নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ যা প্রয়োজন নিয়ে যাও

২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২



নওরিন চেহারাতে একটা ইতস্তত ভাব নিয়ে গেটটার কাছে দাড়িয়ে রয়েছে । তার চোখে সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া একজন যুবক আর একজন বৃদ্ধা মহিলার দিকে । একবার মনে হচ্ছে ওদের পেছন পেছনে যায় কিন্তু পর মুহুর্তেই মনে হচ্ছে ওদের পেছন পেছন গিয়ে ও কি করবে? কি বলবে ? কিছু কি বলার আছে ওর ?

নওরিন একটা ছিমসাম শহরে থাকে । খুব কাছেই ওর ক্যাম্পাস । ক্লাস করে, বাসায় এসে রান্না করে, খায় ঘুমায় । সকাল বিকাল হাটাহাটি করে । ছুটির দিনে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ায় ।

এতোদিন খুব নওরিনের জীবনটা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো । কিন্তু তারপরেই স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন ঘটলো । অবশ্য কেবল ওর জীবনই না, পুরো বিশ্বের মানুষের জীবনের স্বাভাবিকতাই নষ্ট হয়ে গেল ।

গতকাল এখানে লক ডাউনের ঘটনা ঘটেছে । সব কিছু বন্ধ থাকে কেবল সুপারসপ, ঔষধ আর খাবারের দোকান গুলো বাদ দিয়ে । এই রকম অবস্থায় সবার মাঝে একটা আতঙ্ক দেখা যায় । সবাই দৌড়ায় প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে জমা করতে । সবার মনে ভয় থাকে যে সামনে গিয়ে যদি কিছু না কিনতে পাওয়া যায় । দরকারের থেকে বেশি জিনিস পত্র কিনে জমা করে রাখে । ফলাফল স্বরূপ কারো কারো সাথে দরকারের চেয়ে বেশি জিনিস পত্র অন্য দিকে কেউ দরকারী জিনিস কিনতে পারে না ।

ঠিক এমন ঘটনাটাই নওরিনের সামনে ঘটছে । ওর নিজের ঝুড়ি ভর্তি জিনিস পত্র অন্য দিকে কয়েকজন কিনতে পারে নি । নওরিন হয়তো সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেত কিন্তু একটা দৃশ্য ওর চোখের সামনে থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না । সেটার দিকেই সে তাকিয়ে আছে ।

আজকে সুপারসপে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে । সময়টা বিকেল । তত সময়ে প্রায় সব কিছু শেষ গেছে । বাকি যা ছিল নওরিন নিয়ে নিল নিজের ঝুড়িতে । তখনই দেখতে পেল যে একজন বৃদ্ধাকে । সম্ভবত কিছু খুজতেছিলো । কিন্তু সব শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য কিনতে পারে নি । নিরাশ মনে বৃদ্ধা চলেই যাচ্ছিলো তখনই একটা যুবককে দেখতে পেল । নওরিন দেখতে পেল যুবক বৃদ্ধার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে । তারপর যুবক তার ঝুড়ি থেকে আস্তে আস্তে প্রায় সব কিছু নামিয়ে বৃদ্ধার ঝুড়িয়ে দিয়ে দিল । এর ভেতরে দুইটা টিস্যু পেপার ছিল । দুই প্যাকেট ব্রেড মিল্কের আর ডিম । সবই দরকারী জিনিস । নওরিন নিজের ট্রলির দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেল । ওর নিজের ট্রলিতে ছয়টা টিস্যুর প্যাকেট রয়েছে । নিজের বাসায় আরও চারটা সে কিনে নিয়ে গিয়েছে গতকাল । পাউরুটি বিস্কুট সহ আরও কত কিছু যে রয়েছে সবই ৫/৬ প্যাকেটের উপরে ।

বৃদ্ধা নিজের সব দাম দিল । তারপর ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে বাইরে বের হয়ে এল । ছেলেটাও বৃদ্ধাকে সাহায্য করতে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে লাগলো । নওরিন দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো সব । নিজের কাছেই লজ্জা লাগছিলো । ছেলেটা এমন কোন আহমরি কাজ করে নি । কিন্তু এই কাজ টুকুও কত চমৎকার ! নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস টুকু সে বৃদ্ধাকে দিয়ে দিল যাতে সে যেন কিনতে পারে । ছেলেটা হয়তো অন্য কোন স্থান থেকে গিয়ে সেটা কিনে নিতে পারবে । কিন্তু এই একলা বৃদ্ধার জন্য সেটা করাটা একটু কষ্টের !

ছেলেটা নিজের জন্য পরিমান মতই জিনিস কিনেছিলো । সেটাই বৃদ্ধাকে দিয়ে দিল । আর বিপরীতে ও কি করেছে ? দরকারের চেয়ে অনেক বেশি জিনিস পত্র কিনেছে এবং ওর মত মানুষ গুলোর জন্যই অন্য মানুষেরা সুযোগ পাচ্ছে না ।

মাথা থেকে এই চিন্তাটা সে কিছুতেই বের করে দিতে পারলো না । তখনই সে আরও কয়েকজনে দেখলো সুপারসপে ঢুকতে । প্রত্যেকেই বয়স্ক মানুষ ! নিশ্চয়ই জিনিস পত্র কিনছে ঢুকেছে । এবং যথারীতি না পেয়ে ফিরে আসবে ।

সত্যিই হল এমনটাই । নওরিন দেখলে দুজন বৃদ্ধ মানুষ সুপারসপ থেকে খানিকটা হতাশা চেহারা নিয়ে বের হয়ে এল । ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর ট্রলিটার দিকে চোখ পড়লো তাদের । চোখে খানিকটা কাঠিন্যর আভাস নওরিনের চোখ এড়ালো না । নিশ্চিত ভাবে ছয় প্যাকেট টিস্যুর দিকে তাদের চোখে গিয়েছে । তারা হয়তো এক প্যাকেটও কিনতে পারে নি ।

হঠাৎ নওরিনের কি মনে হল ও বৃদ্ধ দুইজনকে উদ্দেশ্য করে বলল, এক্স কিউজ মি ?
প্রথম ডাকেই শুনতে পেল তারা । দাড়িয়ে পড়লো । নওরিন নিজের ট্রলিটা ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল তাদের কাছে । বলল, আপনার কি টিস্যুর খুজছিলেন ?

বৃদ্ধ দুইজনই খানিকটা সন্দেহের চোখে তাকালো নওরিনের দিকে । তারপর একজন বলল, হ্যা । কিন্তু ওখানে নেই । দেখি অন্য কোথাও আছে কি না !
নওরিন নিজের ট্রলির থেকে দুইটা প্যাকেট বের করে তাদের হাতে দিল । তারপর বলল, এগুলো আপনাদের জন্য !
বৃদ্ধ দুইজন খানিকটা সন্দেহের চোখে তাকালো ওর দিকে । অন্য জন বলল, সত্যিই ?
-হ্যা । আমার বাসায় আছে । আমি দরকার হলে কাল আবার নিয়ে যেতে পারবো । আপনারা নিয়ে যান প্লিজ !

বৃদ্ধ দুইজন এবার হাসলো । তারপর দুই প্যাকেট টিস্যুর হাতে নিল ।
-আমরা দাম দিতে পারি যদি চাও ।
-না না কোন দরকার নেই ।


নিজের বাসার সামনে এসে নওরিনের মাথায় হঠাৎ আরেকটা কথা এল । কেন এল সেটা সে নিজের জানে না ।

সিকিউরিটির সাহায্য নিয়ে সে একটা টেবিল বের করলো বাসার বাইরে । ওর এপার্টমেন্টের সামনেই একটা একটা বড় ওক গাছ আছে । সেটার নিচই টেবিলটা রাখলো । তারপর সেটার উপরে আজকের কিনে আনা সব সামগ্রী গুলো রেখে দিল । একটা কাগজে লিখে দিল

"টেক হোয়াট ইউ নিড"


সব কিছু নিচে রেখে দিয়ে সে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেল । অন্তত কিছু মানুষের অল্প কিছু প্রয়োজন তো মিটবে । ওর যা সাধ্য তাই করেছে । একটু আগে সুপারসপে থাকার সময় যে অপরাধবোধ মনে জেগেছিলো সেটা কেন যেন চলে গিয়েছে একেবারে । সেখানে একটা অদ্ভুত শান্তি শান্তি ভাব চলে এসেছে। একটা আনন্দ অনুভূতি নিজেই রাতে ঘুমাতে গেল সে ! আজকে রাতে তার ঘুম ভাল হবে ।

কিন্তু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো তাকালো তখন নওরিন একেবারে আভিভূত হয়ে গেল । দ্রুত বাইরে বের হয়ে গেল । গতকাল সন্ধ্যাবেলা কেবল একটা টেবিলে খাবার দাবার ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী রেখে গিয়েছিলো । আজকে সকালে আসতে না আসতে দেখতে পেল সেখান মোট ছয়টা টেবিল এসে জড়ো হয়েছে । পুরো নেইবারহুড থেকেই মানুষ জন তাদের অতিরিক্ত খাদ্য ও বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সাগম্রী এখানে রেখে গিয়েছে । ছয়টা টেবিল একেবারে ভর্তি হয়ে গেছে ।

নওরিন হঠাৎই লক্ষ্য করলো আনন্দে ওর চোখে পানি চলে এসেছে । ওর এমন একটা ছোট কাজ থেকে এতো বড় কিছু হয়ে যাবে সে ভাবতেই পারে নি । সামনে যে বিপদ আসছে তাতে অনেক মানুষের উপকার হবে এটা থেকে ।

তারপরই লক্ষ্য করলো অনেকেই জানলা কিংবা বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে । ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে তারপর সবাই হাত তালি দেওয়া শুরু করলো । গতকাল ওকে এই সব করতে দেখেছিলো অনেকেই । ওর জন্য এমন কিছু একটা হয়েছে এটা সবাই প্রসংশা করছে !
নওরিন সেই ছেলেটাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিল । ছেলেটাকে যদি ঐ কাজটা করতে না দেখতো তাহলে হয়তো সে নিজেও এই কাজটা করতো না । সত্যিই এই একটু ক্ষুদ্র মহৎ কাজ অনেক মানুষের জীবনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে । অনেক মানুষের উপকারের কারন হতে পারে !


ছবি উৎস


মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন গল্প

এভাবেই জেগে উঠুক মৃত আত্মারা, স্বার্থপর আত্মারা, আত্মকেন্দ্রীক আত্মারা!
অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হয়ে সূখের অশ্রুতে ভরে উঠুক চোখ।

++++

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: মানুষ ভাল যেমন আছে, খারাপও তেমন আছে । ভাল মানুষ ভাল কাজ করেই যাবে !

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য !

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এ্টা কি গল্প না সত্যিকার ঘটনা।
সত্য ঘটনা মানতে ইচ্ছে হয়।
সবাই ওর মতো মানবিক হোক
সেটাই প্রত্যাশা করি।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটা বাবানো হলেও ছবিটা কিন্তু সত্যি । ইউরোপের কোন একটা দেশের ছবি এটা !

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বাহ দারুণ ক্ষমতা আপনার সবকিছু নিয়েই আপনি গল্প তৈরি করতে পারেন, সুন্দর সময় উপযোগী গল্প।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ মানুষের জন্য। জীবনের আসল গল্প গুলোই হলো মানবতার গল্প।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন:   দারুণ লেখা ,বেশ ভালো লাগলো

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

অপ্রতীয়মান বলেছেন: সময় উপযোগী দারুণ গল্প

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.