নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারমিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনদেরকে সারমিন এখনও ঠিক আপন করে নিতে পারে নি। ব্যাপারটা এমনও না যে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সারমিনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে কিংবা সারা দিন ওর উপর নানান পরিশ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেয়। বরং উল্টোটা ঘটে। শ্বশুর বাড়ির সবাই ওর সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে। বিশেষ করে ওর শ্বাশুড়ি তো ওকে নিজের মেয়ের মত আদর করে। কিন্তু সারমিনের কেন জানি একটা অস্বস্তি লেগেই থাকে। এই বাসায় আসার পর থেকেই ওর মনের শান্তি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । সারাটা সময় মনে হয় কেউ যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ও কি করছে সেটা দেখছে । এই অনুভূতিটা ওর একদম ভাল লাগে না । কিন্তু কাউকে কিছু মুখ ফুটে বলতেও পারে না ।
আবার সবাই যখন ওর এমন চমৎকার ব্যবহার করছে, সব কিছু না চাওয়ার আগেই ওর সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে তখন ও এই পরিবারের এই সামান্য অনুভূতির জোরে কিছু বলতেও পারছে না কাউকে । কিন্তু ওর মনে বারবার একই কথা মনে হচ্ছে যে এই পারিবারে কোন না কোন সমস্যা আছে । কি সেই সমস্যা সেটা এখন হয়তো ও বুঝতে পারছে না । তবে এটা সে বুঝতে পারছে যে এই পরিবারের মানুষ জনের ব্যবহারের মধ্যে একটা মেকি ভাব আছে । ওরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করছে ঠিকই তবে এর ভেতরে অন্য কোন কিন্তু আছে ।
বিয়ের পরেও সারমিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে কেউ মানা করে নি। বরং আগের থেকে আরও নিয়মিতই যাচ্ছে সে। একা একা ঘুরাঘুরিতেও কোন বাঁধা নেই তার।
সারমিনের স্বামী আর শ্বশুর দুইজনই সারাদিন কাজে বাইরে থাকে। তাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়। বাসায় তার এক ননদ আছে, সেও সারমিনের মতই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অন্য দিকে শ্বাশুড়ি সারা দিন রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকে ৷ বাসায় দুজন কাজের মানুষ থাকলেও সব কাজ তিনি নিজেই করেন। এই বয়সে এসেও সারমিনের শ্বাশুড়ি সব কিছু শক্ত হাতে সামাল দেন। মাঝে মাঝে সারমিনের ভাবতেই অবাক লাগে। তার নিজের মায়ের বয়স তার শ্বাশুড়ির থেকে কমই হবে কিন্তু দুজনকে পাশাপাশি দাড় করালে সেটা কোন ভাবেই বোঝার কোন উপাই নেই। বরং মনে হবে তার নিজের মায়ের বয়সই বেশি। এতো বয়স হলেও তার শ্বাশুড়িকে মোটেই ততখানি বয়স্ক মনে হয় না । আর সারমিনের মনে হয় যেন তার শ্বাশুড়ির বয়স দিন দিন আরও করছে, বাড়ছে না ।
এই সংসারে যেন কোন সমস্যা নেই । সব কিছু চলছে একদম চমৎকার ভাবে । তবে সারমিনের বারবার মনে হয়েছে এই সবের মধ্যেই কোন না কোন একটা সমস্যা আছেই । আজকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় এমন একটা ঘটনাই ঘটলো । সেটার পরেই সারমিনের এই ধারনাটা যেন আরও একটু বেড়ে গেল৷ দুপুরে সারমিনের একটা ক্লাস ছিল৷ সেই ক্লাস করার জন্য বের হতে যাবে তখনই তার শ্বাশুড়ি তার পথ রোধ করে দাড়ালো। ওর দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
-তোমার গলার হার কোথায়?
সারমিনের মনে হল তার শ্বাশুড়ি চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে ৷সে আবার বলল
-তোমাকে না বলেছি সব সময় হারটা পরে থাকবে। কখনও খুলবে না!
সারমিন খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ঠিক বুঝতে পারছে না সামান্য গলার হার না পরার জন্য এভাবে রাগ করার কি আছে! সারমিন বলল
-মা হারটা সবসময় পরে থাকা যায় না। আর সব সময় হার পরে বাইরে গেলে হারিয়ে যেতে পারে, ছিনতাই হয়ে যেতে পারে।
সারমিন দেখতে পেল তার শ্বাশুরির মুখটা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে এল। তারপর সে শান্ত কন্ঠে বলল,
-হারাবে না বুঝেছো! এটা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য। যাও তুমি হারটা পরে তারপর বাইরে বের হও।
সারমিন আর কথা বাড়ালো না। আলমারি থেকে হারটা বের করে গলায় পরলো। হারটা যে আহামরি বড় সেটাও না। খুব বেশি ভারীও না৷ সব সময়ই পরে থাকা যায়। আবার পুরানো ফ্যাশনেরও না। সব দিক দিয়ে মানান সই।
বাইরে বের হওয়ার সময় বারবার কেবল তার শ্বাশুড়ির অগ্নি চোখের কথা মনে হতে লাগলো । সামান্য এই হারটা না পরার কারনে তার শ্বাশুড়ি তার দিকে এই ভাবে তাকালো কেন ? কি হবে এই হারটা না পরলে ! একবার মনে হল হারটা খুলে ব্যাগের ভেতরে রেখে দেয় । কিন্তু তারপর আবার কি মনে করে খুললো না । কি আর হবে হারটা পরে থাকলে । দেখতে তো বেশ চমৎকারই । ওকে মানিয়েছে বেশ ।
বিয়ের পর প্রথম যেদিন এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিল সারমিনের ভয়ই লাগছিল৷ বারবার মনে হচ্ছিলো ও হয়তো স্বপ্ন দেখছে। মিরাজদের পরিবারের নামটা ও অনেক আগে থেকেই শুনে আসছে৷ ও যে কলেজে পড়াশুনা করতো সেই কলেজটা মূলত ওদের টাকাতেই চলতো। কলেজের এক অনুষ্ঠানেই মিরাজকে প্রথম সরাসরি দেখে ও। কিংবা আরও ভাল করে বললে মিরাজ ওকে সরাসরি দেখে৷ তার ঠিক সাত দিনের মাথায় ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিতে হাজির হয় মিরাজের পরিবার। মিরাজের সব কিছু ভাল কেবল আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। মিরাজের আগের বউ কদিন আগে অসুখে ভুগে মারা গেছে। মিরাজের মা আবারও ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন । একটা ভাল মেয়ে দরকার তাদের । টাকা পয়সার কোন অভাব নেই তাদের । কেবল একটা ভাল মেয়ে দরকার ।
সারমিনদের মধ্যবিত্ত পরিবার। সারমিনের পরে আরও দুইটা বোন আছে। ছেলেদের কোন দাবি দাওয়া নেই। এমন কি বিয়ের পরে সারমিন যদি পড়তে চায়, সেই বিষয়েও মিরাজদের পরিবারের কোন আপত্তি নেই।
এর পর সারমিন আর কোন আপত্তি করে নি৷ কেবল পরীক্ষার পরে বিয়ের তারিখ ফেলতে বলেছিল।
কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেল। তার কদিন পরে সারমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেল। ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করা ছিল। গাড়ি থেকে যখন নামতো, নিজেকে অন্য জগতের মানুষ মনে হত৷ ও নিজে কোন দিন ভাবে নি ওর জীবনে এমন দিন আসতে পারে। কলেজে পড়ার সময় ওদের ক্লাসের বেশ কয়েকটা মেয়ে আসতো গাড়িতে করে। অহংকারে তাদের মাটিতে পা পড়তো না।
এখন নিজেকে তাদের মত মনে হয়। তবে অহংকার করতে পছন্দ করে না। পুরানো বন্ধুবান্ধবীদের সাথে সারমিন ঠিক আগের মত করে মেলামেশা করে। হঠাৎ করে ওর ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে পুরানো বন্ধুদের সে মোটেই ভুলে যায় নি।
আজকে যখন ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই একজন বন্ধু কথাটা বলল
-তোর চেহারা দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে কেন?
সারমিন নিজেও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো। ওর কেবল মনে হয়েছি হয়তো মানসিক চিন্তার কারনে ওর নিজের কাছে এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু ওর বন্ধুদের কাছেও যখন ব্যাপারটা ধরা পড়লো তখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়লো। আড্ডায় বসে থাকা বাকি সবাই ওর চেহারার দিকে ভাল করে তাকিয়ে ঠিক একই কথা বলল। সবারই বক্তব্য যে ওর চেহারা কেমন যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে।
ঐদিন বাসায় পৌছে বাকিটা দিন নিজের ঘরেই শুয়ে রইলো। ইদানিং আসলেই ওর একটুতেই কেমন ক্লান্তি চলে আসে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। বাসায় থাকার সময় মায়ের সাথে ঘরের সব কাজ করতো সে। কোন কোন দিন মায়ের শরীর খারাপ থাকলে সব কাজ কর্ম একাই সামলে নিত। তবুও শরীরে এতোটা ক্লান্তি আসতো না কিন্তু ইদানিং একটু হাটাচলা করতেই ক্লান্তি চলে আসে। এই বাসাতে ওকে একটু কাজও করতে হয় না।
শরীর খারাপের কথাটা মিরাজকে বলতেই ও ডাক্তারের কাছে যেতে বলল। এমন কি তখনই এপোয়েন্টমেন্ট ঠিক করে ফেলল৷ আর ওকে অভয় দিয়ে বলল সব ঠিক হয়ে যাবে। এই পুরো পরিবারের ভেতরে কেবল মিরাজের সাথে কথা বলার সময়ই সারমিন একটু শান্তি পায় । মিরাজের সাথে কথা বলার সময় মনে হয় পরিবারের বাকি সদস্যদের মত ওর মধ্যে কোন ভান করছে না । সারমিনেরও মনে হয় ও যেন মিরাজকে পছন্দ করা শুরু করেছে বিয়ের পর থেকেই, মিরাজও ওকে পছন্দ করা শুরু করেছে । ওর চোখের দিকে তাকালেই সেটা বুঝতে পারে সে ।
রাতে খাওয়ার সময় টেবিলে আসতে সারমিন একটু দেরি করেছিল। ও রুমে ঢোকার আগে মনে হল রুমে সম্ভবত কিছু বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। ও খাবার রুমে ঢুকতেই কেমন চুপ হয়ে গেল। পরিবেশ টা কেমন গুমোট লাগলো ওর কাছে৷ বিশেষ করে মিরাজ এবং তার মায়ের মুখের ভাব দেখেই মনে হচ্ছিলো যেন একটু আগে তারা কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করছিল। এবং ব্যাপারটা সম্ভবত ওকে নিয়েই।
সেই দিন রাতের সারমনি সেই স্বপ্নটা দেখতে পেল । ঘুম নিয়ে তার কোন দিন কোন সমস্যা ছিল না । ঘুমানোর সাথে সাথেই তার ঘুম চলে আসতো । বিছানায় কিছুটা সময় মিরাজের সাথে গল্প করে শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেল । তারপরই স্বপ্নটা দেখতে পেল ও । নিজের ঘরেই শুয়ে ছিলো সে । নিজের বিছানাতেই । একটা সময় চোখ মেলে দেখতে পেল ওর শরীরের উপর কেউ দাড়িয়ে আছে । ঠিক মানুষ বলা যাবে তাকে তবে তার গড়ন মানুষের মতই । মাথাটা বেশ লম্বা আর টাক । চোখ গুলো একটু বেশিই বড় বড় । চোখের কোন পাতা নেই । নেই কোন ভুরু । নাকের কাছে একটা বড় ফুটো । মুখটা যেন একটু বেশি বড় । সাপের একটা জিহ্বা আছে । সেটা ক্ষণে ক্ষণেই বের হয়ে আসছে ।
সারমিন একটু নড়া চড়া করার চেষ্টা করলো । কিন্তু এক চুলও নড়তে পারলো না । এক পাশে তাকানোর চেষ্টা করেও পারলো না । ঐ প্রাণীটা আস্তে আস্তে শুরু করলো ওর দিকে । ও ততক্ষনে চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রাণপনে মিরাজের নাম ধরে ডাকার । এদিকে প্রাণীটা এগিয়েই আসছে । সারমিন একদম কাছ থেকে প্রাণীটাকে দেখতে পাচ্ছে । প্রাণীটার চোখে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছে । নিজেকে কেমন অচেনা মনে হচ্ছে ওর । সারমিনের মনে হচ্ছে প্রাণীটা যদি ওকে একবার স্পর্শ করতে পারে তাহলেই ও মারা যাবে । এবার সর্ব শক্ত দিয়ে ও মিরার নাম ধরে ডাক দিলো । সাথে সাথেই ওর ঘুম ভেঞ্গে গেল । তাকিয়ে দেখলো মিরা ওকে জড়িয়ে ধরেছে । ওকে বুকের ভেতড়ে ধরে বলল
-কিছু হয় নি । এই তো আমি । এই তো !
ঘুম ভাঙ্গার পরেও বেশ কিছুটা সময় সারমিনের বুকের ভেতড়ে কেমন ভয়ভয় করতে লাগলো । তারপর একটা সময় নিজেই শান্ত হয়ে এল । কখন যেন ঘুমিয়ে গেল সেটা বলতে পারবে না ।
পরদিন মিরাজ নিজে ওকে ডাক্তারের কাছে নামিয়ে দিয়ে অফিস চলে গেল। ডাক্তার মিরাজের পরিচিত মানুষ। ওকে পরীক্ষা করে কিছু সময় গম্ভীর হয়ে বসে রইলো। তারপর বলল
-ভাবী আপনি কি খুব বেশি টেনশন করেন?
সারমিন বলল
-কই না তো!
-প্রচন্ডরকম মানসিক চিন্তা করলেও আসলে এরকম ভাবে শরীর ভেঙ্গে যাওয়ার কথা না। বুঝতে পারছি না আসলে। আরও কিছু টেস্ট করে দেখি। শীলা ভাবীরও ঠিক একই সমস্যা হয়েছিল।
নামটা শুনেই সারমিন খানিকটা সময় জমে গেল। শীলা হচ্ছে মিরাজের প্রথম স্ত্রীর নাম। সেও এই একই ভাবে মারা গিয়েছিল! সারমিন কোন দিন সেই মানুষটার ব্যাপারে কোন আগ্রহ প্রকাশ করে নি । এমন কি মিরাজের কাছেও জিজ্ঞেস করে নি সে কেমন ছিল আর কিভাবে সে মারা গেল । সারমিন কেবল জনাতো যে মিরাজের আগের স্ত্রী শিলা মারা গেছে । এর বেশি কিছু সে জানে না ।
মিরাজদের পরিবারে কেউ শীলার ব্যাপারে কোন কথা বলে না । সারমিনও তার ব্যাপারে কোন কথা জিজ্ঞেস করে না । সারমিন ডাক্তারের বলল
-ওর আগের স্ত্রী?
-হ্যা। আসলে ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ অবাক হয়েছি। আমি নিজেই তার চিকিৎসা করেছিলাম। কত ভাবেই যে চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হয় নি৷ দিন দিন তার শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছিলো। একটা সময় সে আর বিছানা থেকেই উঠতে পারে নি।
সারমিন বলল
-আমার অবস্থাও কি সেদিকে যাচ্ছে?
ডাক্তাত সরাসরি কোন উত্তর দিল না। তবে সারমিনের মনে হল ওর সাথেও হয়তো এমন কিছু হতে চলেছে। ও নিজেও মরতে চলেছে।
কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের কোন উত্তর তার কাছে নেই । সারমিনের নিজের কাছে প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পেল না ।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে সারমিন একা একা কিছু সময় হাটতে লাগলো উদ্দেশ্যহীন ভাবে। রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে হাটতে হাটতে হঠাৎ একটা চিৎকার শুনতে পেল। কয়েক মুহুর্ত পর বুঝতে পারলো চিৎকারটা আসলে ওকে উদ্দেশ্য করেই করা হচ্ছে। ওর থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে একটা পাগল মত লোক ওকে দেখে কেমন ভয়ে চিৎকার করছে৷ আশেপাশের মানুষ গুলো কেমন চোখে তাকাচ্ছে।
সারমিন নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল পাগলটার দিকে। একবার মনে হল ও পাগলটাকে এড়িয়ে চলে যায় অন্য দিকে কিন্তু তারপরেই মনে হল এতো মানুষ থাকলে পাগলটা ওর দিকে এমন ভাবে ভয় পাচ্ছে কেন ? সারমিনের চেহারা আর যাই হোক ভয় পাওয়ার মত নিশ্চয়ই নয় । সারমিন পাগলটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
-কি ব্যাপার আমাকে ভয় পাচ্ছেন কেন? বলুন?
পাগলটা তবুও ভয় পেতেই লাগলো৷ তারপর একটা সময় বলল
-তোর শরীরে মরার গন্ধ৷ মরা..
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাগলটা দৌড়ে পালিয়ে গেল৷ সারমিন কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওর শরীর থেকে মৃত্যুর গন্ধ আসছে। একজনের শরীর থেকে কিভাবে মৃত্যুর গন্ধ আসতে পারে?
বাসায় ফিরে এসে সারাটা দিন শুয়েই কাটিয়ে দিল৷ কারো সাথে কোন কথা বলল না। হঠাৎ কি মনে হতে আবার উঠে দাড়ালো। তারপর মিরাজদের লাইব্রেরী থেকে পুরানো ছবির এলবাম খুজে বের করলো। একটু খুজতেই পেয়ে গেল যা খুজছিল। মিরাজের আগের স্ত্রীর ছবি। ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময়। তারপরই সারমিন জিনিসটা দেখতে পেল। মিরাজের আগের বউয়ের গলাতেও ঠিক একই গলার হার যেটা এখন সে নিজে পরে আছে।
জিনিসটা দেখার সাথে সাথেই একটা তীব্র অস্বস্তি পেয়ে বসলো সারমিনকে। আর কিছু না ভেবেই সারমিন এক টানে নিজের গলা থেকে হারটা টেনে খুলে ফেলল। যে গলার হার একজন মৃত মানুষ পরেছিল সেটা সে আর পরবে না।
তারপরই ঝামেলা টা শুরু হল। সন্ধ্যার দিকে তার শ্বাশুড়ি ওর রুমে এসে হাজির। ওর দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বলল
-কি ব্যাপার তুমি হার খুলে ফেলেছো কেন?
সারমিন তাকিয়ে দেখলো তার শ্বাশুড়ির চোখ অন্ধকারের মধ্যে যেন জ্বলছে। সে যেন প্রচন্ড রকম ভাবে রেগে আছে। সারমিন বলল
-মা আমি এই হার আর পরবো না।
-কি বললে তুমি?
-হ্যা মা। এই হার মিরাজের আগের স্ত্রী পরেছিলো । আপনি যাই বলেন না কেন আমি মৃত মানুষের হার পরবো না।
-তোমার এতো বড় সাহস! আমার মুখের উপর কথা।
সারমিন খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার শ্বাশুড়ির অগ্নিমূর্তি দেখে। সামান্য এই হার পরতে না চাওয়ার জন্য এতো রেগে যাওয়ার কি হল! তবে ওর নিজের মধ্যেও একটা বিদ্রোহ দেখা দিল। সে বিন্দু মাত্র দমে না গিয়ে বলল
-আমি পরবো না। আপনি যাই বলেন না কেন!
তখনই সারমিন দেখতে পেল তার শ্বাশুড়ি তার দিকে এগিয়ে এল৷ সারমিনের মনে হল তার শ্বাশুড়ি তাকে মারতে আসছে। কিন্তু মাঝ পথেই তাকে থেমে যেতে হল। মিরাজ দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে। তার মাকে কঠিক কন্ঠে বলল
-মা কি করছো তুমি ?
সে মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোর বউ কি বলছে শুনছিস? সে নাকি আর হার পরবে না!
মিরাজ বলল
-না পরতে চাইলে পরবে না। তুমি জোর করছো কেন?
সারমিন দেখতে পেল তার শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে মিরাজের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে মিরাজ বলল
-তুই বলতে পারলি এই কথা?
মিরাজ খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-হ্যা। আরও আগেই বলা দরকার ছিল।
তারপর সারমিনের দিকে তাকিয়ে বলল
-সারমিন তুমি এই হারটা মা কে ফিরিয়ে দাও। এখনই ফিরিয়ে দাও।
সারমিন মিরাজের কথা মতই কাজটা করলো। হারটা তার শ্বাশুড়ি হাতে ফিরিয়ে দিল। সে কেবল কাঁপা কাঁপা হাতে নিল সেটা। তার চোখে তখনও অবাক হওয়ার ভাবটা এখনও যাইনি। তবে সেই সাথে একটা তীব্র ভয় এসে জমা হয়েছে তার চেহারাতে ।
হারটা নিয়ে চলে যেতেই মিরাজ এগিয়ে এল ওর দিকে । তার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি দুঃখিত ।
-না ঠিক আছে । তবে উনি প্রথমে এমন রেগে গেলেনই বা কেন আর পরে এমন ভয় পেলেন কেন ?
মিরাজ কোন কথা না বলে সারমিনকে জড়িয়ে ধরলো কিছুটা সময় । মিরাজের শরীরের উষ্ণতায় সারমিনের সব ভয় যেন কমে এল । সারমিন আর কিছু জানতে চাইলো না ।
ঠিক তার এক সপ্তাহ পরই সারমিনের শ্বাশুড়ি মারা গেল। সারমিন কেবল অবাক হয়ে লক্ষ্য করছিল তার শক্ত সামর্থ্য শ্বাশুড়ি মাত্র কদিনের মাথায় কেমন শুকিয়েই চুপছে গিয়েছে। শেষ দুই দিন সে বিছানা থেকে উঠতেই পারছিলো না । বারবার কেবল সারমিনকে ডাকছিলো আর হারটা পরতে বলছিলো । সারমিনের একবার মনেও হল সে হারটা পরলেই হয়তো টার শ্বাশুড়ি বেঁচে যাবে । একবার নিজের মনকে মানিয়েও নিল যে সে হারটা পরবে । কিন্তু মিরাজ তাকে পরতে দিল না । তারপর বিছানাতেই তার মৃত্যু হল। তার সাথে সাথেই মিরাজ সেই হারটা চুলার আগুনের ভেতরে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলল ।
সারমিন কিছুই বুঝতে পারছিলো না । এর কোন ব্যাখ্যা ওর কাছে ছিল না । বারবার মনে হল ওর শ্বাশুড়ির ভেতরে কোন অশুভ কিছু একটা ছিল । এবং তার মৃত্যুর পরপরই সেই অশুভ ছায়াটাক কেটে গেছে ।
(থিম এডাপ্টেড)
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: জগতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে । পড়ার জন্য ধন্যবাদ !
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২
আরোগ্য বলেছেন: ভালো লাগলো। সারমিন আর মিরাজের জীবনের শুভ সূচনা হোক।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১০
রাজীব নুর বলেছেন: সারমিন অসুস্থ।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: গল্প পড়ে এই কথা মনে হল ?
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৩১
সোহানী বলেছেন: ভালোলাগলো অপু.......
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৩০
নাহিদ০৯ বলেছেন: রক্ত হিম হয়ে আসা গল্প। ভয়ংকর সুন্দর।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫৪
অপু তানভীর বলেছেন: এতো ভয়েরও কিন্তু না । ধন্যবাদ পড়ার জন্য !
৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:১১
আনু মোল্লাহ বলেছেন: বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন গল্পটা।
ভাল লেগেছে খুবই। বিশেষ করে গলার হারের সাথে শ্বাশুড়ির মৃত্যুর সম্পর্ক একেবারে নাটকীয় ছিল।
শুভেচ্ছা রইল।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:২৪
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪
করুণাধারা বলেছেন: অতিপ্রাকৃত গল্প আমার খুব ভালো লাগে, এই গল্পটা তাই খুব ভালো লেগেছে!
গল্পটা একেবারেই অবাস্তব মনে হয় নি..... এমন ঘটনা কিন্তু ঘটতেই পারে.....