নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃinquirer.com
সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই । তবে এখনও পুরোপুরি অন্ধকার নেমে আসে নি স্যান ডিয়েগোর বুকে । তবে ধীরে ধীরে কালো অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে শহরটা । আরও একটি বিভিষিকাময় রাত নেমে আসছে । আব্দুল মুতালেপ দ্রুত পা চালালেন । শহরের এক প্রান্তে তার বাড়ি । জরূরি খাদ্যের জন্য আজকে তাকে বের হয়েছে । লম্বা লাইন ধরে এখন তাদেরকে খাবার দেওয়া হয় । সেই খাবারই তিনি তার এবং তার পরিবারের জন্য সংগ্রহ করতে বের হয়েছিলেন । চারিদিকে এক ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে । সারা দিন তিনি তার বউ আর তিন ছেলে মেয়ে টিভির সামনে বসে থাকেন একটু ভাল সংবাদের আশায় । কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে । পৃথিবীর এতো শক্তিশালী একটা দেশের অবস্থা এই রকম হবে সেটা সে কোনদিন ভাবতে পারেন নি ।
আব্দুল মুতালেপ বাড়ির কাছে চলে এসেছেন । বাড়িতে সাদা রং করেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে । অন্য সব বাড়ি থেকে তাই বাড়িটা সবার আগে চোখে পড়ে । এটা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত । যখনই কেউ এই এলাকাতে আসে সবার আগে তার বাসাটাই সবার চোখে পড়ে । অবশ্য যখন বানিয়েছিলেন তখন তিনি চেয়েও ছিলেন যেন সবার আগে এই বাসাটা সবার যেন চোখে পড়ে । দেশের সব জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে তিনি পরিবার সহ আমেরিকাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেই ২০২২ সালে । সময় গুলো কী চমৎকারই ছিল । আমেরিকান ভিসাটা পেয়ে যাওয়ার পরপরই মনে হয়েছিল জীবনটা বুঝি এবার সেটেলড হয়েছিলো । ভাগ্য বুঝি তার দিকেই ।
একা আসার পরপরই একটা ভালো মাল্টিন্যশনাল কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায় । এক বছরের মাথায় এই বাড়িটা কিনে ফেলেন । ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা জন্য ভর্তি করেন ভাল স্কুলে । সপ্তাহ দেশে উইকেন্ডে ঘুরতে যান নানান স্থানে । সব কিছু হয়ে যাচ্ছে নিয়ম মাফিক । কাজ করছেন, দু হাতে টাকা কামাচ্ছেন জীবনটাকে উপভোগ করছেন । ঐ কয়েকটা বছর মনে হচ্ছিলো এর থেকে সুখের জীবন বুঝি আর হবার নয় !
ঠিক সেই সময়েই আমেরিকাতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল । রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেটের মধ্য। সালটা ২০২৫ । দেশ দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গেল। পুরো দেশটার অবস্থা যেন ভয়ংকর হয়ে উঠলো । যতই দিন যাচ্ছে ততই অবস্থা খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুই গ্রুপের মাঝে যুদ্ধ হচ্ছে । মারা যাচ্ছে অগনিত সাধারন মানুষ । ডেমোক্রেটরা রিপাবলিকান সন্দেহ যে কাউকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে ডেমোক্রেটরা উল্টোটা করছে । কেউ নিরাপদে নেই ।
আব্দুল মুতালেপের চাকরি চলে গেল কয়েক মাসের মধ্যেই । কেবল তার চাকরিই অনেক কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেল । বাইরের দেশের সক নাগরিক নিজ দেশে পালিয়ে যেতে শুরু করলো । একটা সময়ে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । সকল এয়ারপোর্ট গুলো দুই গ্রুপের বিদ্রোহীরা দখল করে নিলো । এছাড়া বাইরের দেশের সাথে আমেরিকার বিামন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল কদিন পরেই । কেউ আর আমেরিকাতে ঢুকতেও পারছে না আবার বের হতে পারছে না । অনেকে অবশ্য লুকিয়ে মেক্সিকান বর্ডার দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তবে মেক্সিকো নিজেদের বর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে । সেখান দিয়ে যাওয়াই রিক্স অনেক বেশ । অবশ্য আব্দুল মোতালেপের দেশে ফেরার কোন উপায় নেই । আর কোন দিন দেশে আসবে না বলেই সে সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছিলো ।
এখন এই দেশেই সে আটকা পরেছে পরিবার সহ । তার আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই । খুব দ্রুত বাসায় ঢুকে পড়লেন । রাত হলেই ভয়ের ব্যাপারটা বেশি । বিদ্রোহীরা রাতের বেলা এসেই মানুষের বাসায় হামলা করে । বাড়িতে যদি বিরোধী পক্ষের কোন চিহ্ন পায় তাহলে তাকে ধরে নিয়ে যায় । অথবা সরাসরি সেখানেই গুলি করে মেরে ফেলে । আজ সকাল থেকে এলাকাটা বেশ থমথম করে আছে । গতকাল নাকি পাশের এলাকাতে হামলা হয়েছে । অনেক লোককে মেরে ফেলা হয়েছে । লাইন ধরে খাবার নেওয়ার সময় লোকে বলাবলি করছিলো যে আজকে এই এলাকাতে বিদ্রোহীরা আসতে পারে ! ভয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেছে । কী করবেন তিনি নিজের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ! কোথায় গিয়ে উঠবেন ? বাড়ির পেছনে একটা ছোট্ট জঙ্গলনের মত আছে । সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকবেন কি?
আব্দুল মুতালেপ বুঝতে পারছেন না । রাতের খাবার শেষ করে দরজা জানালা বেশ শক্ত করে আটকে দিলেন । যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিটি দরজাতে আলাদা করে খিল লাগানো হয়েছে । তবে তিনি জানেন যদি বিদ্রোহীরা চলে আসে ভারী মর্টারের আঘাতে এই দরজা টিকে থাকবে না ।
রাতে একটু চোখের পাতা এক করেছিলেন তখন গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেলেন আব্দুল মুতালেপ । এই পাশেই গুলি হচ্ছে । পাশের বাড়িতে বিদ্রোহীরা চলে এসেছে ।
এই তো গুলি করলো !
চিৎকারটা চিনতে পারলেন তিনি । জহর শেখ। এক মিশরীয় । অনেক দিন থেকেই পাশাপাখি বাস করতো ওরা !
এমন সময়ে তার দরজাাতে ধাক্কার আওয়াজ হল ।
আব্দুল মুতালেপ বুঝলেন তাদের দিন শেষ হয়েছে । পেছন থেকেও আওয়াজ আসছে । ওরা বাড়ির পেছনেও চলে গেছে । আর পালানোর জায়গা নেই । এমন সময়ে দরজা ভেঙ্গে পড়লো ।
আব্দুল মুতালেপ দেখলেন কালো পোশাক পরা চারজন অস্ত্রধারী তার দিকে তাক করে আছে । ইংরেজি কঠিন কন্ঠে বলল, ইউ ডেমোক্রেট ?
আব্দুল মুতালেপ কি বলবে বুঝতে পারলেন না । কারণ হ্যা না যাই বলা হোক না দুটোতেই বিপদ আছে । সামনে যারা দাড়িয়ে আছে তারা ডেমোক্রেট নাকি রিপাবলিকান সেটা সে জানে না । যদি হ্যা বলেন এবং তারা রিপাবলিকান হয় তাহলে তার জীবন শেষ । আর যদি না বলেন এবং তারা ডেমোক্রেট হয় তাহলেও তার জীবন শেষ ।
উপরওয়ালার নাম নিয়ে সে বলল, না !
ব্যাস কষে একটা বুটের লাথি এসে পরলো তার বুকে । তাকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হল বাড়ির বাইরে । রাস্তায় দাড় করিয়ে তার দিকে বন্দুক তাক করা হল । তার শেষ সময় এসে হাজির । সে নিজের চোখ বন্ধ করলো । তখনই ফ্লাশ লাইটের মত একটা দৃশ্য তার চোখের সামনে এসে ধরা দিল ।
২০২১ সালে এক জুম্মার দিনে সে আমেরিকার ধ্বংশ কামনা করে দান বক্সে ১০০ টাকা দান করেছিলেন । সেই দোয়া কবুল হয়েছে ।
(সমাপ্ত)
অপ্রাসঙ্গিক ফেসবুক স্টাটাস
প্রচলিত আছে '' বাঙালীর চাওয়া দুইটা- ১। আমেরিকার ধ্বংশ ২। আমেরিকান ভিসা
মুল গল্পঃ হাফিজুর রহমান রিক ।
পুনঃরচনাঃ অপু তানভীর ।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৪
অপু তানভীর বলেছেন: এই কথা সত্য । প্রবাসে আসলেই অনেক কম মানুষই আছে যে ভাল আছে !
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১২
কল্পদ্রুম বলেছেন: শেষের ব্যাপারটা মজার ছিলো। বাঙ্গালির চাহিদা নিয়ে পর্যবেক্ষণের সাথে একমত।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: প্রায় প্রতিটি বাঙালীরই একই মনভাব !
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১০
মিকাইল ইমরোজ বলেছেন: অসাধারণ লেখা
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
অপু তানভীর বলেছেন: মূল গল্পটা যদিও আমার না । রিক ভাইয়ের থিম ।
৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: আব্দুল মোতালেপ এর জন্য মায়া হচ্ছে।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
অপু তানভীর বলেছেন: মায়া করে লাভ নেই । তার জন্য সঠিক কাজ হয়েছে ।
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১৩
সোহানী বলেছেন: হাসতে হাসতে শেষ ........। বুঝলাম এই কারনেই তুমি আম্রিকার ভিসা চাও না।
তবে শেষের দুইটা পয়েন্টই আসল। আম্রিকা আসতে চায় আবার গালিও দিতে চায়....................
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: আমি আম্রিকা বেড়াতে যেতে চাই অবশ্যই, অবশ্য এর পেছনে কারণ রয়েছে । তবে সেখানে থিতু হয়ে থাকার ইচ্ছে আমার মনে এখনও জাগে নি ।
শেষ দুই লাইন প্রায় প্রতিটি বাঙালীর ইচ্ছে ।
৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৪৮
রামিসা রোজা বলেছেন:
গল্পের থীম দোয়া কবুল আর অভিশাপের ভারসাম্যের
পরিনতি । ভয়ের সাথে ভালো লাগলো ।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৭:৫৫
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: গল্প অসাধারন হইছে।
আমেরিকার অবস্থা এতো জলদি এতো খারাপ হবে বলে মনে হয়না, সম্ভাবনা কম আর কি।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: নাহ । সেখানে এরকম অবস্থা হওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে । ইহা কেবলই একটা গল্প । আর কিছু না ।
৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৭
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
প্রসঙ্গত আপনাকে একটি ব্যাপার বলি, প্রবাসে যারা থাকেন তারা যখন নতুন নতুন দেশে বেড়াতে আসেন নিজেতের (নিজেদের) স্ট্যাটাস, লাইফ স্টাইল, খাবারা দাবার, পোষাক নিয়ে গল্প করে দেশের মানুষের মাঝে এক ধরনের হতাশা তৈরি করতে চান!
- আমার সাথেও এমন হয়েছে। আমিও গল্পচ্ছলে বলতে বাধ্য হয়েছি - জলপাই দিয়ে টেংরা মাছের ঝোল, টক বড়ই দিয়ে পুঁটি মাছের ঝোল, কাঁচা আম দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল আর ইলিশ মাছের ডিম ভূনা খাওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশেই থাকবো। আপনি বিশ্বাস করুন তাদের চেহারা হয়েছিলো দেখার মতো।
আব্দুল মুতালেপদের সাথে কথা বললে মনে হবে বাংলাদেশ নরকে গুলজার আর প্রবাস স্বর্গের ঢেকি!
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১০
অপু তানভীর বলেছেন: এই হতাশা তৈরির ব্যাপারটা আমার থেকে ভাল আর কেউ জানে না । আমার গ্রামের বাড়ি হচ্ছে বিক্রমপুর । এখানে প্রচুর লোক প্রবাসী । তারা যখন দেশে আসে তাদের ভাব চক্কর খুব ভাল করে চোখে পড়ে । তাদের কথা বার্তা শুনলে মনে হয় বাইরে কি রাজার হালেই না তারা থাকে !
৯| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:১০
সাইফুল ফরিদপুর বলেছেন: মোতালেব, বানান টি দিলে ভালো হতো।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: নামে কী যায় আসে !
১০| ০৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৫০
বংগল কক বলেছেন: ++++++++++++++
০৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১১
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
ভয়াবহ ব্যাপার। গল্প খুব ভালো লেগেছে। +++
প্রবাসে থিতু হওয়ার জন্য অনেকেই বাড়ি ঘর জমিজমা সব বিক্রি করে দেন। শেষ বয়সে হায় হায় মাতম আফসোসে হিমালয় গলে বন্যা নামার ব্যবস্থা করেন, যদিও তাতে আর কাজ হয় না। যা হবার হয়ে গেছে - খেলা খতম পয়শা হজম।
প্রবাসে থেকে খুব কম মানুষই ভালো আছেন।