নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনি সাইকেল রাইড - মিনি ছবি ব্লগ

২৭ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৩৩



সাইকেল আমার পছন্দের একটি বাহন। যদি সম্ভব হতো, আমি দুনিয়ার সব জায়গায় এই সাইকেল নিয়ে যেতাম। চুয়াডাঙ্গায় থাকতে আমি সব জায়গায় এই সাইকেল নিয়ে যেতাম। যেসব স্থানে সাইকেল নিয়ে যাওয়া যেত না, সেসব স্থানে আমি যেতামই না। তবে হঠাৎ করে এই সাইকেলপ্রীতি আমার জন্মায়নি। স্কুল একটু দূরে হওয়ার কারণে আমি সাইকেল চালিয়ে যেতাম। তবে দিনরাত সাইকেল চালানোর অভ্যাসটা আমার তৈরি হয় এসএসসি পরীক্ষার পর ছুটির সময়ে। সেই দীর্ঘ ছুটিতে আমার প্রধান কাজই ছিল প্রতিদিন সকালে ভাত খেয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তারপর একেবারে দুপুর পর্যন্ত সাইকেল চালানো। আমি এই সাইকেল চালিয়ে আমাদের থানার এমন কোনো রাস্তায় নেই, যেখানে যাইনি। এমনকি পাশের থানাতেও চলে গেছি অনেকবার।

ঢাকায় আসার পর সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ি আমি এই সাইকেল না চালাতে পারার কারণে। প্রথম যেদিন আমি সাইকেল চালানোর চেষ্টা করেছিলাম, সেদিনই বাসের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়ে পায়ের অনেকটা অংশ কেটে ফেলেছিলাম। সেই ভয় থেকে এবং কয়েকদিন পর সাইকেলটা চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকায় অনেকটা সময় আমার সাইকেল চালানো হয়নি। তবে একসময় সব কাটিয়ে আমি আবার একটা সাইকেল কিনে ফেললাম। এই সাইকেল কেনার পর প্রথমে আমি ভয়ে ভয়ে সাইকেল চালাতাম। সেই দুর্ঘটনার ভয় ছিল। প্রধান সড়কে উঠতামই না। তবে ধীরে ধীরে সেই ভয় কেটে যায়। এখন সব রাস্তায় নির্দ্বিধায় সাইকেল নিয়ে যাই। আর এখনও সেই আগের অভ্যাস হয়ে গেছে। সাইকেল ছাড়া কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।

অবশ্য ঢাকা শহরের ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে সাইকেল চালানোর রাস্তা কম। বাসা যদি উত্তরার দিকে হয়, তবে ওদিকে সাইকেল চালিয়ে মজা আছে। কিন্তু আমি যেখানে থাকি, সেখানে সব দিকের রাস্তায় গাড়ি আর জ্যামের অভাব নেই। সাইকেল চালিয়ে ঠিক মজা পাওয়া যায় না। অবশ্য একটা দিক রয়েছে, যেদিকে একটু গেলেই সাইকেল চালানোর জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে। বসিলা ব্রিজ পার হয়ে একটু গেলেই এই রাস্তাটা পড়ে। আগে বেশ কয়েকবার আমি এদিকে গেছি। এই রাস্তাটা আমার পছন্দ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এই রাস্তায় যখনই আমি যাই, তখনই আমার এলাকার সেই গ্রামের রাস্তায় সাইকেল চালানোর অনুভূতি মনে হয়।

ঢাকা শহরের রাস্তা মানেই দুই পাশে বড় বড় বিল্ডিং আর কিছুই না। কিন্তু এই ঘাটাইচর পার হয়ে রাস্তায় দুই ধারে বড় বড় বিল্ডিং আর নেই। রাস্তার দুই পাশে গাছ বা ঝোপে ভরা। বাড়িঘরগুলো এক সারিতে নয়, বরং কিছুটা ফাঁক দিয়ে একতলা-দোতলা বাড়ি। মাঝে রয়েছে পুকুর, ধানক্ষেত, ডোবা আরও কত কী! রাস্তাগুলো বেশি চওড়া নয়, একসঙ্গে দুটো বড় গাড়ি যেতে পারে না। অবশ্য এই রাস্তায় বাস চলে না। তাই চিন্তারও কিছু নেই। ঢাকার রাস্তার মতো সেকেন্ডে সেকেন্ডে গাড়ি চলাচল করে না। বেশিরভাগই অটো চলে। মাঝে মধ্যে মাইক্রো, কার, গাড়ি বা বাইক। মাঝে মাঝে ছোট পিকআপ। এভাবেই পুরো রাস্তা।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এই রাস্তায় আমার আর যাওয়া হয়নি। অবশ্য গতকাল একটা মিনি রাইড দিয়ে দিলাম। কয়েকদিন আগে জাদিদ ভাই একটা লম্বা সাইকেল রাইড দিয়েছিল। সেই রাইড দেখেই মনে লোভ হলো। কাল একটা মিটআপের কথা ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এই সুযোগে আমি বেরিয়ে গেলাম। যখন সাইকেল নিয়ে বের হলাম, তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। তবে শরীর ভিজে যাওয়ার মতো বৃষ্টি নয়। আকাশ মেঘলা। ঠান্ডা আবহাওয়া। সত্যি বলতে, সাইকেল চালানোর জন্য এর চেয়ে চমৎকার আবহাওয়া আর হয় না। সাইকেলের চাকায় একটু হাওয়া কম ছিল। আগে দোকানে গিয়ে হাওয়া ভরলাম।

বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটা একটু বিরক্তিকর। তবে আজ দেখলাম, মাঝে ব্যারিকেড দিয়ে একটা দিক বন্ধ করে দেওয়ায় এখন আর জ্যাম লাগছে না। কিন্তু ঘাটাইচর পার হওয়ার পর রাস্তাটা আরও চমৎকার হয়ে এল। আমি যেন আবার আমার জেলার গ্রামের রাস্তায় ফিরে এলাম। দুই পাশে গাছপালা, মাঝ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। বাড়িঘর, দোকানপাট আছে, তবে ঢাকা শহরের মতো এত ঘন নয়। এত উঁচু বিল্ডিংও নেই। সব এক-দোতলা বাড়ি। প্রচুর টিনের বাড়ি চোখে পড়ল। রাস্তার পাশে পুকুর, ডোবা কিংবা ধানের ক্ষেত—সবই চোখে পড়ল।

যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটা রেস্তোরাঁ চোখে পড়ল। ব্রিজ পার হয়ে দুটো শিশুপার্কও আছে। এছাড়া বেশ কয়েকটা সুন্দর বাড়ি চোখে পড়েছে। গেটের বাইরে থেকে দেখে কেন জানি মনে হলো, এই বাড়িগুলোতে কেউ থাকে না। সম্ভবত ঢাকার কোনো বড়লোকের বাগানবাড়ি। কেউ না থাকার মনে হওয়ার কারণ, এই বাড়িগুলো একেবারে অন্য সব বাড়ি থেকে আলাদা জায়গায় অবস্থিত। এমন জায়গায়, যেখানে আশপাশে আর কারো বাড়ি বা দোকানপাট কিছু নেই।

কালাতিয়া বাজারের ঠিক আগে একটা খেলার মাঠের পাশে থামলাম। সেখানে ফুটবল খেলা হচ্ছিল। সেখানে মিনিটখানেক দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলে আবার সামনে এগিয়ে গেলাম। অবশ্য আর বেশি এগোনো হলো না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হলো, এখন ফিরে না গেলে রাত হয়ে যাবে। আর এই রাস্তায় কেন জানি রাতে সাইকেল চালাতে ইচ্ছে হলো না। তারপরই সাইকেল ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। এরপর মোহাম্মাদপুর আসাদ গেট দিয়ে সংসদ ভবন, বিজয় সরণী, তারপর মিরপুরের দিকে রওনা দিলাম। ইচ্ছে ছিল একেবারে মিরপুর দশ পর্যন্ত যাব। কিন্তু এই সময়ে এত সিগনাল আর জ্যামে পড়তে হচ্ছিল যে, বিরক্ত হয়ে আবার বাসার দিকে রওনা দিলাম। সব মিলিয়ে মোটামুটি ২৫ কিলোমিটারের একটা ছোট রাইড হলো। আমি নিয়মিত সাইকেল চালাই। তবে একটানা এত লম্বা রাইড হয় না। অনেক দিন পর লম্বা সাইকেল চালিয়ে ভালো লাগছিল।

একটানা সাইকেল চালানোর ফলে খুব একটা ছবি তোলা হয় নি। অল্প কয়েকটা ছবি। প্রথম দুটো ছবি যাওয়ার সময় বসিলা ব্রিজের উপর থেকে ।



যাওয়ার পথে বড় একটা জলাশয়


যে খেলার মাঠে থেমেছিলাম


ফেরার পথে আবারও সেই বসিলা ব্রিজ



ঢাকাতে নিয়মিত ভাবেই সাইকেল রাইড হয়। অনেকগুলো গ্রুপ আছে। আমার প্রায়ই এদের সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এদের সাথে রাইড দিতে গেলে বাধ্যতামূলক ভাবে হেলমেট পরতে হয়। আর সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট পরতে মোটেই ইচ্ছে করে না। তাই এদের সাথে যুক্ত হওয়া হয় না। তবে আপনারা যারা ঢাকাতে থাকেন সময় আর সুযোগ থাকলে এদের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারেন। সময় বেশ ভাল কাটবে এটা বলতে পারি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৮

শায়মা বলেছেন: বসিলা ঘাটাইচর এসব কি মোহাম্মদপুরের দিকে?

২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০১

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা এদিক দিয়েই। মোহাম্মাদপুরের তিন রাস্তার মোড় পার হয়ে বসিলা ব্রিজ। এখানে বেশ কিছু চমৎকার রেস্টুরেন্ট হয়েছে। একদিন সময় নিয়ে ঘুরে যেতে পারো এদিকটাতে।

২| ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ২:০৭

রবিন_২০২০ বলেছেন: হেলমেট পড়াটা জরুরি।
ঢাকা'র রাস্তায় কমিউটার হিসেবে সাইকেল ব্যবহার করতে হলে ৫৬ ইঞ্চি সিনা লাগবে। রাস্তায় যে অবস্থা দেখি আমি তো গাড়ি চালানোর ও সাহস রাখি না।
জীবনের কিছুটা সময় কেটেছে আসাদগেট / লালমাটিয়ায় আড্ডায়। আজ থেকে বহু বছর আগে ও তো মিরপুর রোডে সাইকেল চালানো চরম দুঃসাহসিকতা ছিল।

২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: হেলমেট পরা জরুরী সেটা আমিও জানি। তবে ঢাকায় নিয়মিত যারা সাইকেল চালায় তারা জানে যে খুব বেশি বেপোরোয়া সাইকেল না চালালে এখানে সাইকেল এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভবনা কম। সত্যি কম। তবে কপাল খারাপ থাকলে যা হবে। আমি সেই ২০১৪ সালে একবার এক্সিডেন্ট করেছিলাম অনেকটা নিজের দোষেই। তখন আসলে আমি চুয়াডাঙ্গার নিয়মে সাইকেল চালাচ্ছিলাম বলেই এমন হয়েছিল।

৩| ২৮ শে মে, ২০২৫ ভোর ৪:৪৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার এই পোস্টটা খুব ইন্টারেস্টিং এবং দুর্দান্ত একটা বিষয়ের উপরে লেখা। কারণ, আমরা যখন ঢাকার রাস্তায় চলাচল করি, তখন ঢাকার রাস্তাগুলো কিংবা আশপাশের দৃশ্যগুলোকে কখনোই সাইকেল আরোহীর চোখে দেখি না।

ঢাকার কয়েক কোটি মানুষের কেউই কোনোদিন এই শহরটাকে সাইকেল আরোহীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেনি, যেটা নিঃসন্দেহে একটা শুন্যতা। যদি দেখত, তাহলে হয়তো একবার হলেও ভাবত যে এই রাস্তাগুলোর উপর সাইকেল চালকদেরও অধিকার আছে।

আপনার সাইকেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পড়ে আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের কথা মনে পড়ে গেল। আজ থেকে প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে তাঁকে ঢাকার রাস্তায় মাঝেমাঝে সাইকেল চালাতে দেখতাম।

২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:১৩

অপু তানভীর বলেছেন: আমি ঢাকায় নিয়মিত ভাবে সাইকেল চালাই ১৭ সাল থেকে। সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই আমি সাইকেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় নেমেছি। সাইকেল নিয়ে যখন রাস্তায় নামি আর বাসে রিক্সায় যখন রাস্তায় থাকি, এই দুইয়ের ভেতরে বেশ বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। যারা কাজের পাশাপাশি আনন্দের জন্য নিয়মিত সাইকেল চালায় তারা এই ব্যাপারটা খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পারবে।
তবে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ মানুষই আসলে জীবন জীবিকার জন্য ব্যস্ত। অন্য কিছু খেয়াল করার সময় কোথায় তাদের। আমিও কতদিন পরে একটা সুযোগ পেলাম ঐদিকে যাওয়ার।

৪| ২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এইট-নাইনে পড়ার সময় সাইকেল চালানো হতো খুব। মামাত ভাইদের সাথে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, গাজীপুরের ভাওয়াল গড়সহ অনেক জায়গায় গিয়েছি সাইকেল চালিয়ে। পরে আর তেমন চালানো হয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.