছন্দ হতে পারে, সে কিছু বলতে পারে ! নিশি বলার কে ?
-আপনি কিন্তু আমার আগের কথা মনে রাখেন নি । আমি আপনাকে বলেছিলাম যে নিশি আপু সম্ভবত আপনাকে কোন কারনে পছন্দ করেছে । এখন পছন্দের মানুষের সাথে অন্য কেউ পুটিসপাটিস করলে তো রাগ করবেই !
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । ইরা বলল
-আর যদি হাতে ক্ষমতা থাকে তাহলে তো বোঝেনই !
-হ্যা বুঝতে পারছি । কিন্তু এখন ?
-সেটাই । আমি জানি আপনি কিংবা আপনার পরিবার কেউ চাইবেন না এমন একটা ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক করতে ! তাই না ?
আমি মুখে কিছু বললাম না তবে এটা সত্য কথা । আমি আসলেই চাই না । ঐদিন এই বদ মেয়ে আমার বাবাকে ফোন দিয়ে নাকি বলেছে আমাকে সে তুলে নিয়ে যাবে !
আমি শুনে আকাশ থেকে পড়েছি । একটা মেয়ে আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে বলেছে আমাকে নাকি তুলে নিয়ে যাবে ! এর কোন মানে হয় ! আব্বু তো বলেছে এই এলাকাতেই সে আর থাকবে না ।
আমি ইরার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি করবো বল ?
ইরা একটু হাসলো । তারপর বলল
-সেটার জন্যই আপনার কাজ একটু সহজ করে দিয়েছি।
-মানে ?
-মানে হচ্ছে গতকাল আমি নিশি আপুকে বলেছি যে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড ! আপানাদেরকে আমিই আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি ।
আচ্ছা এই জন্য গতকালকে নিশি আমাকে এই কথা জানতে চেয়েছিলো । আমি কি বলবো ঠিক খুজে পেলাম না । ইরা বলল
-আমার মনে হয়েছে এই কাজটা করলে সে হয়তো আপনার পিছু নিবে না ! আপনি রাগ করেন নি তো ?
-না না রাগ করি নি তবে অবাক হয়েছি খানিকটা !
ইরা মিষ্টি করে হাসলো । তারপর বলল
-অবাক হওয়া ভালো । আমার সাথে থাকেন আরও অবাক হবেন !
আমার কেন জানি ইরার কথা শুনে বেশ ভাল লাগলো । এর আগে আমার কারো সাথে সম্পর্ক গড়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই । মুখচোরা স্বভাবের জন্যই মেয়েদের সাথে ঠিক মিশতে পারি না আমি । ইরা সেদিক দিয়ে নিজের উদ্দ্যোগেই আমার সাথে এসে কথা বলে । ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভাল লাগে ।
ইরাকে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হল খুব কিন্তু সেটা করতে পারলাম না । তার আগেই ওর ক্যাম্পাস চলে এল । রিক্সা থেকে নামতে নামতে ইরা বলল, তো সন্ধ্যা দেখা হবে আমার ফেইক বয়ফ্রেন্ড !
আমি হাসলাম কেবল । অদ্ভুদ একটা আনন্দ কাজ করতে লাগলো মনের ভেতরে ! মনে হল ফেইক বয়ফ্রেন্ড থেকে আসল বয়ফ্রেন্ড হতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না !
এই একালাতে আসার পর থেকে আমার সাথে সব নতুন নতুন ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে । এভাবে হঠাৎ করেই ইরার সাথে আমার ভাব হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারি নি । বলতে গেলে প্রতিদিনই ইরার সাথে ক্যাম্পাসে যাই একই রিক্সায় করে । রাতে কিংবা সন্ধ্যায়ও আমাদের দেখা হয় ছাদে । ও আমার সাথে অনেক কথা বলে । কত রকমের গল্প যে ও করতে পারে । আমি নিজেও গল্প করি । আমার সময় খুব ভাল কাটে ! মনে হয় এমন চমৎকার সময় কিভাবে কেটে যাচ্ছে !
সব কিছু কেমন যেন একের পর এক ঘটতেই লাগলো । আমি কেবল অবাক হয়ে সেই ঘটনা গুলো সাক্ষী হচ্ছি কেবল । আমার হাতে যেন আর কিচুই নেই । মনের ভেতরে যেন খানিকটা অস্বস্তি কাজ করছিলো না সেটা আমি বলবো না তবে ইরার সাথে মেলামেশাটা আমি উপভোগই করছিলাম ।
তারপর উপর আগে নিশির চোখ । এই মেয়েটা আমার ভেতরে কি দেখেছে আমি নিজেও জানি না । আমি যখনই বাইরে বের হতাম মেয়েটাকে দেখতে পেতাম । তবে এখন নিশি আর আমার কাছে আসতো না কিংবা আমার সাথে কথা বলতেও চাইতো না । ঐদিনের পরে বাবার ফোনেও আর ফোন করে জ্বালাতন করে নি । একদিন দিয়ে ভালই হয়েছে । ইরা যেটা ভেবেই নিশিকে কথাটা বলুক না কেন সেটা দিয়ে একটা ঝামেলা শেষ হয়েছে । এইটা নিয়েই শান্তিতে ছিলাম।
তবে শান্তি বেশি সময় স্থায়ী হল না । একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছি । হঠাৎ করে একটা ছেলে আমাকে নাম ধরে ডাক দিল । ছেলেটাকে আমি নিশির সাথে প্রায়ই দেখেছি । একটু অবাক হলাম । কারন ঐদিনের পর নিশি যেমন আমাকে আর ঘাটায় নি, তেমনি ভাবে ওর আশে পাশের ছেলে গুলোও ঘাটায় নি । তাহলে আজকে আবার কি চায় !
আমি পায়ে পায়ে এহিয়ে গেলাম । ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ভাই আপনারে ডাকে !
আমি বললাম, কোন ভাই ?
-সজিব ভাই !
আমি প্রথমে চিনতে পারলাম না এই সজিব ভাইটা আবার কে ! কিন্তু তারপরই মনে পড়ে গেল । এই সজিব ভাই হচ্ছে নিশির মেঝ ভাই । তার বড় হচ্ছে রাজিব ভাই এই এলাকার কমিশনার ! এই সজিব ভাই আবার আমার কাছে কি চায় !
আমাকে নিয়ে হাউজিংয়ের এক পাশে চলে গেল । আমি চাইলেও মানা করতে পারতে পারতাম না । তাই চুপচাপ ছেলেটার সাথে সাথে সাথে চলে এলাম ।
সজিব সাহেব বয়সে আমার আমার সমানই হবে । নিশির পিঠাপিঠি ভাই সম্ভবত । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমিই অপু !
-জি !
কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-দেখো তোমাকে সরাসরি কথাটা বলি ! কাজটা তুমি মোটেই ভাল করছো না !
আমি বুঝতে পারলাম যে কোন কাজটার কথা বলতেছে । তার ছোট বোন আমার পেছন পেছন ঘুরতেছে এবং আমি তাকে পাত্তা দিচ্ছি না এটা তার পছন্দ হচ্ছে না । একবার মনে হল বলি যে তোমার বোনকে সামলাও কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না । আশে পাশে কেউ নেই । এই কথা বললে আমাকে মাইর খেতে হতে পারে !
সজিব বলল, ইরার সাথে এতো লুটুর পুুটুর কি তোমার ?
আমি একটু চমকে গেলাম ! কি বলল এই ছেলে !
ইরা !
আমি বললাম
-ইরা ? আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে ?
পেছন থেকে একজন ধমক দিয়ে উঠে বলল
-বেটা জানোস কে ? থাপড়াইয়া দাঁত খুলে ফেলবো !
আমার এখন কি বলা উচিৎ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । আমি ভাবতেই পারি নাই এই ছেলে আমাকে ইরার ব্যাপারে কিছু বলবে সজিব বলল
-ইরার সাথে তোকে যেন আর না দেখি ! আমার কানে যদি এই কথা যায় তাহলে তোর কিন্তু খবর আছে ! আর এক মাস সময় দিলাম । অন্য এলাকাতে বাসা নিয়ে চলে যাবি ! যা এখন !
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে এলাম । কি সমস্যায় পড়া গেল ! এখন কি হবে ?
বাসায় এসে কথাটা বলতেই বাবা যেন রাগে ফেঁটে পড়লেন । এমন একটা ভাব যেব সব দোষ আমারই । আমারই কারনে এই এলাকা ছেড়ে চলে হবে ! বাবা এখনও মনে করছে যে নিশির কারনেই আমাদের এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে !
অবশ্য দোষ যে খানিকটা আমার নেই সেটা বলব না । আমার দোষ আছে তবে সেটা খুবই সমান্য । আর এখানে আমার খুব একটা হাতও নেই । একে তো ঐ মেয়ে আমাকে পছন্দ করেছে এতে আমার নিজের কোন হাত নেই । তারপর ইরা নিজ থেকে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে এতেও আমার কোন হাত নেই । আমি কেবল হাওয়ার সাথে তাল দিয়ে গিয়েছি । আর তাল দিতে গিয়েই যে এই কাজ হয়ে যাবে সেটা ভাবি নি !
বাবা কিছু সময় চিৎকার চেঁচামিচি করলেও পরে বললেন যে কাল থেকে নতুন বাসা খুজতে হবে । জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা চলে না । আমরা সাধারন মানুষ । কিন্তু ঐ রাতেই আরও কিছু হওয়ার বাকি ছিল ।
হঠাৎ আমাদের কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি নিজের ঘরেই ছিলাম । একটা সময় মা এসে ড্রয়িং রুমে ডাকলো আমাকে !
আমি ড্রয়িং রুমে গিয়েই ধাক্কা খেলাম । সেখানে নিশি আর সজিব বসে আছে । বাবা বসে আছে তার পাশে । বাবার মুখ গম্ভীর ! আমি কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । কি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারলাম না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো তারপর সজিবের মাথায় একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,
-সরি বল !
সজিব আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বিকেলের কথায় তুমি কিছু মনে কর না ! কেমন !
আমি বললাম
-না ঠিক আছে !
সজিব বলল
-সরি আমি !
তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলল
-হয়েছে ?
নিশি বলল
-হ্যা হয়েছে । এর পর থেকে এরকম মাস্তানী বাদ দে ! যা ভাগ এখন !
সজিব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল । নিশি তখনও বসে আছে । আমার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-আঙ্কেল আমি খুবই সরি সজিবের আচরনে । আমি কিছু মনে করবেন না । ভাইয়ার কানে যদি সজিবের এই কান্ড কারখানা যায় তাহলে ওকে একেবারে মেরেই ফেলবে ! আপনারা প্লিজ কিছু মনে করেন না !
আব্বা গম্ভীর মুখেই বলল
-না না ঠিক আছে । কোন সমস্যা নেই !
নিশি এবার আমার দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো । এই প্রথম আমি নিশির দিকে তাকালাম । নিশি আজকে অন্যান্য দিনের মত জিন্স টিশার্ট পরে নি । একটা নীল রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । চোখ গুলো খোলা ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা আসি !
আমার কি মনে হল আমি বলল
-আচ্ছা আমি এগিয়ে দেই !
বলে নিশির সাথেই বের হয়ে এলাম । সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিশিকে বললাম
-থেঙ্কিউ !
নিশি হাসলো । তারপর বলল
-ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই । দোষ তো সজিবেরই !
-সজিব কি ইরাকে পছন্দ করে ?
-হ্যা অনেক দিন থেকেই ঘুরছে ওর পেছনে । কিন্তু আসল ঘটনা জানে না !
আসল ঘটনা বলতে নিশি সম্ভবত আমার সাথে ইরার মেলামেশার কথাটা বোঝাচ্ছে ! ইরাই তো নিশিকে আমার ব্যাপারে বলেছে । নিশির ব্যাপারটা জানার কথা ! গেট দিয়ে বের হয়ে এলাম । নিশি যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইরার ব্যাপারে সাবধান থেকো ! তুমি যা ভাবছো ব্যাপারটা সেরকম মোটেও না !
আমাকে আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে নিশি হাটা দিল । একবার মনে হল ওকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করি ! কিন্তু তারপরই মনে হল ও হয়তো ঈর্ষা থেকেই এই কথা বলছে । কিন্তু নিশি কেন যে কথাটা আমাকে বলল সেটা আমি বুঝতে পারলাম তার ঠিক দুইদিন পরে !
রাতে যখন ছাদে আমি ইরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো কিছু যেন একটা ঠিক নেই। ছাদ থেকে যখন নিচে তাকাই তখন দেখলাম সেখানে বেশ কিছু লোকের আনাগোনা । তারা কি নিয়ে যেন কথা বলছে । আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না । তবে ওদের মুখে আমি বেশ কয়েকবার ইরার নামটা শুনতে পেলাম ।
ইরার কি কোন ক্ষতি হয়েছে ?
ওকে ফোন দিয়ে গিয়ে দেখি ওর ফোনটা বন্ধ ! কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । আজকে সকালেও ইরা আমার সাথেই ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো । হেসে হেসে আমার সাথে কথা বলছিলো । যখন ও রিক্সা থেকে নেমে গেল আমার দিকে তাকিয়ে চমৎকার একটা হাসিও দিয়ে গেল । আর বলে যে রাতে ছাদে দেখা হবে !
কিন্তু এখন তার কোন দেখা নেই । সত্যি বলতে কি আমার চিন্তা হচ্ছিলো । আমি চিন্তিত মুখেই নিচে নেমে এলাম । নিজেদের বাসাতে যাওয়ার আগে একবার মনে হল বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে খোজ নেই । ইরা ঠিক আছে তো । কিন্তু সেটা করলাম না । নিজের বাসাতেই ঢুকে পড়লাম ।
আমি নিজের রুমে বসে গান শুনতে শুরু করলো এমন সময়ই আম্মু আমাকে ডেকে নিয়ে এল ড্রয়িং রুমে । গতদিন যখন আমাকে চিন্তিত মুখে আম্মু দেখে নিয়ে আসে তখন এই রুমে সজিব আর নিশি বসে ছিল । আজকে দাড়িয়ে আছে আমাদের বাড়িওয়ালা ! আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-বাবা তুমি কি ইরার কোন খোজ জানো ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! আঙ্কেল কি বলছে ! আমি কিভাবে ইরার খোজ জানবো ? বাড়িওয়ালা আবার বললেন
-সকালে তোমরা না এক সাথে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো ?
আমি আর ইরা যেন মাঝে মাঝেই এক সাথে এক রিক্সা করে ক্যাম্পাসে করে ক্যাম্পাসে যাই এটা এলাকার সবাই জানে । তারা সবাই আমাদের যেতে দেখে । এর ভেতরে কোন লুকোচুরি নেই । আমি বললাম
-হ্যা আজকে তো একই রিক্সাতে গিয়েছিলাম । ও ওর ক্যাম্পাসের সামনে নেমে গেল ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? আমি আমার ক্যাম্পাসে চলে গেলাম !
-আর কথা হয় নি ?
-নাহ ! আর কথা হয় নি ! কে বলুন তো ? ইরা ঠিক আছে তো !
বাড়িওয়ালা আমাদের দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকালো । তারপর বলল,
-আচ্ছা আমি আরেকটু খোজ করে দেখি ! তুমি কিছু খোজ পেলে আমাকে জানিও !
এই বলে বাড়িওয়ালা আবার হাটা দিল দরজার দিকে । আমি বোকার মত তাকিয়ে রইলাম । কি হচ্ছে এই সব !
বাড়িওয়ালা বেরিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরেই বাবলু নামের ছেলেটাকে দরজাতে দেখতে পেলাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-নিশি আপা আপনাকে ডাকে !
-নিশি !
আব্বা বাসায় ছিল না । আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখ সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি আসছি মা !
-কিন্তু ...।
-সমস্যা নেই মা !
আম্মুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলাম । আমার কেবলই মনে হতে লাগলো যে ইরার এই ভাবে হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশি কিছু না কিছু অবশ্যই জানে । ঐদিনও সে আমাকে এই ব্যাপারে বলেছিলো । কি বলেছিলো সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না অবশ্য ।
আমাদের বাসা থেকে একটু দুরেই নিশি আর সজিব বসে ছিল ওদের বাইকের উপর । আমি কাছে যেতেই নিশি আমাকে দেখিয়ে সজিবকে বলল
-এই দেখ তোর ইরাতো ভাই চলে এসেছে !
এই বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো !
ইরাতো ভাই !
সজিব নিশির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-ইরার্কি মারবি না বললাম । মাইর খাবি !
নিশি বিন্দু মাত্র হাসি না থামিয়ে বলল
-আরে বাবা খালাতো ভাইদের ভেতরে সম্পর্ক হচ্ছে খালা, মামাতো ভাইয়ের ভেতরে মামা আর ইরাতো ভাই হচ্ছে তোদের দুজনকেই ইরা ঘোল খাইয়েছে !
আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিলাম না । সজিব আর বসলো না । বাইক থেকে উঠে বসলো । তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল । দেখলাম বাবলুও আমাদের রেখে চলে গেল । আমি নিশির সামনে একা দাড়িয়ে রইলাম । কি বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে না ইরার ব্যাপারে সাবধান করেছিলাম ! সে কি করেছে জানো ?
-কি করেছে ?
-এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে ভেগেছে !
-কি ! কি বলছো তুমি ?
-একদম সত্যি বলছি ! আমার কাছে প্রমান আছে বলেই বলছি । যদিও তারা এখন কোথায় আছে সেটা ঠিক বলতে পারবো না । সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে দেখেছি । ওখান থেকে কক্সবাজার কিংবা সিলেট বান্দরবান যেকোন দিকে যেতে পারে !
আমার মাথার ভেতরে তখন সত্যিই সত্যিই কাজ করছিলো না । আমি পেছন থেকে নিশির হাসি শুনতে পাচ্ছিলাম না । আমি দ্রুত সেখান থেকে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম ।
পরের দিন গুলো আমার জন্য সত্যি অসহনীয় হয়ে গেল। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে জানতে পারলাম ইরা সত্যি সত্যিই বাসা থেকে পালিয়েছে। কদিন থেকেই তিনি ইরার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। একটা ছেলের সাথে বিয়ে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলেন। কিন্তু মাঝ খান দিয়ে কি থেকে কি হয়ে গেল৷
ইরা একবার নাকি ফোন টা চালু করেছিল। তার বাবাকে ফোন করে বলেছে তারা ভাল আছে। বয়স হিসাবে সে সাবালিকা তাই পুলিশে খবর দিয়ে লাভ নেই। তবে তারপরেও যদি সে এমন কিছু করে তাহলে সে আর কোন দিন ফেরৎ আসবে না। তাই বাড়িওয়ালা চুপচাপ আছেন। তার মনভাব দেখে মনে হচ্ছে সে ইরাকে মাফ করে দিয়েছেন। এখন ইরা ফেরৎ আসলেই তিনি খুশি।
কিন্তু আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। আর পাড়ার ঐ বদ মেয়েটা আমাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছিলো না। আমি যখনই বাইরে বের হয়, আর যখনই নিশির সাথে আমার দেখা হয় সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। তার যেন খুব মজা লাগছে। ইরা পালিয়ে যাওয়ায় নিশি যে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে সেটা আর বলে দিতে হল না। আমি নিজেকে নিশির কাছ থেকে সব সময় দুরে লুকিয়ে রাখতে লাগলাম।
কিন্তু একদিন ঠিকই নিশির একদম সামনে পড়ে গেলাম। বলতে গেলে বাধ্য হলাম। তবে সেটা একেবারে খারাপ হল না।
আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। পরীক্ষা শুরু হল দুপুর দুইটা থেকে। আমি বাসা থেকে ঘন্টা খানেক আগে বের হতাম। সেদিনও বের হয়েছি কিন্তু বের হয়েই আকাশ থেকে পড়লাম। পুরো এলাকাতে একটা বাস কিংবা একটা রিক্সা নেই। সব কেমন খাঁ খাঁ করছে। খবর নিয়ে জানতে পারলাম একটু আগে এখানে নাকি পরিবহন শ্রমিক আর ছাত্রদের মাঝে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষই সব যান বাহন চলাচল একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। এমন রিক্সা পর্যন্ত চলবে না। আমি পড়ে গেলাম বিপদে। দুপুরের এই সময়টা রাস্তা ঘাট বলতে একটু ফাঁকাই থাকে। আর আমার ক্যাম্পাস এমন দুরুত্বে যে হেটে গেলে সময় মত পৌছাতে পারবো না।
উবারে চেষ্টা করলাম কিন্তু কেউই রাইড পিক করলো না। ওদিকে সময় চলে যাচ্ছে। আমি আর দেরি না করে হাটতে শুরু করলাম। একটু পরে দৌড়াতে হবে। কিন্তু সেটা আর করতে হল না৷ আমার সামনেই এসে ব্রেক করলো নিশির বাইকটা৷
হেলমেট খুলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর বলল, কি মিস্টার দেবদাস, নিড এ রাইড?
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আজকে ও কালো রংয়ের একটা জিন্স পরেছে। আর চেকের শার্ট। চুল গুলো সেই পনি টেইল করেই বাঁধা। আমি কি বলব বুঝতে পারলাম। ওর বাইকে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু এখন এ ছাড়া কোন উপায়ও নেই৷
আমার পজেটিভ মনভাব দেখে ওর মুখে হাসি দেখা দিল। আমি কিছু না বলে ওর বাইকের পেছনে উঠে বসলাম৷
আমার বাইকে উঠতে সত্যিই ভয় করে। ছোট বেলাতে একবাত বড় মামার সাথে বাইকে উঠে দুর্ঘটনায় পরেছিলাম। বড় হাত ভেঙ্গে একাকার অবস্থা। আমার পুরো শরীরে রক্তারক্তি অবস্থা। তারপর থেকে এই বাইক জিনিসটা আমি ভয় পাই।
বাইক চলতে শুরু করলেই আমার সেই ভয়টা চেপে বসলো। আমি নিশির কাধে হাত রাখলাম কিন্তু বদ মেয়ে সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলো এবার সে স্পিড দিলো বাড়িয়ে৷ মারামারির জন্য রাস্তা একদম ফাঁকা ছিল তাই হুহু করে স্পিড বাড়তে লাগলো। এবার আমি সত্যি সত্যিই নিশির কোমর জড়িয়ে ধরলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম এই বদ মেয়ে এতে খুশিই হচ্ছিলো। থাপড়িয়ে কান মুখ গরম করে দেওয়া উচিত।
কত সময় পরে বাইক থামলো আমি বলতে পারবো না৷ আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। বাইক থাকতেই চোখ মেলে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বাইক থেকে দ্রুত নেমে পড়লাম। তারপর নিশিকে বললাম
-এতো দ্রুত না চালালেও চলতো!
নিশি হাসতে হাসতে বলল
-তুমি এতো ভিতুর ডিম কেন বলতো? তবে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলে সুযোগ পেলে আবারও এই কাজ করবো।
বদ মেয়ের কথা শোন। আর সুযোগ দিবোই না। আমি উল্টো পথে দেওয়ার আগে হঠাৎ মনে হল আজকে নিশি না থাকলে আমার পরীক্ষা দেওয়া হত না। রাগটাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে বললাম
-থেঙ্কিউ!
নিশি হাসলো। তারপর বলল
-পরীক্ষা দিও ভালভাবে। যাও।
নিশি কন্ঠে আর চোখের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। আমাকে কেমন যেন আন্দোলিত করে দিল। আমি হাটতে শুরু করলাম বিল্ডিংয়ের দিকে কিন্তু বারবার পেছন ফিরে তাকাতে লাগলাম। নিশি তখনও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
কিন্তু সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম যখন তিন ঘন্টা পরে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে এলাম। তাকিয়ে দেখি নিশি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম
-এখনও অপেক্ষা করছো?
-আরে না। বাসায় গিয়েছিলাম একটু আগে এলাম।
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার কেন যেন মনে হল নিশি মিথ্যা বলছে। ও পুরোটা সময় এখানেই অপেক্ষা করেছে আমার জন্য৷ আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না৷ নিশি বলল
-চল যাওয়া যাক।
-তার আগে আসো তোমাকে আমাদের ক্যাম্পাসের বিখ্যাত চটপটি খাওয়াই।
আমার কথা শুনে নিশি এবার খুবই খুশি হল। অন্তত ওর মুখ দেখে আমার তাই মনে হল। পুরোটা বিকাল আমি নিশির সাথে বসে গল্প করলাম আমাদের ক্যাম্পাসে। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে। খুব দ্রুত।
আমি নিশির রাগ দেখে কিছুটা সময় কেবল থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নিশিকে তখনও শান্ত করা যায় নি। ওর ভাই সজিব সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আটকাতে পারছে না। যে কোন ভাবেই হোম নিশি বাবলুকে মারবেই। কয়েকটা থাপ্পড় যে মারে নি তা নয়। বেচারা মাথা নিচ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সজিব নিশিকে আটকাতে পারছে না দেখে আমি নিজে এগিয়ে গেলাম৷ নিশির হাত ধরে বললাম
-শান্ত হও প্লিজ।
নিশি আবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-শান্ত হব? এই কুত্তারবাচ্চা তোমার গায়ে হাত দিয়েছে আর আমি শান্ত হব! আমি ওকে আজকে মেরেই ফেলবো! এতো বড় সাহস ওর!!
আমি সজিবের দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবলুকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
নিশি এই কথা শোনার সাথে সাথে সাথে বলল,
-এই সজিব, খবরদার বলতেছি, ভাল হবে না।
আমি বললাম
-নিয়ে যাও তো। আমি দেখছি।
ঐদিনের পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আগে যেমন নিশিকে দেখলেই আমি পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করতাম এখন আর সে কাজ করি না। প্রতিদিন বরং নিশির সাথেই এখন গল্প করি। আমার বাইক ভীতি অনেকটাই কেটে গেছে এখন নিশির কারনেই। এবং নিজেও রাইক চালানো শেখা শুরু করেছি।
কিন্তু এই সব কিছু একজনের কাছে ভাল লাগছিলো না। সেটা হচ্ছে এই বাবলু। আগে আমার প্রায়ই মনে হয় বাবলু নামের ছেলেটা নিশিকে পছন্দ করে কিন্তু ওর ভাইয়ের কারনে নিশিকে কিছু বলতে সাহস পায় না।
আর নিশি যখন আমার সাথে সময় কাটাচ্ছে, হাসছে খেলছে এটা বাবলুর কিছুতেই সহ্য হয় নি।
তিনদিন আগের এক দুপুরে বাবলু আমার পথ আটকালো। তারপর আমাকে পাশের গলির ভেতরে যেতে বলল। আমি প্রথমে মনে করলাম হয়তো নিশিই আমাকে ডাকছে। নিশি না হলেও সম্ভবত সজিব ডাকতে পারে কোন কারনে। যদিও কদিন ধরে ওদের দুজনের সাথেই আমার সম্পর্ক অনেক ভাল হয়ে গেছে। ফোনেই কথা হয়। দরকার হলে এখন ফোনে ফোনেই হয়। এভাবে বাবলুকে দিয়ে ডাকাডাকির দরকার নেই। তবুও মনে হল হতেই পারে৷
কিন্তু গলির ভেতরে কেউ ছিল না। বাবলুর দিকে তাকিয়ে বললাম, কি ব্যাপার এখানে ডাকার মানে কি?
বাবলু আমার দিকে তাকিয়ে হিসহিস করে বলল, বাহ গলার স্বর দেখি বদলাইয়া গেছে!
আমি বললাম, মানে?
বাবলু সেই প্রশ্নের উত্তর দিল না। বলল, শোন তোরে সাবধান কইরা দিতাছি। নিশির কাছ থেইকা দূরে থাকবি।
আমার কেন জানি মজা লাগলো। আগে এদের ব্যাপারে একটা ভয় কাজ করতো, এটা অস্বীকার করবো না কিন্তু এখন সেটা কাজ করছে না। করার মানে নেই কোন।
আমি বললাম, কেন দূরে থাকবো?
বাবলু এবার আমার কলার চেপে ধরলো তারপর বলল, তোগো মত পোলাদের চিনা আছে। নিশিরে সরল সোজা পাইয়া যা ইচ্ছে তাই করবি, সেইটা হইতে দিমু না।
তখনই আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে এই ছেলে নির্ঘাত নিশিকে পছন্দ করে। পছন্দ করলে এই কাজ সে করতোই না৷ আমি নিজের কলার ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর আর কোন কথা না বলে উল্টো পথে হাটা দিলাম। পেছন থেকে বাবলুর হম্ভিদম্ভি শুনতে পাচ্ছিলাম যদিও সেসবে কান দেওয়ার কোন কারন দেখছি না।
আর এই কথাই নিশি কোন ভাবে জেনে ফেলেছে। আমাকে ডেকে নিয়ে এসে আমার সামনেই বাবলুর উপর চড়াও হয়েছে।
সজিব ওদেরকে নিয়ে চলে গেল। আমি তখনও নিশির দুই হাত ধরে রেখেছি। এবার এক হাত ছেড়ে অন্য হাতটা নেড়ে চেড়ে দেখলাম। ডান হাতটা লাল হয়ে গেছে৷ আমি বললাম
-এই যে হাত দিয়ে মারলে ওকে ব্যাথা তো তুমি পেয়েছো।
নিশি কোন কথা বলল না। আমি বললাম
-এতো রাগ কেন?
-জানি না।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-কি?
-আমাকে এতো পছন্দ করার কারন কি বলতো?
প্রশ্নটা শুনে নিশি কেমন যেন বিভ্রান্ত হয়ে গেল। আমি মনে মনে একটু খুশি হলাম। আপাতত নিশি অন্য কিভহু নিয়ে চিন্তা করুক৷ আমি বললাম
-দাড়াও
এই বলে দৌড়ে গিয়ে মোড়ের মাথা থেকে দুইটা আইস্ক্রিম কিনে নিয়ে এলাম। একটা ওকে বাড়িয়ে দিয়ে অন্যটা ওর হাত চেপে ধরলাম। হাতটা সত্যিই লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই ব্যাথাও করছে। আইসক্রিমের ঠান্ডা ওর হাতের ব্যাথাটা প্রশমিত করবে।
নিশিকে কে শান্ত করতে আরও বেশ খানিকটা সময় লাগলো। পুরোটা সময় আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অন্য কেউ ওকে সামলাতে পারছিলো না, এমন কি সজিবের কথাও ও ঠিক শুনছিলো না অথচ আমার কাছে কতই না সহজে সব মেনে নিল।
রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে নিশি কি যেন ভাবছিলো। আমি ওকে ডাক দিতেই আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি বললাম, একটা কথা জানতে চাইবো?
নিশি বলল, বল
আমাকে পছন্দ কেন হল তোমার বল তো?
নিশি এই প্রশ্নের উত্তর টা সাথে সাথেই দিল না। আবছায়া অন্ধকারে আমি ওর চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম। নিশি বলল, আমি জানি না তোমাকে হঠাৎ এরকম পছন্দ কেন হল? ঐদিন যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে, অন্য কেউ ঐভাবে তাকালে তাকে ধরে মাইর দিতাম কিন্তু তোমার দিকে তাকিয়ে আমার কেমন যেন লাগলো, কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভূতি হল। এটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না ঠিক।
এই কথা গুলো বলেই হঠাৎ নিশি আমার হাত ধরলো। তারপর বলল, জানো তোমার আগেও একটা ছেলেকে আমার মনে ধরেছিল। অনেক আগে তখন স্কুলে পড়তাম।
আমি এই গল্প জানি। সজিব আমাকে নিশির এই প্রথম পছন্দের কথা বলেছে। নিশি তখন স্কুলে পড়ে। ক্লাস নাইনে একটা ছেলেকে ওর পছন্দ হয়। ছেলেটাও ওর সাথে কথা বার্তা বলা শুরু করে। একদিন নিশিকে ছেলেটা ওদের বাসায় নিয়ে যায়। ছেলেটার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর নিশি যখন নিজের ফ্যামিলি সম্পর্কে বলে তখন ঘটে আসল ঘটনা। ছেলেটার বাবা গম্ভীর হয়ে যায়। তারপর দিন থেকেই ছেলে আর নিশির সাথে ঠিকঠাক মত কথা বার্তা বলে না, মিশতে চায় না, এড়িয়ে চলে। ওত কোমল মনে একটা বড় রকমের ধাক্কা লাগে।
তারপর থেকেই নিশি খানিকটা বদলে যায়, বাইক চালানো শেখে, এমন করে দস্যিপনা করে বেড়ায়।
আমি ওর হাতটা আরও একটু ভাল করে ধরে বললাম পুরাতন কথা মনে করে লাভ নেই। কে তোমার জীবনে ছিল, এই প্রশ্নেত থেকেও বড় কথা এখন কে আছে?
নিশি হাসলো আমার কথা শুনো। খুশি হওয়ার হাসি।
নিশিকে তারপর ওর বাসায় পৌছে দিতে গেলাম। ওদের বাসার কাছে সব সময় মানুষজনের ভীড় লেগেই থাকে। এমন কি এই রাতের বেলাতেই। গেটের কাছে আসতেই দেখতে পেলাম স্বয়ং রাজিব কমিশনার দাঁড়িয়ে কিছু মানুষের সাথে কথা বলছে। আমাদের দেখতে পেয়ে একটু থমকে দাড়ালো তারপর লোকগুলিকে বিদার করে দিয়ে আমাদের দিকে তাকালো। নিশিকে বলল, এভাবে মাথা গরম করা কি ঠিক হয়েছে তোর?
নিশি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলল
-কেন আমি মেয়ে বলে রাগ করা কিংবা রাগ প্রকাশ করা যাবে না, তুমি করলে ঠিক ছিল?
-এর ভেতরে ছেলে মেয়ে কোথা থেকে আসলো?
-যেখানে থেকে আসার কথা সেখান থেকেই এসেছে।
এরপর কমিশনার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-এই ছেলে তুমিই বল দেখি ঐভাবে রাগ করা ঠিক হয়েছে ওর?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিশি বলল,
-ওকে কেন কিছু জিজ্ঞেস করছো? তোমার ঐ গুনধর চামচাকে আমার চোখের সামনে থেকে দূরে থাকতে বল। সে যা করেছে তার জন্য ঐ শাস্তিটুকু অনেক কম হয়ে গেছে। আজকে অপু না থাকলে ওকে মাটির নিচে কবর দিয়ে দিতাম।
এই লাইন গুলো বলে নিশি বাসার দিকে হাটা দিল। আমি আর কমিশনার সাহেব দুইজনেই ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময়। কমিশনার সাহেবের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হল বেচারা খানিকটা অসহায় বোধ করছে। খানিকটা বিব্রতবোধ করছে। যে মানুষটাকে এলাকার সব মানুষ ভয় পায় তাকে তার পিচ্চি বোন একদম পাত্তাই দেয় না, ব্যাপারটা তার জন্য খানিকটা বিব্রতকরই বটে৷
হঠাৎ কমিশনার সাহেব বলল, দেখেছো তো?
আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না কমিশনার আসলে কি বলতে চাইছে। তাই বললাম, জি কি বললেন?
কমিশনার একটু হাসলেন। তারপর আমার কাধে হাত রাখলেন। বললেন, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। দয়া করে এমন কোন কাজ কর না যাতে আমার বোনটা কষ্ট পায়।
কন্ঠে যদিও আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না, তবুও আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে নিশি কে কোন ভাবেই কষ্ট দিতে মানা করা হচ্ছে। কষ্ট দিলে আমার খবর আছে।
আমি বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। মনের ভেতরর তখন বেশ আনন্দ কাজ করছে। কেন করছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। বাসার কাছ আসতেই একটা ছায়া মূর্তি হঠাৎ করে আমার সামনে হাজির হল। আমি চমকে উঠলাম তবে সামলে নিতেও সময় লাগলো না। তাকিয়ে দেখি ছায়া মুর্তিটা আর কেউ নয় বাবলু। আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, কি ব্যাপার?
বাবলু বলল, কামডা তুই ভাল করিস নাই।
আমি বললাম, আমাকে তোমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। নিশিকে যদি আমি না থামাতাম আজকে তোমার কি অবস্থা হত ভেবে দেখেছো?
বাবলু অগ্নি চোখেই তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, তোদের দুইজনরেই আমি দেখে নিমু। আমারে চিনোস না !
প্রথমে হয়তো একটু চমকে গিয়েছিলাম তবে বাবলুর দৌড় আমার জানা আছে। তাই আর কিছু মনে করলাম না । বললাম,
-আজকে আমি না থাকলে তোমার কি অবস্থা হত মনে আছে ? মনে না থাকলে মনে করার চেষ্টা কর ! আর শুক্রিয়া আদায় করতে শেখো !
বাবলু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আরও কিছুটা সময় । ওর চোখের দিকে তাইয়ে সত্যিই আমার কেন জানি মনে হল এই ছেলে সত্যিই কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে । জীবনে হয়তো এমন অপমানিত হয়তো হয়নি কোন দিন । যে এলাকাতে যে বাঘের মত ঘুরে বেড়িয়েছে সেই এলাকাতেই সে একটা মেয়েরা হাতে মাইর খেয়েছে, যতই হোক সে কমিশোনারের বোন তবুও তো একটা মেয়ে ! এই অপমান সহ্য করা খানিকটা কষ্টের ওর জন্য । তবে এখন আর কিছু বলল না । আমার সামনে থেকে চলে গেল । আমি বাসার ভেতরে ঢুকে পড়লাম ।
কয়েকদিন পরে ঘটলো আরেক ঘটনা । ইরা যে ফিরে এসেছে সেটা আমার জানা ছিল না । ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হয়েছি দেখি ইরা ঠিক আগের মতই দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে হাসলো যেন কিছুই হয় নি । তারপর বলল
-অপু ভাইয়া ক্যাম্পাসে যাবেন ?
-হ্যা !
-চলুন এক সাথে যাই !
আমার মোটেও ইরার সাথে একই রিক্সাতে ওঠার কোন ইচ্ছে নেই আর আমি যদি ইরার সাথে এক রিক্সায় উঠি তাহলে এই কথা ঠিক ঠিক নিশির কানে চলে যাবে । আর তখন আমার সত্যি সত্যিই খবোর আছে । আমি মনে মনে ঠিক করতেছি ইরাকে কি বলে মানা করবো ঠিক সেই সময়েই আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার বাইকার কন্যা আমার সামনে এসে হাজির !
বাইকটা থামলো ঠিক আমাদের সামনেই । নিশি সাধারনত হেটমেট পরে না, কিন্তু আজকে দেখলাম একেবারে আটসাট বাইকের পোশাক পরে এসেছে । কালো রংয়ের লেদার প্যান্টের সাথে পরেছে লেদার জ্যাকেট । হাতে কালো গ্লোভস । নিশিকে দেখে ইরা কেমন যেন দমে গেল । বাইক থেকে নেমে নিশি আমার সামনে এসে দাড়ালো । তারপর মাথা থেকে হেমলেট টা খুলল । আমি উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিলাম । যাক একটা বড় ঝামেলা থেকে বেঁচে গেছি !
নিশি এবার ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার ইরা কেমন আছো ?
-ভাল আছি আপু । আপনি ভাল আছেন ?
-হ্যা ভাল আছি ! তা তোমার ইঞ্জিনিয়ার জামাই কেমন আছে ?
ইরার মুখ এবার কেমন যেন কালো হয়ে এল । নিশির কন্ঠে একটু বিদ্রুত ছিল । সেটা পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম । নিশি এবার ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
-রিক্সায় উঠবে নিজের জামাইকে নিয়ে ! অন্যের বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে না ! বুঝতে পেরেছো ?
-জি আপু !
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিশিকে দেখতে থাকি । মেয়েটা দিন দিন আমার ব্যাপারে এতোএগ্রিসিভ হয়ে যাচ্ছে ! ব্যাপারটা আমাকে খানিকটা ভিত করে তুলছে । এর পরবর্তিতে ও ঠিক কি করবে কে জানে ! আর ওখানে বেশি কথা হল না । নিশি এরই মাঝে আমার সাথে একটা কথাও বলে নি । ও আবার বাইকে গিয়ে বসলো । বাইক স্টার্ট দিল । আমি ঠিক ওর পেছনে গিয়ে উঠলাম । ইরার দিকে শেষ বারের মত তাকিয়ে দেখি ও মুখ হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । ওকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । আসলে ও চলে যাওয়ার পরে যে আমি নিশির কাছাকাছি চলে এসেছি এই ব্যাপারটা ওর জানা নেই । আমি যখন নিশির বাইকের পেছনে উঠলাম তখন ও ভাবতেও পারে নি এমন কিছু হবে ।
ইরার মুখটা খোলা রেখেই আমরা সেখানে থেকে রওয়ানা দিলাম । বলাই বাহুল্য যে সেদিন আর আর ক্লাসে যাওয়া হল না । কোথায় গিয়ে হাজির হলার আর কি কাজ কর্ম করলাম সেসব সবার না জানলেও চলবে !
এভাবেই আমাদের দিন কেটে যেতে লাগলো । মনে হতে লাগলো যে সময় কত চমৎকার ভাবেই না কেটে যাচ্ছে । সামনের দিন গুলোও বুঝি এতো চমৎকার ভাবে কাটবে । কিন্তু আমাদের কপালে অন্য কিছু লেখা ছিল । অন্তত আমি কোন দি ভাবি নি এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার চোখের সামনে । আমি তাতে যুক্ত থাকবো !
সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছিলো । বর্ষাকালে এরকম দিনের পরদিন বৃষ্টি হয়ই । তখন বাসায় বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না । আমি সকাল থেকে বাসাতেই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছিলো । এমন সময় নিশির ফোন । এখনই বাইরে বের হয়ে আসতে হবে । ফোনটা যেন বাসাতেই রেখে আসা হয় । কারন মহারানীর ইচ্ছে হয়েছে তিনি আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন । ইচ্ছে যখন হয়েছে সেটা তো পূরন করতেই হবে । কোন উপায় নি ।
বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসার বাইরে বের হয়ে এলাম । নিশি আমার বাসার ঠিক সামনেই দাড়িয়ে দিল । আমি প্রথমে কিছুটা সময় কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে । পুরো এলাকাটা টুকু নিতব্ধ হয়ে আছে । সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারনে আজকে দোকান পাট গুলো একটু সকাল সকালই বন্ধ হয়ে গেছে । সেই নিতব্ধ বৃষ্টির ভেতরে নিশি ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে আছে !
আমি ছাতা নিয়ে বের হয় নি । একবার মনে হল আরেকবার দৌড় দিয়ে ছাতা একটা নিয়ে আসবো কি না তখনই দেখলাম নিশি এগিয়ে এল আমার দিকে । আমাকে বলল, ছাতার নিচে এসো !
আমি কথা না বাড়িয়ে ওর ছাতার নিচে চলে এলাম । তারপর আমরা হাটতে শুরু করলাম । পুরো এলাকাটা কেমন যেন নির্জন মনে হল । হাউজিং টা ছাড়িয়ে আসতেই একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে এল সব । হাউজিং এলাকাতে বাড়িঘর থেকে আলো আসছিলো কিন্তু এই এলাকাতে বাজার আর দোকানপাট যার সবই এখন বন্ধ । কেমন শুনশান নিরবতা । আমরা দুজন ঠিক রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছি । আশে পাশে কেউ নেই ।
হঠাৎ নিশি ছাতাটা নামিয়ে আনলো । এক পশলা বৃষ্টি আমাদের দুজনকেই ভিজিয়ে দিল । আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । নিশি ততক্ষনে ছাতাটা রাস্তার উপর ফেলে দিয়েছে । আর আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে । আমি আবছায়া অন্ধকারে ওর চোখে ঘোলা দৃষ্টি দেখতে পেলাম । বুঝতে পারছিলাম ও আসলে কি চাচ্ছে ।
চারিপাশে শুনশান নিরবতা । কাউকে দেখা যাচ্ছে না । একটা গ্যারেজের পাশে একটা মাইক্রবাস দাড়িয়ে আছে কেবল । এদিকে একটা রিক্সা দাড় করানো । আমি আবারও নিশির চোখের দিকে তাকাই । সত্যিই সত্যিই বুকের ভেতরে একটা আলাদা কাঁপন অনুভব করি । মেয়েটার ঠোঁট আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ।
আমি চোখ বন্ধ করতে যাবো ঠিক তখনই আমি অস্বস্তিটা টের পেলাম । কেবল আমিই না, আমার মনে হল নিশি নিজেও টের পেয়েছে । আমাদের দুজনের এবার চোখাচোখি হল । চোখেই আমি ওকে বললাম যে কেউ সম্ভবত আমাদের দেখছে । আমাদের মনের কথা মনেই রয়ে গেল একটা আলো এসে আমার শরীরের উপর পড়লো । তারপর ইঞ্জিন চালু হওয়ার আওয়াজ !
গ্যারেজের সামনে দাড়িয়ে থাকা মাইক্রবাসটা চলতে শুরু করেছে । মুহুর্তের ভেতরে ওটা আমাদের কাছে চলে এল । আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পেলাম ওরার পাশের দরজা খুলে গেল । নিশিকে টেনে নিল ভেতরে !
কয়েক সেকেন্ড লাগলো পুরো ঘটনা ঘটতে । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । কেবল দেখতে পেলাম নিশিকে মাইক্রবাসের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে আর দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
আমি আর কিছু চিন্তা না করে দরজা বরাবর ঝাপ দিল । একবার মনে হল হয়তো আমি দরজাটা ধরতে পারবো না তবে শেষ পর্যন্ত ধরতে পারলাম । দরজাটা বন্ধ হতে দিলাম না । আমি জানি না আমার ভেততে এতো শক্তি কোথা থেকে এল । আমার কেবল মনে হতে লাগলো যে নিশিকে কোন ভাবেই নিয়ে যেতে দিবো না ।
মাইক্রবাসটা তখন চলতে শুরু করেছে । আমি দরজায় পা দিয়ে উঠে পড়েছি । ভেতরে থেকে একজন আমাকে ঠেলে ফেলার চেষ্টা করছে । আর দুজন নিশিকে সামলাতে চেষ্টা করছে । একজনকে আমি ঠিক ঠিক চিনতে পারলাম ।
বাবলু ! সেই আমাকে ঠেলে ফেলার চেষ্টা করছে ।
অন্য দুজন মানুষ নিশিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে । আমি গেট থেকে হাত কোন মতে ভেতরে নিচে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না । বুঝতে পারছি খুব বেশি সময় ধরে থাকতে পারবো না । বাবলু ঠিকই আমাকে ঠেলে ফেলে দেবে তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেবে । আর একবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে নিশিকে ওরা নিয়ে যাবেই । তখনই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল । আমি কোন মতে মাইক্রোর দরজাতে পা দিয়ে দাড়িয়ে একটু ব্যালেন্স করার চেষ্টা করলাম । তারপর আমি দুই হাতের এক হাত ছেড়ে দিলাম !
বাবলু এটার জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিল না । ছাড় হাত দিতেই বাবলুর মুখ বরাবুর একটা জোড়ে ঘুসি চালালাম । তারপর অন্য হাতটাও মাইক্রির দরজা ছেড়ে দিয়ে নিশির কোমর জড়িয়ে ধরলাম দুইহাত দিয়ে ! এরপর নিজেকে গাড়ি থেকে বের হয়ে দিলাম ! নিশি সহ আমি গাড়ি থেকে পড়ে যেতে শুরু করলাম ।
এটার জন্য ওরা কেউই ঠিক প্রস্তুত ছিল না । দুজন মিলে নিশির হাত ধরে রাখার চেষ্টা করলো তবে যখন বুঝলো আমাদের দুজনকে কোন ভাবেই ধরে রাখতে পারবে না আর আমি নিশিকে ছাড়বো না তখন ওরা নিশির হাত ছেড়ে দিতে বাধ্য হল ।
যখন পাকা রাস্তার উপর পড়লাম মনে হল যেন মাথাটার সাথে একটা আস্তো ইটের ঢাক্কা খেলো । শরীরের ধাক্কার কথাটা নাই বললাম । আমার সেই ছোট বেলার মামার সাথে বাইক এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়লো । পুরো মাথাটা ঝিম করে উঠলো । প্রথম কিছু সময় আমি কোন ব্যাথা অনুভব করলাম না । কিন্তু তারপর পরই যেন সব ব্যাথা এক সাথে ধাক্কা মারলো আমাকে !তবে নিশি পুরোপুরি আমার শরীরের উপরেই পরেছে তাই ওর কোন ক্ষতি হওয়ার কথা না !
নিশি সাথে সাথেই উঠে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই অপু এই অপু !
কোন মতে বললাম
-হুম !
-ঠিক আছো তুমি ?
আমার মাথায় তখন চিন্তা বাবলু আবার যদি ফিরে আসে ? এবার তো আমার বাঁধা দেওয়ার কোন উপায় নেই । মাথায় খুব জোরে আঘাত লেগেছে রাস্তার উপর পরার সময় !
আমি বললাম
-ওরা কি ফিরে আসছে !
নিশি আমার মুখের উপর ঝুকে এল । তারপর বলল
-নাহ।
মনে একটু শান্তি লাগলো । যাক আপাতত নিশি নিরাপদ । আমার আর কিছু মনে নেই । সম্ভবত তখনই চেতনা হারালাম !
যখন চোখ খুললাম তাকিয়ে দেখি একটা ঘরে শুয়ে আছি । প্রথমেই চোখ গেল নিশির উপর । চোখ ভর্তি অশ্রু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আরও কয়েকটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম । সজিবও আছে দেখা যাচ্ছে তবে বাবা মাকে দেখলাম না । সম্ভবত তাদের খবর দেওয়া হয় নি । আমাকে হাসপাতালেও নেওয়া হয় নি । আমি সম্ভবত নিশির ঘরে শুয়ে আছি !
নিশিই প্রথম বলে উঠলো
-এখন কেমন লাগছে ?
-ভাল ! কতক্ষন অজ্ঞান ছিলাম ।
নিশি বলল
-বেশি না ঘন্টা খানেক । ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি !
এই বলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই হুহু করে কেঁদে উঠলো । ঘরে ওর যে আরও কেউ রয়েছে সেটা যেন ও ভুলেই গেছে । আমাকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিশি বলল
-সজিব, তুই এখনই যাবি, আমি কোন কিছু শুনতে চাই না ঐ বাবলুকে আমি আমার সামনে চাই । চাই মানে চাই । না হলে এই বাড়ি আমি আগুন ধরিয়ে দেব !
সজিব বলল
-সেটা আমি দেখছি । বাবলুর এতো বড় সাহস হবে ভাবি নি । এবার ওর সত্যিই একটা ধফারফা হবে !
নিশি আমাকে জড়িয়েই ধরে রাখলো । আস্তে আস্তে ঘর দেখলাম ফাঁকা হয়ে গেল । নিশির কান্নার আওয়াজ যেন তখন বাড়তে লাগলো ! ফোঁফাতে ফোঁফাতেই বলল
-ওভাবে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে ? যদি কিছু হয়ে যেত !
আমি বললাম
-যদি তোমাকে নিয়ে যেতো ওরা ?
-নিয়ে গেলে যেত তাতে কি ?
-আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না !
-ইস ! আসছে আমার নায়ক আনন্ত জলীল !
এই বলে নিশি যেন আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে ! রাতে ওভাবেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না !
পরিশিষ্টঃ
ঠিক এক সপ্তাহের ভেতরে নিশির সাথে আমার আকদ হয়ে গেল । বাবা কিভাবে রাজি হল সেটা আমি বলতে পারবো না তবে তিনি রাজি হয়েছেন এটাই আমি কেবল জানি না । নিশির বড় ভাই কিভাবে সেটা সামলেছে সেটা সেই জানে । আমি বলেছিলাম আর কিছুদিন পরে বিয়ে শাদীর দিকে এগুলে হবে এতো জলদি কি কিন্তু নিশিকে কিছুতেই বোঝানো যায় নি । ঐদিনের ঘটনার পরে সে নাকি একটা দিনও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে এটাই হচ্ছে তার কথা । এখন যদি বিয়ে নাও হয় তবুও নাকি সে আমার কাছে এসেই থাকবে !
বাবলুকে আর খুজে পাওয়া যায় নি । সে যে কোথায় গেছে কে জানে । তবে একদিন না একদিন তাকে ঠিকই খুজে পাওয়া যাবে । আমি জানি সেদিনই নিশি বাবলুর খবর খারাপ করে ছাড়বে ! আপাতত সে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত । আমিও অবশ্য তাকে নিয়েই ব্যস্ত এখন !
২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: ফেসবুকে পর্ব আকারেই দেওয়া হয়েছে । এখানে সম্পুন্ন এক সাথে দেওয়া হয়েছে ।
২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৫৮
শায়মা বলেছেন: হা হা
রক্ষাকর্তী নিশি!
২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৪২
অপু তানভীর বলেছেন: নিশি বলে কথা !
রক্ষা তো করবেই !
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৫২
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: অনেক লম্বা লেখা। পড়িনি। সময় করে পড়ব এক সময়...
২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: সময় নিয়েই পড়ুন
৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৪৯
মা.হাসান বলেছেন: আইসক্রিম আমারো ভালো লাগে। কোনদিন দেখা হইলে আদায় করে ছাড়বো । ইরাদের বাসা কি এখন খালি আছে? ভাড়া হবে? ভালোবাসা পাইতেছি না। ইরার ফন নম্বর দেয়া যায়?
অনেক +
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ
৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: এখনকার ছেলে মেয়েদের প্রম ভালোবাসা আমি বুঝি না।
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
অপু তানভীর বলেছেন: হয়তো আপনি এখনকার মানুষ নন তাই !
৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬
খাঁজা বাবা বলেছেন: সাবধান
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৩
অপু তানভীর বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৫০
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: কত্ত বড় কাহিনী!পর্ব আকারে দিলে ভালো হতো।
যাই হোক ভালো লাগলো আপনার গল্প।