নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব এক পর্ব দুই পর্ব তিন পর্ব চার
নয়
নোরার নিজের ভাগ্যকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । একটু আগেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল অথচ এখন পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম হয়ে গেছে । নোরা আর অরিন এখন হাতিরঝিল থানার একটা বেঞ্চে বসে আছে । ওদের ড্রাইভার মনজুকে হাজতে ভরে রাখা হয়েছে । কি থেকে কি হয়ে গেল নোরার কাছে এখনও কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে । ঠিক স্বপ্নের মত না, দুঃস্বপ্নের মত !
ক্যাম্পাস থেকে ওদের দুজন কে তুলে নিয়ে গাড়িটা চলছিলো বেশ ভাল ভাবেই । অরিন কিছু সময় গাড়ির ছাঁদ খুলে মাথা বের করে দিয়েছিলো । তারপর কিছু সময় চিৎকার চেঁচামিচি করে আবারও গাড়ির ভেতরে এসে বসলো । তারপর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার নাম কি ড্রাইভার সাহেব ?
ড্রাইভার বলল, জি আফা মনজু !
-মনজু সাহেব এই গাড়ির স্পিড লিমিট কত ?
-গাড়ি ভাল আছে আফা । একেবারে মাখন ! আর এখন চালাইলে মনে হইবে গাড়ি উড়তাছে !
-ওকে ওড়ান দেখি আপনার গাড়ি !
-আইচ্ছা আফা !
নোরা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে অরিনের আগ্রহ দেখে আর কিছু বলল না । ঢাকা শহরের গাড়ির গতি ২০ কিলোমিটারের উপরে ওঠানোর দায় ! সেখানে দেখতে দেখতে গাড়ির গতি বেড়ে দাড়ালো একশতে । গাড়িটা যেন সত্যিই আকাশে উড়ছিলো । নোরার খারাপ লাগছিলো না । কিন্তু ঝামেলা বাঁধতেও দেরি লাগলো না । হঠাৎই একটা পুলিশের সাইরেন শোনা গেল পেছন থেকে । হয়তো ঝামেলা তখনও এড়ানো যেত যদি তখনই গাড়িটা থামানো হত । অরিনের মাথায় কি কাজ করলো কে জানে সে ড্রাইভারকে বলল যে আরও জোরে চালাতে । পুলিশের গাড়ির স্পিড বেশি না । ওদেরকে ধরতে পারবে না ।
কিন্তু ওদের ধারনায় ভুল ছিল । পুলিশের গাড়ি দেখতে যেমনই হোক গতির দিক দিয়ে তারা কম নয় । আধা ঘন্টা রেস খেলার পর ওদের গাড়িটাকে ধরে ফেলল । ওদের কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা থানায় নিয়ে এল । সেখানে আধা ঘন্টা ধরে বসে আছে ওরা । মেয়ে বলেই হয়তো ওদের হাজতে ঢোকানো হয় নি । একটা বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়েছে ।
আদনান এল আরও আধা ঘন্টা পরে । ওসির সাথে কথা বলে ওদে ছাড়াতে অবশ্য খুব বেশি বেগ পেতে হল না । থানার সামনে যখন ওরা বেরিয়ে এল তখন নোরার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো । অরিনকে ইচ্ছে করছিলো যেন কষে একটা চড় মাড়ে কিন্তু অরিনের এসবের কিছুই স্পর্শ করছে । ও যেন খুব মজা পাচ্ছে । নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছিস বড়লোক জামাই থাকার কত্ত সুবিধা !
-চুপ !
অরিন অবশ্য সেদিকে কোন কান দিল না । আদনানের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল, আমাকে চিনেন তো দুলা ভাই ! আমি হচ্ছি আপনার বউয়ের সব থেকে কাছের বন্ধু ! এই শ্যালিকাকে কিন্তু ভুলবেন না । আমি ওর সব সিক্রেট জানি ।
নোরা পেছন থেকে অরিনের দিকে চোখ গরম করে তাকালো । তবে অরিন সেটা হেসেই উড়িয়ে দিল । আদনান বলল, আপনি হলে ফেরৎ যান এখন । অনেক রাত হয়েছে ।
এই বলেই মনজুর নাম ধরে ডাক দিল । মনজু পেছনে দাড়িয়ে ছিল মাথা নিচু করে ।
-মিস অরিনকে হলে রেখো এসো । দেখো আবার কোন ঝামেলাতে যেন পড়ো না ।
-জি স্যার !
আদনান তারপর নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি আমার সাথে একটু আসবেন ? যদি আপনার কোন সমস্যা না হয় ! কাল তো শুক্রবার আশা করি আপনার ক্লাসের কোন সমস্যা হবে না !
অরিন আবারও বলে উঠলো, আরে কোন সমস্যা নেই ।
আদনানের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছিলো যে অরিনের কথা শুনে সে বিরক্ত হচ্ছে । তবে মুখে কিছুই বলছে না । নোরার বন্ধু বলেই হয়তো কিছু বলছে না ।
নোরা অরিনকে চলে যেতে দেখলো । তার পরেও কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো আদনানের পাশে । নোরার কেবল মনে হল এখনই বুঝি নোরাকে আদনান বড় করে ধমক দিতে । কিংবা বাসায় নিয়ে গিয়ে খুব বকাবকি করবে ! আদনানের গাড়িটা থানার সামনেই পার্ক করা ছিল । নোরার খুব করে মনে হতে লাগলো যে অরিনের সাথে চলে গেলেই হয়তো ভাল হত । কওন ভাবে যদি বলে ফেলতো যে কাল ওর কাজ আছে তাহলে নিশ্চয়ই ওকে আটকে রাখতো না ।
আদনান ওর দিকে একটু তাকিয়ে তারপর গাড়ির দিকে হাটা দিল । নোরার কি করা উচিৎ এখন ?
এখানেই দাড়িয়ে থাকবে নাকি আদনানের পেছন পেছন গিয়ে গাড়িতে উঠবে ।
অবশ্য আদনানের পেছনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই ওর । এখানে এভাবে এই থানার সামনে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে নেই ।
গাড়ি যখন চলতে শুরু করলো নোরার তখন মনে হল এখনই বুঝি বকাবকি শুরু হবে । তবে বেশ কিছু সময় চলে যাওয়ার পরেও যখন বকাবকি শুরু হল না তখন নোরা একটু যেন বুকে বল পেল । আদনানের দিকে না তাকিয়ে বলল, আপনি কি মনজুকে চাকরি থেকে আউট করে দিবেন ?
আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, তাই কি উচিৎ না ?
-ওর তো কোন দোষ নেই । অরিন বলল বলেই তো বেচারা স্পীড তুলেছিল ।
-আপনার ক্ষতি হতে পারতো ? যদি এক্সিডেন্ট হত ?
-হয় নি তো। তাই না ? দেখুন ওকে চাকরি মানুষের ভুল হবেই । মানুষ তো মানুষ । ফেরেস্তা তো নয় । মানুষহ ভুল করবে না তো কে করবে ! আপনি প্লিজ ওকে চাকরি থেকে বের করবেন না । কথা দিন ?
হঠাৎ গাড়িটা থেমে গেল । আদনান গাড়িটা থামিয়ে নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি সব সময় অন্যের কথা এতো ভাবেন কেন ? রাস্তার অপরিচিত মানুষকে কেয়ার করেন, অন্যের চাকরির জন্য সুপারিশ করেন । কেন করেন এসব ?
নোরা কি বলবে খুজে পেল । আদনান একেবারে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তাই চাইলেও চোখ সরিয়ে নিতে পারছে না । আদনানের চোখের দিকে তাকিয়েই বলল, জানি না । কেবল মনে হয় আমার অল্প সাহায্যে যদি কারো উপকার হয় তাহলে মন্দ কি ?
আদনান আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো নোরার দিকে । কি যেন খুজছে ওর চেহারার ভেতরে ।
অবশ্য কিছু বলল না । আবারও গাড়িটা স্টার্ট দিল । গাড়ি চালতে শুরু করলে আদনান বলল, আপনাকে এক স্থানে নিয়ে যাই চলুন !
-কোথায় ?
-চলেন । গেলেই দেখতে পাবেন !
নোরা আর কিছু জানতে চাইলো না । তবে লক্ষ্য করলো যে অন্ধকার তখন আস্তে আস্তে কমে আসতে শুরু করেছে । ভোর হচ্ছে । এমন করে কোন দিন নোরা রাতে বাইরে থাকে নি । নোরার হঠাৎ খুব ভাল লাগতে শুরু করলো । পাশে যে মানুষটা রয়েছে সেই মানুষটা আর কেউ নয় তার স্বামী । তার বিয়ে করা স্বামী । এমন ভাবে রাতে লং ড্রাইভে যাওয়ার স্বপ্ন থাকে প্রতিটি মেয়ের । কয়জন এমন সুযোগ পায় ! সেখানে নোরার সাথে হচ্ছে এসব না চাইতেই ।
আদনান বলল, একটা সময় আমি এখানে প্রায়ই আসতাম ।
-এখন আর আসেন না ?
-নাহ ! আসা হয় না অনেক দিন । প্রায় দশ বছরের বেশি !
-দশ বছর ?
-হুম । কি জানি সব কিছু আগর মত আছে কি না ! হয়তো অনেক বদলে গেছে !
তারপর নোরা দেখলো গাড়িটা একটা ছোট ব্রিজের পাশে থেমে গেল । ব্রিজটার পাশে বেশ খানিকটা ফাঁকা স্থান। রাস্তার সোডিয়াম আলো জ্বলছে । তাতেই চারিপাশটা দেখা যাচ্ছে ।
নোরা গাড়ি থেকে নামতে নামতে চারিদিক তাকাতে লাগলো । এই এলাকাতে সে এর আগে এসেছে বলে মনে পড়ে না । তবে এলাকাটায় একটা গ্রাম্য ভাব রয়েছে এখনও । ঢাকার এতো কাছে এরকম স্থান থাকতে পারে সেটা নোরার ধারনা ছিল না । আদনানও গাড়ি থেকে বের হয়ে দাড়ালো । তারপর গাড়ির ঠিক সামনে এসে দাড়ালো । নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, এই যে নদীটা দেখছেন না ? এটা কিন্তু বুড়িগঙ্গা শাখা নদি । যখন সূর্য ওঠে তখন মনে হয় যেন নদীর এই পানির ভেতর থেকে সূর্যটা উঠছে । খুব চমৎকার লাগে !
-তাই নাকি ?
-হু ।
-সূর্য উঠতে আরও কত সময় বাকি আছে ?
আদনান ঘড়ির দিকে তাকালো । তারপর বলল, আছে আরও কিছুটা সময় ।
এক সাথে এই রকম একটা অপরিচিত স্থানে আদনানের সাথে সূর্যোদয় দেখা ! ব্যাপারটা ভাবতেই নোরার মনে জুড়ে একটা আনন্দের অনুভূতি ছেয়ে গেল । রাতটা যে এভাবে শেষ হবে সেটাও সে ভাবে নি । আজকের রাতে যেন কোন কিছুই ঠিক থাকছে না । আগে থেকে কিছুই বুঝা যাচ্ছে ।
সত্যিই আজকের রাতে আগে থেকে বুঝা যাচ্ছে না যে সামনে কি হবে । ওদের যে এক সাথে সূর্যোদয়টা দেখা হবে না সেটাও লেখা ছিল । কিছু সময়ের মাঝেই আদনানের ফোনে একটা ফোন এসে হাজির । ফোনের স্ক্রিনটা দেখে আদনানের মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল । দ্রুত ফোন রিসিভ করলো । ওপাশ থেকে কিছু শুনতেই আদনানের চেহারা একেবারে পাল্টে গেল মুহুর্তে ।
ফোনটা রেখে নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের এখনই যেতে হবে !
-কি হয়েছে !
-আম্মু !!
আদনানের কন্ঠেই এমন কিছু ছিল যে নোরাকে আর কিছু বলতে হল না । সেই দ্রুত গাড়ির দিকে হাটা ছিল । গাড়িটা ঝড়ের বেগে চলতে শুরু করলো কিছু সময়ের মধ্যেই ....
দশ
আদনান অনেক টা অসহায়ের মত কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । মায়ের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে । চিকিৎসার সময়ে হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তারেরা সাধারনত কাউকে ঢুকতে দেয় না । কিন্তু আদনানের বেলাতে এসব নিয়ম মানা হয় নি । এই হাসপাতালটার মালিক আদনান নিজে । তাকে বের করে দেওয়ার মত কেউ নেই । কাঁচের বাইরে থেকে মাকে সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে ।
মাঝে মাঝেই আদনানের মায়ের এই শারীরিক অবনতি হয় । তখন কোন ভাবেই তাকে সামলানো যায় না । তখন রেবেকা কাউকে চিনতে পারেন না । কারো কথা শুনেন না । সামনে যা পায় তাই ভেঙ্গে ফেলতে চান । কিছু দেখে যেন প্রচন্ড ভয় পান । সবাইকে দেখেই ভয় পান ।
এই সময়ে তাকে খুব কড়া ঘুমের ঔষধ দিতে হয় । মানুষ স্বাভাবিক যে ঘুমের ইঞ্জেকশনে ঘুমিয়ে পড়ে রেবেকার বেলাতে সেটা কাজ করে না । ডাক্তারেরা বলেন যে যত উচ্চ ডোজ দেওয়া হবে ততই রেবেকার শরীরের জন্য সেটা খারাপ তবে ইঞ্জেকশন না দিয়েও উপায় নেই ।
প্রতিবারই প্রথমে ডাক্তারেরা প্রথমে নানান ভাবে রেবেকাকে শান্ত করার চেষ্টা করে । বিশেষ করে তার মন থেকে ভয়টা দুর করার চেষ্টা করে কিন্তু কাজ হয় না । আজকেও তাই করছিলো । আদনান ঘরের এক পাশে দাড়িয়ে ছিল কেবল । তার খুব বেশি অসহায় লাগছিলো । এতো এতো ক্ষমতা তার অথচ সে কিছুই করতে পারছে না । নিজের সব থেকে কাছের মানুষটার জন্য সে কিছুই করতে পারছে না ।
দুই তিন মাস পরপরই এমন একটা এটাক হয় ।
একজন ডাক্তার এগিয়ে এল আদনানের দিকে । বলল, স্যার সমস্যাটা আরও বাড়ছে । এবার মনে হয় না ১০ মিলিতে কাজ হবে । আরও একটু বাড়াতে হবে ডোজটা । আদনান বলল, তাহলে দিচ্ছেন না কেন এখনও ?
ডাক্তার বলল, কিন্তু স্যার এতে ওনার শরীরের উপর বেশ চাপ পড়বে ।
-তাহলে কি করার আছে ? অন্য কোন উপায় কি আছে ?
ডাক্তার কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । সে কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে সে আবারও ভেতরে চলে গেল । আদনান একভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো । আচ্ছা ঐদিন যদি ঐ দূর্ঘটনা না ঘটতো তাহলে কি ওর মা এমন হয়ে যেত ? ঐদিন নীতুর সাথে ওর যাওয়ার কথা ছিল । ও নিজে গেলে হয়তো আজকে ও মায়ের সাথে এমন কিছুই হতো না । নিজেকে ওর সব সময় এই কারনেই দোষী মনে হয় । মনে হয় ওর মায়ের জীবনটা এমন নাও হতে পারতো ! কেবল মাত্র ওর কারনেই এমন হয়েছে ! কিভাবে নিজেকে সে ক্ষমা করবে কে?
ডাক্তারকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে দেখলো সে । রেবেকা তখনও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে । কয়েকজন নার্স তাকে ধরে ধরে রাখতে পারছে না । আদনান চাইলো সে এসবের কিছুই দেখবে না কিন্তু সে চোখ সরাতে পারতে না মোটেও । একভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ।
তখনই একটা অবাক করা কান্ড হল । ও মা হঠাই শান্ত হয়ে গেল । হঠাৎ ঝড়ের পর যখন সব কিছু শান্ত হয়ে যায় ঠিক তেমন ভাবে রেবেকা একেবারে চুপ আর শান্ত হয়ে গেল । এমন কি ডাক্তার নিজেও খানিকটা অবাক হয়ে গেছে । সে এমনটা আশা করে নি । সবাই খানিকটা সময় বোকার মত নিজেদের দিকে তাকাতাকি করছে । আদনান কাঁচের ভেতর থেকেই দেখতে পেল কেউ ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছে । এবং সেই মানুষটা আর কেউ নয়, নোরা । নোরার দিকে তাকিয়েই যেন রেবেকা একেবারে শান্ত হয়ে গেল । নোরা আস্তে আস্তে রেবেকার দিকে এগিয়ে গেল । তারপর রেবেকার বিছানার পাশে বসলো । আদনান নোরার চেহারাটা দেখতে পাচ্ছিলো । অনেক দিন এমন মমতাময় চেহারা সে দেখেনি । তার মায়ের জন্য যে কয়জন মানুষ কাজ করে তারা সবাই ঠিক ঠিক নিজেদের দায়িত্ব পালন করে কিন্তু আদনান খুব ভাল করেই জানে যে এই কাজ গুলো করে কারন তাদেরকে টাকা দেওয়া হয় । তাদের মুখে কোন মমতা দেখা যায় না । মাঝে মধ্য করুণা হয়তো দেখা যায় !
কিন্তু নোরার চেহারাতে অন্য কিছু করেছে । আদনান দেখতে পেল ওর মায়ের হাত ধরলো নোরা । তারপর কিছু বলল তাকে । রেবেকা কেবল মাথা কাত করে সম্মতি জানালো । আদনানের কেবল মনে হল যে মা তার বাধ্য সন্তানকে কিছু বলছে এবং সন্তান সেটা শান্ত ভাবে মেনে নিচ্ছে ।
রেবেকা শা্ন্ত ভাবে বেডে শুয়ে পড়লো । নোরা চোখের ইশারায় ঘরের সবাইকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলল । সবাই চুপচাপ সেটা মেনেও নিল । এমন কি ডাক্তারও ঘর থেকে বের হয়ে গেল ।
আদনান কোন কথা না বলে কেবল তার মা আর নোরার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো । নোরা ওর মায়ের মাথার কাছে বসে আছে । তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আদনান দেখতে পেল যে ও মা কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল । নোরা তার কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেল । তারপর ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল । ঘর ছেড়ে বের হতেই আদনানকে দেখতে পেল ।
আদনানের দিকে এগিয়ে এসে বলল, আম্মু এখন শান্ত হয়ে গেছে । ঘুমিয়েছে । আমি বরং এখানে থাকি । জেগে উঠে যদি আমাকে না দেখে তাহলে আবার উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে ।
আদনানের কানে অবশ্য এই কথা গুলোর কিছুই ঢুকলো না । সে একভাবে বেশ কিছু সময় নোরার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । কেন ধরলো ও নিজেই বলতে পারবে না । তবে ওর কাছে মনে হল এই মেয়েটাকে সে যদি এখনই না জড়িয়ে ধরে তাহলে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।
যখন নোরাকে ছেড়ে দিল দেখতে পেল নোরার মুখটা লজ্জাতে লাল হয়ে গেছে । আদনানের তখন খানিকটা হুস ফিরে এল । সে নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে গেল । ভুলেই গিয়েছিলো যে ওর সাথে নোরার সম্পর্কটা এখন জড়িয়ে ধরার মত হয়ে ওঠে নি । আর আমাদের দেশে এভাবে সবার সামনে ছেলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরাটা ঠিক স্বাভাবিক ভাবে ধরা হয় না ।
আদনান করিডোরের এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই সেখানে । কিভাবে কেউ নেই সেটা অবশ্য ওর মাথায় ঢুকলো না । এমন হতে পারে যে নোরাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে যারা যারা করিডোরে ছিল তারা সবাই চলে গেছে । হাসপাতালের মালিক তার বউকে জড়িয়ে ধরেছে সেটা কর্মীরা দেখে ফেললে সে খানিকটা বিব্রত হতে পারে । আর আদনানকে কেউ বিব্রত করতে চাইবে না মোটেও ।
আদনান নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, সরি । কেউ দেখে নি অবশ্য !
আদনানের কন্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল যে নোরা হেসে ফেলল । নোরার হাসি দেখে আদনানও খানিকটা স হজ হয়ে উঠলো । পাশের বেঞ্চটার দিকে ইশারা করে বলল, আমিও অপেক্ষা করি তোমার সাথে !
নোরার তখনই মনে হল আদনান ওকে তুমি করে বলেছে । একটু আগে যখন ওরা সেই সেতুটার পাশে দাড়িয়ে ছিলো তখনও আদনান ওকে আপনি করেই বলছিলো । এখন তুমি করে বলছে । নোরার এই ডাকটা কেন জানি খুব ভাল লাগলো ।
সকালের রোড উঠেছে অনেক আগেই । নোরা আর আদনান পাশা পাশি বসে রয়েছে বেশ কিছু সময় ধরে । নোরার একটু ঘুমঘুম পাচ্ছে । আদনানের শরীরে একটু হেলান দিয়ে খানিকটা ঢুলুনির মত চলে আসছিলো ওর তখনই ওর নাম ধরে কেউ ডাক ছিল ।
নোরা যখন পুরোপুরি সজাক হয়ে উঠলো তখনই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা ওর সামনে দাড়িয়ে । ওর বাবাকে সে এখানে দেখবে আশা করে নি । ঠিক তার পেছনেই আদনানের বাবাকে দেখতে পেল ।
নোরার প্রথমে মনে হল আদনানের মায়ের শরীর খারাপ দেখে হয়তো ওর বাবা চলে এসেছে । কিন্তু বাবার চেহারার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মিলল না । ওর বাবা খুব রেগে আছে কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে । নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, নোরা চল এখান থেকে !
নোরা কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছিলো না । নোরা বলল, কি হয়েছে বাবা ?
-তুমি আর এখানে থাকবে না ।
-কেন ?
-কেন ! জিজ্ঞেস কর এদের । আসলে আমার নিজেরই ভুল হয়েছে । টাকা থাকলেই সব কিছু মেনে নিতে হবে কেন ?
পেছন থেকে আদনানের বাবা সোবাহান চৌধুরী বললেন, প্লিজ বেয়াই সাহেব একটু বোঝার চেষ্টা করুন !
আতিকুল ইসলাম বললেন আমি কি বুঝবো বলুন? আমার মেয়েটার জীবন এই ভাবে নষ্ট করবেন আমি কোন দিন ভাবি নি । আপনার ছেলের যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো সেটা আমাদেরকে কেন বলেন নি ? কেন বলেন নি আমাদের ? ভেবেছেন টাকা আছে বলে আমরা সব মেনে নেব ? ভুল ভেবেছেন ! আপনি আপনাদের নামে কেইস করবো ! চল নোরা !
আতিকুল ইসলাম নোরার হাত ধরে টান দিতে গেল ।
নোরা কিছু সময় আদনানের দিকে তাকিয়ে রইলো । আদনানের চোখই বলে দিচ্ছে যে ওর বাবা যে বলল যেটা সত্যি । আদনানের আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো !! নোরার হঠাৎ কেমন যেন একটা কষ্ট হতে লাগলো ।
একটু আগে আদনান যখন ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন বুকের মাঝে একটা অজানা আনন্দবোধ শুরু হয়েছিলো অথচ এখন সেটা কষ্টে পরিনত হয়েছে । মনে হচ্ছে যেন খুব কাছের মানুষ ওর সাথে প্রতারনা করেছে !
আতিকুল ইসলাম বললেন, চল নোরা এখানে আর এক মুহুর্ত নয় ! আমরা আজই ফেরৎ যাবো । এদের নামে আমরা কেইস করবো । এরা ভেবেছে কি !
ছবি উৎস
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: নান্দনিক লেখনী ।