নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রযুক্তির কারণে যে খাবার দুটি হারিয়ে গেছে জীবন থেকে

০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫

আপনাদের বাসায় ফ্রিজ কবে এসেছে?
হয়তো মনেও নেই আপনাদের । আমারও ঠিক মনে নেই । তবে সময়টা সম্ভবত আমি যখন ক্লাস ফাইভ কিংবা সিক্সে পড়ি তখন আমাদের বাসায় ফ্রিজ কেনা হয় । সেই সময়ে পুরো গ্রামে দুই কি তিন বাড়িটে ফ্রিজ ছিল । আর এখন গ্রামের বলা চলে সবার বাসায় ফ্রিজ আছে । অনেকের বাসায় আবার দুই করে রয়েছে ।

যাই হোক এই গল্প ফ্রিজের না । তবে ফ্রিজের কারণে হারিয়ে যাওয়া দুটো খাবারের গল্প । ফ্রিজ থাকার কারণে আমরা এখন দীর্ঘদিন খাবার জমিয়ে রাখতে পারি । বিশেষ করে কাচা মাছ মাংস অনেক দিন পর্যন্ত জমিয়ে রাখা যায় । বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না তবে আমাদের বাসায় এখনও পর্যন্ত কুরবানির মাংস রয়েছে । এটা লম্বা সময় পর্যন্ত থাকে ।

ফ্রিজ কেনার আগে এই আমরা এই মাছ মাংস সবজি কিভাবে সংসক্ষণ করতাম ?
উত্তর হচ্ছে করতাম না । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সব সময় তাজা সবজি মাছ বাজার থেকে কিনে এনে সেই দিনই খেয়ে ফেলতাম । কিন্তু এমন মাঝে মাঝে ঘটতো যে সেটা দিনে দিনে খেয়ে শেষ করা সম্ভব হত না । যেমন এই কুরবানির মাংস !

সেই সময়ে সকাল মাংস বিলি ব্যবস্থা করার পরেও অনেক বেশি পরিমানে মাংস রয়ে যেত আমাদের সবার বাড়িতে । কুরবানির কয়েকদিন পর্যন্ত আমরা কেবল মাংসই খেতাম । এই সময়ে বড় হাড়িতেই রান্না হত । এরপর প্রতিদিন সেই মাংস জ্বাল দেওয়া হত । এক পর্যায়ে দেখা যেত সেই মাংস বেশ খানিকটা কালো হয়ে গেছে । শেষ পর্যন্ত দেখা যেত একেবারে ঝোল শুকিয়ে ঝোলহীন মাংস অবশিষ্ট রয়েছে ।
এই কালাভুনা টাইপের মাংস আমরা ছোটরা বিশেষ করে পছন্দ করতাম । আপনারা করতেন কিনা জানি না তবে আমি করতাম খুব । দুপুরের ভাত থেকে শুরু করে বিকেলে মুড়ির সাথে এই পোড়া মাংশ বেশ মজা করেই খেতাম । আরেকটা ব্যাপার তখন হত, এই মাংস দিয়ে ডালের বলার তৈরি করা হত সন্ধ্যার জন্য । এটাও একটা চমৎকার একটা খাবার ছিল আমাদের কাছে । এখনও অবশ্য হয়। বাসায় গেলে মাকে বললেই সে ডালের মাংশ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে দেন । তবে এখন সেই কালো পোড়া মাংস আর খাওয়া হয় না । সেই খাবার উঠে গেছে একেবারে । এখন আর মাংস সংরক্ষণের জন্য ঘন ঘন জ্বাল দেওয়ার কোন দরকার পড়ে না ।

একই কান্ড হত ইলিশ মাছের সাথে । মাঝে মাঝে বিশাল সাইজের ইলিশ বাড়িতে আসতো । তখন একদিনে সব খাওয়া যেত না । আবার দেখা যেত যে বিকেল কিংবা সন্ধার দিকে বাজার থেকে ইলিশ নিয়ে আসা হয়েছে । আজকের রান্না তো হয়ে গেছে তাই সেদিন আর রান্না হবে না । অথচ ফ্রিজ তো নেই । সেই ইলিশ ওভাবে রাখাও যাবে না । তখন আমাদের বাসায় ইলিশকে লবন আর হলুদ দিয়ে আধ সিদ্ধ অবস্থায় রাখা হত । পুরোপুরি রান্না করা হত না । মা হয়তো আরো হয়তো কিছু করতেন । সেই অবস্থায় ইলিশটা থাকতো রাতভর। আরেকটু খাওয়ার উপযোগি হত । পরদিন সকালে এই মাছটা দিয়ে আর পান্তা ভাত দিয়ে খেতাম আমি । জীবনে খুব কম সুস্বাদু খাবারই ছিল এমন । হলুদ দেওয়ার কারণে মাছটা যখন পাতে নেওয়া হত তখন একটা হলদে ভাব হয়ে যেত । সেই ইলিশ মাছ দিয়ে আমি আর ভাত খাই নি । ফ্রিজ আসার পরে এই জিনিস আর কখনই আমাদের বাসায় রান্না হয় নি । ওভাবে মাছ সংরক্ষনের কোন দরকারই পড়ে নি তাই রান্না হবেই বা কেন !

প্রযুক্তি আমাদের কত কিছুই না দিয়েছে ! কিন্তু সেই সাথে আমার থেকে অনেক কিছুই কেড়েও নিয়েছে !

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:১০

কাছের-মানুষ বলেছেন: ফ্রিজ যখন ছিল না, আমাদের বাসায় কুরবানির মাংস দিয়ে কোরমা করত। ২০-২৫ কেজি মাংস দিয়ে একসাথে কোরমা দিত, সাধারণত গরুর চর্বি/তেল দিয়ে ডুবিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে কোরমা তৈরি করা হত! এভাবে মাংস মাসের পর মাস রাখা যায়। দারুণ সুস্বাদু, এটা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার, এখন এর চল উঠে গেছে!

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৬

অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের ঐদিকে অবশ্য এই কোরমার ব্যাপারটার চল নেই একদম । একেক এলাকাতে একেক রকম বলা যায় ।
তবে এখন এই চল গুলো একেবারে উঠে গেছে । আগে বাসা বাড়িতেই এমন করে হত এখন যা হয় তার বেশির ভাগই বানিজ্যিক !

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:২৬

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ফ্রিজ আসাতে কালো মাংস খাওয়া উঠে গেছে। কি যে মজার ছিল সেই কালো মাংস!!

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৭

অপু তানভীর বলেছেন: আসলেই এই চলটা একেবারে উঠে গেছে । ফ্রিজের কারণে আমাদের প্রাপ্ত সুবিধার হিসাব নেই কিন্তু কিছু সে ঠিকই কেড়ে নিয়েছে ।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:২৮

জুন বলেছেন: আমি ঝুরা মাংসটা এক সময় খুব পছন্দ করতাম। ইলিশ মাছটা তেমন ভাবে খাইনি কখনো অপু। তাই স্বাদ বুঝতে পারি না। আর ফ্রীজে দীর্ঘদিন মাছ মাংস রেখে খাওয়ার চল আমাদের নেই। আমার হাজবেন্ড একটা একটা করে প্যাকেট বের করে বলতে থাকে এটা কি সেই মুরগী যেটা এক মাস আগে এনেছিলাম? এটা কি সেই মাছ নাকি যা ১৫ দিন আগে কেনা হইছে X((
আমি ভয়ে ভয়ে না করতে পারি না। তারপর সেটা যায় বুয়াদের বাসায় :(
আমাকে ডীপ ফ্রিজ কিনতে দেয় না :-/

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫

অপু তানভীর বলেছেন: ডিপ ফ্রিজ আসলে আমাদের জীবন থেকে তাজা খাবার খাওয়ার পরিমানটা কমিয়ে দিয়েছে অনেক পরিমান । ছোট বেলার মত আর অনেক কিছুই নেই ।
তবে বাসা গেলে এখনও বেশ তাজা জিনিস পত্র খাওয়া হয়। আমার বাবার ব্যবসাটাই হচ্ছে ফুড সাপ্লাই দেওয়ার । তাই এই ব্যাপারে এই সুবিধা এখনও পাওয়া যায় বেশ।

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৯

করুণাধারা বলেছেন: বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না তবে আমাদের বাসায় এখনও পর্যন্ত কোরবানি মাংস রয়েছে।

কেন বিশ্বাস করবো না!! আমি তো দেখেছি মানুষ কোরবানি ঈদের সময় গরু কোরবানি দিয়ে সারা বছর ডিপ ফ্রিজে রেখে সেই মাংস খায়। আপনি ঈদের মাত্র চার মাস পরের কথা বলছেন।

কোরবানির মাংস অনেকবার জ্বাল দিয়ে খেতে খুবই সুস্বাদু হয় আমরা একে বলি ঝুরা গোস্ত। ডাল দিয়ে বড়া বানিয়ে খেতেও খুব ভালো। তবে কথা হচ্ছে, এসব বিগত দিনের স্মৃতি। :(

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: এই চলটা তাহলে অনেকের মাঝেই আছে । আমার বাবার একটা বিশ্বাস হচ্ছে কুরবানির মাংসের ভেতরে একটা আলাদা বরকত আছে । তার রেড মিট খাওয়া একেবারে নিষেধ । নানান শারীরিকস সমস্যা দেখা ডেয় কিন্তু সে বিশ্বাস করে যে এই কুরবানির মাংস খেলে কোন সমস্যা হবে না ।

আমাদের এখানেও এটাই বলে । ঝুরা মাংশ । এখন অবশ্য আর কেউ এসব খায় না । চল উঠে গেছে ।

৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০০

কাঁউটাল বলেছেন: ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা, ঝুরা,
ঝুর ঝুর করে পড়ে গেল।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: হে হে হে হে

৬| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫১

শায়মা বলেছেন: হাহাহা ইলিশ আর গরুর মাংসের কথা পড়ে কমেন্ট করতে গিয়ে লাস্টে এসে কাঁউটাল ভাই্য়ুর কমেন্ট দেখে হাসতে হাসতে মরলাম। :P

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: হেহেহে ঝুরঝুর ঝুরা কমেন্ট

৭| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৩

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তখন বছর জুড়ে মাছ মাংস সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। খাবার থাকত টাটকা। হিমায়িত খাবার এ কোলেস্টেরল বেশি। এমনকি ঠান্ডা পানি ও ক্ষতিকর।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৩

অপু তানভীর বলেছেন: ঠিক তাই । অনেক সুবিধা যেমন আমরা পেয়েছি ঠিক তেমন অনেক কিছু হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে ।

৮| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩০

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: প্রযুক্তির কারণে কিন্তু কোরবানির মাংস বিলি করাটাও বেশি কমেছে ।

সারা বছরের মাংস জমিয়ে রাখা এখন একটা হরহামেশার কাজ । প্রযুক্তি আমাদের কিপ্টাও বানিয়েছে হাহাহাহাহা

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা এটাও সত্য । আগে তো আর সংরক্ষণের উপায় ছিল না তাই সেগুলো নিজের কাছে রাখার থেকে বিলি করে দেওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হত । তবে এখন অবস্থা ভিন্ন । আর এখন মাংসের দামও অনেক বেশি । সেই হিসাবে স্বাভাবিক ভাবেই বিলির থেকে সংরক্ষণ হবে বেশি।

৯| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৫৯

ক্লোন রাফা বলেছেন: আমার অসম্ভব প্রিয় খাবারগুলো।আমি এখনও ঐ পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষন করে খাই। এমনকি কোরবানির মাংস না হোলেও মাংস কিনে এনে ঐ প্রক্রিয়ায় রান্না করতে বলি। একমাস দু’মাস চলে এভাবেই। এর বাইরেও মাংসের শুটকি করে রাখতাম আমরা। খুব পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে কিংবা চুলার উপর ঝুলিয়ে শুকানো হতো। কোফতা করা ছিলো আরো একটি প্রক্রিয়া , যা আধুনিক যুগে হয়েছে মিটবল। তবে নোনা ইলিশ মিস করি অনেক। কারন তাজা ইলিশ পাইনা। সব ফ্রোজেন হয়ে আসে ।
পোষ্ট পড়ে অর্ডার দেওয়ার তাগিদ চলে আসছে।
ধন্যবাদ,অ.তানভীর।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: খাবার এখন ফ্রোজেন ছাড়া আর উপায় কি বলেন ! গ্রামের দিকের মানুষ এখনও যা একটু তাজা জিনিস খায় তবে শহরের মানুষ এই ফ্রোজেন খাবারই ভরশা ! আর বিদেশে বসে দেখী খাবার খেতে গেলে ফ্রোজেন ছাড়া তো কোন উপায় নেই ।

অর্ডার দিয়ে ফেলুন । খাবার সময়ে আরেকবার আমার কথা মনে করবেন ।

ভাল থাকুন সব সময় !

১০| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: গ্রামে যখন ফ্রিজ ছিলনা তখন কোরবানীর কিছু মাংস শুকিয়ে শুটকি করে রাখা হতো । পরে এগুলো ছেচে রান্না করা হতো। সেটা ছিল অন্যতম মজার একটা খাবার।+++

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৪

অপু তানভীর বলেছেন: সেই মজা আর নেই এখন

১১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঝোলহীন ঝুরা মাংস আমারও খুব প্রিয় ছিল। সকালে কিংবা রাতে রুটি কিংবা পরাটা দিয়ে খেতে বেশি ভালো লাগতো। দুপুরে অবশ্য যে কোন কিছু দিয়ে ভাতটাই পছন্দনীয় ছিল।
আমাদের ছোটবেলায় ঘরে ফ্রীজ না থাকলেও, ক্বুরবানির মাংস রোদে শুকিয়ে কিংবা জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। সাধারণতঃ ক্বুরবানির দিন থেকে মহররম মাসের আশুরার দিন পর্যন্ত এ মাংসকে সংরক্ষণ করা হতো। ফ্রীজ ব্যতীত এর চেয়ে বেশি কাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। আর পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি থাকাতে অনেক বাসায় এর আগেই ক্বুরবানির মাংস ফুরিয়ে যেত। এখনকার মত তখন দুই ভাইবোনের সংসার ছিল না। গড়ে প্রতি পরিবারে কমপক্ষে ৫/৬ জন ভাইবোন থাকতো।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫১

অপু তানভীর বলেছেন: এটা অবশ্য বেশ চমৎকার একটা পয়েন্ট বলেছেন । আসলে সেই আসলেই পরিবারের লোকসংখ্যা ছিল বেশি তাই হয়তো বেশি সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়তো না । একবার ভাবুন এই প্রযুক্তির উন্নতি এটা যেন ঠিক সময়েই সঠিক ভাবে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে । যেই না পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমতে শুরু করলো তখনই খাবার দাবার সংরক্ষণের একটা প্রয়োজন দেখা গেল । আবিস্ক্বত হল সেই মোতাবেগ জিনিসপত্র !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.